সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

লুথার ও রাজ শক্তির সম্পর্ক | Luthar and the State

 লুথার ও রাজ শক্তির  সম্পর্ক

Luthar and the State


মাটিন লুথারের নেতৃত্বে জার্মানিতে ধর্মসংস্কার আন্দোলনের সূচনা হয়। কিন্তু তিনি ধর্মের বৈপ্লবিক  পরিভাষা গ্রহণ  করেননি। তিনি চেয়েছিলেন প্রচলিত রোমান ক্যাথলিক চার্চের ধর্মীয় অনুশাসনের পরিবর্তে একটি বিকল্প অনুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে। তাই এনাব্যাপটিস্টদের নৈরাজ্যবাদী অনুশাসন বিরোধী অবস্থানে লুথার বিচলিত ও সংকিত হন। এই প্রেক্ষাপটে আঞ্চলিক রাজশক্তির সঙ্গে লুথারের সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হয়। লুথার মনে করেতেন রাজশক্তির সমর্থন ছাড়া প্রতিবাদী ধর্মকে একটি বিকল্প ধর্মীয় সংগঠন হিসেবে সুরক্ষিত করা সম্ভব নয়। লুথার যেখানে রাজশক্তির স্তুতি করেছেন তাতে নিরঙ্কুশ রাজতন্ত্রের উত্থানের পথ প্রশস্ত হয়েছিল। লুথারের রাষ্ট্রতত্ত্বের ভিত্তি রয়েছে তার মানব চরিত্র সম্পর্কে একটি নেতিবাচক ধারণার মধ্যে। তিনি মনে করতেন যে অনৈতিক কাজে লিপ্ত হওয়া মানুষের স্বাভাবিক  প্রবৃত্তি, মানুষের মনের ভিতরের  শয়তানের কারখানাকে নিয়ন্ত্রণ করতে হলে দরকার রাষ্ট্রীয় আইন। রাষ্ট্রীয় অনুশাসন ছাড়া মানব জীবন সুরক্ষিত নয়। এই উদ্দেশ্যেই ঈশ্বর  রাজশক্তিকে সৃষ্টি করেছেন। তাই রাজশক্তিকে প্রতিরোধ করা একপ্রকারের পাপ। লুথারের এই তত্ত্ব 'non resistance theory' নামে পরিচিত। জার্মানিতে কৃষক বিদ্রোহ শুরু হলে রাজশক্তির দমননীতিকে সমর্থন করেননি। তিনি আরো বলেন রাজশক্তিকে প্রতিরোধ করার কোন অধিকার প্রজার নেই। রাজশক্তি যদি অত্যাচারিত হয়ে ওঠেন তবে সেই অত্যাচার নীরবে সহ্য করা ধর্মপ্রাণ খ্রিস্টানদের কর্তব্য, কারণ এই অত্যাচারী রাজশক্তি হল মানব সমাজের পুঞ্জিভূত পাপাচারের ফল।

পোপতন্ত্রের ধারক পবিত্র রোমান সম্রাট, স্পেনের রাজা পঞ্চম চার্লস এবং তার সহযোগী ক্যাথলিক রাজন্যবর্গ পোপের প্রভুত্ব হিসেবে যখন প্রতিবাদী ধর্মমতকে ধ্বংস করতে উদ্যত হয়, লুথার জার্মানির রাজকুলকে আহ্বান করেন রোমান সম্রাটকে প্রতিরোধ করতে। এখানে একদিক থেকে জার্মানির রাজারা ছিলেন রোমান সম্রাটের সামন্ত এবং সেই অর্থে প্রজা। লুথারের এই অস্পষ্ট বক্তব্য যা, উপরোক্ত বক্তব্য থেকে সম্পূর্ণ বিরোধী, প্রকৃতপক্ষে লুথার তার সৎধর্মকে সুরক্ষিত করার দায়িত্ব জার্মানির রাজকুলের উপর ছেড়ে দিয়েছিলেন।

লুথারের বক্তব্যে অনেকেই সুযোগসন্ধানী মনোভাবের প্রমাণ পান। একদিকে তিনি পবিত্র রোমান সম্রাটকে প্রতিরোধ করতে বলেছেন এবং অন্যদিকে আঞ্চলিক রাজশক্তির বিরুদ্ধে কোনো প্রজাবিরোধ যাতে না হয় তার চেষ্টাও করেছেন। স্যাক্সনির রাজা ফ্রেডারিক এর সঙ্গে পঞ্চম চার্লসের বহুদিনের পারিবারিক বিরোধ ছিল বলে লুথারের মতকে ফ্রেডারিক  সমর্থন করেছিলেন। এরকম আরো অনেক ছোট ছোট নৃপতিরা তাদের রাজ্যের আঞ্চলিক স্বাতন্ত্র্য প্রতিষ্ঠা করার তাগিদে, পোপের নিয়ন্ত্রণকে অস্বীকার করে লুথারবাদকে সমর্থন করেছিলেন। শহরের বণিক সম্প্রদায় ও লুথারবাদের সমর্থন ছিলেন, তাই লুথারের আন্দোলনের বড়ো ঘাটি ছিল শহরগুলি। বণিকরা নিরঙ্কুশ রাজতন্ত্রএর সমর্থন  ছিলেন  বলেই তারা  লুথারকে সমর্থন করেছিলেন।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আরবদের সিন্ধু অভিযান | কারণ ও তাৎপর্য

আরবদের সিন্ধু অভিযান | কারণ ও তাৎপর্য Please visit our Homepage and subscribe us. Suggested Topics || Ghajnavid Invasion || গজনী আক্রমণ || || মামুদের সোমনাথ মন্দির লুণ্ঠন || Somnath Temple Plunder || || তরাইনের যুদ্ধ ও তার গুরুত্ত্ব || মহম্মদ ঘুরির ভারত আক্রমন ও তার চরিত্র || সপ্তম শতকের প্রথমার্ধে আরবদেশে ইসলামের আবির্ভাব ঘটে। ইসলাম আরবদের নতুন করে জীবনীশক্তির সঞ্চার করে । ইসলাম ক্রমশ: একটি ধর্ম থেকে রাজনৈতিক শক্তি রূপে আত্মপ্রকাশ করে। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় তারা আরবীয় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। ভারতবর্ষের সঙ্গে আরবদের যোগাযোগ দীর্ঘদিনের। বাণিজ্যিক সূত্রে তারা নিয়মিত ভারতের উপকূল গুলিতে, বিশেষ করে মালাবার উপকূলে আসত। ভারতীয় ও চীনা পণ্য 'ধাও' নামক বিশেষ জাহাজে করে নিয়ে তারা ইউরোপের বাজারে বিক্রি করত। 712 খ্রিস্টাব্দে ইরাকের গভর্নর হাজ্জাজ বিন ইউসুফ এর সেনাপতি ও জামাতা মোহাম্মদ বিন কাসেম সিন্ধু দেশে একটি সফল অভিযান করেন এবং সিন্ধুদেশ আরবীয় মুসলমানদের অধীনে চলে যায়। অভিযানের(প্রত্যক্ষ) কারণ ভারতবর্ষের প্রতি আরবদের দীর্ঘদিনের নজর ছিল। এর আ

ষোড়শ শতকীয় ইউরোপে মূল্যবিপ্লব | Price Revolution

 ষোড়শ শতকের ইউরোপে মূল্য বিপ্লব   16 শতাব্দীতে ইউরোপীয় অর্থনীতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো মূল্য বিপ্লব। নিত্যব্যবহার্য পণ্যের মূল্য প্রায় 150 বছর সুস্থির থাকার পর ঊর্ধ্বমুখী হতে আরম্ভ করে, এবং 16 শতাব্দীর শেষে খাদ্যপণ্যের মূল্যের প্রায় সাড়ে পাঁচ গুণ বেড়ে যায়। পশ্চিম ইউরোপের অর্থনীতিতে এমন অভাবনীয় এবং সুদুরপ্রসারী ফলাফলসম্পন্ন ঘটনা মূল্য বিপ্লব নামে পরিচিত। মূল্য বিপ্লবের কতগুলি সাধারণ বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। যথা--    (১) কৃষিজ পণ্যের তুলনায় শিল্পজাত পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি ছিল কম, এবং খাদ্যশস্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি। (২) ভূমি রাজস্ব সহ ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক, তোলা ইত্যাদির হার বৃদ্ধি এবং ফটকাবাজির আবির্ভাব। (৩) মূল্যবৃদ্ধির তুলনায় মজুরির হার খুবই কম ছিল বলে প্রকৃত আয় হ্রাস পেয়েছিল। (৪) ভূমি বিক্রয়যোগ্য পণ্যে পরিণত হওয়া। (৫) গ্রামীণ বুর্জোয়াজি শ্রেণীর আবির্ভাব। ষোড়শ শতকের আগেও প্রাকৃতিক কারণে মূল্যবৃদ্ধি হয়েছিল, তবে তা ছিল 2, 3 শতাংশের মতো, যা অস্বাভাবিক মনে হতো না। কিন্তু ষোল শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে যে নিরবিচ্ছিন্ন মূল্যবৃদ্ধি হয়েছিল তা জনজীবনে তীব্রভ

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ | Category of Archives

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ মহাফেজখানা বা লেখ্যাগারগুলি সাধারণ জনতার জন্য নয় মূলত গবেষক, ঐতিহাসিক, আইনবিদ, চিত্র পরিচালক প্রভৃতি পেশার লোকজন তাদের গবেষণার কাজে লেখ্যাগারে নথি পত্র দেখতে পারেন।  লেখ্যাগার পরিচালনা ও সংরক্ষিত নথির ভিত্তিতে লেখ্যাগগুলিকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়েছে।   1. সরকারি লেখ্যাগার:- কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার বা স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে যে লেখ্যাগারগুলি গড়ে ওঠে। সেগুলিকে সরকারি লেখ্যাগার বলা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এরকম সরকার পরিচালিত এক বা একাধিক লেখ্যাগার থাকে। যেমন, আমেরিকার Natonal Archive And records Administration (NARA)। ভারতবর্ষে র কেন্দ্রীয় লেখ্যাগার National Archive of India নামে পরিচিত। বিভিন্ন ঐতিহাসিক, প্রশাসনিক ও আইনগত নথি, মানচিত্র, নক্সা,  পাণ্ডুলিপি প্রভৃতি সংরক্ষিত থাকে। 2. বানিজ্যিক লেখ্যাগার:-  এটি একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানের লেখ্যাগার বিভিন্ন বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান   মূলত তাদের সংস্থার ঐতিহাসিক এবং বানিজ্যিক নথি সংরক্ষিত রাখে। যেমন, ভারতের প্রথম বানিজ্যিক লেখ্যাগার হলো পুনার Tata Centrel Archive। 3. অলাভজনক লেখ্যাগার:-   কোনো ব্যাক্তিগত বা অলাভজনক