ধর্মসংস্কার আন্দোলন ও মার্টিন লুথার
ইউরোপে ধর্মসংস্কার আনন্দলনের সূত্রপাত হয়েছিল জার্মানিতে মার্টিন লুথারের নেতৃত্বে। 1517 খ্রীষ্টাব্দে রোমান ক্যাথলিক চার্চের আর্থিক দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিশেষ করে Indulgence বা ক্ষমাবিক্রয়পত্রের তীব্র সমালোচনা করেন। দুপক্ষের এই বাদানুবাদ সংস্কার আন্দোলনে পরিণত হয়। লুথার পোপতন্ত্রের সমালোচনা করলেও রাজশক্তির পক্ষে দাঁড়িয়ে ছিলেন। রাষ্ট্র ও পোপের মধ্যকার দ্বন্দ্ব ধর্মসংস্কার আন্দলনের পক্ষে লাভজনক হয়েছিল।
সমসাময়িক রাজনৈতিক পরিস্তিতি ধর্মসংস্কার আন্দোলনকে তরাণ্বিত করেছিল। জার্মানিতে লুথার যখন র্মাজনা পত্র বিক্রয়কে আক্রমণ করলে তখন যাজক সম্প্রদায়ের মধ্যে যে বির্তকের সূত্রপাত হয়। তাকে দুটি ভিন্নধর্মী মতার্দশের ভিতরকার সংঘাত হিসাবে ধরা হয়েছিল। কিন্তু অল্পদিনেই মতাদর্শগত সংঘাত রাজনৈতিক আন্দলনে পরিণত হয়। উওর জার্মানির কৃষকরা যে বিদ্রোহ করেছিল তা শুধু ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের অনাচারের বিরুদ্ধে নয়, সামাজিক নিষ্পেশনের বিরুদ্ধেও, যা রাজশক্তিকে উদ্বিগ্ন করেছিল। রাজশক্তি এই বিদ্রোহ দমন করে ছিল। কিন্তু এর পর থেকে সংস্কার আন্দোলনের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে চেয়েছিল। তাই লুথারপন্থী প্রতিবাদ গুলিকে রাজা সমর্থন করেছিল, যাতে গণবিদ্রোহের সম্ভাবনা এড়ানো যায়। লুথারবাদ জার্মানিতে স্বীকৃতি পেয়েছিল এবং এর ফলে এক ধর্মকেন্দ্রীক রাজনৈতিক বিভাজনের সূচনা হয়েছিল।
লুথারের মতবাদের মূল কথা দুটি 1) সবাই নিজেই নিজের পুরোহিত, এবং 2) ঈশ্বর বিশ্বাসই হল মুক্তির একমাত্র পথ। তিনি বলতেন মন্দ প্রেতাত্মা সতত চারিদিকে ঘুরে বেরায় এবং মানুষকে কুপথে চালিত করে। লুথার এক অন্তহীন পাপবোধে আচ্ছন্ন ছিলেন। দৈব ও মানবজীবণ সম্পর্কে তার ভাবনা ছিল পরস্পর বিরোধী। তার মতে মানুষ প্রাথমিক কর্তব্য ছিল ঈশ্বরের অনুগমন করা। আবার তিনি বলছেন মানুষ জীবণের প্রয়োজনে ঈশ্বর থেকে বিচ্ছন্ন এবং যুক্তিনির্ভর আর যুক্তি দিয়ে ঈশ্বরকে পাওয়া যায় না। লুথার এই ঈশ্বর ও মানবের বিচ্ছিন্নতা দূর করতে চেয়েছিলেন। তার মতে ঈশ্বর ও মানুষের মধ্যে সেতুর কাজ করে ঈশ্বর বিশ্বাস। ঈশ্বরের প্রতি নিসংশয় বিশ্বাস থাকলেই মানুষের মুক্তি সম্ভব। ঈশ্বর বিশ্বাসীদের ধর্মীয় আচার আচরণের প্রয়োজন হয়না। ঈশ্বর বিশ্বাসের উৎপত্তি যেহেতু বাইবেল তথা ঈশ্বরের বাণী, তাই বাইবেলের বাণী প্রচার করেই মানুষকে ঈশ্বর বিশ্বাসী করা সম্ভব।
তিনি আরো বলেন খ্রীষ্টানরা ( সেই সময় ) বাইবেল থেকে বিচ্ছিন্ন। পোপতন্ত্র ঈশ্বরের সৃষ্টি নয়। ভালো কাজ করলেই ঈশ্বর পাওয়া যায় না, ভালো মানুষ হতে হয়। আর একজন ভালো মানুষের মুক্তির জন্য পুরোহিতের দরকার হয় না, সে নিজেই নিজের পুরোহিত। এইজন্যই মার্জনা পত্র কিনে মুক্তির পথ খোঁজা অবান্তর।
লুথারবাদের উৎপত্তি রাষ্ট্র ও চার্চের সম্পর্কে প্রভাব ফেলেছিল। লুথার বললেন দূনীতি গ্রস্থ চার্চেকে নিয়ন্ত্রণ করার পূর্ণ অধিকার শাসকের আছে। এইভাবে তিনি প্রোটেস্ট্যান্ট আন্দোলনকে রাষ্ট্রপক্ষীয় করে তোলেন। কারণ প্রোটেস্ট্যান্ট আন্দোলনকে রক্ষা করতে গেলে আঞ্চলিক রাষ্ট্রশক্তির সমর্থন অপরিহার্য ছিল। An Appeal to the Christian Nobility of the German Nation পুস্তিকায় রাজন্যবর্গকে ক্যাথলিক চার্চ ধ্বংস করার আহ্বান করেছিলেন।
good content in shortly many many thanks Sir.
উত্তরমুছুন