সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ভৌগোলিক আবিষ্কারের প্রেরণা ৷ Inspiration behind the Exploration of the New World

ভৌগোলিক আবিষ্কারের প্রেরণা 

পঞ্চদশ শতকের ইউরোপের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ঘটনা হলো পর্তুগাল ও স্পেনের নেতৃত্বে নিরন্তর সামুদ্রিক অভিযাত্রা। ইউরোপীয় নাবিকরা তাদের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় আফ্রিকা, এশিয়া এবং আমেরিকায় পৌঁছায়। এই ভৌগোলিক আবিষ্কারের কিছু অনুপ্রেরণা নিঃসন্দেহে কাজ করেছিল।

মধ্যযুগে ইউরোপের ভৌগলিক ধারণা ছিল খুবই কম। সৌরকেন্দ্রিক মহাবিশ্বের ধারণা তখনো ছিলনা। মনে করা হতো পৃথিবীটা চ্যাপ্টা থালার মত, গরম দেশে সমুদ্রের জল ফুটন্ত হয় বা পশ্চিম দিকের সমুদ্রে ভয়ঙ্কর জীবেরা বাস করে। মধ্যযুগের শেষ দিকে এই ধারণাগুলো ক্রমশ বাতিল হতে থাকে। বেশকিছু আরবিও পর্যটকদের ভ্রমণ বৃত্তান্ত সম্পর্কে তারা পরিচিত হয়েছিলেন। ইহুদি মানচিত্রকরদের কাছ থেকেও বেশ কিছু তথ্য তারা পেয়েছিলেন। কিন্তু পঞ্চদশ শতকে মানচিত্র নির্মাণে যে বিপ্লব এসে যায় তা অভিযাত্রীদের বুকে বল সঞ্চয় করে। এ প্রসঙ্গে জেরাল্ডস মেরকেটর এর বিশ্বমানের মানচিত্র বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

ভৌগলিক অভিযান করার পেছনে অর্থনৈতিক স্বার্থ তো অবশ্যই ছিল। জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য এবং খনিজ সম্পদ ইউরোপের ছিল। কিন্তু সুতিবস্ত্র, রেশম, মসলা ইত্যাদির জন্য তাদেরকে অন্য মহাদেশের উপর, বিশেষ করে এশিয়ার উপর নির্ভর করতে হতো। এছাড়া সোনা, রুপাও যথেষ্ট পরিমাণে পাওয়া যেত না। এই সমস্ত পণ্যের বাণিজ্য ইতালি ও মুসলিম বণিকদের উপর নির্ভরশীল ছিল। 1453 খ্রিস্টাব্দে কনস্টান্টিনোপলের পতনের পর এই বাণিজ্য বিশেষ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। ফলে চাহিদার তুলনায় আমদানি এতটাই কমে যাচ্ছিল যে ওই সমস্ত দেশে সরাসরি যোগাযোগের রাস্তা আবিষ্কার ছাড়া ইউরোপের আর কোনো পথ ছিল না।

ভৌগলিক অভিযানের জন্য যে ধরনের উপকূলীয় অবস্থান প্রয়োজন ছিল তা আইবেরীয় উপদ্বীপ অর্থাৎ স্পেন ও পর্তুগালের ছিল। তাই দেখা যায় যে এই দুটি দেশই ভৌগোলিক অভিযানে অগ্রগামী হয়েছিল। ভৌগলিক কারণেই লিসবন, কাদিজ ও সেভিল অভিযানের সূচনাবিন্দু হয়েছিল।

ভৌগলিক অভিযান এর পিছনে ধর্মের অনুপ্রেরণাও ছিল। কনস্টান্টিনোপলের পতনের ফলে ইসলাম ইউরোপে অনুপ্রবেশ করেছিল, যা ইউরোপীয়দের পুনরায় ক্রুসেড মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট ছিল। সমুদ্র বাণিজ্য দখলের মধ্য দিয়ে ইসলামের মোকাবিলা করা ছিল অন্যতম উদ্দেশ্য। এর পাশাপাশি খ্রিস্টান ধর্মপ্রচারকদের যথেষ্ট চাপ ছিল।

The inspiration behind the Exploration of the New World

The greatest event in the history of fifteenth-century Europe was the constant naval expeditions led by Portugal and Spain. European sailors reach Africa, Asia and America through their tireless efforts. Some inspiration worked before this naval expedition undoubtedly.

The geographical concept of Europe in the Middle Ages was very little. The idea of ​​a solar-centric universe did not exist yet. The earth was thought to be like a flattened dish, with hot seas boiling in hot countries or terrifying creatures living in the western seas. Towards the end of the Middle Ages, these ideas gradually became obsolete. They became acquainted with the travel details of several Arabian tourists. They also received some information from Jewish cartographers. But the map-making revolution of the fifteenth century brought much strength to the explorers. Gerald's Mercator's world-class map is particularly significant in this regard.

There must have been economic interest behind the geographical expedition. Europe had enough food and mineral resources necessary for subsistence. But for textiles, silk, spices, etc., they had to depend on other continents, especially Asia. Besides, gold and silver were not available in sufficient quantity. Trade-in all these products depended on Italian and Muslim merchants. This trade was particularly damaged after the fall of Constantinople in 1453. As a result, imports were falling short of demand so Europe had no choice but to invent direct communication routes to those countries.

The Iberian Peninsula, Spain and Portugal had the coastal locations required for geographical expeditions. So it can be seen that these two countries were at the forefront of geographical expeditions. Geographical reasons led to the beginning of the port of Lisbon, Cadiz and Seville expeditions.

Religious inspiration was also behind the geographical expedition. With the fall of Constantinople, Islam invaded Europe, which was enough to remind Europeans of the Crusades again. One of the objectives was to counter Islam through the occupation of maritime trade. In addition, there was considerable pressure from Christian missionaries.

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আরবদের সিন্ধু অভিযান | কারণ ও তাৎপর্য

আরবদের সিন্ধু অভিযান | কারণ ও তাৎপর্য Please visit our Homepage and subscribe us. Suggested Topics || Ghajnavid Invasion || গজনী আক্রমণ || || মামুদের সোমনাথ মন্দির লুণ্ঠন || Somnath Temple Plunder || || তরাইনের যুদ্ধ ও তার গুরুত্ত্ব || মহম্মদ ঘুরির ভারত আক্রমন ও তার চরিত্র || সপ্তম শতকের প্রথমার্ধে আরবদেশে ইসলামের আবির্ভাব ঘটে। ইসলাম আরবদের নতুন করে জীবনীশক্তির সঞ্চার করে । ইসলাম ক্রমশ: একটি ধর্ম থেকে রাজনৈতিক শক্তি রূপে আত্মপ্রকাশ করে। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় তারা আরবীয় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। ভারতবর্ষের সঙ্গে আরবদের যোগাযোগ দীর্ঘদিনের। বাণিজ্যিক সূত্রে তারা নিয়মিত ভারতের উপকূল গুলিতে, বিশেষ করে মালাবার উপকূলে আসত। ভারতীয় ও চীনা পণ্য 'ধাও' নামক বিশেষ জাহাজে করে নিয়ে তারা ইউরোপের বাজারে বিক্রি করত। 712 খ্রিস্টাব্দে ইরাকের গভর্নর হাজ্জাজ বিন ইউসুফ এর সেনাপতি ও জামাতা মোহাম্মদ বিন কাসেম সিন্ধু দেশে একটি সফল অভিযান করেন এবং সিন্ধুদেশ আরবীয় মুসলমানদের অধীনে চলে যায়। অভিযানের(প্রত্যক্ষ) কারণ ভারতবর্ষের প্রতি আরবদের দীর্ঘদিনের নজর ছিল। এর আ

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ | Category of Archives

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ মহাফেজখানা বা লেখ্যাগারগুলি সাধারণ জনতার জন্য নয় মূলত গবেষক, ঐতিহাসিক, আইনবিদ, চিত্র পরিচালক প্রভৃতি পেশার লোকজন তাদের গবেষণার কাজে লেখ্যাগারে নথি পত্র দেখতে পারেন।  লেখ্যাগার পরিচালনা ও সংরক্ষিত নথির ভিত্তিতে লেখ্যাগগুলিকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়েছে।   1. সরকারি লেখ্যাগার:- কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার বা স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে যে লেখ্যাগারগুলি গড়ে ওঠে। সেগুলিকে সরকারি লেখ্যাগার বলা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এরকম সরকার পরিচালিত এক বা একাধিক লেখ্যাগার থাকে। যেমন, আমেরিকার Natonal Archive And records Administration (NARA)। ভারতবর্ষে র কেন্দ্রীয় লেখ্যাগার National Archive of India নামে পরিচিত। বিভিন্ন ঐতিহাসিক, প্রশাসনিক ও আইনগত নথি, মানচিত্র, নক্সা,  পাণ্ডুলিপি প্রভৃতি সংরক্ষিত থাকে। 2. বানিজ্যিক লেখ্যাগার:-  এটি একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানের লেখ্যাগার বিভিন্ন বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান   মূলত তাদের সংস্থার ঐতিহাসিক এবং বানিজ্যিক নথি সংরক্ষিত রাখে। যেমন, ভারতের প্রথম বানিজ্যিক লেখ্যাগার হলো পুনার Tata Centrel Archive। 3. অলাভজনক লেখ্যাগার:-   কোনো ব্যাক্তিগত বা অলাভজনক

ষোড়শ শতকীয় ইউরোপে মূল্যবিপ্লব | Price Revolution

 ষোড়শ শতকের ইউরোপে মূল্য বিপ্লব   16 শতাব্দীতে ইউরোপীয় অর্থনীতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো মূল্য বিপ্লব। নিত্যব্যবহার্য পণ্যের মূল্য প্রায় 150 বছর সুস্থির থাকার পর ঊর্ধ্বমুখী হতে আরম্ভ করে, এবং 16 শতাব্দীর শেষে খাদ্যপণ্যের মূল্যের প্রায় সাড়ে পাঁচ গুণ বেড়ে যায়। পশ্চিম ইউরোপের অর্থনীতিতে এমন অভাবনীয় এবং সুদুরপ্রসারী ফলাফলসম্পন্ন ঘটনা মূল্য বিপ্লব নামে পরিচিত। মূল্য বিপ্লবের কতগুলি সাধারণ বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। যথা--    (১) কৃষিজ পণ্যের তুলনায় শিল্পজাত পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি ছিল কম, এবং খাদ্যশস্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি। (২) ভূমি রাজস্ব সহ ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক, তোলা ইত্যাদির হার বৃদ্ধি এবং ফটকাবাজির আবির্ভাব। (৩) মূল্যবৃদ্ধির তুলনায় মজুরির হার খুবই কম ছিল বলে প্রকৃত আয় হ্রাস পেয়েছিল। (৪) ভূমি বিক্রয়যোগ্য পণ্যে পরিণত হওয়া। (৫) গ্রামীণ বুর্জোয়াজি শ্রেণীর আবির্ভাব। ষোড়শ শতকের আগেও প্রাকৃতিক কারণে মূল্যবৃদ্ধি হয়েছিল, তবে তা ছিল 2, 3 শতাংশের মতো, যা অস্বাভাবিক মনে হতো না। কিন্তু ষোল শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে যে নিরবিচ্ছিন্ন মূল্যবৃদ্ধি হয়েছিল তা জনজীবনে তীব্রভ