সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ক্যান্টন বাণিজ্য | Canton Trade

Please visit our Homepage and Subscribe us.

ক্যান্টন বাণিজ্য | Canton Trade


চীনের সাথে পশ্চিমী শক্তিগুলির যোগাযোগের ইতিহাসে  ক্যান্টন বানিজ্যের ভূমিকা বিশেষ উল্লেখযোগ্য। তাং যুগ থেকেই দক্ষিণ চীনের এই বন্দর-শহর ক্যান্টন ছিল বৈদেশিক বাণিজ্যের একটি প্রধান ঘাঁটি।  ভাস্কো-ডা-গামা কর্তৃক আফ্রিকা ঘুরে ভারতে আসার জলপথ আবিষ্কার হওয়ার পর থেকেই পর্তুগিজরা এবং পরে অন্যান্য ইউরোপীয় বাণিজ্যিক শক্তিগুলি ক্যান্টনে এসে হাজির হয়। ইংরেজরা ক্যান্টন ছাড়াও অ্যাময় ও নিংপোতে  ঢোকার চেষ্টা করে। কিন্তু বিভিন্ন কারণে  মাঞ্চু সরকার একমাত্র ক্যান্টন বন্দর বিদেশিদের জন্য উন্মুক্ত করেন এবং অন্যত্র বিদেশিদের অনুপ্রবেশ নিষিদ্ধ হয়।

canton-trade
canton trade

ক্যান্টন বাণিজ্যে ইউরোপীয়দের বেশ কিছু কঠিন শর্ত মেনে চলতে হত। বিদেশিদের প্রতি হীন দৃষ্টিভঙ্গিগত কারণে চীনারা তাদের ওপরে এই রকম শর্ত আরোপ করত। আধুনিক পশ্চিমী শক্তিগুলিকে চীনারা তাদের প্রতিবেশী করদ রাজ্যের থেকে বেশি কিছু ভাবতো না। বরং মনে করত যে, মাঞ্চু সরকার কৃপা করে তাদের ক্যান্টন বাণিজ্য করার অধিকার দিয়েছে, বিদেশিদের কাছ থেকে কিছু নেওয়ার কোনো প্রয়োজন চীনের নেই। তাই ক্যান্টন বাণিজ্য ছিল একমুখী।

ক্যান্টন এর চিনা বাণিজ্যিক সংস্থার নাম ছিল কো হং। বিদেশিদের এই সংস্থার অন্তর্ভুক্ত হং বণিকদের মাধ্যমে বাণিজ্য করতে হত। পণ্যদ্রব্যের দাম এরাই নির্ধারণ করত। সংস্থাটি লিয়াং গুয়াং এর   আবগারি অধিকর্তা হপ্পোর কাছে দায়বদ্ধ থাকত। এই হপ্পো-রা সর্বদাই দুর্নীতিপরায়ন হত। হং বণিকদের কাছ থেকে এরা উৎকোচ আদায় করত। হং বণিকদের পক্ষে তাই দুর্নীতিগ্রস্ত হওয়া ছাড়া উপায় থাকত না।  কো হং সংস্থা ছাড়াও বিদেশীরা ক্যান্টন নগর প্রাচীরের বাইরে পার্ল নদীর তীরে তেরোটি ফ্যাক্টরি গড়ে তুলেছিল। চীনাদের সংকীর্ণ ভাবনায় এগুলিকে তারা আই-কুয়ান বা বর্বরদের সংস্থা বলে  অভিহিত করত। ক্যান্টন বন্দরে বিদেশি বণিকরা যদি কোনও ফৌজদারী মামলায় জড়িয়ে পড়তো তাহলে তার দরুন চীনা আইন অনুযায়ী কঠিন শাস্তি হত।


এখন প্রশ্ন হলো এত প্রতিকূলতা ও অপমান সত্বেও পশ্চিমারা কেন ক্যান্টনে তাদের বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছিল? আসলে ক্যান্টন বাণিজ্য ছিল অত্যন্ত লাভজনক। চীনের রেশম, চা ও নানকিনের ইউরোপের বাজারে ব্যাপক চাহিদা ছিল। সবচেয়ে বেশি চাহিদা ছিল চা এর। তবে পশ্চিমা শক্তিগুলো এই প্রতিকূলতা দূর করে সমপর্যায়ে দাঁড়িয়ে দ্বিমুখী বাণিজ্য করার জন্য উদগ্রীব ছিল। এই উদ্দেশ্যে  ব্রিটিশ সরকার পিকিং-এ বেশ কয়েকবার দূত প্রেরণও করেছিল। যদিও প্রতিটি প্রচেষ্টাই ব্যর্থ হয়েছিল।


শিল্প বিপ্লব পরবর্তী ইউরোপীয় শক্তিগুলি কি পরিমান উন্নতি করেছিল রুদ্ধদ্বার চীনের কাছে তার কোনও খবরই ছিল না। তাই চীন সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলিকে হালকাভাবেই নিয়েছিল। এদিকে ব্রিটেন ও আমেরিকা চীনের সাথে আলাপ আলোচনার পথে ব্যর্থ হয়ে চীনে আফিমের চোরাচালান শুরু করে।  আফিম চালানকে কেন্দ্র করে চীনের সঙ্গে সম্পর্কের ব্যাপক অবনতি ঘটে এবং যুদ্ধের সূচনা হয়। প্রথম ও দ্বিতীয় ইঙ্গ চীন যুদ্ধে, আফিম যুদ্ধ নামে পরিচিত, চীন পরাজিত হয় এবং পশ্চিমী শক্তিগুলির সাথে অসম চুক্তি স্বাক্ষর করতে বাধ্য হয়। এইভাবে চীনের রুদ্ধদ্বার উন্মোচিত হয় এবং 'ক্যান্টন বাণিজ্যের' প্রাসঙ্গিকতার অবসান ঘটে।
 
Thanks for reading.

মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আরবদের সিন্ধু অভিযান | কারণ ও তাৎপর্য

আরবদের সিন্ধু অভিযান | কারণ ও তাৎপর্য Please visit our Homepage and subscribe us. Suggested Topics || Ghajnavid Invasion || গজনী আক্রমণ || || মামুদের সোমনাথ মন্দির লুণ্ঠন || Somnath Temple Plunder || || তরাইনের যুদ্ধ ও তার গুরুত্ত্ব || মহম্মদ ঘুরির ভারত আক্রমন ও তার চরিত্র || সপ্তম শতকের প্রথমার্ধে আরবদেশে ইসলামের আবির্ভাব ঘটে। ইসলাম আরবদের নতুন করে জীবনীশক্তির সঞ্চার করে । ইসলাম ক্রমশ: একটি ধর্ম থেকে রাজনৈতিক শক্তি রূপে আত্মপ্রকাশ করে। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় তারা আরবীয় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। ভারতবর্ষের সঙ্গে আরবদের যোগাযোগ দীর্ঘদিনের। বাণিজ্যিক সূত্রে তারা নিয়মিত ভারতের উপকূল গুলিতে, বিশেষ করে মালাবার উপকূলে আসত। ভারতীয় ও চীনা পণ্য 'ধাও' নামক বিশেষ জাহাজে করে নিয়ে তারা ইউরোপের বাজারে বিক্রি করত। 712 খ্রিস্টাব্দে ইরাকের গভর্নর হাজ্জাজ বিন ইউসুফ এর সেনাপতি ও জামাতা মোহাম্মদ বিন কাসেম সিন্ধু দেশে একটি সফল অভিযান করেন এবং সিন্ধুদেশ আরবীয় মুসলমানদের অধীনে চলে যায়। অভিযানের(প্রত্যক্ষ) কারণ ভারতবর্ষের প্রতি আরবদের দীর্ঘদিনের নজর ছিল। এর আ

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ | Category of Archives

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ মহাফেজখানা বা লেখ্যাগারগুলি সাধারণ জনতার জন্য নয় মূলত গবেষক, ঐতিহাসিক, আইনবিদ, চিত্র পরিচালক প্রভৃতি পেশার লোকজন তাদের গবেষণার কাজে লেখ্যাগারে নথি পত্র দেখতে পারেন।  লেখ্যাগার পরিচালনা ও সংরক্ষিত নথির ভিত্তিতে লেখ্যাগগুলিকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়েছে।   1. সরকারি লেখ্যাগার:- কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার বা স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে যে লেখ্যাগারগুলি গড়ে ওঠে। সেগুলিকে সরকারি লেখ্যাগার বলা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এরকম সরকার পরিচালিত এক বা একাধিক লেখ্যাগার থাকে। যেমন, আমেরিকার Natonal Archive And records Administration (NARA)। ভারতবর্ষে র কেন্দ্রীয় লেখ্যাগার National Archive of India নামে পরিচিত। বিভিন্ন ঐতিহাসিক, প্রশাসনিক ও আইনগত নথি, মানচিত্র, নক্সা,  পাণ্ডুলিপি প্রভৃতি সংরক্ষিত থাকে। 2. বানিজ্যিক লেখ্যাগার:-  এটি একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানের লেখ্যাগার বিভিন্ন বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান   মূলত তাদের সংস্থার ঐতিহাসিক এবং বানিজ্যিক নথি সংরক্ষিত রাখে। যেমন, ভারতের প্রথম বানিজ্যিক লেখ্যাগার হলো পুনার Tata Centrel Archive। 3. অলাভজনক লেখ্যাগার:-   কোনো ব্যাক্তিগত বা অলাভজনক

ষোড়শ শতকীয় ইউরোপে মূল্যবিপ্লব | Price Revolution

 ষোড়শ শতকের ইউরোপে মূল্য বিপ্লব   16 শতাব্দীতে ইউরোপীয় অর্থনীতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো মূল্য বিপ্লব। নিত্যব্যবহার্য পণ্যের মূল্য প্রায় 150 বছর সুস্থির থাকার পর ঊর্ধ্বমুখী হতে আরম্ভ করে, এবং 16 শতাব্দীর শেষে খাদ্যপণ্যের মূল্যের প্রায় সাড়ে পাঁচ গুণ বেড়ে যায়। পশ্চিম ইউরোপের অর্থনীতিতে এমন অভাবনীয় এবং সুদুরপ্রসারী ফলাফলসম্পন্ন ঘটনা মূল্য বিপ্লব নামে পরিচিত। মূল্য বিপ্লবের কতগুলি সাধারণ বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। যথা--    (১) কৃষিজ পণ্যের তুলনায় শিল্পজাত পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি ছিল কম, এবং খাদ্যশস্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি। (২) ভূমি রাজস্ব সহ ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক, তোলা ইত্যাদির হার বৃদ্ধি এবং ফটকাবাজির আবির্ভাব। (৩) মূল্যবৃদ্ধির তুলনায় মজুরির হার খুবই কম ছিল বলে প্রকৃত আয় হ্রাস পেয়েছিল। (৪) ভূমি বিক্রয়যোগ্য পণ্যে পরিণত হওয়া। (৫) গ্রামীণ বুর্জোয়াজি শ্রেণীর আবির্ভাব। ষোড়শ শতকের আগেও প্রাকৃতিক কারণে মূল্যবৃদ্ধি হয়েছিল, তবে তা ছিল 2, 3 শতাংশের মতো, যা অস্বাভাবিক মনে হতো না। কিন্তু ষোল শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে যে নিরবিচ্ছিন্ন মূল্যবৃদ্ধি হয়েছিল তা জনজীবনে তীব্রভ