সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

উপমহাদেশে প্রাচীন প্রস্তর যুগ | Paleolithic Age in the Subcontinent

উপমহাদেশে প্রাচীন প্রস্তর যুগ

উপমহাদেশে মানুষের অস্তিত্বের যে প্রমাণ পাওয়া গেছে তা আফ্রিকা মহাদেশ, চীন বা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার তুলনায় পরবর্তীকালের। পন্ডিতরা অনুমান করেন যে ভারতীয় উপমহাদেশে মানুষের আবির্ভাব ঘটেছিল অভিপ্রয়াণের মাধ্যমে, সম্ভবত আফ্রিকা থেকে। উপমহাদেশে আবিষ্কৃত প্রাচীনতম প্রস্তরায়ুধ গুলি পাওয়া যায় কাশ্মীররের সোয়ান উপত্যকায়, পাকিস্তানের পটোয়ার মালভূমি এবং হিমাচলের শিবালিক পার্বত্য এলাকায়। এগুলি আজ থেকে প্রায় ১৮ থেকে ২০ লক্ষ বছর পুরানো। এই পর্ব পুরাপ্রস্তর যুগ নামে পরিচিত, যা চলেছিল প্রায় ১০ হাজার খ্রিঃ পূঃ অব্দ পর্যন্ত। এই পর্বের মনুষ্য  ছিল সম্ভবত হোমো হাবিলিস বা হোমো ইরেকটাস প্রজাতির। এদের ব্যবহৃত প্রধান হাতিয়ার ছিল হাত কুঠার ও চপার। পুরাতত্ত্বিক পরিভাষায় এগুলিকে কোর টুল বলা হয়, কারণ প্রকৃতি থেকে প্রাপ্ত প্রস্তর খণ্ডের মূল অংশটি এক্ষেত্রে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এগুলি ভারী এবং আকারে বড় হাতিয়ার। পুরাতাত্ত্বিকগণ এই হাত কুঠার গুলিকে আশুলীয় সাংস্কৃতির পর্যায়েভুক্ত হাতিয়ার হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। এই ধরনের হাত কুঠারের ব্যবহার আরো পাওয়া যায় কর্নাটকের হুঙ্গসি উপত্যকা, তামিলনাড়ুর আত্তিরম পক্কম, রাজস্থানের দিদওয়ানা এবং মহারাষ্ট্রের নেভাসা এলাকায়।

পুরা প্রস্তর যুগে মানুষ ছিল খাদ্য সংগ্রাহক। খাদ্য উৎপাদন তাদের কোনোভাবেই জানা ছিল না। তারা কৃষিকাজ বা পশুপালন জানত না। প্রধানত শিকার ও ফলমূল সংগ্রহের মাধ্যমে তারা জীবন ধারণ করত। তাই স্থায়ী বসবাস গড়ে ওঠার কোন সম্ভাবনা ছিল না। সাময়িকভাবে বসবাসের জন্য এই মানব গোষ্ঠী সুবিধাজনক জায়গা, যেমন কোন প্রাকৃতিক গুহাকে বেছে নিত। তা নাহলে তাদের খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাতে হত।এরকম সুপ্রাচীন কিছু গুহাবসের পরিচয় পাওয়া যায় কর্নাটকের কুর্নুল, উত্তর-পশ্চিম পাকিস্তানের সাংঘাও, এবং মধ্যপ্রদেশের ভীমবেটকাতে। এর মধ্যে ভীমবেটকার গুহা বাসটি সবচেয়ে বেশি চর্চিত হয়েছে, কারণ দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন মানব গোষ্ঠী ভীমবেটকা গুহাবাসটি ব্যবহার করে এসেছিল।

পুরা প্রস্তর যুগে প্রস্তরায়ুধ নির্মাণের করণকৌশল অবশ্য পরিবর্তনশীল ছিল। তবে এই পরিবর্তনের গতি ছিল অত্যন্ত মন্থর। পুরা প্রস্তর যুগের প্রথম পর্বের তুলনায় পরবর্তী পর্বগুলিতে আপেক্ষকৃত হালকা ক্ষুদ্রতর এবং ধারালো হাতিয়ার ব্যবহারের সূচনা হয়েছিল। মূল পাথরের গায়ে আঘাত করে প্রস্তরখণ্ডের কোনাচে অংশগুলি বের করে নেওয়া হত। এই হালকা, ক্ষুদ্রতর ও কোনাচে অংশগুলিকে পুরাতত্ত্বের ভাষায় ফ্লেক বলা হয়। ফ্লেক জাতীয় হাতিয়ারের ব্যবহার যত বেড়েছে হাত কুঠার ও চপার জাতীয় হাতিয়ারের ব্যবহার কমেছে। ফ্লেক জাতীয় হাতিয়ার এর মধ্যে প্রধানতম ছিল ছুরি, ছুরিকা এবং বুরিন। ভীমবেটকার গুহাবাসে, মহারাষ্ট্রের নেভাসা ও রাজস্থানের দিদওয়ানাতে এই ধরনের হাতিয়ারের অবশেষ পাওয়া গেছে। এগুলি আজ থেকে প্রায় ৫৭ হাজার বছর আগের। ফ্লেকড হাতিয়ারগুলি ক্রমশ আরো ক্ষুদ্র এবং আরো ধারালো হতে থাকল। পুরাতাত্ত্বিক পরিভাষায় এই ধরনের হাতিয়ারগুলিকে মাইক্রোলিথ টুল বলা হয়। এগুলির আয়তন ৫ সেন্টিমিটারের চেয়ে বেশি হতো না। হাতিয়ারের করণকৌশলের উন্নতির ফলে ব্লেড ও বুরিনের পাশাপাশি Scraper (ছাঁচবার যন্ত্র), Crescent (চন্দ্রাকৃতি আয়ুধ) এবং Point (বিদ্ধ করার যন্ত্র) জাতীয় হাতিয়ারের ব্যবহার শুরু হল।

Paleolithic Age in the Subcontinent

In the prehistoric era of the subcontinent, evidence of human existence has been found in comparison to later periods in the African continent, China, and Southeast Asia. Scholars speculate that the emergence of humans in the Indian subcontinent might have occurred through migration, possibly from Africa. The oldest discovered ancient tools in the subcontinent can be found in the Swat Valley of Kashmir, the Potwar Plateau in Pakistan, and the Shivalik Hills region of Himachal Pradesh. These tools date back to approximately 1.8 to 2 million years ago. This period is known as the Paleolithic era, which lasted from about 10,000 BCE to around 2 million years ago. The people of this era were likely Homo habilis or Homo erectus species. They primarily used handaxes and choppers as their main tools, which are referred to as "core tools" because they were made from the core part of natural stones. These handaxes were large and heavy. Archaeologists have identified these handaxes as Acheulean tools. Similar handaxes were also found in regions like Hunsgi in Karnataka, Attirampakkam in Tamil Nadu, Didwana in Rajasthan, and Nivasa in Maharashtra.

During this era, humans were food gatherers in the subcontinent. They had no knowledge of food production, agriculture, or animal husbandry. Their survival depended mainly on hunting and gathering fruits and vegetables. The idea of permanent settlement was not feasible, and these early human communities relied on convenient shelters, such as natural caves, for temporary habitation. Some very ancient cave dwellings have been found in places like Kurnool in Karnataka, Sanghao in north-western Pakistan, and Bhimbetka in Madhya Pradesh. 

The technology for making stone tools was continually evolving. In comparison to the earlier phases of the Paleolithic, later phases saw the use of lighter and more specialized tools. The primary technique used for making these tools involved striking the core stone to obtain usable fragments. These lighter, smaller, and more specialized tool fragments are known as "flakes" in archaeological terminology. Flake tools gradually replaced the heavier and larger Acheulean tools. The main types of tools in the flake tradition were Blades, scrapers, and points. These kinds of tools have been found at sites like Bhimbetka in Madhya Pradesh, Nevasa in Maharashtra, and Bhimbetka in Madhya Pradesh. These tools date back to around 57,000 years ago. The flake tools were more compact and versatile, and they marked a significant advancement in tool-making technology during the Paleolithic era.


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আরবদের সিন্ধু অভিযান | কারণ ও তাৎপর্য

আরবদের সিন্ধু অভিযান | কারণ ও তাৎপর্য Please visit our Homepage and subscribe us. Suggested Topics || Ghajnavid Invasion || গজনী আক্রমণ || || মামুদের সোমনাথ মন্দির লুণ্ঠন || Somnath Temple Plunder || || তরাইনের যুদ্ধ ও তার গুরুত্ত্ব || মহম্মদ ঘুরির ভারত আক্রমন ও তার চরিত্র || সপ্তম শতকের প্রথমার্ধে আরবদেশে ইসলামের আবির্ভাব ঘটে। ইসলাম আরবদের নতুন করে জীবনীশক্তির সঞ্চার করে । ইসলাম ক্রমশ: একটি ধর্ম থেকে রাজনৈতিক শক্তি রূপে আত্মপ্রকাশ করে। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় তারা আরবীয় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। ভারতবর্ষের সঙ্গে আরবদের যোগাযোগ দীর্ঘদিনের। বাণিজ্যিক সূত্রে তারা নিয়মিত ভারতের উপকূল গুলিতে, বিশেষ করে মালাবার উপকূলে আসত। ভারতীয় ও চীনা পণ্য 'ধাও' নামক বিশেষ জাহাজে করে নিয়ে তারা ইউরোপের বাজারে বিক্রি করত। 712 খ্রিস্টাব্দে ইরাকের গভর্নর হাজ্জাজ বিন ইউসুফ এর সেনাপতি ও জামাতা মোহাম্মদ বিন কাসেম সিন্ধু দেশে একটি সফল অভিযান করেন এবং সিন্ধুদেশ আরবীয় মুসলমানদের অধীনে চলে যায়। অভিযানের(প্রত্যক্ষ) কারণ ভারতবর্ষের প্রতি আরবদের দীর্ঘদিনের নজর ছিল। এর আ

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ | Category of Archives

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ মহাফেজখানা বা লেখ্যাগারগুলি সাধারণ জনতার জন্য নয় মূলত গবেষক, ঐতিহাসিক, আইনবিদ, চিত্র পরিচালক প্রভৃতি পেশার লোকজন তাদের গবেষণার কাজে লেখ্যাগারে নথি পত্র দেখতে পারেন।  লেখ্যাগার পরিচালনা ও সংরক্ষিত নথির ভিত্তিতে লেখ্যাগগুলিকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়েছে।   1. সরকারি লেখ্যাগার:- কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার বা স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে যে লেখ্যাগারগুলি গড়ে ওঠে। সেগুলিকে সরকারি লেখ্যাগার বলা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এরকম সরকার পরিচালিত এক বা একাধিক লেখ্যাগার থাকে। যেমন, আমেরিকার Natonal Archive And records Administration (NARA)। ভারতবর্ষে র কেন্দ্রীয় লেখ্যাগার National Archive of India নামে পরিচিত। বিভিন্ন ঐতিহাসিক, প্রশাসনিক ও আইনগত নথি, মানচিত্র, নক্সা,  পাণ্ডুলিপি প্রভৃতি সংরক্ষিত থাকে। 2. বানিজ্যিক লেখ্যাগার:-  এটি একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানের লেখ্যাগার বিভিন্ন বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান   মূলত তাদের সংস্থার ঐতিহাসিক এবং বানিজ্যিক নথি সংরক্ষিত রাখে। যেমন, ভারতের প্রথম বানিজ্যিক লেখ্যাগার হলো পুনার Tata Centrel Archive। 3. অলাভজনক লেখ্যাগার:-   কোনো ব্যাক্তিগত বা অলাভজনক

ষোড়শ শতকীয় ইউরোপে মূল্যবিপ্লব | Price Revolution

 ষোড়শ শতকের ইউরোপে মূল্য বিপ্লব   16 শতাব্দীতে ইউরোপীয় অর্থনীতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো মূল্য বিপ্লব। নিত্যব্যবহার্য পণ্যের মূল্য প্রায় 150 বছর সুস্থির থাকার পর ঊর্ধ্বমুখী হতে আরম্ভ করে, এবং 16 শতাব্দীর শেষে খাদ্যপণ্যের মূল্যের প্রায় সাড়ে পাঁচ গুণ বেড়ে যায়। পশ্চিম ইউরোপের অর্থনীতিতে এমন অভাবনীয় এবং সুদুরপ্রসারী ফলাফলসম্পন্ন ঘটনা মূল্য বিপ্লব নামে পরিচিত। মূল্য বিপ্লবের কতগুলি সাধারণ বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। যথা--    (১) কৃষিজ পণ্যের তুলনায় শিল্পজাত পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি ছিল কম, এবং খাদ্যশস্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি। (২) ভূমি রাজস্ব সহ ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক, তোলা ইত্যাদির হার বৃদ্ধি এবং ফটকাবাজির আবির্ভাব। (৩) মূল্যবৃদ্ধির তুলনায় মজুরির হার খুবই কম ছিল বলে প্রকৃত আয় হ্রাস পেয়েছিল। (৪) ভূমি বিক্রয়যোগ্য পণ্যে পরিণত হওয়া। (৫) গ্রামীণ বুর্জোয়াজি শ্রেণীর আবির্ভাব। ষোড়শ শতকের আগেও প্রাকৃতিক কারণে মূল্যবৃদ্ধি হয়েছিল, তবে তা ছিল 2, 3 শতাংশের মতো, যা অস্বাভাবিক মনে হতো না। কিন্তু ষোল শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে যে নিরবিচ্ছিন্ন মূল্যবৃদ্ধি হয়েছিল তা জনজীবনে তীব্রভ