সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

পোস্টগুলি

জুলাই, ২০২২ থেকে পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

টোকুগাওয়া শোগুনতন্ত্রের পতন

টোকুগাওয়া শোগুনতন্ত্রের পতন  উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে জাপান বহির্বিশ্বের কাছে উন্মুক্ত হয় এবং দীর্ঘদিনের বিচ্ছিন্নতার অবসান ঘটে। এই ঘটনার কিছু দিনের মধ্যেই জাপানের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে এক সুদুরপ্রসারী পরিবর্তন ঘটে যায়। ১৬০০ খ্রিস্টাব্দে জাপানে টোকুগাওয়া শোগুনতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। প্রতীকিভাবে রাজনৈতিক ক্ষমতার শীর্ষে সম্রাটের উপস্থিতি থাকলেও শোগুনের হাতেই সমস্ত ক্ষমতা কুক্ষিগত ছিল। উনিশ শতকের গোড়া থেকেই শোগুন শাসন দুর্বল হয়ে পড়ে এবং এই শতকের শেষার্ধেই জাপানে শোগুনতন্ত্রের অবসান ঘটে এবং সম্রাটকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করা হয়, যা মেইজি পুনঃপ্রতিষ্ঠা নামেও পরিচিত। শোগুনতন্ত্রের পতনের ব্যাখ্যা বিভিন্ন পন্ডিত বিভিন্নভাবে করেছেন। অনেকেই শকুনতন্ত্রের পতনের পশ্চাদে শিন্টো ধর্মের পুনরুত্থান এবং বিদেশি বিরোধী জাপানি জাতীয়তাবাদকে দায়ী করেছেন। জাপানের বেশিরভাগ মানুষ শিন্টো ধর্ম পালন করত। কিন্তু শোগুন শাসকেরা বৌদ্ধ ধর্মকে রাষ্ট্রীয় ধর্মে পরিণত করেছিল। বৌদ্ধধর্ম চীন দেশ থেকে জাপানে এসেছিল এবং শকুন শাসকদের উপরে চীনা প্রভাবও ছিল। ১৮ শতকের প্রখ্যাত জাপানি তাত্ত্বিক নোবুনাগা মোটুরি শিন্টো ধর্ম...

ভারতের উপর প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অভিঘাত | Impact of World War-- I in India

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অভিঘাত ভারতের উপর কিভাবে পড়েছিল?   ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দে জার্মানির বিরুদ্ধে বৃটেনের যুদ্ধ ঘোষণার ফলে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সূচনা হয়। বৃটেনের উপনিবেশে হিসাবে ভারত অনিচ্ছা সত্ত্বেও এবং খানিকটা অজান্তেই এই যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। ভারতের বহু মানুষ ও সম্পদকে এই যুদ্ধে ব্যবহার করা হয়। এর ফলে ভারতের উপর যুদ্ধজনিত চাপের অনেকাংশই পড়ে, যার প্রতিফল সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে দেখা যায়। ভারতীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের অধিকাংশ ব্রিটিশদের প্রতি সমর্থন ও সহযোগিতা করেন, যুদ্ধান্তে স্বায়ত্তশাসন পাওয়ার আশায়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ দেশবাসীকে চরম অর্থনৈতিক সংকটের মুখে ফেলে দেয়। যুদ্ধ শুরু হবার সাথে সাথে সামরিক খরচ বেড়ে যায়। ফলে যুদ্ধ বাবদ ঋণ প্রচুর পরিমানে বেড়ে যায়। ফলে কর আদায়ের বেড়ে যায়। ভূমিরাজস্ব স্থিরীকৃত হয়ে গিয়েছিল বলেই ব্যবসা ও শিল্পের উপর পরোক্ষ কর বাড়ি দেওয়া হয়। এই করের বোঝা শেষ পর্যন্ত পড়ে সাধারণ মানুষের উপর দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির মাধ্যমে। অংশত পরোক্ষ কর, অংশত পরিবহন ও অন্যান্য আর্থিক অচলাবস্থার কারণে ভয়ংকর দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি দেখা দেয়। ১৯১৮-১৯ ও ১৯২০-২১ সালে দু...

রাওলাট সত্যাগ্রহ | Rawlat Satyagraha

রাওলাট সত্যাগ্রহ  চম্পারন, খেদা ও আমেদাবাদ সত্যাগ্রহের আংশিক সাফল্যের পর গান্ধী চাইলেন তার সত্যাগ্রহের অস্ত্রকে সর্বভারতীয় কোন দাবির প্রেক্ষিতে প্রয়োগ করতে। আর সে সুযোগ করে দিল রাওলাট আইন। ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে কুখ্যাত জনবিরোধি রাওলাট আইন জারি করে বলা হয়, পুলিশ যে কোনো সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে রাজদ্রোহী হিসেবে বিবেচিত করে তাকে বিশেষ আদালতে হাজির করতে পারবে, তাকে বিনা বিচারে দু'বছর আটক করে করা যাবে। এই আইনের রাজদ্রোহমূলক বলে ঘোষিত কোন পুস্তিকা বাড়িতে রাখাও রাজদ্রোহ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। নিঃসন্দেহে এই আইন ছিল ভারতীয় বিপ্লবীদের দমন করার উদ্দেশ্যে ব্রিটিশ সরকারের অগণতান্ত্রিক একটি কৌশল। সমসাময়িক পত্র-পত্রিকাগুলি এবং হোমরুল নেতারা এই জনবিরোধী আইনের প্রতিবাদে সরব হয়। গান্ধী ডাক দেন সত্যাগ্রহের। হোমরুল লীগের বহু সদস্য তাঁকে সমর্থন জানান। তবে কংগ্রেসের নরমপন্থী ও চরমপন্থী গোষ্ঠী তাঁর বিরোধিতা করে। উপবাস, প্রার্থনা এবং সভা সমিতির মাধ্যমে গান্ধী রাওলাট আইনের প্রতিবাদ করতে বলেন। কিন্তু আন্দোলন শীঘ্রই হিংসাশ্রয়ী হয়ে ওঠে, বিশেষ করে ৯ এপ্রিল গান্ধীর কারারুদ্ধ হবার পর। জনরোসের পালটা জবাবে সরকার...

বাংলায় মুসলীম লীগ গঠনের পটভূমি। Muslim Leage in Bengal

বাংলায় মুসলীম লীগ গঠন ব্রিটিশের বিভেদ ও শাসন নীতি, ১৯ শতকীয় হিন্দু জাতীয়তাবাদ এবং সৈয়দ আহমেদ খানের দ্বিজাতি তত্ত্বের অন্যতম ফলশ্রুতি ছিল মুসলিম সাম্প্রদায়িক রাজনীতি তথা মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠা (১৯০৬)। সমগ্র মুঘল শাসন জুড়ে এমনকি ব্রিটিশ শাসনের প্রারম্ভিক পর্বে তথা কৃষক বিদ্রোহ চলাকালীন বাংলায় সাম্প্রদায়িক হিংসার কোন খবর ছিল না। ওয়াহাবি বা ফরাজী বিদ্রোহ কতটা সাম্প্রদায়িক বিদ্রোহ ছিল তা নিয়েও প্রশ্ন থেকে যায়। কারন হিন্দু ও মুসলমান উভয় কৃষকই অত্যাচারী জমিদারের কাছারি আক্রমণ করেছিল। কিন্তু উনিশ শতকের দ্বিতীয় লগ্ন থেকে পরিস্থিতি ক্রমশ পালটাতে শুরু করে।  ১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দে ভারতের জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠিত হলেও তা কার্যত সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু ভদ্রলোকেদের সংগঠনে পরিণত হয়েছিল। মুসলমানদের অন্তর্ভুক্তিকরণ ছিল যৎসামান্যই। তাছাড়া চরমপন্থী নেতারা তাঁদের প্রচার ও কার্যকলাপে  মুসলমান বিদ্বেষের পরিচয় দিয়েছিলেন। পাঞ্জাব বা মহারাষ্ট্রের মত বাংলায় অতটা ব্যপক রূপ না পেলেও একথা সত্য যে, চরমপন্থীরা ব্রিটিশের পাশাপাশি গৌরবময় মুঘল বা সুলতানি শাসনকেও ভারতমাতার পরাধীনতা বলে অভিহিত করেছিলেন, যা মুস...