সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

কেলভিনবাদ | John Kelvin

কেলভিনবাদ


john kelvin

লুথারের সংস্কার আন্দোলনের সময় যে মতবাদ প্রচার করেছিলেন তার প্রকৃতি ছিল অনেকটাই রক্ষণশীল, কিন্তু ষোড়শ শতকের মাঝামাঝি সময়ে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বিশেষ করে ইংল্যান্ড, জার্মানি, ফ্রান্সে radical সংস্কার আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল। যেখানে অত্যাচারী শাসকের বিরুদ্ধে সক্রিয় প্রতিরোধের অধিকার অনুমোদিত হয়েছিল। আর এই সংস্কার আন্দোলনের একটি উল্লেখযোগ্য চরিত্র ছিলেন জন কেলভিন।কেলভিন প্রথমদিকে লুথারের মত প্রতিরোধী তত্ত্বে বিশ্বাসী থাকলেও পরবর্তীকালে কেলভিনের কিছু radical অনুগামী অত্যাচারী শাসকের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষকে ব্যক্তিগত ও দলবদ্ধভাবে প্রতিরোধের অধিকার দিয়েছিল।
  
কেলভিনের শিক্ষা ও তত্ত্ব হলো প্রটেস্টানবাদের  সবচেয়ে বর্ণময় ধারা। ধর্ম- সংস্কার আন্দোলনের পরবর্তী দুই শতাব্দীতে তার প্রভাব স্থায়ী হয়েছিল। লুথারবাদের পথ অনুসরণ করেও কেলভিনবাদ বিভিন্ন দেশে পৃথক পৃথক রুপ নিয়েছিল। লুথারবাদ যেখানে সামাজিক চরিত্রে রক্ষণশীল রাজনৈতিক কর্তৃত্বের প্রতি আস্থাশীল ছিল, কেলভিনবাদ সেখানে সক্রিয় পরিবর্তনপন্থী হয়ে উঠেছিল। কেলভিনবাদই প্রটেস্ট্যান্ট আন্দোলনকে একটি সিস্টেমের  রূপ দিয়েছিলেন। 1537 খ্রিস্টাব্দে প্রটেস্ট্যান্ট ধর্ম আন্দোলনকে সুশৃংখলভাবে প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে তিনি প্রকাশ করেন তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ ,"Institutes of the Christen Religion"

 কেলভিন এর সঙ্গে লুথার এর পার্থক্য মূলত উদ্দেশ্যগত ভিত্তিতে গড়ে ওঠেনি। কারণ কেলভিনও লুথার এর মত নিষ্ক্রিয় অনুগত্যের উপর গুরুত্ব আরোপ করেছিলেন। কেলভিন মতবাদ প্রাথমিক পর্যায়ে শুধু প্রতিরোধের অধিকারীকে নিন্দা করেনি, উদারনীতি, সাংবিধানিকতা ও প্রতিনিধিত্বমূলক নীতির প্রতি কোন সমর্থন দেয় নি। যেখানে সুযোগ পেয়েছে সেখানে এক প্রকার ধর্মীয় রাষ্ট্র নির্মাণ করতে চেয়েছিল। কেলভিন সরকার ও চার্চের উদ্দেশ্যে যে সম্পূর্ণ আলাদা সে ব্যাপারে গুরুত্ব আরোপ করেছিলেন। কেলভিনের গ্রন্থে যে চিন্তাধারা প্রকাশিত হয়েছে তাকে বলা যেতে পারে ঈশ্বরের বাণী অনুসারে জীবনধারণের পথ নির্দেশিকা, যেখানে শৃংখলার উপর প্রধান গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। কিন্তু পরবর্তী সময়ে কেলভিন রাজার স্বপক্ষে নির্দিষ্ট অনুগত্যের কথাও বলেছিলেন। তিনিই আবার ফ্রান্সে ক্যাথলিক রাজার বিরুদ্ধে বলেন, যদি কোন শাসক অত্যাচারী হন তবে তাকে ক্ষমতাচ্যুত করাই শ্রেয়। তবে তার এই মতবাদ পরিবর্তনের পেছনে প্রধান কারণ ছিল ইউরোপের বিভিন্ন দেশে শাসকের প্রটেস্ট্যান্টদের ওপর চালানো অত্যাচার। তবে বলা যায় কেলভিনের এই প্রতিরোধের তত্ত্ব কখনই পুরোপুরি কঠোর ছিল না।

Calvinism – John Calvin

While Martin Luther’s Reformation movement was largely conservative in nature, by the mid-16th century, a more radical wave of reform had begun to spread across various parts of Europe, especially in England, Germany, and France. This new wave of the Reformation approved the right to actively resist tyrannical rulers. One of the most prominent figures of this radical reform movement was John Calvin.

Although Calvin initially believed in passive obedience like Luther, later some of his more radical followers granted individuals and groups the right to resist oppressive rulers. Calvin’s teachings and doctrines represent the most vivid strand of Protestantism. His influence lasted for nearly two centuries after the beginning of the Reformation. While following in Luther’s footsteps, Calvinism evolved in different ways in different countries. Where Lutheranism remained socially conservative and loyal to established political authority, Calvinism became a force for active change.

Calvin was the first to give Protestantism a structured system. In 1537, he published his famous work, "Institutes of the Christian Religion," to systematically establish the Protestant faith. This book laid out a disciplined and orderly vision of religious life.

The difference between Luther and Calvin was not primarily in their goals—both emphasized passive loyalty at first. Calvin’s early doctrine also refrained from endorsing liberalism, constitutionalism, or representative government. Wherever possible, Calvin and his followers attempted to establish a religious state. However, Calvin also strongly emphasized the separation of the Church and the State in terms of purpose and function.

Calvin’s work can be described as a guide for living life according to God’s word, with a strong focus on discipline. Interestingly, Calvin later expressed views in support of loyalty to the monarch, yet at the same time, he declared that if a ruler became tyrannical, it was justifiable to depose him. This shift in Calvin’s thinking was largely a response to the widespread persecution of Protestants by Catholic rulers in different parts of Europe.

Still, it must be said that Calvin’s theory of resistance was never entirely rigid or absolute. It was pragmatic—adapted to the changing political and religious contexts of the time.

মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আরবদের সিন্ধু অভিযানঃ প্রত্যক্ষ কারণ ও তাৎপর্য | Arab Conquest of Sindh: Immediate Causes and Significance

আরবদের সিন্ধু অভিযানঃ প্রত্যক্ষ কারণ ও তাৎপর্য সপ্তম শতকের প্রথমার্ধে আরবদেশে ইসলামের আবির্ভাব ঘটে। ইসলাম আরবদের নতুন করে জীবনীশক্তির সঞ্চার করে । ইসলাম ক্রমশ: একটি ধর্ম থেকে রাজনৈতিক শক্তি রূপে আত্মপ্রকাশ করে। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় তারা আরবীয় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। ভারতবর্ষের সঙ্গে আরবদের যোগাযোগ দীর্ঘদিনের। বাণিজ্যিক সূত্রে তারা নিয়মিত ভারতের উপকূল গুলিতে, বিশেষ করে মালাবার উপকূলে আসত। ভারতীয় ও চীনা পণ্য 'ধাও' নামক বিশেষ জাহাজে করে নিয়ে তারা ইউরোপের বাজারে বিক্রি করত। 712 খ্রিস্টাব্দে ইরাকের গভর্নর হাজ্জাজ বিন ইউসুফ এর সেনাপতি ও জামাতা মোহাম্মদ বিন কাসেম সিন্ধু দেশে একটি সফল অভিযান করেন এবং সিন্ধুদেশ আরবীয় মুসলমানদের অধীনে চলে যায়। অভিযানের(প্রত্যক্ষ) কারণ ভারতবর্ষের প্রতি আরবদের দীর্ঘদিনের নজর ছিল। এর আগেও বহুবার ভারতের বিভিন্ন জায়গায় অভিযান পাঠানো হয়েছিল। তবে এই(712 খৃ:) অভিযানের একটি প্রত্যক্ষ কারণ ছিল। জানা যায় যে সিংহলের রাজা ইরাকের গভর্নর হাজ্জাজ বিন ইউসুফ কে কয়েকটি জাহাজে করে উপঢৌকন পাঠাচ্ছিলেন কিন্তু পথে সিন্ধু দেশের জলদস্যুরা দেবল বন্দরে এ...

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ | Category of Archives

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ মহাফেজখানা বা লেখ্যাগারগুলি সাধারণ জনতার জন্য নয় মূলত গবেষক, ঐতিহাসিক, আইনবিদ, চিত্র পরিচালক প্রভৃতি পেশার লোকজন তাদের গবেষণার কাজে লেখ্যাগারে নথি পত্র দেখতে পারেন।  লেখ্যাগার পরিচালনা ও সংরক্ষিত নথির ভিত্তিতে লেখ্যাগগুলিকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়েছে।   1. সরকারি লেখ্যাগার:- কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার বা স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে যে লেখ্যাগারগুলি গড়ে ওঠে। সেগুলিকে সরকারি লেখ্যাগার বলা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এরকম সরকার পরিচালিত এক বা একাধিক লেখ্যাগার থাকে। যেমন, আমেরিকার Natonal Archive And records Administration (NARA)। ভারতবর্ষে র কেন্দ্রীয় লেখ্যাগার National Archive of India নামে পরিচিত। বিভিন্ন ঐতিহাসিক, প্রশাসনিক ও আইনগত নথি, মানচিত্র, নক্সা,  পাণ্ডুলিপি প্রভৃতি সংরক্ষিত থাকে। 2. বানিজ্যিক লেখ্যাগার:-  এটি একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানের লেখ্যাগার বিভিন্ন বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান   মূলত তাদের সংস্থার ঐতিহাসিক এবং বানিজ্যিক নথি সংরক্ষিত রাখে। যেমন, ভারতের প্রথম বানিজ্যিক লেখ্যাগার হলো পুনার Tata Centrel Archive। 3. অলাভজনক লেখ্যাগ...

ষোড়শ শতকীয় ইউরোপে মূল্যবিপ্লব | Price Revolution

 ষোড়শ শতকের ইউরোপে মূল্য বিপ্লব   16 শতাব্দীতে ইউরোপীয় অর্থনীতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো মূল্য বিপ্লব। নিত্যব্যবহার্য পণ্যের মূল্য প্রায় 150 বছর সুস্থির থাকার পর ঊর্ধ্বমুখী হতে আরম্ভ করে, এবং 16 শতাব্দীর শেষে খাদ্যপণ্যের মূল্যের প্রায় সাড়ে পাঁচ গুণ বেড়ে যায়। পশ্চিম ইউরোপের অর্থনীতিতে এমন অভাবনীয় এবং সুদুরপ্রসারী ফলাফলসম্পন্ন ঘটনা মূল্য বিপ্লব নামে পরিচিত। মূল্য বিপ্লবের কতগুলি সাধারণ বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। যথা--    (১) কৃষিজ পণ্যের তুলনায় শিল্পজাত পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি ছিল কম, এবং খাদ্যশস্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি। (২) ভূমি রাজস্ব সহ ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক, তোলা ইত্যাদির হার বৃদ্ধি এবং ফটকাবাজির আবির্ভাব। (৩) মূল্যবৃদ্ধির তুলনায় মজুরির হার খুবই কম ছিল বলে প্রকৃত আয় হ্রাস পেয়েছিল। (৪) ভূমি বিক্রয়যোগ্য পণ্যে পরিণত হওয়া। (৫) গ্রামীণ বুর্জোয়াজি শ্রেণীর আবির্ভাব। ষোড়শ শতকের আগেও প্রাকৃতিক কারণে মূল্যবৃদ্ধি হয়েছিল, তবে তা ছিল 2, 3 শতাংশের মতো, যা অস্বাভাবিক মনে হতো না। কিন্তু ষোল শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে যে নিরবিচ্ছিন্ন মূল্যবৃদ্ধি হ...