সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ঠান্ডা যুদ্ধে সোভিয়েত পদক্ষেপ: কমিনফর্ম, মলোটভ প্ল্যান, কমেকন

ঠান্ডা যুদ্ধে সোভিয়েত পদক্ষেপ: কমিনফর্ম, মলোটভ প্ল্যান, কমেকন 

কমিনফর্ম: 


মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যখন ট্রুম্যান নীতি ও তার পরিপূরক মার্শাল পরিকল্পনা ঘোষণার মধ্য দিয়ে ঠান্ডা যুদ্ধে নিজের অবস্থান মজবুত করছিল সেই সময় সোভিয়েত ইউনিয়ন একেবারে বসে ছিল না। সোভিয়েত ইউনিয়ন এর প্রথম জবাব ছিল Communist Information Bureau বা কমিনফর্ম গঠন।  1947 সালের সেপ্টেম্বর মাসে পোল্যান্ডের সাইলেশিয়াতে সোভিয়েত নিয়ন্ত্রিত পূর্ব ইউরোপের নয়টি রাষ্ট্রের কমিউনিস্ট দলগুলির একটি যৌথ সংগঠন গড়ে ওঠে। উইলফ্রিড ন্যাপ A History of War and Peace বলেছেন কমিনফর্ম এর মূল উদ্দেশ্য ছিল পূর্ব ইউরোপের কমিউনিস্ট শাসিত রাষ্ট্র গুলির মধ্যে সংহতি আনয়ন ও সেগুলিকে নিয়ন্ত্রণে আনার প্রয়োজনে একটি প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো তৈরি করা। এর প্রধান রূপকার ছিলেন স্ট্যালিন ঘনিষ্ঠ রুশ নেতা ঝদানভ। পরবর্তীকালে কমিনফর্ম এর মাধ্যমে বিশ্বের অন্যান্য দেশের কমিউনিস্ট দলগুলির কর্মসূচিতে সংহতি অসামঞ্জস্য আনার চেষ্টা করা হলো এবং পুঁজিবাদী ব্যবস্থার বিরুদ্ধে প্রচার এর মাত্রা বাড়ানো হলো। প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য, 1948 সালে চেকোস্লোভাকিয়া কমিউনিস্টরা রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করতে সক্ষম হয়েছিল এবং ওই বছরই সোভিয়েত নেতৃত্বের সঙ্গে বাদানুবাদের কারণে যুগোস্লাভিয়ার কমিউনিস্ট রাষ্ট্রপ্রধান মার্শাল টিটোকে কমিনফর্ম থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল।

মলোটভ প্ল্যান:

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ঘোষিত মার্শাল পরিকল্পনার প্রস্তাব সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রত্যাখ্যান করেছিল। পূর্ব ইউরোপের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক স্বতন্ত্র পরিমণ্ডলকে মার্শাল পরিকল্পনার সম্ভাব্য প্রভাব থেকে রক্ষা করতে সোভিয়েত ইউনিয়ন বিকল্প যে ব্যবস্থা গড়ে তুলেছিল তা মলোটভ পরিকল্পনা নামে পরিচিত। সোভিয়েত বিদেশ মন্ত্রী মলোটভ 1949 সালে একটি আর্থিক সহায়তা প্রকল্প ঘোষণা করলেন। এই পরিকল্পনায় বলা হলো যে, সোভিয়েত আদর্শে উদ্বুদ্ধ পূর্ব ইউরোপের কমিউনিস্ট রাষ্ট্রগুলি রাশিয়ার কাছ থেকে তাদের অর্থনৈতিক পূনর্গঠনের জন্য উদার আর্থিক সাহায্য পাবে। এইভাবে পূর্ব ইউরোপকে মার্কিন প্রভাব থেকে রক্ষা করা হলো এবং একই সাথে পূর্ব ইউরোপের কমিউনিস্ট দেশগুলির মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতার পরিবেশ গড়ে উঠলো।

কমেকন

রাশিয়ার সঙ্গে পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোর অর্থনৈতিক ব্যবস্থার সংগতি বিধানের জন্য 1949 খ্রিস্টাব্দে জানুয়ারি মাসে গড়ে ওঠে Council of Mutual Economic Assistance বা COMECON বা CEMA. প্রকৃতপক্ষে এই সংগঠনটি ছিল মলোটভ পরিকল্পনার প্রাতিষ্ঠানিক পদক্ষেপ। এই আন্ত:রাষ্ট্রীয় সংগঠনের সদস্য ছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন, পোল্যান্ড, চেকোস্লোভাকিয়া, বুলগেরিয়া, হাঙ্গেরী ও রোমানিয়া। কমেকন এর কার্যকলাপ পূর্ব ইউরোপের সীমানা ছাড়িয়ে তৃতীয় বিশ্বের নানা দেশে ও প্রসার লাভ করেছিল। এর ফলে একদিকে মার্শাল পরিকল্পনা অন্যদিকে কমেকন-- দুই পরস্পর বিরোধী অর্থনৈতিক প্রভাব বিস্তারের প্রচেষ্টা ঠান্ডা লড়াই কে ত্বরান্বিত করল।

মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আরবদের সিন্ধু অভিযান | কারণ ও তাৎপর্য

আরবদের সিন্ধু অভিযান | কারণ ও তাৎপর্য Please visit our Homepage and subscribe us. Suggested Topics || Ghajnavid Invasion || গজনী আক্রমণ || || মামুদের সোমনাথ মন্দির লুণ্ঠন || Somnath Temple Plunder || || তরাইনের যুদ্ধ ও তার গুরুত্ত্ব || মহম্মদ ঘুরির ভারত আক্রমন ও তার চরিত্র || সপ্তম শতকের প্রথমার্ধে আরবদেশে ইসলামের আবির্ভাব ঘটে। ইসলাম আরবদের নতুন করে জীবনীশক্তির সঞ্চার করে । ইসলাম ক্রমশ: একটি ধর্ম থেকে রাজনৈতিক শক্তি রূপে আত্মপ্রকাশ করে। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় তারা আরবীয় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। ভারতবর্ষের সঙ্গে আরবদের যোগাযোগ দীর্ঘদিনের। বাণিজ্যিক সূত্রে তারা নিয়মিত ভারতের উপকূল গুলিতে, বিশেষ করে মালাবার উপকূলে আসত। ভারতীয় ও চীনা পণ্য 'ধাও' নামক বিশেষ জাহাজে করে নিয়ে তারা ইউরোপের বাজারে বিক্রি করত। 712 খ্রিস্টাব্দে ইরাকের গভর্নর হাজ্জাজ বিন ইউসুফ এর সেনাপতি ও জামাতা মোহাম্মদ বিন কাসেম সিন্ধু দেশে একটি সফল অভিযান করেন এবং সিন্ধুদেশ আরবীয় মুসলমানদের অধীনে চলে যায়। অভিযানের(প্রত্যক্ষ) কারণ ভারতবর্ষের প্রতি আরবদের দীর্ঘদিনের নজর ছিল। এর আ

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ | Category of Archives

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ মহাফেজখানা বা লেখ্যাগারগুলি সাধারণ জনতার জন্য নয় মূলত গবেষক, ঐতিহাসিক, আইনবিদ, চিত্র পরিচালক প্রভৃতি পেশার লোকজন তাদের গবেষণার কাজে লেখ্যাগারে নথি পত্র দেখতে পারেন।  লেখ্যাগার পরিচালনা ও সংরক্ষিত নথির ভিত্তিতে লেখ্যাগগুলিকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়েছে।   1. সরকারি লেখ্যাগার:- কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার বা স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে যে লেখ্যাগারগুলি গড়ে ওঠে। সেগুলিকে সরকারি লেখ্যাগার বলা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এরকম সরকার পরিচালিত এক বা একাধিক লেখ্যাগার থাকে। যেমন, আমেরিকার Natonal Archive And records Administration (NARA)। ভারতবর্ষে র কেন্দ্রীয় লেখ্যাগার National Archive of India নামে পরিচিত। বিভিন্ন ঐতিহাসিক, প্রশাসনিক ও আইনগত নথি, মানচিত্র, নক্সা,  পাণ্ডুলিপি প্রভৃতি সংরক্ষিত থাকে। 2. বানিজ্যিক লেখ্যাগার:-  এটি একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানের লেখ্যাগার বিভিন্ন বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান   মূলত তাদের সংস্থার ঐতিহাসিক এবং বানিজ্যিক নথি সংরক্ষিত রাখে। যেমন, ভারতের প্রথম বানিজ্যিক লেখ্যাগার হলো পুনার Tata Centrel Archive। 3. অলাভজনক লেখ্যাগার:-   কোনো ব্যাক্তিগত বা অলাভজনক

ষোড়শ শতকীয় ইউরোপে মূল্যবিপ্লব | Price Revolution

 ষোড়শ শতকের ইউরোপে মূল্য বিপ্লব   16 শতাব্দীতে ইউরোপীয় অর্থনীতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো মূল্য বিপ্লব। নিত্যব্যবহার্য পণ্যের মূল্য প্রায় 150 বছর সুস্থির থাকার পর ঊর্ধ্বমুখী হতে আরম্ভ করে, এবং 16 শতাব্দীর শেষে খাদ্যপণ্যের মূল্যের প্রায় সাড়ে পাঁচ গুণ বেড়ে যায়। পশ্চিম ইউরোপের অর্থনীতিতে এমন অভাবনীয় এবং সুদুরপ্রসারী ফলাফলসম্পন্ন ঘটনা মূল্য বিপ্লব নামে পরিচিত। মূল্য বিপ্লবের কতগুলি সাধারণ বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। যথা--    (১) কৃষিজ পণ্যের তুলনায় শিল্পজাত পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি ছিল কম, এবং খাদ্যশস্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি। (২) ভূমি রাজস্ব সহ ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক, তোলা ইত্যাদির হার বৃদ্ধি এবং ফটকাবাজির আবির্ভাব। (৩) মূল্যবৃদ্ধির তুলনায় মজুরির হার খুবই কম ছিল বলে প্রকৃত আয় হ্রাস পেয়েছিল। (৪) ভূমি বিক্রয়যোগ্য পণ্যে পরিণত হওয়া। (৫) গ্রামীণ বুর্জোয়াজি শ্রেণীর আবির্ভাব। ষোড়শ শতকের আগেও প্রাকৃতিক কারণে মূল্যবৃদ্ধি হয়েছিল, তবে তা ছিল 2, 3 শতাংশের মতো, যা অস্বাভাবিক মনে হতো না। কিন্তু ষোল শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে যে নিরবিচ্ছিন্ন মূল্যবৃদ্ধি হয়েছিল তা জনজীবনে তীব্রভ