প্রাক আধুনিক চীনের অর্থনীতি
প্রাক-আধুনিক চিন বলতে আমরা প্রাক-ঔপনিবেশিক চিনকেই বুঝে থাকি। কেবল প্রাক-আধুনিক যুগেই নয়, বলা যেতে পারে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত চীনের অর্থনীতি ছিল প্রধানত কৃষিভিত্তিক। চীনে যখন প্রথম শিল্পায়ন হয়েছিল কৃষিভিত্তিক শিল্প গঠনের মধ্য দিয়ে।
কনফুসীয় চিন্তা ধারা অনুযায়ী কৃষি ছিল উৎকৃষ্ট পেশা। বাণিজ্য সেখানে ছিল অবহেলিত। মোট জনসংখ্যার 4/5 অংশ কৃষি কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিল। দক্ষিণ ও মধ্য চীনে প্রচুর ধান উৎপাদিত হত। উত্তর চীনে গম, ভুট্টা, চা, বাদাম প্রভৃতি ফসলের চাষ হত। তাছাড়া তুঁত, তুলা, শন, তৈলবীজ প্রভৃতির ফলন চীনে চালু ছিল।
প্রাক আধুনিক চীনের জমির ব্যক্তিগত মালিকানা স্বীকৃত ছিল। সেই সূত্রে কৃষকরাও জমির মালিকানা পেত। পিতার মৃত্যুর পর তার পুত্রদের মধ্যে পিতার জমি সমভাবে বন্টিত হত। এর ফলে জমি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র খন্ডে বিভক্ত হয়ে পড়ার সম্ভাবনা ছিল। চাষবাস ছিল নিবিড় পদ্ধতির। বারবার বন্টনের ফলে মাথাপিছু জমির পরিমাণ যখন কমে যেতে থাকে তখন জমির উর্বরতা শক্তি কমে যায়। সন্তানাদির আধিক্য এবং জমির ক্রমান্বয়ে উর্বরতা হ্রাসের ফলে কৃষক পরিবারে মোটামুটি সবসময়ই অভাব থাকত।
জমি ছাড়া অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদের মধ্যে ছিল বনজ সম্পদ মৎস্য সম্পদ এবং সীমিত পরিমাণে খনিজ সম্পদ (কয়লা লোহা তামা টিন প্রভৃতি)। আঠারো শতকে চীনের জনসংখ্যা দ্রুত হারে বাড়ছিল। কিন্তু মূলধন এবং সরকার ও বুদ্ধিবৃত্তি শ্রেণীর অনিচ্ছার কারণে চীনে শিল্পায়ন সম্ভব হয়নি।
প্রাক আধুনিক চীনের সীমিত পরিমাণে হলেও ব্যবসা বাণিজ্য চলত। শহরে তিন-চার দিন অন্তর বাজার বসত। বণিকরা স্থলপথে ও জলপথে শহরবাসীর প্রয়োজন অনুযায়ী মাল যোগান দিত। ফেরিওয়ালারা গ্রামে গ্রামে ঘুরে শহরে উৎপাদিত লবণ ধাতবদ্রব্য, কাপড়, কাগজ প্রভৃতি বিক্রি করতো। তবে বহির্বাণিজ্যে চীনাদের ব্যাপক অনীহা ছিল। চীনারা নিজেদের 'স্বর্গের সন্তান' বলে মনে করত এবং অন্য সকল দেশকে 'বর্বরদের দেশ' বলে মনে করত। এই ধারণার বশবর্তী হয়েই চীনারা নিজেদেরকে বহির্বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন রেখেছিল। এই বিচ্ছিন্নতা থেকেই জন্ম নিয়েছিল স্বয়ংসম্পূর্ণতা। তাই চীনারা রপ্তানি বাণিজ্যে (যেমন: ক্যান্টন ট্রেড) অংশগ্রহণ করলেও বিদেশি পণ্য আমদানি করার চরম বিরোধী ছিল।
Thanks for reading.
Thank you sir
উত্তরমুছুনOk sir
উত্তরমুছুনOk sir
উত্তরমুছুনThank you sir.
উত্তরমুছুন