সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ইরাসমাস | Erasmus

Erasmus

ইউরোপে ধর্মসংস্কার আন্দোলনে ইরাসমাসের অবদান

মার্টিন লুথারের পূর্বসূরি এবং ইউরোপে ধর্মসংস্কার আন্দোলনের অন্যতম পথপ্রদর্শক ছিলেন ডেসিডেরিয়াস ইরাসমাস (Desiderius Erasmus)। তিনি ছিলেন রেনেসাঁস যুগের শ্রেষ্ঠ মানবতাবাদীদের একজন এবং ১৬শ শতকের প্রথমার্ধে চার্চের অনৈতিকতা, কুসংস্কার এবং অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে যুক্তিবাদী ও শিক্ষাবান্ধব পদ্ধতিতে সোচ্চার হয়েছিলেন। ইরাসমাস বিশ্বাস করতেন যে চার্চের শুদ্ধিকরণ প্রয়োজন, কিন্তু সেটি হওয়া উচিত ভেতর থেকে, ধ্বংস বা বিদ্রোহের মাধ্যমে নয়।

তিনি পোপের বিলাসিতা, যাজকদের লোভ, উপবাস ও সন্ন্যাসের নামে অবৈজ্ঞানিক আচরণ, পবিত্র স্মৃতিচিহ্নের পূজা, ক্ষমা পত্র (Indulgence) বিক্রি, ধর্মদ্রোহীদের জীবন্ত দগ্ধ করা এবং সন্ত পূজার মতো অন্ধ আচারগুলির তীব্র সমালোচনা করেছিলেন। তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ “In Praise of Folly” (১৫০৯) —এ তিনি তীক্ষ্ণ ব্যঙ্গ ও বিদ্রূপের মাধ্যমে চার্চের দুর্নীতি ও অবিবেচনাপূর্ণ আচরণের উপর আঘাত হেনেছিলেন। এই রচনাটি ইউরোপজুড়ে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল।

ইরাসমাসের বিশ্বাস ছিল, ধর্মীয় পুনর্জাগরণ ও নৈতিক সংশোধন কেবল শিক্ষার মাধ্যমেই সম্ভব। তাই তিনি গ্রিক ও ল্যাটিন ভাষায় বাইবেলের বিশুদ্ধ পাঠ প্রস্তুত করেন, যাতে মানুষ খ্রিস্টধর্মের প্রকৃত মর্ম উপলব্ধি করতে পারে। তিনি যুক্তি ও মৃদু সমালোচনার মাধ্যমে চার্চকে সংস্কার করতে চেয়েছিলেন এবং ধর্মের নামে সহিংসতা বা গোঁড়ামির বিপক্ষে ছিলেন।

যদিও ইরাসমাস সরাসরি লুথারের সহযাত্রী হননি, তবুও তাঁর বৌদ্ধিক ও নৈতিক সমালোচনা চার্চ সংস্কারের বীজ বপন করে। পোপের বিরুদ্ধে খোলাখুলি অবস্থান না নিলেও তাঁর লেখনী ও চিন্তাভাবনা পরোক্ষভাবে ইউরোপে ধর্মসংস্কার আন্দোলনের পটভূমি প্রস্তুত করে। এই কারণেই ইতিহাসবিদেরা ইরাসমাসকে “ধর্মসংস্কারের অচেতন জনক” (Unintentional Father of Reformation) বলে অভিহিত করেছেন।

Erasmus's Contribution to the Reformation Movement in Europe

Desiderius Erasmus was a forerunner of Martin Luther and one of the guiding lights of the Reformation movement in Europe. A leading humanist of the Renaissance, Erasmus spoke out against the moral corruption, superstition, and degeneration within the Church in the early 16th century. He firmly believed that reform was essential, but it should come from within the Church, not through destruction or rebellion.

Erasmus severely criticized the luxury of the popes, the greed of the clergy, and irrational practices such as fasting, veneration of relics, the sale of indulgences, the burning of heretics, and the worship of saints. In his famous satirical work, In Praise of Folly (1509), he used sharp wit and irony to expose the corruption and hypocrisy of the Church, causing a significant stir throughout Europe.

He believed that moral and religious revival was only possible through the spread of education. To that end, Erasmus worked to produce a purified Greek and Latin version of the Bible, so that people could truly understand the essence of Christianity. He wanted to reform the Church through reason and gentle critique, and he opposed violence, fanaticism, and rigid dogma.

Although Erasmus did not directly join Luther in the Protestant Reformation, his intellectual and moral criticisms helped sow the seeds of reform. While he never openly defied the Pope, his writings and ideas created a favorable environment for the Reformation to emerge. For this reason, historians often refer to Erasmus as the "Unintentional Father of the Reformation."

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আরবদের সিন্ধু অভিযানঃ প্রত্যক্ষ কারণ ও তাৎপর্য | Arab Conquest of Sindh: Immediate Causes and Significance

আরবদের সিন্ধু অভিযানঃ প্রত্যক্ষ কারণ ও তাৎপর্য সপ্তম শতকের প্রথমার্ধে আরবদেশে ইসলামের আবির্ভাব ঘটে। ইসলাম আরবদের নতুন করে জীবনীশক্তির সঞ্চার করে । ইসলাম ক্রমশ: একটি ধর্ম থেকে রাজনৈতিক শক্তি রূপে আত্মপ্রকাশ করে। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় তারা আরবীয় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। ভারতবর্ষের সঙ্গে আরবদের যোগাযোগ দীর্ঘদিনের। বাণিজ্যিক সূত্রে তারা নিয়মিত ভারতের উপকূল গুলিতে, বিশেষ করে মালাবার উপকূলে আসত। ভারতীয় ও চীনা পণ্য 'ধাও' নামক বিশেষ জাহাজে করে নিয়ে তারা ইউরোপের বাজারে বিক্রি করত। 712 খ্রিস্টাব্দে ইরাকের গভর্নর হাজ্জাজ বিন ইউসুফ এর সেনাপতি ও জামাতা মোহাম্মদ বিন কাসেম সিন্ধু দেশে একটি সফল অভিযান করেন এবং সিন্ধুদেশ আরবীয় মুসলমানদের অধীনে চলে যায়। অভিযানের(প্রত্যক্ষ) কারণ ভারতবর্ষের প্রতি আরবদের দীর্ঘদিনের নজর ছিল। এর আগেও বহুবার ভারতের বিভিন্ন জায়গায় অভিযান পাঠানো হয়েছিল। তবে এই(712 খৃ:) অভিযানের একটি প্রত্যক্ষ কারণ ছিল। জানা যায় যে সিংহলের রাজা ইরাকের গভর্নর হাজ্জাজ বিন ইউসুফ কে কয়েকটি জাহাজে করে উপঢৌকন পাঠাচ্ছিলেন কিন্তু পথে সিন্ধু দেশের জলদস্যুরা দেবল বন্দরে এ...

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ | Category of Archives

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ মহাফেজখানা বা লেখ্যাগারগুলি সাধারণ জনতার জন্য নয় মূলত গবেষক, ঐতিহাসিক, আইনবিদ, চিত্র পরিচালক প্রভৃতি পেশার লোকজন তাদের গবেষণার কাজে লেখ্যাগারে নথি পত্র দেখতে পারেন।  লেখ্যাগার পরিচালনা ও সংরক্ষিত নথির ভিত্তিতে লেখ্যাগগুলিকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়েছে।   1. সরকারি লেখ্যাগার:- কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার বা স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে যে লেখ্যাগারগুলি গড়ে ওঠে। সেগুলিকে সরকারি লেখ্যাগার বলা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এরকম সরকার পরিচালিত এক বা একাধিক লেখ্যাগার থাকে। যেমন, আমেরিকার Natonal Archive And records Administration (NARA)। ভারতবর্ষে র কেন্দ্রীয় লেখ্যাগার National Archive of India নামে পরিচিত। বিভিন্ন ঐতিহাসিক, প্রশাসনিক ও আইনগত নথি, মানচিত্র, নক্সা,  পাণ্ডুলিপি প্রভৃতি সংরক্ষিত থাকে। 2. বানিজ্যিক লেখ্যাগার:-  এটি একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানের লেখ্যাগার বিভিন্ন বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান   মূলত তাদের সংস্থার ঐতিহাসিক এবং বানিজ্যিক নথি সংরক্ষিত রাখে। যেমন, ভারতের প্রথম বানিজ্যিক লেখ্যাগার হলো পুনার Tata Centrel Archive। 3. অলাভজনক লেখ্যাগ...

ষোড়শ শতকীয় ইউরোপে মূল্যবিপ্লব | Price Revolution

 ষোড়শ শতকের ইউরোপে মূল্য বিপ্লব   16 শতাব্দীতে ইউরোপীয় অর্থনীতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো মূল্য বিপ্লব। নিত্যব্যবহার্য পণ্যের মূল্য প্রায় 150 বছর সুস্থির থাকার পর ঊর্ধ্বমুখী হতে আরম্ভ করে, এবং 16 শতাব্দীর শেষে খাদ্যপণ্যের মূল্যের প্রায় সাড়ে পাঁচ গুণ বেড়ে যায়। পশ্চিম ইউরোপের অর্থনীতিতে এমন অভাবনীয় এবং সুদুরপ্রসারী ফলাফলসম্পন্ন ঘটনা মূল্য বিপ্লব নামে পরিচিত। মূল্য বিপ্লবের কতগুলি সাধারণ বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। যথা--    (১) কৃষিজ পণ্যের তুলনায় শিল্পজাত পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি ছিল কম, এবং খাদ্যশস্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি। (২) ভূমি রাজস্ব সহ ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক, তোলা ইত্যাদির হার বৃদ্ধি এবং ফটকাবাজির আবির্ভাব। (৩) মূল্যবৃদ্ধির তুলনায় মজুরির হার খুবই কম ছিল বলে প্রকৃত আয় হ্রাস পেয়েছিল। (৪) ভূমি বিক্রয়যোগ্য পণ্যে পরিণত হওয়া। (৫) গ্রামীণ বুর্জোয়াজি শ্রেণীর আবির্ভাব। ষোড়শ শতকের আগেও প্রাকৃতিক কারণে মূল্যবৃদ্ধি হয়েছিল, তবে তা ছিল 2, 3 শতাংশের মতো, যা অস্বাভাবিক মনে হতো না। কিন্তু ষোল শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে যে নিরবিচ্ছিন্ন মূল্যবৃদ্ধি হ...