সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

উপমহাদেশে মধ্যপ্রস্তর যুগ | Mesolithic Age in Indian Subcontinent

উপমহাদেশে মধ্যপ্রস্তর যুগ

প্রাচীন প্রস্তর যুগ ও নব্য প্রস্তর যুগের মধ্যবর্তী পর্বকে মধ্য প্রস্তর যুগ বা মেসোলিথিক যুগ বলা হয়।আনুমানিক 10,000 খ্রি:পূ: থেকে এই যুগের সূচনা। ভূতাত্ত্বিক যুগ প্লাইস্টোসিন পর্বের শেষ দিকে উত্তর গোলার্ধে তুষার যুগ চলেছিল। রেমন্ড অলিচিন ও ব্রিজিত অলিচিন মনে করেন এ সময়ে ভারতীয় উপমহাদেশে চলেছিল বর্ষণ যুগ। তুষার যুগ ও বর্ষণ যুগের সমাপ্তির পর পৃথিবী ভূতাত্ত্বিক আধুনিক হলোসিন যুগে পৌঁছায়। মধ্য প্রস্তর যুগ এই হলোসিন যুগের অন্তর্ভুক্ত যা আগের যুগের তুলনায় উষ্ণতর।

ভারতীয় উপমহাদেশে মধ্য প্রস্তর যুগের সন্ধান পাওয়া গেছে উত্তরপ্রদেশের মধ্যভাগে অবস্থিত সরাই নহর রাই, মহাদহা, চোপানিমান্ডো, মধ্যপ্রদেশের আদমগড়, রাজস্থানের বাগোর প্রভৃতি এলাকায়।

মধ্য প্রস্তর যুগে  ক্ষুদ্রাশ্মীয় আয়ুধের ব্যাপক প্রচলন ঘটল। একই সাথে মিশ্র আয়ুধ বা কম্পোজিট টুল চালু হল। অর্থাৎ হাতিয়ারগুলি এত ক্ষুদ্র হল যে তার সাথে হাতল লাগানো হলো। সরাই নহর রাইতে দুপাশ ধারওয়ালা ছুরি এবং হাড়ের তৈরি তীরের ফলা পাওয়া গেছে।

মধ্য প্রস্তর যুগে মানুষ তখনও শিকারি। তবে পশুর মাংস ঝলসে নেওয়ার জন্য আগুনের ব্যবহার তাদের জানা ছিল। তবে মানুষ ক্রমশ পশুপালন শিখতে শুরু করেছিল । রাজস্থানের বাগোরে পশুপালনের চিহ্ন পাওয়া গেছে । মহাগড়াতে একটি খোয়াড়ের চিহ্ন পাওয়া গেছে। তবে কৃষি তাদের জানা ছিল না। কোলদিহাওয়াতে মাটির পাত্রের গায়ে যে ধানের তুষ পাওয়া গেছে তাকে অনেকে মধ্য প্রস্তর যুগের সমসাময়িক বলে মনে করেন। যদিও আধুনিক গবেষণায় দেখা গেছে যে ওই ধানের তুষ 2000-3000 খ্রিস্টপূর্বাব্দের আগে নয়। মাটির পাত্রের ব্যবহার তাদের জানা ছিল। তবে তা ছিল হাতে তৈরি। কুমোরের চাকার ব্যবহার তাদের জানা ছিল না। মানুষ তখনও যাযাবর জীবনই যাপন করত। ব্যতিক্রম ছিল মহাগড়া। কারণ সেখানে পশুচারণকারী সমাজ গড়ে উঠছিল। মহাগড়াতে অন্তত 20 টি  কুটিরের অবশেষ পাওয়া গেছে ।

মৃত্যু ও পরলোক সম্পর্কে ধারণা ছিল এবং অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া বিষয়ে তাদের জানা ছিল। সরাই নহর রাই ও মহাদহার সমাধিগুলি থেকে ধর্মীয় সংস্কৃতি ও বিশ্বাসের ইঙ্গিত পাওয়া যায়। মৃত্যুর পরও জীবন আছে এই ধারণার বশবর্তী হয়ে তারা কবরের মধ্যে আসবাবপত্র রেখে দিত। 

Mesolithic Age

In the subcontinent, the period between the Paleolithic and Neolithic ages is known as the Mesolithic or Middle Stone Age. This era is estimated to have started around 10,000 years ago. During the final phase of the Pleistocene epoch, the subcontinent experienced a period known as the Holocene age, characterized by warmer climate conditions after the end of the last Ice Age.

Archaeologists have found evidence of the Middle Stone Age in the central region of the subcontinent, particularly in areas such as the Sarai Nahar Rai, Mahadaha, Chopanimando in Uttar Pradesh, Adamgarh in Madhya Pradesh, and Bagor in Rajasthan.

During the Middle Stone Age, there was widespread use of small tools made of microliths. Additionally, composite tools, combining different materials, came into use. These tools were so small that they required the use of handles. Archaeologists have discovered double-edged blades and harpoons made of bone in the Sarai Nahar Rai site.

People during this period were still hunters, but they used fire for cooking meat. While agriculture was not yet practiced, evidence of animal domestication has been found in Bagor of Rajasthan, indicating that humans were beginning to learn animal husbandry practices. Evidence of a cattle shed has been found in Mahagadha. Although they used pottery. their knowledge of agriculture was none. Some researchers consider the presence of husk imprints on pottery found in sites like Koldihwa to be indicative of Mesolithic agriculture. Although modern research suggests that these imprints do not date back to 2000-3000 BCE. The pottery used by the Mesolithic people was handmade, and the use of the potter's wheel was unknown to them. 

Mesolithic people continued to lead a nomadic lifestyle, and life was centered around hunting and gathering. Mahagadha stands out as an exception because it witnessed the emergence of an agrarian society. At least 20 huts have been found in Mahagadha, indicating settled communities engaged in animal husbandry.

They had beliefs about death and the afterlife, evident from the religious and funerary practices observed in sites like Sarai Nahar Rai and Mahadaha. The presence of graves with grave goods indicates their beliefs in life after death.


Thanks for reading.

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আরবদের সিন্ধু অভিযান | কারণ ও তাৎপর্য

আরবদের সিন্ধু অভিযান | কারণ ও তাৎপর্য Please visit our Homepage and subscribe us. Suggested Topics || Ghajnavid Invasion || গজনী আক্রমণ || || মামুদের সোমনাথ মন্দির লুণ্ঠন || Somnath Temple Plunder || || তরাইনের যুদ্ধ ও তার গুরুত্ত্ব || মহম্মদ ঘুরির ভারত আক্রমন ও তার চরিত্র || সপ্তম শতকের প্রথমার্ধে আরবদেশে ইসলামের আবির্ভাব ঘটে। ইসলাম আরবদের নতুন করে জীবনীশক্তির সঞ্চার করে । ইসলাম ক্রমশ: একটি ধর্ম থেকে রাজনৈতিক শক্তি রূপে আত্মপ্রকাশ করে। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় তারা আরবীয় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। ভারতবর্ষের সঙ্গে আরবদের যোগাযোগ দীর্ঘদিনের। বাণিজ্যিক সূত্রে তারা নিয়মিত ভারতের উপকূল গুলিতে, বিশেষ করে মালাবার উপকূলে আসত। ভারতীয় ও চীনা পণ্য 'ধাও' নামক বিশেষ জাহাজে করে নিয়ে তারা ইউরোপের বাজারে বিক্রি করত। 712 খ্রিস্টাব্দে ইরাকের গভর্নর হাজ্জাজ বিন ইউসুফ এর সেনাপতি ও জামাতা মোহাম্মদ বিন কাসেম সিন্ধু দেশে একটি সফল অভিযান করেন এবং সিন্ধুদেশ আরবীয় মুসলমানদের অধীনে চলে যায়। অভিযানের(প্রত্যক্ষ) কারণ ভারতবর্ষের প্রতি আরবদের দীর্ঘদিনের নজর ছিল। এর আ

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ | Category of Archives

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ মহাফেজখানা বা লেখ্যাগারগুলি সাধারণ জনতার জন্য নয় মূলত গবেষক, ঐতিহাসিক, আইনবিদ, চিত্র পরিচালক প্রভৃতি পেশার লোকজন তাদের গবেষণার কাজে লেখ্যাগারে নথি পত্র দেখতে পারেন।  লেখ্যাগার পরিচালনা ও সংরক্ষিত নথির ভিত্তিতে লেখ্যাগগুলিকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়েছে।   1. সরকারি লেখ্যাগার:- কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার বা স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে যে লেখ্যাগারগুলি গড়ে ওঠে। সেগুলিকে সরকারি লেখ্যাগার বলা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এরকম সরকার পরিচালিত এক বা একাধিক লেখ্যাগার থাকে। যেমন, আমেরিকার Natonal Archive And records Administration (NARA)। ভারতবর্ষে র কেন্দ্রীয় লেখ্যাগার National Archive of India নামে পরিচিত। বিভিন্ন ঐতিহাসিক, প্রশাসনিক ও আইনগত নথি, মানচিত্র, নক্সা,  পাণ্ডুলিপি প্রভৃতি সংরক্ষিত থাকে। 2. বানিজ্যিক লেখ্যাগার:-  এটি একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানের লেখ্যাগার বিভিন্ন বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান   মূলত তাদের সংস্থার ঐতিহাসিক এবং বানিজ্যিক নথি সংরক্ষিত রাখে। যেমন, ভারতের প্রথম বানিজ্যিক লেখ্যাগার হলো পুনার Tata Centrel Archive। 3. অলাভজনক লেখ্যাগার:-   কোনো ব্যাক্তিগত বা অলাভজনক

ষোড়শ শতকীয় ইউরোপে মূল্যবিপ্লব | Price Revolution

 ষোড়শ শতকের ইউরোপে মূল্য বিপ্লব   16 শতাব্দীতে ইউরোপীয় অর্থনীতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো মূল্য বিপ্লব। নিত্যব্যবহার্য পণ্যের মূল্য প্রায় 150 বছর সুস্থির থাকার পর ঊর্ধ্বমুখী হতে আরম্ভ করে, এবং 16 শতাব্দীর শেষে খাদ্যপণ্যের মূল্যের প্রায় সাড়ে পাঁচ গুণ বেড়ে যায়। পশ্চিম ইউরোপের অর্থনীতিতে এমন অভাবনীয় এবং সুদুরপ্রসারী ফলাফলসম্পন্ন ঘটনা মূল্য বিপ্লব নামে পরিচিত। মূল্য বিপ্লবের কতগুলি সাধারণ বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। যথা--    (১) কৃষিজ পণ্যের তুলনায় শিল্পজাত পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি ছিল কম, এবং খাদ্যশস্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি। (২) ভূমি রাজস্ব সহ ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক, তোলা ইত্যাদির হার বৃদ্ধি এবং ফটকাবাজির আবির্ভাব। (৩) মূল্যবৃদ্ধির তুলনায় মজুরির হার খুবই কম ছিল বলে প্রকৃত আয় হ্রাস পেয়েছিল। (৪) ভূমি বিক্রয়যোগ্য পণ্যে পরিণত হওয়া। (৫) গ্রামীণ বুর্জোয়াজি শ্রেণীর আবির্ভাব। ষোড়শ শতকের আগেও প্রাকৃতিক কারণে মূল্যবৃদ্ধি হয়েছিল, তবে তা ছিল 2, 3 শতাংশের মতো, যা অস্বাভাবিক মনে হতো না। কিন্তু ষোল শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে যে নিরবিচ্ছিন্ন মূল্যবৃদ্ধি হয়েছিল তা জনজীবনে তীব্রভ