সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

কলিঙ্গ যুদ্ধের তাৎপর্য | Ashoka: Importance of Kalinga War

কলিঙ্গ যুদ্ধের তাৎপর্য

অশোক তার চল্লিশ বছরের শাসনকালের মাত্র একটি যুদ্ধ করেছিল। সেটি হল কলিঙ্গ যুদ্ধ। এই যুদ্ধের বিবরণ পাওয়া যায় তার ত্রয়োদশ গিরি অনুশাসনে। অশোকের পূর্বেও মৌর্য সম্রাট রা কলিঙ্গ আক্রমণ করেছিলেন ৩২১ খ্রিস্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত কলিঙ্গ ছিল নন্দ রাজাদের অধীনে। চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য কলিঙ্গ জয় চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু সফল হননি। অশোক তার রাজ্জাকের অষ্টম তম বর্ষ অতিক্রান্ত হলে অর্থাৎ তার ত্রয়োদশ রাজ্যবর্ষে কলিঙ্গ জয় করেন। 

কলিঙ্গ আক্রমণের পশ্চাতে অশোকের সাম্রাজ্যবাদী আকাঙ্ক্ষা ছিল তা অস্বীকার করার উপায় নেই কিন্তু এই অভিযানের পশ্চাতে যথেষ্ট পরিমাণে অর্থনৈতিক স্বার্থও ছিল। বঙ্গোপসাগরের তীরে অবস্থিত স্বাধীন, সমৃদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ রাজ্য কলিঙ্গ। কলিঙ্গের সমৃদ্ধির পথে এখানকার দক্ষ কারিগর এবং উন্নত সমুদ্র বাণিজ্য। সমুদ্র বাণিজ্যের জন্যই কলিঙ্গের বন্দর গুলি যথেষ্ট গুরুত্ব অর্জন করেছিল এবং এখানকার নৌবাহিনী ছিল উল্লেখযোগ্য। এই সমৃদ্ধিকে হস্তগত করার জন্য অশোক কলিঙ্গ জয়ে উৎসাহী হয়েছিলেন।

কলিঙ্গ যুদ্ধ লক্ষাধিক প্রাণহানি ঘটেছিল এবং অসংখ্য মানুষকে যুদ্ধবন্দী করা হয়েছিল। যুদ্ধে পরাজয়ের পর কলিঙ্গ মৌর্য সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়। কিন্তু কলিঙ্গ যুদ্ধের ভয়াবহ হিংসা অশোককে গভীরভাবে অনুশোচিত করে। তীব্র অনুশোচনার ফলে অশোক পাকাপাকিভাবে যুদ্ধনীতি ত্যাগ করেন। এর ফলে বিম্বিসারের অঙ্গ জয়ের মধ্য দিয়ে যে মগধ সাম্রাজ্যের সূচনা হয়েছিল কলিঙ্গ জয় ও কলিঙ্গের সাম্রাজ্যভুক্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে সেই প্রক্রিয়া পরিণতি ও পূর্ণচ্ছেদ ঘোষিত হয়। বিজয়ী শাসকের এইভাবে যুদ্ধনীতি ত্যাগের ঘটনা কেবল ভারতে নয় সমগ্র বিশ্বের ইতিহাসে আর মেলে না। তবে অশোকের অনুতাপ ও অনুশোচনা সন্দেহের ঊর্ধ্বে এ কথা স্বীকার করলেও কয়েকটি বিষয় নতুন করে প্রশ্ন তুলে আনে। কারণ অশোক কলিঙ্গের উপর কর্তৃত্ব ত্যাগ করেননি বরং কলিঙ্গকে নিজ প্রশাসনিক প্রধান্যের অধীনে রেখেছিলেন। তৃতীয়তঃ অশোক যুদ্ধনীতি ত্যাগ করার কথা ঘোষণা করলেও সৈন্যবাহিনী ভেঙে দেন নি। সুতরাং তিনি প্রয়োজনে ভবিষ্যতে যুদ্ধ করতে প্রস্তুত ছিলেন, কেবল সাম্রাজ্যবাদী নীতি পরিহার করেছিলেন মাত্র।

Significance of the Kalinga War

Ashoka fought only one war during his forty-year reign, and that was the Kalinga War. The details of this war are found in his thirteenth rock edict. Before Ashoka, Mauryan emperors had also attempted to invade Kalinga. Until 321 BCE, Kalinga was under the rule of the Nanda kings. Chandragupta Maurya tried to conquer Kalinga but was unsuccessful. Ashoka finally achieved victory over Kalinga in the thirteenth year of his reign, after passing his eighth year on the throne.


While it cannot be denied that Ashoka's imperialistic ambitions played a role in his invasion of Kalinga, economic interests were also a significant factor behind this campaign. Kalinga, located on the shores of the Bay of Bengal, was an independent, prosperous, and peaceful state. Its wealth was driven by skilled artisans and advanced maritime trade. Kalinga's ports were of great importance due to their sea trade, and its navy was noteworthy. Ashoka was eager to conquer Kalinga to seize this prosperity.


The Kalinga War resulted in the deaths of hundreds of thousands and led to countless people being taken as prisoners of war. After its defeat, Kalinga became part of the Mauryan Empire. However, the horrific violence of the war deeply moved Ashoka to profound regret. As a result of this intense remorse, Ashoka permanently renounced his policy of war. With the conquest of Kalinga, the process that began with Bimbisara's conquest of Anga and led to the rise of the Magadha Empire reached its culmination and final conclusion. The renunciation of war by a victorious ruler is a rare event not only in India but in the history of the entire world.


While Ashoka's repentance and remorse are beyond doubt, some aspects raise new questions. Although Ashoka renounced warfare, he did not relinquish his authority over Kalinga; instead, he kept Kalinga under his administrative control. Furthermore, although Ashoka declared his abandonment of war, he did not disband his military. This suggests that he was prepared for future conflicts if necessary, though he had merely abandoned his imperialistic policies.

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আরবদের সিন্ধু অভিযান | কারণ ও তাৎপর্য

আরবদের সিন্ধু অভিযান | কারণ ও তাৎপর্য Please visit our Homepage and subscribe us. Suggested Topics || Ghajnavid Invasion || গজনী আক্রমণ || || মামুদের সোমনাথ মন্দির লুণ্ঠন || Somnath Temple Plunder || || তরাইনের যুদ্ধ ও তার গুরুত্ত্ব || মহম্মদ ঘুরির ভারত আক্রমন ও তার চরিত্র || সপ্তম শতকের প্রথমার্ধে আরবদেশে ইসলামের আবির্ভাব ঘটে। ইসলাম আরবদের নতুন করে জীবনীশক্তির সঞ্চার করে । ইসলাম ক্রমশ: একটি ধর্ম থেকে রাজনৈতিক শক্তি রূপে আত্মপ্রকাশ করে। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় তারা আরবীয় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। ভারতবর্ষের সঙ্গে আরবদের যোগাযোগ দীর্ঘদিনের। বাণিজ্যিক সূত্রে তারা নিয়মিত ভারতের উপকূল গুলিতে, বিশেষ করে মালাবার উপকূলে আসত। ভারতীয় ও চীনা পণ্য 'ধাও' নামক বিশেষ জাহাজে করে নিয়ে তারা ইউরোপের বাজারে বিক্রি করত। 712 খ্রিস্টাব্দে ইরাকের গভর্নর হাজ্জাজ বিন ইউসুফ এর সেনাপতি ও জামাতা মোহাম্মদ বিন কাসেম সিন্ধু দেশে একটি সফল অভিযান করেন এবং সিন্ধুদেশ আরবীয় মুসলমানদের অধীনে চলে যায়। অভিযানের(প্রত্যক্ষ) কারণ ভারতবর্ষের প্রতি আরবদের দীর্ঘদিনের নজর ছিল। এর আ...

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ | Category of Archives

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ মহাফেজখানা বা লেখ্যাগারগুলি সাধারণ জনতার জন্য নয় মূলত গবেষক, ঐতিহাসিক, আইনবিদ, চিত্র পরিচালক প্রভৃতি পেশার লোকজন তাদের গবেষণার কাজে লেখ্যাগারে নথি পত্র দেখতে পারেন।  লেখ্যাগার পরিচালনা ও সংরক্ষিত নথির ভিত্তিতে লেখ্যাগগুলিকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়েছে।   1. সরকারি লেখ্যাগার:- কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার বা স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে যে লেখ্যাগারগুলি গড়ে ওঠে। সেগুলিকে সরকারি লেখ্যাগার বলা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এরকম সরকার পরিচালিত এক বা একাধিক লেখ্যাগার থাকে। যেমন, আমেরিকার Natonal Archive And records Administration (NARA)। ভারতবর্ষে র কেন্দ্রীয় লেখ্যাগার National Archive of India নামে পরিচিত। বিভিন্ন ঐতিহাসিক, প্রশাসনিক ও আইনগত নথি, মানচিত্র, নক্সা,  পাণ্ডুলিপি প্রভৃতি সংরক্ষিত থাকে। 2. বানিজ্যিক লেখ্যাগার:-  এটি একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানের লেখ্যাগার বিভিন্ন বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান   মূলত তাদের সংস্থার ঐতিহাসিক এবং বানিজ্যিক নথি সংরক্ষিত রাখে। যেমন, ভারতের প্রথম বানিজ্যিক লেখ্যাগার হলো পুনার Tata Centrel Archive। 3. অলাভজনক লেখ্যাগ...

ষোড়শ শতকীয় ইউরোপে মূল্যবিপ্লব | Price Revolution

 ষোড়শ শতকের ইউরোপে মূল্য বিপ্লব   16 শতাব্দীতে ইউরোপীয় অর্থনীতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো মূল্য বিপ্লব। নিত্যব্যবহার্য পণ্যের মূল্য প্রায় 150 বছর সুস্থির থাকার পর ঊর্ধ্বমুখী হতে আরম্ভ করে, এবং 16 শতাব্দীর শেষে খাদ্যপণ্যের মূল্যের প্রায় সাড়ে পাঁচ গুণ বেড়ে যায়। পশ্চিম ইউরোপের অর্থনীতিতে এমন অভাবনীয় এবং সুদুরপ্রসারী ফলাফলসম্পন্ন ঘটনা মূল্য বিপ্লব নামে পরিচিত। মূল্য বিপ্লবের কতগুলি সাধারণ বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। যথা--    (১) কৃষিজ পণ্যের তুলনায় শিল্পজাত পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি ছিল কম, এবং খাদ্যশস্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি। (২) ভূমি রাজস্ব সহ ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক, তোলা ইত্যাদির হার বৃদ্ধি এবং ফটকাবাজির আবির্ভাব। (৩) মূল্যবৃদ্ধির তুলনায় মজুরির হার খুবই কম ছিল বলে প্রকৃত আয় হ্রাস পেয়েছিল। (৪) ভূমি বিক্রয়যোগ্য পণ্যে পরিণত হওয়া। (৫) গ্রামীণ বুর্জোয়াজি শ্রেণীর আবির্ভাব। ষোড়শ শতকের আগেও প্রাকৃতিক কারণে মূল্যবৃদ্ধি হয়েছিল, তবে তা ছিল 2, 3 শতাংশের মতো, যা অস্বাভাবিক মনে হতো না। কিন্তু ষোল শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে যে নিরবিচ্ছিন্ন মূল্যবৃদ্ধি হ...