Please visit our Homepage and Subscribe us.
প্রাক আধুনিক চীনের সামাজিক স্তরবিন্যাস ও জেন্ট্রি সম্প্রদায়
1839 খ্রিস্টাব্দে প্রথম আফিমের যুদ্ধ চীনের পরাজয়ের এবং চীনে পশ্চিমী শক্তির অনুপ্রবেশ এর আগে পর্যন্ত চীনের রুদ্ধদ্বার কালপর্ব 'প্রাক-আধুনিক চীন' হিসেবেই পরিচিত। প্রাক আধুনিক চিনা সমাজ বিভিন্ন স্তরে বিভক্ত ছিল। সমাজের 80% মানুষ গ্রামে বাস করত এবং তারা ছিল মূলত কৃষিজীবী। বাকি 20% মানুষ শহরে বাস করত। শহুরে সম্প্রদায়ের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছিল পণ্ডিত রাজকর্মচারী বা 'শেনশি' বা জেন্ট্রি সম্প্রদায়। প্রাক আধুনিক চীনের সমাজে এদের এতটাই প্রভাব- প্রতিপত্তি ছিল যে চীনকে একপ্রকার 'জেন্ট্রি রাষ্ট্র' বলা হয়।
কাউকে পন্ডিত রাজকর্মচারী বা জেন্ট্রি হতে গেলে তিনটি জিনিসের অধিকারী হতে হত-- ডিগ্রি, ক্ষমতা ও জমি। তবে তিনটি জিনিসই সকলের থাকত এবং সমপরিমাণ থাকত-- এমন নয়। অনেকেই কনফুসীয় পরীক্ষায় অকৃতকার্য হতেন, অনেকেই জমির মালিক ছিলেন না.. ইত্যাদি। তবে মধ্যযুগীয় ইউরোপের সামন্ত প্রভু বা ইংল্যান্ডের জেন্ট্রি শ্রেণীর সঙ্গে এদের কিছু পার্থক্য রয়েছে। ইউরোপের সামন্ত প্রভুদের রাজনৈতিক ক্ষমতা ছিল তাদের ভূসম্পত্তির দ্যোতক। কিন্তু এক্ষেত্রে ছিল ঠিক তার উল্টোটা। অর্থাৎ কনফুসীয় ডিগ্রী অর্জন করার পর একজন হবু জেন্ট্রিকে উচ্চ রাজপদ দেওয়া হত এবং তার দরুন সে জমির মালিকানা পেত।
জেন্ট্রিরা চীনে একটি বিশেষ সুবিধাভোগী সম্প্রদায় হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিল। সাধারণ মানুষের তুলনায় অনেক কম কর দিতে হত। বিশেষ ধরনের বড় বাড়ি 'শেন-হু' তে থাকত এবং নীল রংয়ের বর্ডার দেওয়া এক বিশেষ কালো পোশাক তারা পরত। তাদের বাড়ি, পরিহিত পোশাক বা ব্যবহৃত দ্রব্যাদি, যেমন ঘোড়ার জিন, লাগাম ইত্যাদি অন্য কেউ অনুকরণ করতে পারত না। যারা কনফুসীয় ডিগ্রী লাভ করে উচ্চপদে চাকরি করত তারা জমায় এক বিশেষ ধরনের সোনার বোতাম ব্যবহার করত। কনফুসীয় মন্দিরগুলির অনুষ্ঠানে একমাত্র তাদেরই অংশগ্রহণের অধিকার ছিল। বিশেষ সম্মানিত শ্রেণী হিসেবে তাদের অপমান করা যেত না। আইনি মামলায় জড়িয়ে পড়লে সরাসরি কোর্টে যেতে হত না, প্রতিনিধি পাঠিয়ে দিলেই হত এবং তাদের ক্ষেত্রে লঘু শাস্তিই কাম্য ছিল।
তবে জেন্ট্রি দের বেশ কিছু দায়িত্বও পালন করতে হত। তারা স্থানীয় আমলা ও ম্যাজিস্ট্রেটদের সঙ্গে সাধারণ মানুষের যোগসুত্র স্থাপন করত। তথ্য সংগ্রহের দায়িত্ব তাদের উপরেই ন্যাস্ত থাকত। তাই আমলা ম্যাজিস্ট্রেটদের জেন্ট্রিদের উপর নির্ভর করেই কাজ করতে হত। স্থানীয় বিবাদ সালিশীর মাধ্যমে নিষ্পত্তি করে দিত। স্থানীয় নিরাপত্তার উদ্দেশ্যে তারা এলাকায় দুর্গ ও নগরপ্রাচীর নির্মাণ ও রক্ষনাবেক্ষন করত, বেসরকারি ফৌজ গঠন করতেন এবং নেতৃত্ব দিত। বাঁধ নির্মাণ, সেচ ব্যবস্থার উন্নতি, বিশ্বকোষ রচনা, স্থানীয় গেজেটিয়ার প্রকাশ, বিদ্যালয় তৈরি করে শিক্ষাদান করা, দাতব্য প্রতিষ্ঠান নির্মানে সাহায্য করা প্রভৃতি জনকল্যাণমূলক কাজ গুলিকে জেন্ট্রিরা তাদের কর্তব্য বলে মনে করত।
বিচার সালিশি থেকে শুরু করে স্থানীয় ক্ষেত্রে প্রতিরক্ষা, শাসন, জনসংযোগ, জনকল্যানমূলক কাজকর্ম ইত্যাদি নানা কাজে এই পন্ডিত রাজকর্মচারীদের গুরুত্ত্বপূর্ণ অবদান থাকত। প্রশাসন ও সাধারণ মানুষ-- উভয় স্তরেই এদের স্বচ্ছন্দ বিচরন ছিল। তাই এরা উভয় স্তরের কাছেই খুবই প্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছিল। তবে দ্বন্দ্বও ছিল। সরকারি অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী অভভুত্থান সংগঠিত করতে এরা কুন্ঠিত হতেন না। তাই সব দিক থেকে বিচার করে ঐতিহাসিক ইমান্যূয়েল স্যু কে অনুসরণ করে প্রাক-আধুনিক চিনকে জেন্ট্রি রাষ্ট্র বলাই যায়।
Thanks for reading.
স্যার জেন্ট্রিরা সমাজের কোন স্তরে অবস্থান করতো ?
উত্তরমুছুনপ্রাক-আধুনিক চীনে মধ্যবিত্তদের প্রভাব কতখানি ছিল ?
Thank you sir.
উত্তরমুছুন