সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

মৌর্য সাম্রাজ্যের পতনের কারণ| Fall of Mauryan Empire

মৌর্য সাম্রাজ্যের পতনের কারণ

২৩২ খ্রিস্টপূর্বাব্দে অশোকের মৃত্যুর পর থেকে মৌর্য সাম্রাজ্যের ক্রমিক অবক্ষয়ের সূচনা হয়। গ্রীকরা হিন্দুকুশ পর্বত অতিক্রম করে ভারতবর্ষে অনুপ্রবেশ করে। ১৮৫ খ্রীষ্টপূর্বাব্দে পুষ্যমিত্র শুঙ্গ মৌর্য রাজবংশের শেষ শাসক বৃহদ্রথ কে হত্যা করে মৌর্য শাসনের অবসান ঘটান। মগধে এরপর শুরু হয় শুঙ্গ বংশের শাসন। মৌর্য সাম্রাজ্যের পতনের কারণ নিয়ে পণ্ডিতদের মধ্যে যথেষ্ট মতভেদ রয়েছে। 

পন্ডিত হরপ্রসাদ শাস্ত্রী মৌর্য সাম্রাজ্যের পতনের কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে ব্রাহ্মণ্যবাদী প্রতিক্রিয়ার তত্ত্ব তুলে ধরেছেন। তাঁর মতে অশোক শূদ্র বংশজাত ছিলেন বলে ব্রাহ্মণরা তার শাসন মেনে নিতে পারেননি। তিনি আরও দেখিয়েছেন, অশোকের একাধিক সংস্কার ব্রাহ্মণদের স্বার্থের প্রতিকুল ছিল। তাঁর পশুবলি বিরোধী বিধান এর ফলে ব্রাহ্মণদের যাগ-যজ্ঞ ও অন্যান্য আচার-অনুষ্ঠানে পশু বলির সূত্র ধরে যে আয় হতো তা বন্ধ হয়ে যায়। দ্বিতীয়ত, অশোক তার প্রথম ক্ষুদ্র গিরিশাসন যে কথাটি বলেছিলেন শাস্ত্রী তার অনুবাদ করেছেন এভাবে-- এতোকাল যাদের ভূদেব মনে করা হতো অশোক তাদের 'অমিসা দেবা' বা মিথ্যা দেবতা প্রতিপন্ন করেছেন। তৃতীয়ত, অশোক ধর্মমহাপাত্র পদ সৃষ্টি করে প্রত্যক্ষভাবে ব্রাহ্মণদের অধিকারে হস্তক্ষেপ করেছিলেন। চতুর্থত, অশোক 'দন্ডসমতা' ও 'ব্যবহারসমতা'র উপর অধিকতর জোর দেওয়ার ফলে ব্রাহ্মণরা ইতিপূর্বে বিচার ব্যবস্থায় যে সমস্ত সুযোগ সুবিধা পেতেন, যেমন মৃত্যুদণ্ড থেকে অব্যাহতি, সেগুলো থেকে বঞ্চিত হন। শাস্ত্রীর মতে ব্রাহ্মণদের এই সমস্ত চাপা অসন্তোষ বৃহদ্রথ এর দুর্বল শাসনের ওপর আছড়ে পড়ে এবং এই বিদ্রোহের নেতা পুষ্যমিত্র শুঙ্গ মৌর্য শাসনের উপর যবনিকাপাত করে।

ডক্টর হেমচন্দ্র রায়চৌধুরী ডক্টর হরপ্রসাদ শাস্ত্রী উপরিউক্ত মতামত যুক্তিসঙ্গতভাবেই খন্ডন করেছেন। প্রথমত, পুরানো মুদ্রারাক্ষস এর থেকে অনেক বেশি নির্ভরযোগ্য সিংহলি মহাবংশ মহাপরিনির্বাণ সূত্র এবং অবদান থেকে জানা যায় মৌর্য ছিলেন ক্ষত্রিয়। দ্বিতীয়ত, অশোকের অনেক আগে পবিত্র শ্রুতিতে ব্রাহ্মণরা অহিংসার ওপরে মত জ্ঞাপন করেছিলেন। ছান্দোগ্য উপনিষদ ও অহিংসার ওপর জোর দেওয়া হয়েছিল তাছাড়া অশোক কেবল যজ্ঞে নির্বিচারে পশুবলি বন্ধের কথা বলেছিলেন। তৃতীয়ত, অমিসা দেবা কথার সঠিক অনুবাদ করেছেন সিলভা লেভি। এর ফলে লাইনটির অর্থ দাঁড়ায়, এ পর্যন্ত জম্বুদ্বীপে যারা দেবতার সঙ্গে  অমিলিত ছিলেন তারাও তাদের সাথে মিলিত হলেন। অর্থাৎ এখানে ব্রাহ্মণদের হেয় করার কোন প্রশ্ন নেই। চতুর্থত, ধর্মমহাপাত্র দের অন্যতম দায়িত্ব ছিল ব্রাহ্মণদের প্রতি উদারতা প্রদর্শন করা। পঞ্চমত, ব্রাহ্মণদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া যেত না একথা ঠিক নয়; কারণ কৌটিল্য রাজদ্রোহের অপরাধে ব্রাহ্মণকে জলে ডুবিয়ে মারার বিধান দিয়েছেন। ষষ্ঠত, অশোকের পরবর্তী শাসকদের সঙ্গে ব্রাহ্মণদের তিক্ত সম্পর্কের কোনো ঐতিহাসিক প্রমাণ নেই, এমনকি কলহনের রচনায় আমরা উভয়ের মধ্যে সুসম্পর্কের কথা জানতে পারি।

ডক্টর রায়চৌধুরী মৌর্য সাম্রাজ্যের পতনের পশ্চাতে যে কারণগুলির উল্লেখ করেছেন সেগুলি হল-- এক, বিভিন্ন প্রদেশেগুলিতে, বিশেষ করে সীমান্তবর্তী এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে রাজকর্মচারীদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী মনোভাব গড়ে উঠেছিল। তক্ষশীলায় একবার বিন্দুসার এর রাজত্বকালে এবং আরেকবার অশোকের রাজত্বকাল এর বিদ্রোহ হয়েছিল। দিব্যাবদান এবং কলিঙ্গ লেখ থেকে কলিঙ্গে মৌর্য অমাত্যদের অত্যাচারের কথা জানা যায়। রায়চৌধুরীর মতে শুধু কলিঙ্গ ও তক্ষশীলা নয় উজ্জয়িনীতেও এরকম অবস্থা চলছিল। অমাত্যদের অত্যাচার বন্ধের চেষ্টা করেও বন্ধ করতে পারেননি। দুই, অশোক রাজুক নামক পদাধিকারীদের অত্যধিক স্বাধীনতা দিয়েছিলেন বলে তারাই প্রত্যন্ত এলাকাগুলিতে বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তির নেতৃত্ব দিয়েছিল। তিন, অশোক যুদ্ধনীতি ত্যাগ করে ধর্ম নীতি গ্রহণ করেছিলেন বলে সাম্রাজ্যের সামরিক শক্তি দুর্বল হয়ে পড়েছিল।

রায়চৌধুরীর যুক্তিগুলিও একেবারে সমালোচনার উর্ধে নয়। প্রথমত, দিব্যাবদান রচিত হয়েছিল অশোকের রাজত্বকাল এর অনেক পরে, তাই এর তথ্য নিয়ে সন্দেহ থেকে যায়। দ্বিতীয়ত, কলিঙ্গ লেখতে রাজকর্মচারীদের অত্যাচারের কথা বর্ণিত হলেও সেখানে যে অশোকের যথেষ্ট আধিপত্য ছিল তা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। তৃতীয়ত, নীলকন্ঠ শাস্ত্রী দেখিয়েছেন যুদ্ধ করলেই যে একটি রাষ্ট্র শক্তিশালী হয় এমন নয়; দরকার হয় সংহতি রক্ষা।র সেই দিক থেকে অশোকের ধম্মনীতি ছিল যথাযথ। রোমিলা থাপার তার অশোক এবং মৌর্য সাম্রাজ্যের পতন গ্রন্থে দেখিয়েছেন, অশোক যে সেনাবাহিনী ভেঙে দিয়েছিলেন তার কোন প্রমাণ নেই। সীমান্তে উপজাতিদের সম্পর্কে তিনি যথেষ্ট সজাগ ছিলেন। আসলে অশোক ছিলেন বাস্তববাদী শাসক। উদ্দেশ্য সিদ্ধির উপায় হিসেবে তিনি ধর্মবিজয় নীতি গ্রহণ করেছিলেন। অশোকের শান্তিবাদী নীতিকে আমরা যেভাবে দেখি তা অনেকটাই অতিরঞ্জিত।

ঐতিহাসিক রোমিলা থাপার মৌর্য সাম্রাজ্যের পতনের কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে বলেছেন মৌর্য শাসন প্রকৃতিতেই ছিল ত্রুটিপূর্ণ। এর অতিমাত্রায় কেন্দ্রীভূত হওয়ার প্রবণতা, যার সাফল্য নির্ভর করত শাসক, অনুগত কর্মচারী ও অনুগত জনতার ওপর, তা অশোক পরবর্তী দুর্বল শাসকদের পক্ষে বজায় রাখা সক্ষম হয়নি। কর্মচারী নিয়োগের নির্দিষ্ট কোনো পন্থা ছিল না। প্রাদেশিক শাসকরা প্রদেশ কর্মচারী নিয়োগ করতেন এবং প্রাদেশিক প্রভুর প্রতি তারা অনুগত থাকত। ফলে রাজনৈতিক ক্ষমতা একটি বিশেষ সামাজিক শ্রেণীর হাতে গণ্ডিবদ্ধ হয়ে পড়েছিল। এর ফলে স্থানীয় শাসন ব্যবস্থায় দলাদলি দেখা দিত। জনগণ সেখানে গুরুত্ব পেত না। শাসক ও প্ৰজার মধ্যে যে দূরত্ব তৈরি হয়েছিল তা রাষ্ট্রীয় ঐক্যের পথে প্রধান অন্তরায় হয়ে উঠেছিল। তাছাড়া মৌর্যদের গুপ্তচর ব্যবস্থাও প্রশাসনিক ক্ষেত্রে চাপা উত্তেজনার সৃষ্টি করত।

ডি ডি কোসাম্বি মৌর্য শাসনের শেষদিকে অর্থনৈতিক সংকটের প্রতি পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। মৌর্যদের শেষদিকের মুদ্রাগুলিতে, বিশেষ করে রুপার মুদ্রাতে খাদ্যের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছিল। বিশাল পরিমাণ রাজকর্মচারীদের বেতন দিতে গিয়ে রাজকোষে টান পড়ছিল। তাছাড়া অশোকের ধর্মপ্রচারজনিত কর্মসূচিতে প্রচুর খরচ বেড়ে গিয়েছিল। রোমিলা থাপার দেখিয়েছেন কৃষি সম্প্রসারণ সেইভাবে না হওয়ায় বর্ধিষ্ণু খরচের সাথে সামঞ্জস্য ছিলনা। তার উপর অশোকের ব্যাপক দানকর্ম ও জনকল্যাণমূলক কাজের খরচ রাজকোষের উপরে চাপ সৃষ্টি করেছিল। এই বর্ধিষ্ণু খরচের চাপেই অশোক পরবর্তী মৌর্য শাসক করের হার বৃদ্ধি করেছিলেন। এর ফলেই গণবিদ্রোহজনিত চেতনার বিকাশ ঘটেছিল বলে তারা মনে করেন।

Reasons for the Fall of the Maurya Empire

The decline of the Maurya Empire began after Ashoka’s death in 232 BCE. Greek forces crossed the Hindu Kush and invaded India. In 185 BCE, Pushyamitra Shunga assassinated the last Mauryan ruler, Brihadratha, marking the end of Mauryan rule and the beginning of the Shunga dynasty in Magadha. Scholars have differing opinions on the causes of the Maurya Empire's downfall.

Historian Haraprasad Shastri suggested the theory of Brahminical backlash. According to him, since Ashoka was of Shudra origin, the Brahmins could not accept his rule. Shastri also argued that many of Ashoka's reforms were against the interests of the Brahmins. For instance, Ashoka’s ban on animal sacrifices affected the Brahmins' income from rituals involving animal offerings. Secondly, in his first minor rock edict, Ashoka referred to those previously regarded as “Bhudevas” (earthly gods) as “Amisa Devas” or false gods, which Shastri interpreted as a challenge to Brahminical authority. Thirdly, Ashoka created the position of Dhamma Mahamatras, which directly intervened in Brahmin control. Fourthly, by emphasizing “equality in punishment” and “equality in justice,” Ashoka denied the Brahmins privileges such as exemption from the death penalty. Shastri suggested that the Brahmins’ growing resentment culminated in a revolt during Brihadratha’s weak reign, led by Pushyamitra Shunga, bringing an end to Mauryan rule.

Dr. Hemchandra Raychaudhuri, however, critically challenged Haraprasad Shastri’s theories. First, he argued that Mauryas were Kshatriyas, as confirmed by more reliable sources like the Mahavamsa and Mahaparinirvana Sutra, rather than the unreliable text Mudrarakshasa. Second, centuries before Ashoka, Brahmins had already supported the principle of non-violence in sacred texts like the Chandogya Upanishada, and Ashoka’s ban only applied to arbitrary animal sacrifices. Third, the term "Amisa Deva" was mistranslated by Shastri; French historian Sylvain Lévi correctly interpreted it to mean "those who had not previously associated with the gods are now united with them." Thus, there was no disrespect towards the Brahmins. Fourth, one of the duties of the Dhamma Mahamatras was to ensure the welfare of the Brahmins and Shramanas. Fifth, contrary to Shastri’s claims, the Arthashastra allowed for the punishment of Brahmins for certain crimes like sedition. Sixth, there is no historical evidence of tensions between the Brahmins and subsequent Mauryan rulers after Ashoka, as even Kalhana’s writings suggest cordial relations between them.

Dr. Raychaudhuri identified several other factors contributing to the decline of the Maurya Empire. First, in various provinces, especially in the frontier regions, rebellion against the oppressive rule of royal officials had been growing for some time. Rebellions occurred in Taxila during the reigns of Bindusara and Ashoka. The Divyavadana and the Kalinga edicts also mention the oppression of officials in Kalinga. According to Raychaudhuri, not only Kalinga and Taxila but also Ujjain faced similar situations. Ashoka attempted but failed to curb the officials’ misconduct. Secondly, Ashoka gave too much autonomy to the Rajuks (governors), who later led separatist movements in the frontier provinces. Thirdly, Ashoka’s abandonment of military conquest in favor of the policy of Dhamma weakened the empire's military strength.

However, Raychaudhuri’s arguments are not entirely free from criticism. First, the Divyavadana was written long after Ashoka’s reign, raising doubts about its accuracy. Second, although the Kalinga edicts mention the oppression of officials, Ashoka maintained substantial authority there. Third, as Nilakanta Shastri pointed out, merely engaging in warfare does not guarantee a strong state; maintaining internal cohesion is equally important. From that perspective, Ashoka's policy of Dhamma was appropriate. Romila Thapar, in her book Ashoka and the Decline of the Mauryas, noted that there is no evidence Ashoka disbanded the army; in fact, he was vigilant about the border tribes. Ashoka was a pragmatic ruler who used the policy of Dhamma as a means to achieve his objectives. His pacifist policies are often exaggerated.

Romila Thapar argued that the Maurya Empire's decline was inevitable due to inherent flaws in its administrative system. The empire was overly centralized, with its success dependent on the loyalty of the ruler, officials, and subjects. After Ashoka, weak rulers could not maintain this system. There was no standardized method for recruiting officials, with provincial rulers appointing them instead. These officials, loyal to the provincial rulers, gradually confined political power to a specific social class, leading to factionalism in the local administration and alienation of the general populace. This gap between the rulers and the subjects became a major obstacle to national unity. Additionally, the Mauryas’ spy system created a sense of unease in the administration.

D. D. Kosambi drew attention to the economic crisis towards the end of Mauryan rule. The silver content in later Mauryan coins had decreased due to a shortage of funds to pay the large number of royal officials. Furthermore, Ashoka’s extensive program of religious propaganda led to increased expenditures. Romila Thapar noted that agricultural expansion had not progressed sufficiently to meet the growing costs. Additionally, Ashoka’s lavish charitable activities and welfare programs strained the royal treasury. To cope with this financial pressure, the post-Ashoka Mauryan rulers raised taxes, which further fueled discontent and contributed to the rise of popular uprisings.

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আরবদের সিন্ধু অভিযান | কারণ ও তাৎপর্য

আরবদের সিন্ধু অভিযান | কারণ ও তাৎপর্য Please visit our Homepage and subscribe us. Suggested Topics || Ghajnavid Invasion || গজনী আক্রমণ || || মামুদের সোমনাথ মন্দির লুণ্ঠন || Somnath Temple Plunder || || তরাইনের যুদ্ধ ও তার গুরুত্ত্ব || মহম্মদ ঘুরির ভারত আক্রমন ও তার চরিত্র || সপ্তম শতকের প্রথমার্ধে আরবদেশে ইসলামের আবির্ভাব ঘটে। ইসলাম আরবদের নতুন করে জীবনীশক্তির সঞ্চার করে । ইসলাম ক্রমশ: একটি ধর্ম থেকে রাজনৈতিক শক্তি রূপে আত্মপ্রকাশ করে। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় তারা আরবীয় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। ভারতবর্ষের সঙ্গে আরবদের যোগাযোগ দীর্ঘদিনের। বাণিজ্যিক সূত্রে তারা নিয়মিত ভারতের উপকূল গুলিতে, বিশেষ করে মালাবার উপকূলে আসত। ভারতীয় ও চীনা পণ্য 'ধাও' নামক বিশেষ জাহাজে করে নিয়ে তারা ইউরোপের বাজারে বিক্রি করত। 712 খ্রিস্টাব্দে ইরাকের গভর্নর হাজ্জাজ বিন ইউসুফ এর সেনাপতি ও জামাতা মোহাম্মদ বিন কাসেম সিন্ধু দেশে একটি সফল অভিযান করেন এবং সিন্ধুদেশ আরবীয় মুসলমানদের অধীনে চলে যায়। অভিযানের(প্রত্যক্ষ) কারণ ভারতবর্ষের প্রতি আরবদের দীর্ঘদিনের নজর ছিল। এর আ...

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ | Category of Archives

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ মহাফেজখানা বা লেখ্যাগারগুলি সাধারণ জনতার জন্য নয় মূলত গবেষক, ঐতিহাসিক, আইনবিদ, চিত্র পরিচালক প্রভৃতি পেশার লোকজন তাদের গবেষণার কাজে লেখ্যাগারে নথি পত্র দেখতে পারেন।  লেখ্যাগার পরিচালনা ও সংরক্ষিত নথির ভিত্তিতে লেখ্যাগগুলিকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়েছে।   1. সরকারি লেখ্যাগার:- কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার বা স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে যে লেখ্যাগারগুলি গড়ে ওঠে। সেগুলিকে সরকারি লেখ্যাগার বলা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এরকম সরকার পরিচালিত এক বা একাধিক লেখ্যাগার থাকে। যেমন, আমেরিকার Natonal Archive And records Administration (NARA)। ভারতবর্ষে র কেন্দ্রীয় লেখ্যাগার National Archive of India নামে পরিচিত। বিভিন্ন ঐতিহাসিক, প্রশাসনিক ও আইনগত নথি, মানচিত্র, নক্সা,  পাণ্ডুলিপি প্রভৃতি সংরক্ষিত থাকে। 2. বানিজ্যিক লেখ্যাগার:-  এটি একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানের লেখ্যাগার বিভিন্ন বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান   মূলত তাদের সংস্থার ঐতিহাসিক এবং বানিজ্যিক নথি সংরক্ষিত রাখে। যেমন, ভারতের প্রথম বানিজ্যিক লেখ্যাগার হলো পুনার Tata Centrel Archive। 3. অলাভজনক লেখ্যাগ...

ষোড়শ শতকীয় ইউরোপে মূল্যবিপ্লব | Price Revolution

 ষোড়শ শতকের ইউরোপে মূল্য বিপ্লব   16 শতাব্দীতে ইউরোপীয় অর্থনীতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো মূল্য বিপ্লব। নিত্যব্যবহার্য পণ্যের মূল্য প্রায় 150 বছর সুস্থির থাকার পর ঊর্ধ্বমুখী হতে আরম্ভ করে, এবং 16 শতাব্দীর শেষে খাদ্যপণ্যের মূল্যের প্রায় সাড়ে পাঁচ গুণ বেড়ে যায়। পশ্চিম ইউরোপের অর্থনীতিতে এমন অভাবনীয় এবং সুদুরপ্রসারী ফলাফলসম্পন্ন ঘটনা মূল্য বিপ্লব নামে পরিচিত। মূল্য বিপ্লবের কতগুলি সাধারণ বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। যথা--    (১) কৃষিজ পণ্যের তুলনায় শিল্পজাত পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি ছিল কম, এবং খাদ্যশস্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি। (২) ভূমি রাজস্ব সহ ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক, তোলা ইত্যাদির হার বৃদ্ধি এবং ফটকাবাজির আবির্ভাব। (৩) মূল্যবৃদ্ধির তুলনায় মজুরির হার খুবই কম ছিল বলে প্রকৃত আয় হ্রাস পেয়েছিল। (৪) ভূমি বিক্রয়যোগ্য পণ্যে পরিণত হওয়া। (৫) গ্রামীণ বুর্জোয়াজি শ্রেণীর আবির্ভাব। ষোড়শ শতকের আগেও প্রাকৃতিক কারণে মূল্যবৃদ্ধি হয়েছিল, তবে তা ছিল 2, 3 শতাংশের মতো, যা অস্বাভাবিক মনে হতো না। কিন্তু ষোল শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে যে নিরবিচ্ছিন্ন মূল্যবৃদ্ধি হ...