বক্সার প্রটোকল
বক্সার বিদ্রোহ ছিল শুধু বিদেশি বিরোধী। যদিও প্রথমদিকে বিদ্রোহীরা একইসঙ্গে বিদেশিদের এবং মাঞ্চু শাসক বিরোধিতা করেছিল। কিন্তু কিছুকালের মধ্যে রাজপরিবারের একটা বড় অংশ বিদ্রোহে যোগদান করায় এবং বিধবা রাজমাতা জুসি সমর্থন করায় এই বিদ্রোহ কেবলমাত্র বিদেশিদের বিরুদ্ধে পরিচালিত হয়। ইউরোপীয় উপনিবেশিক শক্তির হাতে বিদ্রোহ হয়। বিদ্রোহ ব্যর্থতা ছিল প্রকৃতপক্ষে মাঞ্চু রাজশক্তির পশ্চিমী শক্তিগুলির হাতে আরও একবার পরাজয়। বিদ্রোহ দমনের পর এগারোটি ইউরোপীয় শক্তি 1901 খ্রিস্টাব্দে চীনের সঙ্গে আরো একটি অসম চুক্তি স্বাক্ষর করে যা বক্সার প্রটোকল নামে পরিচিত।
বক্সার প্রটোকল এর শর্ত গুলি নিম্নরূপ:
১. 12 জন রাজপুরুষ যারা বক্সার বিদ্রোহে যোগ দিয়েছিল তাদের হয় মৃত্যুদণ্ড নেওয়ার অথবা আত্মহত্যা করার নির্দেশ দেওয়া হয়। আর প্রায় একশত রাজপুরুষ কে কঠোর শাস্তি দেওয়া হয়।
২. চীন ক্ষতিপূরণ হিসেবে 500 মিলিয়ন আমেরিকান ডলার দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়। 1901 থেকে 1940 সালের মধ্যে বিভিন্ন কিস্তিতে এই অর্থ পরিশোধের কথা বলা হয়।
৩. যেসব শহরে বিদেশি বিরোধী আন্দোলন তীব্র রূপ নিয়েছিল সেই সব অঞ্চলে সরকারি পরীক্ষা পাঁচ বছরের জন্য বন্ধ রাখা হয়। এই তালিকায় প্রায় 45 টি শহরের নাম ছিল।
৪. পিকিং এর দূতাবাসগুলোতে পাহারা দেওয়ার জন্য বিদেশি সেনাবাহিনী স্থায়ীভাবে মোতায়েন করা হয়।
৫. পিকিং থেকে সমুদ্র পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটিগুলোতে এবং রেলপথে বিদেশি সেনা মোতায়েন করা হয়।
৬. চীন আগামী দুই বছর ভিন দেশ থেকে কোন অস্ত্রশস্ত্র আমদানি করতে পারবেনা।
৭. জার্মানি ও জাপানের কাছে চীনকে প্রতিনিধি মারফত কৃতকর্মের জন্য নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে- এ কথাও বলা হয়।
প্রকৃতপক্ষে বক্সার প্রটোকল বিশ্বদরবারে চীনের মর্যাদাকে একেবারে ভূলুণ্ঠিত করল। মাঞ্চু রাজতন্ত্রের আর কোন সার্বভৌমত্ব রইল না। চীনা জনগণ মাঞ্চু শাসনের উপর পুরোপুরি আস্থা হারাল। তাই এই পরিস্থিতিতে মাঞ্চু রাজতন্ত্রের সংস্কার আন্দোলনকে চিনা জনগণ প্রত্যাখ্যান করল এবং বিপ্লবের পথ বেছে নিল।
Thanks for reading.
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন