সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

Black Death | কৃষ্ণ মৃত্যু

black-death
ইউরোপে ব্ল্যাক ডেথ (১৩৪৬-১৩৫৩)

ব্ল্যাক ডেথ কি?

আঠারো শতকের ইউরোপের উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো ব্ল্যাক ডেথ। এটি প্লেগের মহামারী। প্লেগ মূলত দুই প্রকারের,  নিউমনিক প্লেগবিউবনিক প্লেগ। নিউমনিক প্লেগ এ ফুসফুস আক্রান্ত হয় এবং বাতাসের মধ্য দিয়ে তা অন্যের শরীরে সংক্রমিত হয়। বিউবনিক প্লেগ এর লক্ষণ গুলি হল মানুষের নিম্নাঙ্গ, গলা এবং হাতের নিচে ফোলা ভাব লক্ষ্য করা, এবং পুঁজ রক্তক্ষরণ হওয়া। পুঁজ ও রক্ত ক্ষরণের ফলে চামড়া ও টিসু গুলির মারাত্মক ক্ষতি হয়, এবং সারা শরীরে কালো ফোসকাতে ঢেকে যায়। ৪-৭ দিনের মধ্যে রোগীর মৃত্যু হয়। 14 শতকীয় ইউরোপে এই বিউবনিক প্লেগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছিল। সারা শরীর কালো হয়ে মৃত্যু ঘটতো বলে এই মহামারীকে ব্ল্যাক ডেথ বলা হয়।

 মোঙ্গল সেনাবাহিনী যখন কফকা শহরকে দীর্ঘদিন অবরোধ করে রেখেছিল, তখন শহরবাসীর মধ্যে প্লেগ মহমারি ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য, প্লেগ রোগে মৃত সেনাদের দেহগুলি শহরের প্রাচীরের উপর দিয়ে শহরের মধ্যে ছুঁড়ে ফেলে দিত। সেখান থেকে বণিক ও অন্যান্য মানুষ জনের মাধ্যমে প্লেগ ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ে। একইসাথে ১৮ শতকিয়   ইউরোপে খাদ্যাভাব ও আবহাওয়া পরিবর্তনের জন্য প্লেগ মহামারীর আকার ধারণ করে।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী গোটা পৃথিবীতে 72 মিলিয়ন মানুষের মৃত্যু হয়। ইউরোপে জনসংখ্যা প্রায় 1/3 অংশ হ্রাস পায়। ইটালির দুটি বিখ্যাত শহর জেনেভা ও ভেনিস দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গুনার কালসন দেখিয়েছেন, আইসল্যান্ডের ২/৩ অংশ হ্রাস পায়। ভূমধ্যসাগর সংলগ্ন ইউরোপ, ইতালি, স্পেনে মহামারীর প্রকোপ ছিল সবচেয়ে বেশি। এই দেশগুলিতে মৃত্যুর হার ছিল প্রায় ৭৫ শতাংশ থেকে ৮০ শতাংশ। অপেক্ষাকৃত কম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল ইংল্যান্ড ও জার্মানি, এখানে মৃত্যুর হার ছিল ২০ শতাংশ।

মহামারীকে কেবল জনসংখ্যা দিয়ে বিচার করলে হবে না। ১৪-১৫ শতকের ইউরোপের আর্য সামাজিক জীবনে যে দ্রুত পরিবর্তন এসেছিল ,তার দায়   অনেকাংশেই  মহামারী। ব্ল্যাক ডেথ এর আগে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার বেশি ছিল, এর ফলে জীবনযাত্রার মান ছিল নিম্নগামী, কিন্তু এখন জনসংখ্যা হ্রাস পাওয়ার ফলে জমির উপর চাপ কমে যায়। পতিত জমির পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। এর ফলে কৃষি মজুরের চাহিদা বেড়ে যায়। এই পরিপেক্ষিতে কৃষক ও ভূমিদাসগণ সামন্ততান্ত্রিক বাধ্যবাধকতাকে অগ্রাহ্য করার সুযোগ পেয়ে যায়। এর ফলে সামন্ততান্ত্রিক বাঁধন ক্রমশ আলগা হতে থাকে। কোন কোন ঐতিহাসিকের মতে পুঁজিবাদের আগমন এই ব্ল্যাক ডেথ এর ফলেই সম্ভব হয়েছিল।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আরবদের সিন্ধু অভিযান | কারণ ও তাৎপর্য

আরবদের সিন্ধু অভিযান | কারণ ও তাৎপর্য Please visit our Homepage and subscribe us. Suggested Topics || Ghajnavid Invasion || গজনী আক্রমণ || || মামুদের সোমনাথ মন্দির লুণ্ঠন || Somnath Temple Plunder || || তরাইনের যুদ্ধ ও তার গুরুত্ত্ব || মহম্মদ ঘুরির ভারত আক্রমন ও তার চরিত্র || সপ্তম শতকের প্রথমার্ধে আরবদেশে ইসলামের আবির্ভাব ঘটে। ইসলাম আরবদের নতুন করে জীবনীশক্তির সঞ্চার করে । ইসলাম ক্রমশ: একটি ধর্ম থেকে রাজনৈতিক শক্তি রূপে আত্মপ্রকাশ করে। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় তারা আরবীয় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। ভারতবর্ষের সঙ্গে আরবদের যোগাযোগ দীর্ঘদিনের। বাণিজ্যিক সূত্রে তারা নিয়মিত ভারতের উপকূল গুলিতে, বিশেষ করে মালাবার উপকূলে আসত। ভারতীয় ও চীনা পণ্য 'ধাও' নামক বিশেষ জাহাজে করে নিয়ে তারা ইউরোপের বাজারে বিক্রি করত। 712 খ্রিস্টাব্দে ইরাকের গভর্নর হাজ্জাজ বিন ইউসুফ এর সেনাপতি ও জামাতা মোহাম্মদ বিন কাসেম সিন্ধু দেশে একটি সফল অভিযান করেন এবং সিন্ধুদেশ আরবীয় মুসলমানদের অধীনে চলে যায়। অভিযানের(প্রত্যক্ষ) কারণ ভারতবর্ষের প্রতি আরবদের দীর্ঘদিনের নজর ছিল। এর আ...

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ | Category of Archives

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ মহাফেজখানা বা লেখ্যাগারগুলি সাধারণ জনতার জন্য নয় মূলত গবেষক, ঐতিহাসিক, আইনবিদ, চিত্র পরিচালক প্রভৃতি পেশার লোকজন তাদের গবেষণার কাজে লেখ্যাগারে নথি পত্র দেখতে পারেন।  লেখ্যাগার পরিচালনা ও সংরক্ষিত নথির ভিত্তিতে লেখ্যাগগুলিকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়েছে।   1. সরকারি লেখ্যাগার:- কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার বা স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে যে লেখ্যাগারগুলি গড়ে ওঠে। সেগুলিকে সরকারি লেখ্যাগার বলা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এরকম সরকার পরিচালিত এক বা একাধিক লেখ্যাগার থাকে। যেমন, আমেরিকার Natonal Archive And records Administration (NARA)। ভারতবর্ষে র কেন্দ্রীয় লেখ্যাগার National Archive of India নামে পরিচিত। বিভিন্ন ঐতিহাসিক, প্রশাসনিক ও আইনগত নথি, মানচিত্র, নক্সা,  পাণ্ডুলিপি প্রভৃতি সংরক্ষিত থাকে। 2. বানিজ্যিক লেখ্যাগার:-  এটি একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানের লেখ্যাগার বিভিন্ন বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান   মূলত তাদের সংস্থার ঐতিহাসিক এবং বানিজ্যিক নথি সংরক্ষিত রাখে। যেমন, ভারতের প্রথম বানিজ্যিক লেখ্যাগার হলো পুনার Tata Centrel Archive। 3. অলাভজনক লেখ্যাগ...

ষোড়শ শতকীয় ইউরোপে মূল্যবিপ্লব | Price Revolution

 ষোড়শ শতকের ইউরোপে মূল্য বিপ্লব   16 শতাব্দীতে ইউরোপীয় অর্থনীতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো মূল্য বিপ্লব। নিত্যব্যবহার্য পণ্যের মূল্য প্রায় 150 বছর সুস্থির থাকার পর ঊর্ধ্বমুখী হতে আরম্ভ করে, এবং 16 শতাব্দীর শেষে খাদ্যপণ্যের মূল্যের প্রায় সাড়ে পাঁচ গুণ বেড়ে যায়। পশ্চিম ইউরোপের অর্থনীতিতে এমন অভাবনীয় এবং সুদুরপ্রসারী ফলাফলসম্পন্ন ঘটনা মূল্য বিপ্লব নামে পরিচিত। মূল্য বিপ্লবের কতগুলি সাধারণ বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। যথা--    (১) কৃষিজ পণ্যের তুলনায় শিল্পজাত পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি ছিল কম, এবং খাদ্যশস্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি। (২) ভূমি রাজস্ব সহ ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক, তোলা ইত্যাদির হার বৃদ্ধি এবং ফটকাবাজির আবির্ভাব। (৩) মূল্যবৃদ্ধির তুলনায় মজুরির হার খুবই কম ছিল বলে প্রকৃত আয় হ্রাস পেয়েছিল। (৪) ভূমি বিক্রয়যোগ্য পণ্যে পরিণত হওয়া। (৫) গ্রামীণ বুর্জোয়াজি শ্রেণীর আবির্ভাব। ষোড়শ শতকের আগেও প্রাকৃতিক কারণে মূল্যবৃদ্ধি হয়েছিল, তবে তা ছিল 2, 3 শতাংশের মতো, যা অস্বাভাবিক মনে হতো না। কিন্তু ষোল শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে যে নিরবিচ্ছিন্ন মূল্যবৃদ্ধি হ...