ইয়ল্টা সম্মেলন
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অক্ষশক্তির পতন আসন্ন হয়ে উঠলে 1945 সালের 4-11 ফেব্রুয়ারি সোভিয়েত রাশিয়ার ইয়াল্টায় একটি ত্রিশক্তি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সম্মেলনের সংগঠক ও স্বাক্ষরকারী 3 বিশ্ব নেতা ছিলেন- ব্রিটিশ প্রধান মন্ত্রী চার্চিল, মার্কিন প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট এবং সোভিয়েত রাষ্ট্রপ্রধান স্তালিন। এই বৈঠকের প্রধান দুই বিচার্য বিষয় হলো যুদ্ধোত্তর ইউরোপের পুনর্বিন্যাস ও সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত। এই সম্মেলনে পূর্ব প্রাচ্যে জাপানের সামরিক তৎপরতা নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে বিশেষ চিন্তাভাবনা চলে এবং রুজভেল্টের অনুমতিক্রমে সোভিয়েত রাষ্ট্রপ্রধান স্তালিন জাপানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। এর বিনিময়ে ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্র পোর্ট আর্থার শাখালিন ও কিউরাইল দ্বীপপুঞ্জ রাশিয়াকে ফিরিয়ে দিতে সম্মত হয়।
পটসডাম সম্মেলন
জার্মানির আত্মসমর্পণের পর জার্মানির বার্লিনের কাছে পটসডাম শহরে আয়োজিত হয় পটসডাম সম্মেলন (১৯৪৫,জুলাই)। এটি ছিল মিত্রপক্ষের শেষ সম্মেলন, যেখানে সোভিয়েত ইউনিয়ন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তথা পশ্চিমি শক্তিগুলোর মধ্যে নানা বিষয়ে মতপার্থক্য দেখা দেয়, যার ফলে ঠান্ডা যুদ্ধের প্রস্তুতি শুরু হয়। ইতিমধ্যেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে এসেছেন কট্টর সোভিয়েত বিরোধী হ্যারি ট্রুম্যান, যার উদ্যোগে পারমাণবিক গবেষণায় বিশেষ গতি এসেছিল। সম্মেলন চলাকালে 24 জুলাই তিনি জাপানের ওপর আণবিক বোমা নিক্ষেপের নির্দেশ জারি করেছিলেন। বিশেষজ্ঞদের মতে এই বোমা নিক্ষেপ ছিল অনাবশ্যক। প্রকৃতপক্ষে দূরপ্রাচ্যে সোভিয়েত এর প্রভাব যাতে কোনভাবে না গড়ে ওঠে তাই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।
আমেরিকা,ব্রিটেন, ফ্রান্স,চীন,সোভিয়েত রাশিয়া- এই পঞ্চশক্তির যোগদান জনিত পটসডাম সম্মেলনে প্রায় প্রতিটি বিষয়েই সোভিয়েত প্রতিনিধির সঙ্গে পুঁজিবাদী পশ্চিমী রাষ্ট্রগুলির প্রতিনিধিদের তীব্র মনোমালিন্য দেখা দেয়। এই সম্মেলনে গৃহীত সিদ্ধান্ত গুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল:- 1. পরাজিত জার্মানিকে চারটি অঞ্চলে বিভাজিত করার ব্যাপারে সক্রিয় উদ্যোগ গ্রহণ। স্থির হল যুদ্ধ অপরাধী জার্মানি যে ক্ষতিপূরণ দেবে তার সিংহভাগ পাবে রাশিয়া। 2. বিশেষ করে পোল্যান্ডের প্রশ্নে সোভিয়েত রাশিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ব্রিটেন এর মধ্যে তীব্র বিবাদ দেখা দিল। সোভিয়েত লালফৌজ ওডার-নিস সীমান্তের পূর্বদিকের জার্মান ভূখণ্ড দখল করে নেওয়ায় ব্রিটেন ও আমেরিকা ক্ষোভে ফেটে পড়ে। 3. সম্মেলনে ইতালির দখলে আসা ট্রিয়েস্টকে যুগোস্লাভিয়ার সঙ্গে জুড়ে দেওয়া এবং আফ্রিকায় ইতালির উপনিবেশ ত্রিপলিকে সোভিয়েত অছি শাসনাধীনে আনার রুশ প্রস্তাব পশ্চিমী শক্তিগুলির সম্মিলিত বিরোধীতার দরুন ভেস্তে যায়। 4. সোভিয়েত পররাষ্ট্রমন্ত্রী মলোটভ গ্রীসে বিপ্লবী রাজনৈতিক শক্তিগুলিকে দমন করার জন্য ব্রিটিশ সেনাবাহিনী পাঠানোর তীব্র সমালোচনা করেন। সর্বোপরি, সম্মেলনের সমাপ্তির চার দিনের মধ্যে জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকি শহর দুটির ওপর আমেরিকার আণবিক বোমা বর্ষণ ও তার পরিণতিতে সংঘটিত ধ্বংসলীলা রুশ রাষ্ট্রপ্রধান স্তালিনকে মার্কিন বিদ্বেষী করে তোলে। প্রবল মতভেদ, বাদানুবাদ, পারস্পরিক অবিশ্বাস ও দোষারোপের মধ্য দিয়ে পটসডাম সম্মেলনের অবসান দু'পক্ষের ঠান্ডা লড়াইকে অবশ্যম্ভাবী ও দীর্ঘমেয়াদি করে তুলেছিল।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন