বাংলায় মুসলীম লীগ গঠন
ব্রিটিশের বিভেদ ও শাসন নীতি, ১৯ শতকীয় হিন্দু জাতীয়তাবাদ এবং সৈয়দ আহমেদ খানের দ্বিজাতি তত্ত্বের অন্যতম ফলশ্রুতি ছিল মুসলিম সাম্প্রদায়িক রাজনীতি তথা মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠা (১৯০৬)। সমগ্র মুঘল শাসন জুড়ে এমনকি ব্রিটিশ শাসনের প্রারম্ভিক পর্বে তথা কৃষক বিদ্রোহ চলাকালীন বাংলায় সাম্প্রদায়িক হিংসার কোন খবর ছিল না। ওয়াহাবি বা ফরাজী বিদ্রোহ কতটা সাম্প্রদায়িক বিদ্রোহ ছিল তা নিয়েও প্রশ্ন থেকে যায়। কারন হিন্দু ও মুসলমান উভয় কৃষকই অত্যাচারী জমিদারের কাছারি আক্রমণ করেছিল। কিন্তু উনিশ শতকের দ্বিতীয় লগ্ন থেকে পরিস্থিতি ক্রমশ পালটাতে শুরু করে।
১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দে ভারতের জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠিত হলেও তা কার্যত সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু ভদ্রলোকেদের সংগঠনে পরিণত হয়েছিল। মুসলমানদের অন্তর্ভুক্তিকরণ ছিল যৎসামান্যই। তাছাড়া চরমপন্থী নেতারা তাঁদের প্রচার ও কার্যকলাপে মুসলমান বিদ্বেষের পরিচয় দিয়েছিলেন। পাঞ্জাব বা মহারাষ্ট্রের মত বাংলায় অতটা ব্যপক রূপ না পেলেও একথা সত্য যে, চরমপন্থীরা ব্রিটিশের পাশাপাশি গৌরবময় মুঘল বা সুলতানি শাসনকেও ভারতমাতার পরাধীনতা বলে অভিহিত করেছিলেন, যা মুসলমানদের হতাশ করত। তাছাড়া চরমপন্থী বা বিপ্লবী সংগঠনগুলিতে হিন্দু আদব-কায়দা মুসলমানদের স্বাভাবিক ভাবেই দূরে সরিয়ে দিত।
বিশ শতকের সূচনা থেকেই ভারতের অন্যান্য এলাকার মতোই বাংলার শিক্ষিত সম্প্রদায়ের মুসলমানরা নিজের সম্প্রদায়ের জন্য আলাদা একটি প্রতিষ্ঠান গঠনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করতে থাকে। এর পিছনে অন্যতম প্রধান কারণ ছিল কলকাতা কেন্দ্রিক শাসনে শিক্ষিত মুসলমানরা, যাদের বেশিরভাগই ছিলেন পূর্ব বঙ্গীয়, চাকরি-বাকরি, আইন ব্যবসা এবং রাজনীতিতে বিশেষ জায়গা করতে পারছিলেন না। শিক্ষিত মুসলমানদের মনের কথা কার্জন সরকার সহজেই উপলব্ধি করেছিলেন এবং মুসলমানদের জাতীয়তাবাদী রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে রেখে হিন্দু মুসলমান বিভেদ সৃষ্টি করার স্বার্থে ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের আয়োজন করেছিলেন। বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে উঠলেও দীর্ঘদিন সরকার তার স্থানে অনড় ছিলেন। স্বদেশী আন্দোলনের প্রবল উন্মাদনায় হিন্দু মুসলমান বিভেদ কিছুটা স্তিমিত হয়ে আসছিল। তাই পরবর্তী বড়লাট মিন্টো মুসলমানদেরকে চাকরি-বাকরির ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা প্রদানের কথা ঘোষণা করে দিয়েছিলেন এবং মুসলমান যুবকদের কাছে নিশ্চিত করেছিলেন যে, বঙ্গভঙ্গের সিদ্ধান্ত কোনো অবস্থাতেই বাতিল হবে না। এভাবে মুসলমান সম্প্রদায়কে বঙ্গভঙ্গের সমর্থকে পরিণত করতে চেয়েছিলেন।
স্বদেশী আন্দোলনে অংশগ্রহনে মুসলমানদের আরও একটি আপত্তি ছিল তাদের শ্রেনীগত অবস্থান। মুসলমানদের সিংহভাগই ছিল দরিদ্র ও সমাজের নিম্ন স্তরের মানুষ। তাদের পক্ষে সস্তা বিদেশী পণ্য বয়কট করে অপেক্ষাকৃত অধিক দাম দিয়ে স্বদেশী পণ্য ক্রয় করা যথেষ্ট কঠিন ছিল। তাছাড়া গ্রামাঞ্চলে বিদেশি পণ্য ফেরি করে অনেকেরই সংসার চলত। তারা সেই জীবিকা ছাড়তে রাজি ছিল না।
এইভাবে বাংলায় সাম্প্রদায়িক বিভাজনের যে বাতাবরন তৈরী হয়েছিল তারই সাংগঠনিক বহিপ্রকাশ ঘটল। ১৯০৬ এ অল ইন্ডিয়া মুসলীম লীগের প্রথম অধিবেশন ঢাকাতেই অনুষ্ঠিত হল ভিকার উল মুল্কের সভাপতিত্বে। ঢাকার নবাব সলমুল্লাহ সর্বভারতীয় মুসলমান সংগঠনের যে পরিকল্পনা করেছিলেন তার কিছু পরিবর্তন এনে পরকল্পনাটি গৃহীত হল।
KHUB VLO BUJTE PARLAM
উত্তরমুছুন