গৌতম পুত্র সাতকর্ণীর রাজনৈতিক অবদান | Political Contribution of Gautamiputra Satakarni
দাক্ষিণাত্যে যারা প্রথম পরাক্রান্ত রাজশক্তি প্রতিষ্ঠা করেছিল তারা হল সাতবাহন। সাতবাহন বংশের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন সিমুক। পুরান-এ সাতবাহনদের অন্ধ্রভৃত্য বলা হয়েছে। তাই অনেকেই দাক্ষিণাত্যের পূর্বাংশকে সাতবাহনদের আদি বাসভূমি বলে মনে করেন। কিন্তু আধুনিক গবেষণায় দেখা গেছে সাতবাহনদের উত্থান ঘটেছিল দাক্ষিণাত্যের পশ্চিম দিকে। নানাঘাট এবং নাসিকে তাদের প্রাচীনতম লেখগুলি পাওয়া গেছে। এখানেই প্রতিষ্ঠান (পৈঠান) এলাকায় তাদের রাজধানী ছিল। সাতবাহন রাজবংশের রাজনৈতিক বিস্তারের সূচনা হয়েছিল প্রথম সাতকর্ণীর সময়, যিনি খ্রিস্টপূর্ব প্রথম শতকের দ্বিতীয়ার্ধ নাগাদ কলিঙ্গরাজ খারবেলের সমসাময়িক ছিলেন। তবে গৌতমীপুত্র সাতকর্ণী ছিলেন সাতবাহন বংশের সর্বশ্রেষ্ঠ শাসক।
প্রথম সাতকর্ণীর সময় সাতবাহনরা যখন তাদের রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তার করছিল সেই সময় পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়ালো শক ক্ষত্রপ নহপান। নহপান সাতবাহন রাজ্যের প্রাণকেন্দ্র নাসিক দখল করে নেয়। রোমিলা থাপার মনে করেন যে, আলোচ্য পর্বে পশ্চিম উপকূল একটি প্রতিযোগিতামূলক এলাকায় পরিণত হয়েছিল, যার পিছনে সক্রিয় ছিল ইন্দো রোমান বাণিজ্য এবং এই বাণিজ্যের প্রধান কেন্দ্র কল্যাণ ও ব্রোচ এই এলাকায় অবস্থিত ছিল।
গৌতমিপুত্র সাতকর্ণীর সময় অবশ্য সাতবাহন রা তাদের এই বিপদ কাটিয়ে ওঠে নাসিক এলাকা গৌতমি পুত্র নিজের কব্জায় আনতে সক্ষম হয়েছিল। গৌতমীপুত্র সাতকর্ণীর মাতা গৌতমি বলশ্রী রচিত নাসিক প্রশস্তি থেকে আমরা উক্ত সাফল্যের প্রমাণ পাই। নাসিক প্রশস্তি থেকে জানা যায় যে খহরাদ বংশীয় রাজা নহপান গৌতমি পুত্রের হাতে পরাস্ত হয়। তাছাড়া যোগলথোম্বি মুদ্রা ভান্ডারে প্রাপ্ত মুদ্রাগুলিও গৌতমিপুত্রের সাফল্যের প্রমাণ হিসেবে কাজ করে। কারণ এই মুদ্রাগুলি ছিল প্রকৃতপক্ষে নহপানের মুদ্রা। গৌতমিপুত্র উক্ত মুদ্রাগুলির উপর নিজের রাজকীয় ছাপ মেরেছিলেন। নাসিক লেখ থেকে আরো জানা যায় যে তিনি নহপান এর জামাতা রিষভদত্তকে পরাজিত করে ওই এলাকার কিছু ভূখণ্ড বৌদ্ধ সংঘের উদ্দেশ্যে দান করেছিলেন।
কেবল নহপানকে উৎখাত করেই তিনি ক্ষ্যান্ত হননি, তার বিজয় অভিযান দাক্ষিণাত্যের পশ্চিম উপকূল থেকে পূর্ব উপকূল পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছিল। নাসিক লেখতে বলা হয়েছে যে তার যুদ্ধের ঘোড়া তিন সমুদ্রের জল পান করেছিল। তবে ভারত মহাসাগর পর্যন্ত তার অভিযান পৌঁছেছিল কিনা সে বিষয়ে বিশেষ সন্দেহ থাকে। সম্ভবত এটি প্রশস্তি সূচক বর্ণনা, যেখানে অতিরঞ্জন থাকা অসম্ভব নয়। তার সময়ে সাতবাহনরা প্রথমবার দাক্ষিণাত্যের পূর্বাংশে অন্ধ্র এলাকার ওপর আধিপত্য কায়েম করেছিল। শকদের পরাজিত করার পর গুজরাটের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে তারা সাম্রাজ্য বিস্তার করেছিল।
অবশ্য সাতবাহন দের এই সাফল্য দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। গৌতমিপুত্র সাতকর্নীর 24 বছর দাপটের সঙ্গে শাসনের পর পরবর্তী রাজাদের সময়ে শক'রা চস্টন ও রুদ্রদামনের সময় আরো শক্তিশালী হয়ে ওঠে এবং সাতবাহনদের কর্তৃত্বের ওপর আঘাত হানতে সক্ষম হয়।
গৌতম বলশ্রী রচিত নাসিক প্রশস্তিতে গৌতমী পুত্র সাতকর্ণীকে বলা হয়েছে " সাতবাহন যশঃকূল নাস্তি "
উত্তরমুছুন