সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

মিশরীয় লিপিঃ হায়রোগ্লাইফিক | Hieroglyphs of Egypt

মিশরীয় লিপিঃ হায়রোগ্লাইফিক

মিশরে রাজবংশের উত্থানের অনেক আগে থেকেই লেখা শুরু হয়েছিল। তবে সেই লেখা প্রথম রাজবংশের সময়ে পরিণত রূপ লাভ করেছিল। সেই পরিণত রূপ হল হায়ারোগ্লিফিক। চিত্রের মাধ্যমে বিষয়বস্তু প্রকাশ করার বিশেষ নাম হল হায়ারোগ্লিফিক। হায়ারোগ্লিফিক এর তিনটি ধাপ: পিকটোগ্রাফ, আইডিওগ্রাম ও ফনোগ্রাম। পিকটোগ্রাফ হল কোন ছবিকে কোন পূর্বনির্দিষ্ট ভাব বিশেষের সঙ্গে যুক্ত করা; যেমন সিংহের চিত্র দিয়ে প্রভুত্বকে বোঝানো। আইডিওগ্রাম হল পূর্ব পরিকল্পনা মত একটি ছবির সঙ্গে অন্য একটি ছবি জুড়ে দিয়ে যুক্ত ছবিটির কোনো বিশেষ অর্থ তৈরি করা। যেমন: মুখের চিহ্নের সঙ্গে বাষ্প ও জিহ্বা যুক্ত করলে বক্তৃতা বোঝানো যায়। আর ফনোগ্রাম হল একই শব্দ নানা অর্থে ব্যবহার করার জন্য বিশেষ নির্দেশক চিহ্নের ব্যবহার। যেমন একই শব্দের অর্থ যদি হয় নৌকা, স্থান ও বয়ন তাহলে নৌকার ছবি সঙ্গে পৃথিবীর ছবি জুড়ে দিলে তার অর্থ হয় স্থান; নৌকার সঙ্গে রেশমের চিত্র জুড়ে দিলে তার অর্থ হয় বয়ন।

পিকটোগ্রাফ ছেড়ে লেখা যখন শব্দার্থব্যঞ্জক বা ফোনেটিক হতে শুরু করল তখন প্রতিটি চিত্র হয়ে উঠল এক একটি শব্দ সমষ্টির সংকেত। এইরূপ চিত্রের সংখ্যা ছিল ৬০০র বেশি। চিত্রগুলি ক্রমশ শব্দসমষ্টি ছেড়ে অক্ষর বা বর্ণ বোঝাতে লাগল। তখন সৃষ্টি হল বর্ণমালার। সেই সঙ্গে চিত্রগুলির সংখ্যা কমে গিয়ে মাত্র ২৪ টি অক্ষর এ গিয়ে দাঁড়ালো। তবে মিশরীয়রা এই বর্ণমালার অভ্যেস সহজে তৈরি করতে পারেনি। মিশরীয় বর্ণমালার সাক্ষাৎ আমরা পাই সিনাই উপদ্বীপের খনিতে (২৫০০ খৃঃ পূঃ-১৫০০ খৃঃ পূঃ)। এই বর্ণমালার প্রতিটি অক্ষরই এক একটি ছবি।

ছবির লেখাগুলিকে দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহার করতে গিয়ে হরফগুলিকে টানা হাতে লেখার দরকার পড়ল। কারন তাতে সময় অনেক বাঁচে। এই টানা লেখার নাম হায়ারেটিক। খৃঃ পূঃ অষ্টম শতক নাগাদ হায়ারেটিক লিখনও একটি সংক্ষিপ্ততর লিখনের আকার ধারন করেছিল। এই লেখার নাম ডিমোটিক। গ্রীক রাজাদের আমলে হায়ারেটিক লিপির অবসান ঘটলেও ডিমোটিক ছিল চলিত লিখন। কিন্তু রোমানদের আগমনের পর এই ডিমোটিক লিপি অন্তর্হিত হয়।

মিশরীয়রা লিখনের জন্য কালি, কলম ও কাগজ আবিস্কার করেছিল। গাছের আঠা, হাঁড়ির কালি এবং জল গুলে তাকে জ্বাল দিয়ে তারা কালি তৈরী করত। খাগের কলম কেটে কালিতে ডুবিয়ে তারা প্যাপিরাস কাগজের উপর লিখত। প্যাপিরাস নামে নলখাগড়া জাতীয় কোনো জলজ উদ্ভিদকে থেঁতো করে তারা কাগজ তৈরি করত। এগুলিকে লেখার পর মুড়ে সংরক্ষনও করা যেত।  

Egyptian Script: Hieroglyphics

Writing in Egypt began long before the rise of the dynasties. However, it achieved its developed form during the time of the first dynasty, known as hieroglyphics. Hieroglyphics is a special form of writing that uses pictures to express content. There are three stages of hieroglyphics: pictographs, ideograms, and phonograms. A pictograph involves associating a picture with a specific predetermined idea; for example, using the image of a lion to represent dominance. An ideogram involves combining one picture with another to create a specific meaning, such as adding steam and a tongue to the symbol of a face to represent speech. A phonogram uses special markers to indicate different meanings of the same word; for instance, if a word means boat, place, and weaving, adding the image of the earth to the boat picture signifies place, while adding a silk symbol indicates weaving.

When writing transitioned from pictographs to phonetic or word-symbolic, each picture became a symbol for a group of words. The number of such pictures exceeded 600. Gradually, these pictures evolved from representing word groups to representing letters or characters, leading to the creation of an alphabet. The number of symbols was reduced to just 24 letters. However, the Egyptians took time to develop this alphabetic habit. Evidence of the Egyptian alphabet can be found in the mines of the Sinai Peninsula (2500 BC-1500 BC), where each letter was a picture.

Using pictorial writing in daily life required the letters to be written quickly by running hand, saving time. This form of running handwriting was called hieratic. By the eighth century BC, hieratic writing had evolved into an even more abbreviated form known as demotic. Although hieratic script disappeared during the Greek rulers' time, demotic, a form of writing shorter than hieratic remained the common script. However, with the arrival of the Romans, demotic script vanished.

The Egyptians invented ink, pens, and paper for writing. They made ink by boiling a mixture of tree resin, potash, and water. They used reed pens dipped in ink to write on papyrus paper, which was made by crushing a water plant similar to reeds called papyrus. After writing, these papyrus scrolls could be rolled up and stored.

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আরবদের সিন্ধু অভিযান | কারণ ও তাৎপর্য

আরবদের সিন্ধু অভিযান | কারণ ও তাৎপর্য Please visit our Homepage and subscribe us. Suggested Topics || Ghajnavid Invasion || গজনী আক্রমণ || || মামুদের সোমনাথ মন্দির লুণ্ঠন || Somnath Temple Plunder || || তরাইনের যুদ্ধ ও তার গুরুত্ত্ব || মহম্মদ ঘুরির ভারত আক্রমন ও তার চরিত্র || সপ্তম শতকের প্রথমার্ধে আরবদেশে ইসলামের আবির্ভাব ঘটে। ইসলাম আরবদের নতুন করে জীবনীশক্তির সঞ্চার করে । ইসলাম ক্রমশ: একটি ধর্ম থেকে রাজনৈতিক শক্তি রূপে আত্মপ্রকাশ করে। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় তারা আরবীয় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। ভারতবর্ষের সঙ্গে আরবদের যোগাযোগ দীর্ঘদিনের। বাণিজ্যিক সূত্রে তারা নিয়মিত ভারতের উপকূল গুলিতে, বিশেষ করে মালাবার উপকূলে আসত। ভারতীয় ও চীনা পণ্য 'ধাও' নামক বিশেষ জাহাজে করে নিয়ে তারা ইউরোপের বাজারে বিক্রি করত। 712 খ্রিস্টাব্দে ইরাকের গভর্নর হাজ্জাজ বিন ইউসুফ এর সেনাপতি ও জামাতা মোহাম্মদ বিন কাসেম সিন্ধু দেশে একটি সফল অভিযান করেন এবং সিন্ধুদেশ আরবীয় মুসলমানদের অধীনে চলে যায়। অভিযানের(প্রত্যক্ষ) কারণ ভারতবর্ষের প্রতি আরবদের দীর্ঘদিনের নজর ছিল। এর আ

ষোড়শ শতকীয় ইউরোপে মূল্যবিপ্লব | Price Revolution

 ষোড়শ শতকের ইউরোপে মূল্য বিপ্লব   16 শতাব্দীতে ইউরোপীয় অর্থনীতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো মূল্য বিপ্লব। নিত্যব্যবহার্য পণ্যের মূল্য প্রায় 150 বছর সুস্থির থাকার পর ঊর্ধ্বমুখী হতে আরম্ভ করে, এবং 16 শতাব্দীর শেষে খাদ্যপণ্যের মূল্যের প্রায় সাড়ে পাঁচ গুণ বেড়ে যায়। পশ্চিম ইউরোপের অর্থনীতিতে এমন অভাবনীয় এবং সুদুরপ্রসারী ফলাফলসম্পন্ন ঘটনা মূল্য বিপ্লব নামে পরিচিত। মূল্য বিপ্লবের কতগুলি সাধারণ বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। যথা--    (১) কৃষিজ পণ্যের তুলনায় শিল্পজাত পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি ছিল কম, এবং খাদ্যশস্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি। (২) ভূমি রাজস্ব সহ ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক, তোলা ইত্যাদির হার বৃদ্ধি এবং ফটকাবাজির আবির্ভাব। (৩) মূল্যবৃদ্ধির তুলনায় মজুরির হার খুবই কম ছিল বলে প্রকৃত আয় হ্রাস পেয়েছিল। (৪) ভূমি বিক্রয়যোগ্য পণ্যে পরিণত হওয়া। (৫) গ্রামীণ বুর্জোয়াজি শ্রেণীর আবির্ভাব। ষোড়শ শতকের আগেও প্রাকৃতিক কারণে মূল্যবৃদ্ধি হয়েছিল, তবে তা ছিল 2, 3 শতাংশের মতো, যা অস্বাভাবিক মনে হতো না। কিন্তু ষোল শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে যে নিরবিচ্ছিন্ন মূল্যবৃদ্ধি হয়েছিল তা জনজীবনে তীব্রভ

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ | Category of Archives

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ মহাফেজখানা বা লেখ্যাগারগুলি সাধারণ জনতার জন্য নয় মূলত গবেষক, ঐতিহাসিক, আইনবিদ, চিত্র পরিচালক প্রভৃতি পেশার লোকজন তাদের গবেষণার কাজে লেখ্যাগারে নথি পত্র দেখতে পারেন।  লেখ্যাগার পরিচালনা ও সংরক্ষিত নথির ভিত্তিতে লেখ্যাগগুলিকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়েছে।   1. সরকারি লেখ্যাগার:- কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার বা স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে যে লেখ্যাগারগুলি গড়ে ওঠে। সেগুলিকে সরকারি লেখ্যাগার বলা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এরকম সরকার পরিচালিত এক বা একাধিক লেখ্যাগার থাকে। যেমন, আমেরিকার Natonal Archive And records Administration (NARA)। ভারতবর্ষে র কেন্দ্রীয় লেখ্যাগার National Archive of India নামে পরিচিত। বিভিন্ন ঐতিহাসিক, প্রশাসনিক ও আইনগত নথি, মানচিত্র, নক্সা,  পাণ্ডুলিপি প্রভৃতি সংরক্ষিত থাকে। 2. বানিজ্যিক লেখ্যাগার:-  এটি একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানের লেখ্যাগার বিভিন্ন বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান   মূলত তাদের সংস্থার ঐতিহাসিক এবং বানিজ্যিক নথি সংরক্ষিত রাখে। যেমন, ভারতের প্রথম বানিজ্যিক লেখ্যাগার হলো পুনার Tata Centrel Archive। 3. অলাভজনক লেখ্যাগার:-   কোনো ব্যাক্তিগত বা অলাভজনক