সামুদ্রিক অভিযানের ফলাফল
ইউরোপীয় শক্তিগুলি বিশেষত পর্তুগিজ স্পেনের নেতৃত্বে যে নতুনদেশ আবিষ্কারের নেশায় সমুদ্র অভিযানগুলি সংঘটিত হয়েছিল তার ফলাফল ছিল সুদুরপ্রসারি। এইরূপ আঞ্চলিক বিস্তৃতি ইউরোপীয়দের মানসিক প্রসার ঘটায়। নতুন বিশ্বের সাথে যোগাযোগ স্থাপনের ফলে এই সব দেশের নাগরিকদের মধ্যযুগীয় কুসংস্কার, অজ্ঞতা এবং কুপমন্ডুকতা দূর হয়। মানুষের বুদ্ধি তথা জ্ঞানের পরিধি সম্প্রসারিত হয়।
ভৌগলিক আবিষ্কারের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ফলাফল ছিল ব্যবসা-বাণিজ্যের দ্রুত প্রসার লাভ এবং এর ফলে ইউরোপের অর্থনৈতিক শ্রীবৃদ্ধি। এতদিন পর্যন্ত ভূমধ্যসাগর ছিল আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের একমাত্র পথ। উপকূলবর্তী ইতালির শহরগুলি এবং হেনসিয়াটিকভুক্ত শহরগুলি এতদিন ধরে ইউরোপীয় আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখেছিল। ভৌগোলিক আবিষ্কারের ফলে ভুমধ্যসাগরের গুরুত্ব ক্রমশ কমে যায় এবং তার জায়গা নেয় আটলান্টিক মহাসাগর। আটলান্টিক সাগরের তীরবর্তী পর্তুগাল স্পেন ব্যবসা-বাণিজ্যের ঘাঁটিতে পরিণত হয়।
ঔপনিবেশিক বাণিজ্যের বিকাশের সাথে সাথে বাণিজ্যের পদ্ধতিগত পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। নতুন ব্যবস্থায় আগের থেকে অনেক বেশি পরিমাণ পুঁজি প্রয়োজন ছিল। ব্যক্তিগত বা মধ্যযুগীয় মহাজন' দ্বারা এই লগ্নী সম্ভব ছিল না। ফলে পুঁজি লগ্নির জন্য জয়েন্ট স্টক কম্পানি তথা ব্যাঙ্ক ব্যবস্থা গড়ে ওঠে এবং বিরাট মাপের পুঁজি লগ্নি সম্ভবপর হয়।
স্পেন এবং পর্তুগাল যে সমস্ত এলাকায় তাদের উপনিবেশ স্থাপন করেছিল সেখানকার পরাজিতদের দাসে পরিণত করেছিল এবং ঔপনিবেশিক উৎপাদন ব্যবস্থায় তাদের শ্রমকে কাজে লাগানো হত। এভাবে ভৌগোলিক আবিষ্কার দাস ব্যবস্থার পুনরুত্থান ঘটিয়েছিল।
ইউরোপীয় অর্থনীতির শ্রীবৃদ্ধির ফলে, বিশেষ করে শিল্প বাণিজ্য এবং কৃষির অগ্রগতির ফলে একটা নতুন সম্প্রদায় হিসেবে মধ্যবিত্ত সম্প্রদায়ের আবির্ভাব ঘটেছিল। এরাই উক্ত কাজে নিয়োজিত ছিল।
পরিশেষে উপনিবেশ ও সাম্রাজ্যবাদেরকে কেন্দ্র করে ইউরোপীয় দেশ গুলির মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী এক পারস্পরিক দ্বন্দ্বের সূচনা হয়। এর ফলে বিশ্বকে অনেকগুলি বড় মাপের যুদ্ধের সম্মুখীন হয়। এদিকে ইউরোপীয় রাষ্ট্র গুলির চরম ঔপনিবেশিক শোষনের ফলে এশিয়া ও আফ্রিকার দেশগুলোতে দুরাবস্থা উত্তরোত্তর বাড়তে থাকে এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক চরম অবস্থার দিকে সেসব দেশের পরিস্থিতি পৌঁছে যায়।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন