প্রাচীন রোমের দাস ব্যবস্থার স্বরূপ আলোচনা কর।
প্রাচীন রোমান সভ্যতার অন্যতম প্রতিষ্ঠান ছিল ক্রীতদাস ব্যবস্থা। সমগ্র জনসংখ্যার প্রায় ৩৫ শতাংশই ছিল দাস। রোমের এহেন সমাজব্যবস্থাকে ঐতিহাসিকগণ দাস সমাজ বলে অভিহিত করেছেন। খ্রিস্ট পূর্ব পঞ্চম শতক থেকে পশ্চিম রোমান সাম্রাজ্যের পতন পর্যন্ত রোমের ক্রীতদাস প্রথার অস্তিত্ব ছিল। রোমান সমাজ এবং অর্থনীতি অসম্ভব ভাবে দাস নির্ভর হয়ে উঠেছিল।
কোন কোন উৎস থেকে রোমে দাস সংগ্রহ করা হতো তা পৃথিবীর অন্যান্য জায়গা থেকে খুব একটা পৃথক নয়। রোমে দাস সংগ্রহের প্রধানতম উৎস ছিল যুদ্ধ। যুদ্ধে পরাজিত পুরুষ মহিলা এবং শিশুদের দাসে পরিণত করা হত। বহু ক্ষেত্রে পিতা-মাতা কর্তৃক পরিত্যক্ত অবাঞ্ছিত সন্তানদের দাসে পরিণত করা হত। কতকগুলি অপরাধের শাস্তি হিসেবেও দাসে পরিণত করার প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাছাড়া বংশানুক্রমিকভাবে একজন দাস বা দাসীর সন্তান অনিবার্যভাবে দাসত্ব বরণ করতে বাধ্য ছিল। এই সমস্ত উৎসের মধ্যে সম্ভবত যুদ্ধ ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উৎস; কারণ রোমান শাসকরা অনবরত যুদ্ধে লিপ্ত থাকতেন এবং পরাজিত এলাকার উপরে নিউজ প্রভুত্ব স্থাপন করতেন।
পূর্বেই বলা হয়েছে যে, রোমের সমাজ ও অর্থনীতি বহুলাংশেই দাস ব্যবস্থার ওপর নির্ভরশীল ছিল। দাসদের দিয়ে একাধিক কাজ করানো হত। গার্হস্থ্য কর্ম থেকে শুরু করে সাম্রাজ্যের সরকারি কাজকর্ম তথা লেখালিখি পর্যন্ত দাসদের দিয়ে করানো হত। শহরের কারিগরি শিল্প, গ্রামের কৃষিকাজে এবং খনিতে দাসদের নিয়োগ করা হত। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গেছে যে দাসীদের যৌন বৃত্তিতে কাজে লাগানো হতো। বস্তুত দাসদের শ্রম এর উপরেই প্রাচীন রোমের বিলাসবহুল জীবনযাত্রার ইমারত নির্মিত হয়েছিল। দেখা গেছে যে একজন রোমান অভিজাতের গৃহে ১০০ থেকে ১৫০ জন দাস কাজ করতেন। বোঝাই যায় রোমান অভিজাতদের জীবন কতটা দাস নির্ভর ছিল।
দাসদের জীবন অবশ্যই দুর্বিষহ ছিল। কারণ তারা ছিল রোমান অভিজাতদের ব্যক্তিগত সম্পত্তি। দাস এর ওপর মালিকের কর্তৃত্ব ছিল নিরঙ্কুশ। তারা চাইলে দাসদের কেনাবেচা করতে পারত। রোমে একাধিক দাস বাজার ছিল। সবচেয়ে বড় বাজার ছিল ইজিয়ান সাগরের ডেলস দ্বীপে অবস্থিত। মালিক যেমন খুশি তাদের সঙ্গে ব্যবহার করতে পারত। দাসদের ব্যক্তিগত অধিকার বলতে কিছু ছিল না। দিনে ১৮ ঘণ্টার বেশি তাদের কাজ করতে হত। তাই তাদের আয়ু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ২৫ বছরের বেশি হত না। তবে সহানুভূতি যে একেবারেই ছিল না তা নয়। সেগুলো ব্যক্তিভেদে ভিন্ন ভিন্ন হতো। তবে সতুরনালিয়ার মত আনুষ্ঠানিক সহানুভূতি জানানোর উৎসব সে যুগে চালু ছিল।
রোমান দাসপ্রথার এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হল গ্লাডিয়েটর। সবচেয়ে উদ্যমী এবং বলিষ্ঠ দাসদের অস্ত্রবিদ্যায় প্রশিক্ষিত করা হত। অস্ত্র বিদ্যায় সুশিক্ষিত দাসদের নিজেদের মধ্যে লড়াই করে অভিজাত শ্রেণীর মনোরঞ্জন করতে হত। এরাই গ্ল্যাডিয়েটর নামে পরিচিত ছিল। যে মঞ্চে গ্ল্যাডিয়েটররা একে অপরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করত তাকে বলা হত Amphitheatre এবং এর কেন্দ্রবিন্দু ছিল বালিচাপা একটি জায়গা, যাকে arena বলা হত। ঠিক অ্যারেনায় দাঁড়িয়ে দুই সশস্ত্র গ্ল্যাডিয়েটর একে অপরের বিরুদ্ধে আমরণ যুদ্ধ করত। একজনের মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত লড়াই চলত। এই লড়াই যে কেবল মানুষে-মানুষে হত তা নয়, কখনো কখনো হিংস্র জন্তুর বিরুদ্ধেও গ্ল্যাডিয়েটরকে লড়াই করে অভিজাতদের পৈশাচিক আনন্দ দিতে হত। ৬০ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ নারী গ্ল্যাডিয়েটরদের অস্তিত্বও চোখে পড়ে। তবে দাস যোদ্ধাদের ওপরে এই অত্যাচার তারা যে নিরবে সহ্য করেছিল এমনটা নয়। ৭৩-৭১ খ্রীষ্টপূর্বাব্দে দাসরা স্পার্টাকাসের নেতৃত্বে সহিংস বিদ্রোহে অবতীর্ণ হয়েছিল। যদিও তা ব্যর্থ হয়েছিল।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন