সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

প্রাচীন মিশর সম্পর্কে সাধারণ ধারণা | Pre-dynasty Period in Egypt

 

প্ৰাচীন মিশর সম্পর্কে সাধারণ ধারণা


বিশ্বের প্রাচীনতম সভ্যতা গুলির মধ্যে অন্যতম হলো মিসরীয় সভ্যতা। মিসরীয় সভ্যতার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে বিখ্যাত নীলনদ ।নীলনদ উত্তর বাহি নদ, তাই মিশরের উত্তরদিকে মিশরের বদ্বীপ অঞ্চল অবস্থিত। বছরের নির্দিষ্ট সময়ে নীলনদ-এ বন্যা হতো। যার ফলে দু কূল প্লাবিত হত। এবং নির্দিষ্ট সময়েই সেই প্লাবন নেমে যেত। ফলে নীল- নদের দুপাড়ে গড়ে উঠেছিল উর্বর কৃষিজমি ।মরুভূমির বুক চিরে বয়ে যাওয়া এই নীলনদ ছিল মিশরীয় সভ্যতার প্রাণ। একই ভাবে নীলনদের বন্যায় অনিশ্চয়তার লেশমাত্র ছিল না বলে মিশরীয়রা ছিল আত্মনির্ভরশীল। মিশরীয় সভ্যতা নির্মাণ ও ধারনের ক্ষেত্রে নীলনদের এহেন অবদানের জন্য ইতিহাসের জনক হেরোডোটাস মিশরকে নীলনদের দান বলে অভিহিত করেছেন।

মিশরের উত্তর দিক ভূমধ্যসাগর ও এশিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। দক্ষিণাংশের সংযোগ আফ্রিকার মরু অঞ্চলের সঙ্গে। তাই স্বাভাবিক ভাবেই উত্তরাংশ ছিল উর্বর ও শস্যশ্যামলা। উত্তরাংশের সেমিটিক ও লিবিয়ানদের অনুপ্রবেশের ফলে একটা বিদেশী প্রভাব রয়েছে। উত্তর ও দক্ষিণাংশের লোকেরা একে অপরের প্রতিবেশি হলেও তারা ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠতে পারেনি। মরু এলাকা হলেও মিশরে ইতিহাস-কাহীনির সূচনা হয়েছিল দক্ষিণাংশেই। প্রাগ-রাজবংশ যুগের অবশেষগুলি প্রায় সবই দক্ষিনাংশে পাওয়া গেছে। প্রচলিত প্রবাদ থেকে জানা যায় মিশরের দক্ষিণাংশের রাজধানী ছিল হায়েরাকনপলিশ (Hierakonpolis)। এখানকার শাসক ছিল বাজপক্ষীরুপি দেবতা হোরাসের প্রতিরুপ, তাই রাজধানীর আরেক নাম বাজপক্ষী নগর (Falcon town)। আর উত্তরাংশের রাজধানী ছিল মেমফিস (Memphis)। দক্ষিনের রাজারা উত্তরে অভিযান করে মিশরকে ঐক্যবদ্ধ করেছিল। 

প্রাচীন মিশরে (৩৪০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) যিনি রাজ বংশের প্রতিষ্ঠা করলেন তার নাম মেনেস। তার গোষ্ঠীর আদি পুরুষ বাজপক্ষীরুপি হেরাস। হোরাস ছিলেন প্রাক রাজবংশ যুগের সর্বপ্রধান দেবতা। রাজা মেনেস উত্তর ও দক্ষিণ অংশকে সংযুক্ত করেছিলেন বলে কিংবদন্তি থেকে জানা যায়। প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনও এই জনশ্রুতি কে প্রমাণ করেছে।

প্রথম ও দ্বিতীয় রাজবংশের ৪০০ বছরের শাসনকালে জাতি গঠনের উদ্যোগ প্রবল হয়ে উঠেছিল। মেনেসের(Menes) সময় উত্তর ও দক্ষিণ সংযুক্ত হয়, তাই তাকে double lord বলা হত। তবে উত্তর ও দক্ষিনে তাদের পৃথক সত্তা বিলুপ্ত হয় নি। উত্তর অংশে বারবার বিদ্রোহ হয়েছিল। প্রথম বংশের রাজা মেনেস (Menes) বা নারমার (Narmar) লিবিয়ানদের বিদ্রোহ দমন করেছিলেন। এক লক্ষ কুড়ি হাজার শত্রুকে তিনি বন্দি করেছিলেন এবং অগণিত পশু তিনি লুণ্ঠন করেছিলেন। প্রথম বংশের রাজা উশেফাইস (Usephais) ও সেমেরখেট (Semerkhet) সিনাই উপদ্বীপের পাহাড় থেকে তামা সংগ্রহের জন্য অভিযান পাঠিয়েছিলেন। দক্ষিণাঞ্চলে ট্রোগ্লোডাইট (Troglodyte) নামক উপজাতির বিদ্রোহ দমন করেছিলেন রাজা মিবিস (Meibis)। তৃতীয় বংশের রাজা খাসেখেম (Khasekhem) নিজেকে সবচেয়ে কীর্তিমান অভিযাত্রী বলে প্রচার করেছিলেন । তিনি দেশের উভয় খণ্ডকে দ্বিতীয় বার সংযুক্ত করেছেন এবং নিজেকে দ্বিতীয় মেনেস বলে দাবি করেন। হায়েরাকনপলিশের হোরাস মন্দিরগাত্রে তার বিজয়গাথা বর্ণিত আছে। আবিডাসে তার একটি সুবিশাল প্রস্তরসমাধি রয়েছে, যা মিশরের ইতিপূর্বে দেখা যায় নি। এই বংশেরই আরেক শাসক জোসার (Zoser) থাক-কাটা পিরামিড (Step Pyramid) নির্মাণ করলেন, যা তারই সমাধি। তিনিই পিরামিডের অগ্রদূত। এই দুই শাসকের সুবিশাল সমাধি নির্মাণ রাজনৈতিক ক্ষমতা বৃদ্ধিরই ইঙ্গিতবাহী। 

General Idea about Ancient Egypt (Pre-dynasty Period)

One of the oldest civilizations in the world is the Egyptian civilization. The famous Nile River flowed through Egyptian civilization. The Nile is a north-flowing river, so the delta region of Egypt is located in the north. The Nile would flood at a certain time of the year, causing the banks to overflow. These floods would recede at a specific time, creating fertile agricultural land along the Nile's banks. This river, flowing through the desert's heart, was the Egyptian civilization's lifeblood. Because the Nile's floods were predictable, the Egyptians were self-reliant. Due to the significant contribution of the Nile in the development and sustenance of Egyptian civilization, the father of history, Herodotus, referred to Egypt as the "Gift of the Nile."

To the north, Egypt faces the Mediterranean Sea and Asia, while its southern region connects to the desert areas of Africa. Thus, the northern part was naturally fertile and lush. Due to the influx of Semitic and Libyan people, there was a foreign influence in the north. Although the people of the north and south were neighbors, they did not become close. Despite being a desert area, the history of Egypt began in the south. Most remnants of the pre-dynastic era have been found in the southern part. According to popular belief, the capital of the south Egypt was Hierakonpolis. The ruler here was seen as the embodiment of the falcon-headed god Horus, hence the capital's other name, Falcon City. The capital of the northern part was Memphis. Southern kings unified Egypt by campaigning in the north.

The person who founded the royal dynasty in ancient Egypt (3400 BC) was named Menes. The progenitor of his lineage was the falcon-headed Horus, the foremost deity of the pre-dynastic era. According to legend, King Menes unified the northern and southern parts. Archaeological evidence also supports this legend.

During the 400-year rule of the first and second dynasties, nation-building efforts were intense. Menes is known as the "double lord" because he united the north and south, but their separate identities did not disappear. There were frequent rebellions in the north. Menes, or Narmer, the king of the first dynasty, suppressed the rebellion of the Libyans. He captured 120,000 enemies and looted countless animals. The kings of the first dynasty, Usephais and Semerkhet, sent expeditions to the mountains of the Sinai Peninsula to collect copper. King Meibis of the southern region suppressed the rebellion of the Troglodytes tribe. King Khasekhem of the third dynasty proclaimed himself the most accomplished conqueror. He united the two parts of the country for the second time and claimed to be the second Menes. His victory is described on the walls of the Horus temple in Hierakonpolis. In Abydos, he has a vast stone tomb, the likes of which had not been seen in Egypt before. Another ruler of this dynasty, Zoser, built the Step Pyramid, which is his tomb. He was the pioneer of pyramid construction. The construction of the vast tombs of these two rulers indicates an increase in political power.



মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আরবদের সিন্ধু অভিযান | কারণ ও তাৎপর্য

আরবদের সিন্ধু অভিযান | কারণ ও তাৎপর্য Please visit our Homepage and subscribe us. Suggested Topics || Ghajnavid Invasion || গজনী আক্রমণ || || মামুদের সোমনাথ মন্দির লুণ্ঠন || Somnath Temple Plunder || || তরাইনের যুদ্ধ ও তার গুরুত্ত্ব || মহম্মদ ঘুরির ভারত আক্রমন ও তার চরিত্র || সপ্তম শতকের প্রথমার্ধে আরবদেশে ইসলামের আবির্ভাব ঘটে। ইসলাম আরবদের নতুন করে জীবনীশক্তির সঞ্চার করে । ইসলাম ক্রমশ: একটি ধর্ম থেকে রাজনৈতিক শক্তি রূপে আত্মপ্রকাশ করে। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় তারা আরবীয় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। ভারতবর্ষের সঙ্গে আরবদের যোগাযোগ দীর্ঘদিনের। বাণিজ্যিক সূত্রে তারা নিয়মিত ভারতের উপকূল গুলিতে, বিশেষ করে মালাবার উপকূলে আসত। ভারতীয় ও চীনা পণ্য 'ধাও' নামক বিশেষ জাহাজে করে নিয়ে তারা ইউরোপের বাজারে বিক্রি করত। 712 খ্রিস্টাব্দে ইরাকের গভর্নর হাজ্জাজ বিন ইউসুফ এর সেনাপতি ও জামাতা মোহাম্মদ বিন কাসেম সিন্ধু দেশে একটি সফল অভিযান করেন এবং সিন্ধুদেশ আরবীয় মুসলমানদের অধীনে চলে যায়। অভিযানের(প্রত্যক্ষ) কারণ ভারতবর্ষের প্রতি আরবদের দীর্ঘদিনের নজর ছিল। এর আ

ষোড়শ শতকীয় ইউরোপে মূল্যবিপ্লব | Price Revolution

 ষোড়শ শতকের ইউরোপে মূল্য বিপ্লব   16 শতাব্দীতে ইউরোপীয় অর্থনীতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো মূল্য বিপ্লব। নিত্যব্যবহার্য পণ্যের মূল্য প্রায় 150 বছর সুস্থির থাকার পর ঊর্ধ্বমুখী হতে আরম্ভ করে, এবং 16 শতাব্দীর শেষে খাদ্যপণ্যের মূল্যের প্রায় সাড়ে পাঁচ গুণ বেড়ে যায়। পশ্চিম ইউরোপের অর্থনীতিতে এমন অভাবনীয় এবং সুদুরপ্রসারী ফলাফলসম্পন্ন ঘটনা মূল্য বিপ্লব নামে পরিচিত। মূল্য বিপ্লবের কতগুলি সাধারণ বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। যথা--    (১) কৃষিজ পণ্যের তুলনায় শিল্পজাত পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি ছিল কম, এবং খাদ্যশস্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি। (২) ভূমি রাজস্ব সহ ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক, তোলা ইত্যাদির হার বৃদ্ধি এবং ফটকাবাজির আবির্ভাব। (৩) মূল্যবৃদ্ধির তুলনায় মজুরির হার খুবই কম ছিল বলে প্রকৃত আয় হ্রাস পেয়েছিল। (৪) ভূমি বিক্রয়যোগ্য পণ্যে পরিণত হওয়া। (৫) গ্রামীণ বুর্জোয়াজি শ্রেণীর আবির্ভাব। ষোড়শ শতকের আগেও প্রাকৃতিক কারণে মূল্যবৃদ্ধি হয়েছিল, তবে তা ছিল 2, 3 শতাংশের মতো, যা অস্বাভাবিক মনে হতো না। কিন্তু ষোল শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে যে নিরবিচ্ছিন্ন মূল্যবৃদ্ধি হয়েছিল তা জনজীবনে তীব্রভ

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ | Category of Archives

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ মহাফেজখানা বা লেখ্যাগারগুলি সাধারণ জনতার জন্য নয় মূলত গবেষক, ঐতিহাসিক, আইনবিদ, চিত্র পরিচালক প্রভৃতি পেশার লোকজন তাদের গবেষণার কাজে লেখ্যাগারে নথি পত্র দেখতে পারেন।  লেখ্যাগার পরিচালনা ও সংরক্ষিত নথির ভিত্তিতে লেখ্যাগগুলিকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়েছে।   1. সরকারি লেখ্যাগার:- কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার বা স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে যে লেখ্যাগারগুলি গড়ে ওঠে। সেগুলিকে সরকারি লেখ্যাগার বলা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এরকম সরকার পরিচালিত এক বা একাধিক লেখ্যাগার থাকে। যেমন, আমেরিকার Natonal Archive And records Administration (NARA)। ভারতবর্ষে র কেন্দ্রীয় লেখ্যাগার National Archive of India নামে পরিচিত। বিভিন্ন ঐতিহাসিক, প্রশাসনিক ও আইনগত নথি, মানচিত্র, নক্সা,  পাণ্ডুলিপি প্রভৃতি সংরক্ষিত থাকে। 2. বানিজ্যিক লেখ্যাগার:-  এটি একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানের লেখ্যাগার বিভিন্ন বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান   মূলত তাদের সংস্থার ঐতিহাসিক এবং বানিজ্যিক নথি সংরক্ষিত রাখে। যেমন, ভারতের প্রথম বানিজ্যিক লেখ্যাগার হলো পুনার Tata Centrel Archive। 3. অলাভজনক লেখ্যাগার:-   কোনো ব্যাক্তিগত বা অলাভজনক