সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

কনফুসিয়াসবাদ


Please visit our Homepage and Subscribe us.

কনফুসিয়াসবাদ

প্রাক আধুনিক চীনা সমাজে চিন্তা ভাবনার জগতে যে আদর্শের প্রভাব সবচেয়ে বেশি ছিল তা হল কনফুসিয়াসবাদ।কনফুসিয়াস ছিলেন একজন শিক্ষক ও দার্শনিক। তিনি আজও পূর্ব এশিয়ার শ্রেষ্ঠ দার্শনিক এর মর্যাদা পেয়ে থাকেন। চিনা রাষ্ট্র ব্যবস্থা থেকে শুরু করে অর্থনীতি, সমাজ, এবং সাংস্কৃতিক জীবন কনফুসিয়াসের দর্শনের দ্বারা পরিচালিত হত। ফেয়ার ব্যাংক মনে করেন, চিনা কমিউনিস্টরা পর্যন্তও কনফুসিয়াস কে অগ্রাহ্য করতে পারেননি।


কনফুসীয় নামটি চিনা 'কুৎ-ফু-ৎজু' এর ল্যাটিন সংস্করণ। ৎজু শব্দটির ইংরাজী প্রতিশব্দ হলো মাস্টার। কনফুসিয়াসের দর্শন সম্পর্কে আমরা জানতে পারি 'লুন-উ' বা বচন সংগ্রহ থেকে, যেখানে তার শিষ্যরা প্রশ্ন করেছেন এবং তিনি উত্তর দিচ্ছেন। তাঁর রচিত একটি গ্রন্থ আছে যার নামের বাংলা তর্জমা হল লু  রাজ্যের ইতিবৃত্ত। তিনি একজন রাজনীতিবিদের জীবন বেছে নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ব্যর্থ হয়ে তিনি শিক্ষকতার জীবনকে বেছে নেন। তার চিন্তা ভাবনার কেন্দ্রীয় বিষয় ছিল মর্ত্যের সমস্যাগুলি। তাই অতি ভৌতিক বা অতি মানবিক বিষয়ে তার তেমন উৎসাহ ছিল না।

কনফুসিয়াসের মতে পৃথিবীতে জন্ম নেওয়া প্রতিটি মানুষের একটি নির্দিষ্ট কর্তব্য আছে, যা যথাযথ আন্তরিক ভাবে পালন করা প্রত্যেকের কর্তব্য। তিনি এজন্যই প্রভুদের শাসন করার বংশানুক্রমিক অধিকার নিয়ে কোনো প্রশ্ন তোলেননি। তবে একথা তিনি বলতে ভুলেননি যে তারা শাসক হিসেবে সঠিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করবেন। সে যুগের মানুষ হয়েও তিনি রাজনৈতিক সমস্যার সমাধানের পথ হিসেবে শক্তি প্রয়োগ কে অস্বীকার করেছেন। তার মতে রাজনৈতিক সাফল্যের একমাত্র মাপকাঠি হলো জনগণের পরিতৃপ্তি এবং শাসক এর গুনাবলী, অর্থাৎ একজন শাসক স্বর্গের আদেশে ততদিনই শাসন করবেন যতদিন তিনি প্রজাকে পরিতৃপ্ত রাখতে পারবেন। যুক্তি প্রয়োগ করে মধ্যস্থতা ও সমঝোতার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের ওপর তিনি জোর দেন। এই জন্যই সম্ভবত চিনা ঐতিহ্যের একজন সফল সেনাধক্ষের চেয়ে পন্ডিত এর মর্যাদা অনেক বেশি। কনফুসিয়াসের মতাদর্শ চুই ধর্ম নামে পরিচিত। একজন চুই হবেন উদার, সত্যবাদী, নমনীয় এবং ভিন্নমত সহিষ্ণু। চুই ধর্মে পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের কর্তব্য কে যথেষ্ট গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয়েছে।

কনফুসিয়াস দর্শনে সমসাময়িক সামন্ততান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থাকে শক্তিশালী করা হয়েছে এবং সামাজিক ক্রমবিন্যাস ও শ্রেণী বিভাজনকে স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে তাকে আমাদের রক্ষণশীল মনে হতে পারে। কিন্তু তিনি শাসকের পুণ্য ও প্রজার পরিতৃপ্তির মধ্যে যে সমন্বয় সাধনের চেষ্টা করেছেন তা যথেষ্ট উদার মানসিকতার পরিচয় বহন করে। তবে লক্ষণীয় বিষয় এটাই যে কনফুসিয়াসবাদে স্বর্গ, নরক,দেবতা ধর্মীয় ক্রিয়া-কলাপ এর মত বিষয়গুলি কে অগ্রাহ্য করে মানুষকে নৈতিক ভাবে শ্রেষ্ঠ হবার পরামর্শ দিয়েছে.।

***************************************

Thanks for reading.

মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আরবদের সিন্ধু অভিযান | কারণ ও তাৎপর্য

আরবদের সিন্ধু অভিযান | কারণ ও তাৎপর্য Please visit our Homepage and subscribe us. Suggested Topics || Ghajnavid Invasion || গজনী আক্রমণ || || মামুদের সোমনাথ মন্দির লুণ্ঠন || Somnath Temple Plunder || || তরাইনের যুদ্ধ ও তার গুরুত্ত্ব || মহম্মদ ঘুরির ভারত আক্রমন ও তার চরিত্র || সপ্তম শতকের প্রথমার্ধে আরবদেশে ইসলামের আবির্ভাব ঘটে। ইসলাম আরবদের নতুন করে জীবনীশক্তির সঞ্চার করে । ইসলাম ক্রমশ: একটি ধর্ম থেকে রাজনৈতিক শক্তি রূপে আত্মপ্রকাশ করে। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় তারা আরবীয় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। ভারতবর্ষের সঙ্গে আরবদের যোগাযোগ দীর্ঘদিনের। বাণিজ্যিক সূত্রে তারা নিয়মিত ভারতের উপকূল গুলিতে, বিশেষ করে মালাবার উপকূলে আসত। ভারতীয় ও চীনা পণ্য 'ধাও' নামক বিশেষ জাহাজে করে নিয়ে তারা ইউরোপের বাজারে বিক্রি করত। 712 খ্রিস্টাব্দে ইরাকের গভর্নর হাজ্জাজ বিন ইউসুফ এর সেনাপতি ও জামাতা মোহাম্মদ বিন কাসেম সিন্ধু দেশে একটি সফল অভিযান করেন এবং সিন্ধুদেশ আরবীয় মুসলমানদের অধীনে চলে যায়। অভিযানের(প্রত্যক্ষ) কারণ ভারতবর্ষের প্রতি আরবদের দীর্ঘদিনের নজর ছিল। এর আ

ষোড়শ শতকীয় ইউরোপে মূল্যবিপ্লব | Price Revolution

 ষোড়শ শতকের ইউরোপে মূল্য বিপ্লব   16 শতাব্দীতে ইউরোপীয় অর্থনীতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো মূল্য বিপ্লব। নিত্যব্যবহার্য পণ্যের মূল্য প্রায় 150 বছর সুস্থির থাকার পর ঊর্ধ্বমুখী হতে আরম্ভ করে, এবং 16 শতাব্দীর শেষে খাদ্যপণ্যের মূল্যের প্রায় সাড়ে পাঁচ গুণ বেড়ে যায়। পশ্চিম ইউরোপের অর্থনীতিতে এমন অভাবনীয় এবং সুদুরপ্রসারী ফলাফলসম্পন্ন ঘটনা মূল্য বিপ্লব নামে পরিচিত। মূল্য বিপ্লবের কতগুলি সাধারণ বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। যথা--    (১) কৃষিজ পণ্যের তুলনায় শিল্পজাত পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি ছিল কম, এবং খাদ্যশস্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি। (২) ভূমি রাজস্ব সহ ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক, তোলা ইত্যাদির হার বৃদ্ধি এবং ফটকাবাজির আবির্ভাব। (৩) মূল্যবৃদ্ধির তুলনায় মজুরির হার খুবই কম ছিল বলে প্রকৃত আয় হ্রাস পেয়েছিল। (৪) ভূমি বিক্রয়যোগ্য পণ্যে পরিণত হওয়া। (৫) গ্রামীণ বুর্জোয়াজি শ্রেণীর আবির্ভাব। ষোড়শ শতকের আগেও প্রাকৃতিক কারণে মূল্যবৃদ্ধি হয়েছিল, তবে তা ছিল 2, 3 শতাংশের মতো, যা অস্বাভাবিক মনে হতো না। কিন্তু ষোল শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে যে নিরবিচ্ছিন্ন মূল্যবৃদ্ধি হয়েছিল তা জনজীবনে তীব্রভ

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ | Category of Archives

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ মহাফেজখানা বা লেখ্যাগারগুলি সাধারণ জনতার জন্য নয় মূলত গবেষক, ঐতিহাসিক, আইনবিদ, চিত্র পরিচালক প্রভৃতি পেশার লোকজন তাদের গবেষণার কাজে লেখ্যাগারে নথি পত্র দেখতে পারেন।  লেখ্যাগার পরিচালনা ও সংরক্ষিত নথির ভিত্তিতে লেখ্যাগগুলিকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়েছে।   1. সরকারি লেখ্যাগার:- কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার বা স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে যে লেখ্যাগারগুলি গড়ে ওঠে। সেগুলিকে সরকারি লেখ্যাগার বলা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এরকম সরকার পরিচালিত এক বা একাধিক লেখ্যাগার থাকে। যেমন, আমেরিকার Natonal Archive And records Administration (NARA)। ভারতবর্ষে র কেন্দ্রীয় লেখ্যাগার National Archive of India নামে পরিচিত। বিভিন্ন ঐতিহাসিক, প্রশাসনিক ও আইনগত নথি, মানচিত্র, নক্সা,  পাণ্ডুলিপি প্রভৃতি সংরক্ষিত থাকে। 2. বানিজ্যিক লেখ্যাগার:-  এটি একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানের লেখ্যাগার বিভিন্ন বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান   মূলত তাদের সংস্থার ঐতিহাসিক এবং বানিজ্যিক নথি সংরক্ষিত রাখে। যেমন, ভারতের প্রথম বানিজ্যিক লেখ্যাগার হলো পুনার Tata Centrel Archive। 3. অলাভজনক লেখ্যাগার:-   কোনো ব্যাক্তিগত বা অলাভজনক