সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

লেখ‍্যাগারের কার্যাবলী

 নথি সংগ‍্রহ থেকে প্রদর্শন ও প্রকাশনা পযন্ত  লেখ‍্যাগারের কার্যাবলী


 লেখাগারের কার্যাবলিকে আমরা পাঁচটি ধারাবাহিক পদক্ষেপে আমরা ভাগ করতে পারিঃ 

1. সংগ‍্রহ 

লেখ‍্যাগারের প্রাথমিক  কাজ হল ঐতিহাসিক  নথি বা দলিল সংগ্রহ করা। বিভিন্ন  দপ্তর থেকে প্রধানত নথিগুলি সংগৃহীত হয়। স্ব ইচ্ছায় কোনো ব‍্যক্তি বা সংস্থা যদি কোনো গুরুত্বপূর্ণ নথি লেখ‍্যাগারকে দেয় তাহলে তা একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতি মেনে সংগৃহীত হয়। বেসরকারি  লেখ‍্যাগারে বা শিক্ষামূলক প্রতিষ্ঠানের লেখ‍্যাগারেও একই ভাবে ঐতিহাসিক নথি সংগৃহীত হয়। 

2. নথি লিপিবদ্ধকরণ

নথি সংগ্রহের পর সেগুলিকে তালিকা ভুক্ত করতে হয়। কারণ এর ফলে নথির সঠিক  হিসাব থাকে এবং পরবর্তীকালে তা খুঁজে পেতে সুবিধা হয়। নথি বা দলিল লিপিবদ্ধ করার সময়  কতকগুলি বিষয়ের উপর গুরুত্ব দিতে হয়, যেমন -

১▪ নথি সংগ্রহ সংক্রান্ত বিষয়-- সংগ‍্রাহকের নাম ও ঠিকানা, সংগ্রাহকের তারিখ, স্থান লিপিবদ্ধ করণের নম্বর ও লিপিবদ্ধকারকের নাম। 

২▪ নথির বিবরণ সংক্রান্ত-- নথির নাম, কোন পদার্থের উপর লেখা, দৈঘ‍্য, প্রস্থ ও পাতার সংখ‍্যা

৩▪ সংগ্রহ সংক্রান্ত বিষয়-- নথির বাহ্যিক অবস্থা কেমন, যদি খারাপ হয় তাহলে  কতটা খারাপ এবং বতর্মানে সেটি কোন অবস্থার মধ‍্যে রাখা হচ্ছে

৪▪ নথির অবস্থান-- নথির কক্ষ নং, আলমারির নং ও তাক নং এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত পদাধিকারীর নাম

3.নথি সংরক্ষণ 

বিভিন্ন প্রকার নথি বিভিন্ন উপায়ে সংরক্ষণ করতে হয়; কারণ এগুলি বিভিন্ন প্রাকৃতিক এবং মানবীয় কারণে ক্ষয়প্রাপ্ত হয় ও নষ্ট হয়ে যায়। তালপাতার পাণ্ডুলিপি সংরক্ষণের জন্য ২০-২২° সেলসিয়াস তাপমাত্রা, ৪০-৪৫% আদ্রতা এবং বাতানুকুলিত (A. C.) কক্ষ দরকার। কীট দ্বারা আক্রান্ত হলে ফিউমিগেশন চেম্বারে রেখে কীট ধ্বংস করতে হয়। বারবার হাতের ছোয়াতে তালপাতার পাণ্ডুলিপি গুলো নষ্ট হয়ে যেতে পারে বলে গবেষণার কাজে এর জেরক্স বা মাইক্রফ্লিম ব‍্যবহার করা হয়। ভোজপত্র সংরক্ষণের ক্ষেত্রেও তালপাতার পাণ্ডুলিপির মতই পদ্ধতি  অবলম্বন হয়।

চামড়ার পত্র সংরক্ষণের জন্য ২০-২৫° সেলসিয়াস তাপমাত্রা এবং ৪০-৪৫% আদ্রতা বজায় রাখা দরকার। এগুলিতে কীট বা ছএাক আক্রমণ যেন না করে তার জন্য পাণ্ডুলিপির পাতার মাঝে মাঝে থাইমোল দ্রবণে ডোবানোর শুকনো কাগজ রেখে দিয়ে  হয়।

কাগজের নথি সংরক্ষণে একই ভাবে ২০-২২° সেলসিয়াস তাপমাত্রা ৪০-৪৫% আদ্রতা বজায় রাখতে হয়। অতিরিক্ত আলো, ধূলবালি এবং কীট পতঙ্গ থেকে রক্ষা করার ব‍্যাবস্থা করা হয়। কাগজের নথি ক্ষতিগ্রস্ত হবার একটি বড় কারন কাগজের মধ্যে অ‍্যাসিডের উপস্থিতি। তাই  রাসায়নিক প্রয়োগ  করে কাগজ গুলোকে অ‍্যাসিড মুক্ত করতে হয়। 

4. নথি ব‍্যাবস্থাপণা

নথিগুলি সঠিক ভাবে সাজিয়ে রাখা দরকার। এর জন্য প্রথমে চরিত্র অনুযায়ী নথিগুলিকে বাচাই করে বিভাজন করে নেওয়া হয়। বস্তু অনুযায়ী সেগুলিকে প‍্যাকিং করতে হয়। তারপর সেগুলিকে বাক্সবন্দি করে লেবেল দেওয়া হয়। লেবেলে অবশ্যই ওই নথির সম্পূর্ণ পরিচয়  থাকবে। তারপর সেগুলিকে বিভিন্ন  কক্ষের আলমারিতে রেখে দেওয়া  হয়। বেস্টমেন্ট কক্ষে কখনই নথি রাখা উচিৎ নয় এবং আলমারির তাকটি যেনো মেঝো থেকে ১৫  সেন্টিমিটার উচুতে হয়। ওপরে আলোর স্তর থেকে ৩০ সেমি নিচে হয়। দুটো তাকের মধ‍্যে কমপক্ষে ২০০  সেন্টিমিটার পাথক‍্য থাকতে হবে।

5.প্রদর্শন ও প্রকাশনা

লেখ‍্যাগারের বস্তু সাধারণের প্রদর্শনের জন্য  নয়। যদি তা করা হয় তা হবে অবশ্যই আংশিক ও সাময়িক। গবেষণা সংক্রান্ত  কাজেই এককাত্র লেখ‍্যাগারের নথি পড়া যেতে পারে। উপযুক্ত প্রমাণ  দিয়ে  এবং  অনুমতি সাপেক্ষে কেবল  প্রকাশিত নথিগুলিই লেখ‍্যাগারে বসে পড়া যায়। কোনো অবস্থাতে তা বাইরে নিয়ে আসা যায় না এবং  অনেক  ক্ষেত্রে সেগুলির ফটোকপিও পাওয়া যায় না।

Workflow of the Archive

The activities in the archive from collection to display and publication can be divided into five sequential steps:

  1. Collection: The primary task in the archive is to gather historical documents or evidence. Mainly, documents are collected from various departments, with a focus on acquiring significant records. If an individual or organization willingly contributes important documents to the archive, a specific protocol to follow for the inclusion. This process remains same in private archives or educational institutions' archival departments.


  2. Documentation of Manuscripts: After collecting the documents, they are cataloged for reference. This step ensures accurate record-keeping, making it easier to locate documents in the future. When documenting manuscripts or evidence, attention is given to various details, including:

    • 1. Information related to document collection: collector's name and address, collection date, assigned catalog number, and the name of the documenter.
    • 2. Description of the document: Title, the material on which it is written, dimensions, thickness, and page numbers.
    • 3. Subject matter of the collection: the physical condition of the document, the extent of damage if any, and the current storage conditions.

  3. Preservation of Documents: Different types of documents require distinct preservation methods due to various natural and human-related factors leading to deterioration and loss. For instance, maintaining a temperature of 20-22°C, humidity of 40-45%, and using air-conditioned chambers are crucial for preserving palm-leaf manuscripts. In case of insect infestation, fumigation chambers are used to eliminate pests. For parchment documents, maintaining a temperature of 20-25°C and humidity of 40-45% is essential, with occasional use of thymol-soaked papers to prevent insect attacks. Preservation of paper documents involves keeping them in an environment with 20-22°C temperature and 40-45% humidity, protected from excessive light, dust, and insects. Additionally, chemical treatments are applied to eliminate acidity in paper documents.


  4. Organization of Documents: Proper arrangement of documents is essential for efficient management. Documents are first sorted based on their characteristics, and then packing is done accordingly. Each package is labeled with comprehensive identification details. Finally, these packages are stored in designated shelves or cabinets in different rooms of the archive. Best practices suggest not storing documents directly on the floor, maintaining a gap of at least 15 centimeters from the ground and ensuring a gap of 30 centimeters from the top of the shelf to allow proper airflow. The distance between two shelves should be a minimum of 200 centimeters.


  5. Exhibition and Publication: Documents in the archive are not meant solely for public display. If showcased, it is typically partial and temporary. Published documents are those that have undergone rigorous scrutiny, have sufficient evidence, and are approved for public access. In certain situations, documents are not allowed to leave the archive, and obtaining photocopies may also be restricted in some cases.



মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আরবদের সিন্ধু অভিযান | কারণ ও তাৎপর্য

আরবদের সিন্ধু অভিযান | কারণ ও তাৎপর্য Please visit our Homepage and subscribe us. Suggested Topics || Ghajnavid Invasion || গজনী আক্রমণ || || মামুদের সোমনাথ মন্দির লুণ্ঠন || Somnath Temple Plunder || || তরাইনের যুদ্ধ ও তার গুরুত্ত্ব || মহম্মদ ঘুরির ভারত আক্রমন ও তার চরিত্র || সপ্তম শতকের প্রথমার্ধে আরবদেশে ইসলামের আবির্ভাব ঘটে। ইসলাম আরবদের নতুন করে জীবনীশক্তির সঞ্চার করে । ইসলাম ক্রমশ: একটি ধর্ম থেকে রাজনৈতিক শক্তি রূপে আত্মপ্রকাশ করে। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় তারা আরবীয় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। ভারতবর্ষের সঙ্গে আরবদের যোগাযোগ দীর্ঘদিনের। বাণিজ্যিক সূত্রে তারা নিয়মিত ভারতের উপকূল গুলিতে, বিশেষ করে মালাবার উপকূলে আসত। ভারতীয় ও চীনা পণ্য 'ধাও' নামক বিশেষ জাহাজে করে নিয়ে তারা ইউরোপের বাজারে বিক্রি করত। 712 খ্রিস্টাব্দে ইরাকের গভর্নর হাজ্জাজ বিন ইউসুফ এর সেনাপতি ও জামাতা মোহাম্মদ বিন কাসেম সিন্ধু দেশে একটি সফল অভিযান করেন এবং সিন্ধুদেশ আরবীয় মুসলমানদের অধীনে চলে যায়। অভিযানের(প্রত্যক্ষ) কারণ ভারতবর্ষের প্রতি আরবদের দীর্ঘদিনের নজর ছিল। এর আ

ষোড়শ শতকীয় ইউরোপে মূল্যবিপ্লব | Price Revolution

 ষোড়শ শতকের ইউরোপে মূল্য বিপ্লব   16 শতাব্দীতে ইউরোপীয় অর্থনীতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো মূল্য বিপ্লব। নিত্যব্যবহার্য পণ্যের মূল্য প্রায় 150 বছর সুস্থির থাকার পর ঊর্ধ্বমুখী হতে আরম্ভ করে, এবং 16 শতাব্দীর শেষে খাদ্যপণ্যের মূল্যের প্রায় সাড়ে পাঁচ গুণ বেড়ে যায়। পশ্চিম ইউরোপের অর্থনীতিতে এমন অভাবনীয় এবং সুদুরপ্রসারী ফলাফলসম্পন্ন ঘটনা মূল্য বিপ্লব নামে পরিচিত। মূল্য বিপ্লবের কতগুলি সাধারণ বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। যথা--    (১) কৃষিজ পণ্যের তুলনায় শিল্পজাত পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি ছিল কম, এবং খাদ্যশস্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি। (২) ভূমি রাজস্ব সহ ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক, তোলা ইত্যাদির হার বৃদ্ধি এবং ফটকাবাজির আবির্ভাব। (৩) মূল্যবৃদ্ধির তুলনায় মজুরির হার খুবই কম ছিল বলে প্রকৃত আয় হ্রাস পেয়েছিল। (৪) ভূমি বিক্রয়যোগ্য পণ্যে পরিণত হওয়া। (৫) গ্রামীণ বুর্জোয়াজি শ্রেণীর আবির্ভাব। ষোড়শ শতকের আগেও প্রাকৃতিক কারণে মূল্যবৃদ্ধি হয়েছিল, তবে তা ছিল 2, 3 শতাংশের মতো, যা অস্বাভাবিক মনে হতো না। কিন্তু ষোল শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে যে নিরবিচ্ছিন্ন মূল্যবৃদ্ধি হয়েছিল তা জনজীবনে তীব্রভ

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ | Category of Archives

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ মহাফেজখানা বা লেখ্যাগারগুলি সাধারণ জনতার জন্য নয় মূলত গবেষক, ঐতিহাসিক, আইনবিদ, চিত্র পরিচালক প্রভৃতি পেশার লোকজন তাদের গবেষণার কাজে লেখ্যাগারে নথি পত্র দেখতে পারেন।  লেখ্যাগার পরিচালনা ও সংরক্ষিত নথির ভিত্তিতে লেখ্যাগগুলিকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়েছে।   1. সরকারি লেখ্যাগার:- কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার বা স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে যে লেখ্যাগারগুলি গড়ে ওঠে। সেগুলিকে সরকারি লেখ্যাগার বলা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এরকম সরকার পরিচালিত এক বা একাধিক লেখ্যাগার থাকে। যেমন, আমেরিকার Natonal Archive And records Administration (NARA)। ভারতবর্ষে র কেন্দ্রীয় লেখ্যাগার National Archive of India নামে পরিচিত। বিভিন্ন ঐতিহাসিক, প্রশাসনিক ও আইনগত নথি, মানচিত্র, নক্সা,  পাণ্ডুলিপি প্রভৃতি সংরক্ষিত থাকে। 2. বানিজ্যিক লেখ্যাগার:-  এটি একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানের লেখ্যাগার বিভিন্ন বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান   মূলত তাদের সংস্থার ঐতিহাসিক এবং বানিজ্যিক নথি সংরক্ষিত রাখে। যেমন, ভারতের প্রথম বানিজ্যিক লেখ্যাগার হলো পুনার Tata Centrel Archive। 3. অলাভজনক লেখ্যাগার:-   কোনো ব্যাক্তিগত বা অলাভজনক