পুষ্যমিত্র শুঙ্গের রাজত্বকাল
মৌর্য পরবর্তী মগধ শাসকরা ছিলেন শুঙ্গ বংশীয়। শুঙ্গ রাজবংশের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন পুষ্যমিত্র শুঙ্গ। মগধে মৌর্যদের শাসন 137 বছর স্থায়ী হয়েছিল। 232 খ্রীষ্টপূর্বাব্দে অশোকের মৃত্যুর পর মৌর্য সাম্রাজ্য অবক্ষয় দেখা দিয়েছিল। মৌর্য সাম্রাজ্যের অসংহাতির সুযোগে মৌর্যদেরই সেনাধ্যক্ষ পুষ্যমিত্র শুঙ্গ শেষ মৌর্য শাসক বৃহদ্রথকে আনুমানিক 187 খ্রীষ্টপূর্বাব্দে সিংহাসনচ্যুত ও হত্যা করে ক্ষমতা দখল করেছিলেন।
পুষ্যমিত্র সঙ্গের শাসনকাল 36 বছর স্থায়ী হয়েছিল। তবে তার রাজ্যসীমা মৌর্য শাসক দের মত অত বিস্তৃত ছিল না। জানা যায় যে দক্ষিনে নর্মদা নদী পর্যন্ত তার রাজ্য বিস্তৃত ছিল। এদিকে অযোধ্যা বিদিশা এবং পাটলিপুত্র এলাকায় তার কর্তৃত্ব ছিল। বৌদ্ধ গ্রন্থ দিব্যবদান এবং লামা তারানাথ এর রচনা থেকে জানা যায়, পশ্চিম ভারতে জলন্ধর এবং শাকল বা শিয়ালকোট তার রাজ্যভুক্ত ছিল। তবে এই তথ্য ঐতিহাসিক মহলে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি।
পুষ্যমিত্র এর রাজত্বকালে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো দাক্ষিণাত্যে বিদর্ভ বা বেরার রাজ্যের সঙ্গে সংঘাত। বিদর্ভ রাজ্যের সাথে মৌর্য শাসক দের আত্মীয়তা ছিল। তাই স্বাভাবিক কারণেই তারা শুঙ্গদের বিরোধিতা করবে। আবার বিদর্ভ এর শাসক যজ্ঞসেনের ভ্রাতা মাধবসেনের সঙ্গে বিদিশার প্রাদেশিক শাসক পুষ্যমিত্রের পুত্র অগ্নিমিত্রের বন্ধুত্ব ছিল। যজ্ঞসেন এবং মাধবসেনের মধ্যে পারস্পরিক দ্বন্দ্বের সুযোগ গ্রহণ করেছিল শুঙ্গ শাসকগণ। অগ্নিমিত্র মাধবসেনের হয়ে অভিযান করেন এবং যজ্ঞসেন পরাজিত হন। শেষ পর্যন্ত বিদর্ভ রাজ্য যজ্ঞসেন ও মাধবসেন এর মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয় এবং উভয় শাসকই শুঙ্গদের কর্তৃত্ব স্বীকার করে নেন।
পুষ্যমিত্র যবন বা গ্রিক আক্রমণের মোকাবিলা করে ছিলেন অত্যন্ত সফলভাবে। পতঞ্জলির মহাভাষ্য থেকে জানা যায় গ্রীকরা সাকেত বা অযোধ্যা এবং রাজস্থানের চিতরের কাছাকাছি মধ্যমিকা অবরোধ করেছিল। এমনকি তারা পাটলিপুত্র পর্যন্তও অগ্রসর হয়েছিল। অগ্নিমিত্রের পুত্র এবং পুষ্যমিত্রের সেনাধ্যক্ষ বসুমিত্র সফলভাবে গ্রিক আক্রমনকারীদের পরাজিত করেছিলেন। কালিদাসের মালবিকাগ্নিমিত্রমেও উক্ত জয়লাভের কথা সমর্থিত।
পুষ্যমিত্র যে একজন পরাক্রান্ত শাসক ছিলেন তাতে কোন সন্দেহ নেই। এবং এই জন্যই সম্ভবত তিনি দুটি অশ্বমেধ যজ্ঞের আয়োজন করেছিলেন। জিও অশ্বমেধ যজ্ঞ টি গ্রিক আক্রমণের সময় অনুষ্ঠিত হয়েছিল এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু প্রথমটি কবে অনুষ্ঠিত হয়েছিল তা নিশ্চিত করে বলা যায় না। অনেকেই অনুমান করেন যে পুষ্যমিত্র যখন সিংহাসনে বসে ছিলেন তখন পার্শ্ববর্তী রাজ্যগুলির বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে সফল হয়েছিলেন এবং অশ্বমেধ যজ্ঞের আয়োজন করেছিলেন। প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য মৌর্য রাজারা যজ্ঞের অনুষ্ঠানে পশুবলি প্রথা রদ করেছিলেন। পুষ্যমিত্র শুঙ্গ তা আবার ফিরিয়ে আনলেন। মৌর্যদের পতনের পশ্চাতে যদি ব্রাহ্মণ্যবাদী প্রতিক্রিয়া থেকে থাকে তাহলে উক্ত অশ্বমেধ যজ্ঞের আয়োজন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন