সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

The Catholic Reformation| Conter Reformation in Europe| প্রতি সংস্কার আন্দোলন | ক্যাথলিক সংস্কার আন্দোলন

Catholic refolmation

ক্যাথলিক সংস্কার আন্দোলন। প্রতি সংস্কার আন্দোলন

সারা ষোড়শ শতক জুড়ে সংস্কারবাদীরা যখন ক্যাথলিক চার্চ ও ধর্মমতকে ক্রমাগত আক্রমণ করেছে, তখন ক্যাথলিক চার্চের ভিতর থেকেই সংস্কারের প্রচেষ্টা শুরু হয়। ষোল শতকের দ্বিতীয় দশক থেকে এই প্রচেষ্টা পরিলক্ষিত হয়। এই প্রচেষ্টাকে কেবল প্রোটেস্ট্যান্ট আন্দোলনের  প্রতিক্রিয়া হিসেবে দেখা সঠিক নয়, কারন লুথারের অনেক আগেই ইতালিতে ক্যাথলিক চার্চের ভোগবিলাস ও অর্থলোভের বিরুদ্ধে সমালোচনা শুরু হয়েছিল। ক্যাথলিক যাজকদের অনেকেই ব্যক্তিগতভাবে যাজক শ্রেণীর নৈতিক বিচ্যুতির সমালোচনা করেছিলেন। তারা সদাচারের মাধ্যমে  ঈশ্বর ভক্তির তত্ত্ব তুলে ধরেছিলেন। ফলে তাদের অনেকেরই পোপের কাছে শাস্তি পেতে হয়েছিল।

প্রথমদিকে রোমের প্রশাসন এই ক্যাথলিক সংস্কারবাদী চেতনাকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়নি। রোমান সম্রাট ম্যাক্সমিলিয়ান সংস্কারের উদ্দেশ্যে যে সভার ডাক দিয়েছিল পোপ তাতে সম্মতি দেয়নি। ১৫২১ খ্রিস্টাব্দে পোপ ষষ্ঠ অ্যাড্রিয়ান কিছু সংস্কারের কথা চিন্তা করলেও তা কার্যকর করার আগেই তার মৃত্যু হয়। পরবর্তীতে পোপ ক্লেমেন্ট ছিলেন বিলাস-ব্যসনী। কিন্তু তার পূর্বসূরী পল্ জার্মানির  প্রোটেস্টানদের সাথে আলোচনা করে, বিরোধ মিটিয়ে নেওয়ার পক্ষপাতী ছিলেন। এই উদ্দেশ্যে তিনি একটি সভার আয়োজন করেন। তিনি সাতজনের সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিশন গঠন করেন, যার দায়িত্ব ছিল সংস্কারের একটি প্রস্তাবনা তৈরি করা। এরা পোপের প্রশাসনকেই আর্থিক অনাচারের জন্য দায়ী করেন। ইটালীয় কিছু ক্যাথলিক ধর্ম যাজকও একটি ধর্মীয় আন্দোলনেরও সূচনা করেন।

ক্যাথলিক মানবতাবাদীদের যাজকদের জীবন কি রকম হওয়া উচিত তা নিয়ে একটি পৃথক দৃষ্টিভঙ্গি ছিল। তারা মনে করতেন ধর্মীয় যাজকদের লাভজনক সরকারি পদ পরিহার করে, সাধারণ ঈশ্বরভক্ত  দরিদ্র মানুষদের সেবায় জীবন উৎসর্গ করা উচিত। এদেরকে শিক্ষিত করার দায়িত্ব যাজকদের উপরই বর্তায়। আঞ্চলিক স্তরে ক্যাথলিক সাধু-সন্তরাও সেবাধর্ম ও ঈশ্বর ভক্তির প্রচারে অগ্রণী হন। নতুন নতুন ধর্মীয় সংগঠন গড়ে তোলেন, যেমন স্পেনের ইগনেশিয়া লায়েলা। প্রোটেস্টানদের প্রতিহত করতে society of Jesus প্রতিষ্ঠা করেন। এই  সংগঠনের প্রচারকেরা জেসুইট নামে পরিচিত হন।  প্রোটেস্টান ধর্মের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার স্বার্থে পোপ এই সংগঠনকে স্বীকৃতি দেন। এই ধর্মচর্চায় শাস্ত্র জ্ঞানের সঙ্গে আধ্যাত্বিকতা ও ভক্তিবাদী সাধনার সংমিশ্রন ঘটে। এদের কাজই ছিল প্রটেস্ট্যান্ট অধ্যুষিত দেশ গুলিতে ক্যাথলিক মতবাদকে সুরক্ষিত করা।

ক্যাথলিক ধর্মমতকে প্রতিবাদী আক্রমণের প্রেক্ষিতে নতুন করে সংগঠিত করার চেষ্টা করা হয়েছিল। ১৫৪২-১৫৬৩ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে ট্রেন্ট শহরে ক্রমান্বয়ে তিনবার ক্যাথলিক যাজকদের ধর্মসভা বসেছিল। এখানে ধর্মীয় সংগঠনকে মধ্যযুগীয় চিন্তাভাবনার থেকে অনেকখানি উন্নত করার চেষ্টা করা হয়েছিল। ট্রেন্ট এর ধর্মসভায় ক্যাথলিকদের পালনীয় ধর্মীয় আচরণ বিধি এবং ধর্মীয় অনুষ্ঠানের শাস্ত্রীয় ভিত্তি কি তা আলোচনা হয়, এবং কোনটি শাস্ত্রীয় এবং কোনটি অশাস্ত্রীয় আচরণ তার সিদ্ধান্ত হয়। বলা হয় কেবলমাত্র ঈশ্বরকে বিশ্বাস করলেই স্বর্গ লাভ হয় না, বিশ্বাসের সঙ্গে সঙ্গে সৎ কাজের দরকার। আচার পালন  ধর্ম পালনের একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। কারণ আচার পালনের মাধ্যমে  বিশ্বাসী মানুষ এক বৃহত্তর ভক্তিবাদী সাধনার দিকে অগ্রসর হয়। প্রকৃতপক্ষে ট্রেন্ট এর ধর্মসভায় যাজকেরা ভক্তিবাদী সাধনার মধ্য দিয়ে ক্যাথলিক ধর্মমতের পুনরুত্থানের সম্ভাবনা খুঁজেছিলেন।

The Catholic Reformation | Counter-Reformation in Europe

Throughout the 16th century, while reformers were continuously attacking the Catholic Church and its doctrines, efforts for reform from within the Catholic Church itself had also begun. These reform efforts can be traced back to the second decade of the 16th century. It would be incorrect to view this solely as a reaction to the Protestant movement, because criticism of the luxury and greed within the Catholic Church had begun in Italy even before Luther. Many Catholic priests themselves criticized the moral decay of the clergy and emphasized the path of piety and devotion to God, for which many were punished by the Pope.

Initially, the Roman administration did not pay much attention to these internal reform sentiments. When Emperor Maximilian called for a reform council, the Pope declined to cooperate. In 1521, Pope Adrian VI contemplated some reforms, but he died before any significant action could be taken. His successor, Pope Clement VII, was known for his luxurious lifestyle. However, Pope Paul III, one of his predecessors, sought dialogue with the German Protestants to resolve the conflict. He organized a council and formed a commission of seven members to draft a reform proposal. This commission blamed the papal administration itself for the financial corruption. At the same time, some Italian Catholic priests began their own religious movements focused on reform.

The Catholic humanists held a different vision of what a priest’s life should be. They believed clergy should reject profitable state posts and instead dedicate their lives to serving poor, devout believers. Priests were responsible for educating the people. At the regional level, many Catholic saints and mystics took the lead in spreading the message of service and devotion. New religious organizations were founded, such as the one established by Ignatius of Loyola in Spain. To counter the Protestants, he founded the Society of Jesus, whose members came to be known as Jesuits. The Pope recognized this organization to build public opinion against Protestantism. Their religious practice combined scriptural knowledge with spiritual and devotional discipline. Their primary mission was to preserve and spread Catholicism in Protestant-dominated regions.

In response to the Protestant challenge, efforts were made to reorganize and strengthen Catholicism. Between 1542 and 1563, three sessions of the Council of Trent were held. These sought to modernize the Catholic religious organization and distance it from outdated medieval thought. The Council deliberated on the rules of conduct and religious practices that Catholics should follow, distinguishing between scripturally valid and invalid practices. It concluded that faith alone was not sufficient for salvation; good deeds were also essential. Religious rituals were declared an inseparable part of religious practice, as they helped the believer progress toward a deeper path of devotion.

In essence, the Council of Trent became a platform through which Catholic leaders sought to bring about a revival of Catholicism through devotional spirituality, reasserting the moral and spiritual authority of the Church in the face of the Protestant Reformation.

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আরবদের সিন্ধু অভিযানঃ প্রত্যক্ষ কারণ ও তাৎপর্য | Arab Conquest of Sindh: Immediate Causes and Significance

আরবদের সিন্ধু অভিযানঃ প্রত্যক্ষ কারণ ও তাৎপর্য সপ্তম শতকের প্রথমার্ধে আরবদেশে ইসলামের আবির্ভাব ঘটে। ইসলাম আরবদের নতুন করে জীবনীশক্তির সঞ্চার করে । ইসলাম ক্রমশ: একটি ধর্ম থেকে রাজনৈতিক শক্তি রূপে আত্মপ্রকাশ করে। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় তারা আরবীয় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। ভারতবর্ষের সঙ্গে আরবদের যোগাযোগ দীর্ঘদিনের। বাণিজ্যিক সূত্রে তারা নিয়মিত ভারতের উপকূল গুলিতে, বিশেষ করে মালাবার উপকূলে আসত। ভারতীয় ও চীনা পণ্য 'ধাও' নামক বিশেষ জাহাজে করে নিয়ে তারা ইউরোপের বাজারে বিক্রি করত। 712 খ্রিস্টাব্দে ইরাকের গভর্নর হাজ্জাজ বিন ইউসুফ এর সেনাপতি ও জামাতা মোহাম্মদ বিন কাসেম সিন্ধু দেশে একটি সফল অভিযান করেন এবং সিন্ধুদেশ আরবীয় মুসলমানদের অধীনে চলে যায়। অভিযানের(প্রত্যক্ষ) কারণ ভারতবর্ষের প্রতি আরবদের দীর্ঘদিনের নজর ছিল। এর আগেও বহুবার ভারতের বিভিন্ন জায়গায় অভিযান পাঠানো হয়েছিল। তবে এই(712 খৃ:) অভিযানের একটি প্রত্যক্ষ কারণ ছিল। জানা যায় যে সিংহলের রাজা ইরাকের গভর্নর হাজ্জাজ বিন ইউসুফ কে কয়েকটি জাহাজে করে উপঢৌকন পাঠাচ্ছিলেন কিন্তু পথে সিন্ধু দেশের জলদস্যুরা দেবল বন্দরে এ...

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ | Category of Archives

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ মহাফেজখানা বা লেখ্যাগারগুলি সাধারণ জনতার জন্য নয় মূলত গবেষক, ঐতিহাসিক, আইনবিদ, চিত্র পরিচালক প্রভৃতি পেশার লোকজন তাদের গবেষণার কাজে লেখ্যাগারে নথি পত্র দেখতে পারেন।  লেখ্যাগার পরিচালনা ও সংরক্ষিত নথির ভিত্তিতে লেখ্যাগগুলিকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়েছে।   1. সরকারি লেখ্যাগার:- কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার বা স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে যে লেখ্যাগারগুলি গড়ে ওঠে। সেগুলিকে সরকারি লেখ্যাগার বলা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এরকম সরকার পরিচালিত এক বা একাধিক লেখ্যাগার থাকে। যেমন, আমেরিকার Natonal Archive And records Administration (NARA)। ভারতবর্ষে র কেন্দ্রীয় লেখ্যাগার National Archive of India নামে পরিচিত। বিভিন্ন ঐতিহাসিক, প্রশাসনিক ও আইনগত নথি, মানচিত্র, নক্সা,  পাণ্ডুলিপি প্রভৃতি সংরক্ষিত থাকে। 2. বানিজ্যিক লেখ্যাগার:-  এটি একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানের লেখ্যাগার বিভিন্ন বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান   মূলত তাদের সংস্থার ঐতিহাসিক এবং বানিজ্যিক নথি সংরক্ষিত রাখে। যেমন, ভারতের প্রথম বানিজ্যিক লেখ্যাগার হলো পুনার Tata Centrel Archive। 3. অলাভজনক লেখ্যাগ...

ষোড়শ শতকীয় ইউরোপে মূল্যবিপ্লব | Price Revolution

 ষোড়শ শতকের ইউরোপে মূল্য বিপ্লব   16 শতাব্দীতে ইউরোপীয় অর্থনীতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো মূল্য বিপ্লব। নিত্যব্যবহার্য পণ্যের মূল্য প্রায় 150 বছর সুস্থির থাকার পর ঊর্ধ্বমুখী হতে আরম্ভ করে, এবং 16 শতাব্দীর শেষে খাদ্যপণ্যের মূল্যের প্রায় সাড়ে পাঁচ গুণ বেড়ে যায়। পশ্চিম ইউরোপের অর্থনীতিতে এমন অভাবনীয় এবং সুদুরপ্রসারী ফলাফলসম্পন্ন ঘটনা মূল্য বিপ্লব নামে পরিচিত। মূল্য বিপ্লবের কতগুলি সাধারণ বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। যথা--    (১) কৃষিজ পণ্যের তুলনায় শিল্পজাত পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি ছিল কম, এবং খাদ্যশস্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি। (২) ভূমি রাজস্ব সহ ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক, তোলা ইত্যাদির হার বৃদ্ধি এবং ফটকাবাজির আবির্ভাব। (৩) মূল্যবৃদ্ধির তুলনায় মজুরির হার খুবই কম ছিল বলে প্রকৃত আয় হ্রাস পেয়েছিল। (৪) ভূমি বিক্রয়যোগ্য পণ্যে পরিণত হওয়া। (৫) গ্রামীণ বুর্জোয়াজি শ্রেণীর আবির্ভাব। ষোড়শ শতকের আগেও প্রাকৃতিক কারণে মূল্যবৃদ্ধি হয়েছিল, তবে তা ছিল 2, 3 শতাংশের মতো, যা অস্বাভাবিক মনে হতো না। কিন্তু ষোল শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে যে নিরবিচ্ছিন্ন মূল্যবৃদ্ধি হ...