NATO
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাৎসি জার্মানির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলে এবং হিটলারকে পরাজিত করে সোভিয়েত ইউনিয়নের সামরিক বাহিনীর শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণিত হয়েছিল। অন্যদিকে, জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকির ওপরে পারমাণবিক বিষ্ফোরণ ঘটিয়ে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র বোঝাতে চেয়েছিল যে, তারা সোভিয়েতের Red Army -র থেকেও শক্তিশালী। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সোভিয়েত মার্কিন স্নায়ুযুদ্ধের বাতাবরণে 1949 সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের সফল পারমাণবিক বিস্ফোরণ আমেরিকার একচেটিয়া পারমাণবিক আধিপত্যের অবসান ঘটায়। এই প্রেক্ষিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপে 'সাম্যবাদী সম্প্রসারণ' প্রতিহত করতে এবং পুঁজিবাদের চরিত্র বজায় রাখতে 1949 সালে এপ্রিল মাসে আমেরিকা 12টি পশ্চিম ইউরোপীয় রাষ্ট্রকে সঙ্গে নিয়ে যৌথভাবে একটি সামরিক জোট গঠন করে। এই শক্তি জোট 'North Atlantic treaty organisation' (NATO) নামে পরিচিত।
NATO গঠনের উদ্যোগ দেখা গিয়েছিল 1948 সালে। ওই বছর মার্চ মাসে ব্রিটেন, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ড, বেলজিয়াম, লাক্সেম্বোর্গ এই পাঁচটি ইউরোপীয় রাষ্ট্র মিলে ব্রাসেলস -এ একটি যৌথ সামরিক চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল। এর মূল বক্তব্য ছিল কোন চুক্তিবদ্ধ রাষ্ট্র বৈদেশিক আক্রমণের মুখে পড়লে চুক্তিবদ্ধ সব রাষ্ট্র মিলে একসাথে তার পাশে দাঁড়াবে। 1949 সালে গঠিত NATO -র সদস্য ছিল আমেরিকা, বেলজিয়াম, ক্যানাডা, ডেনমার্ক, ফ্রান্স, গ্রীস, আইসল্যান্ড, লাক্সেমবার্গ, নেদারল্যান্ডস, পর্তুগাল ও ব্রিটেন। পরবর্তীকালে তুরস্ক ও পশ্চিম জার্মানি এই সামরিক মোর্চার সামিল হয়েছিল। NATO -র হেডকোয়ার্টার ছিল প্যারিসে।
সোভিয়েত ইউনিয়নের শক্তি ও প্রতিপত্তি কে সংযত করা এবং পুঁজিবাদী বিশ্বের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার পাশাপাশি NATO গঠনের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল বার্লিন সংকট মোকাবেলা করা। সোভিয়েত ইউনিয়নের চোখে NATO ছিল একটি অশুভ আঁতাত জনিত আক্রমণমুখী ও আগ্রাসী সামরিক সংঘ। NATO প্রতিষ্ঠা আমেরিকার দীর্ঘদিনের অনুসৃত মনরো নীতির অবসান ঘটিয়ে সক্রিয় বিদেশ নীতির সূচনা করল। এরকম আরও অনেকগুলি জোট আমেরিকার পরবর্তীকালে গড়ে তুলল। সোভিয়েত ইউনিয়নও অনুরূপ সামরিক চুক্তি Warshaw Pact স্বাক্ষর করল। এইভাবে বিশ্বে যেন আবার মহাযুদ্ধের সম্ভাবনা গড়ে উঠতে থাকল।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন