প্রতিবাদী ধর্ম হিসাবে জৈন ধর্ম
খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে নাগাদ বৈদিক ব্রাহ্মণ্য আধিপত্যের বিরুদ্ধে যে প্রতিবাদী আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল তার মধ্যে অন্যতম প্রতিবাদী ধর্ম হল জৈন ধর্ম। জৈন মতে মোট 23 জন তীর্থঙ্কর। প্রথম তীর্থঙ্কর হলেন ঋষভনাথ। প্রথম 22 জন তীর্থঙ্করের ঐতিহাসিক অস্তিত্ব পাওয়া যায়না। তবে শেষ 2 জন তীর্থঙ্করের ঐতিহাসিক অস্তিত্ব নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। এরা হলেন পার্শ্বনাথ ও মহাবীর। পার্শ্বনাথ ও মহাবীরের দর্শনই জৈন ধর্মের মূল ভিত্তি।
জৈন ধর্মের অবশ্যপালনীয় চারটি কর্তব্য নির্দিষ্ট করে যান 23 তম তীর্থঙ্কর পার্শ্বনাথ। এই চারটি কর্তব্য হল ১. অহিংসা অর্থাৎ কাউকে হত্যা না করা, ২. মিথ্যা ভাষণ বা মিথ্যাচার না করা, ৩. চুরি বা অপরের দ্রব্য অপহরণ না করা এবং ৪. অপরিগ্রহ অর্থাৎ ব্যক্তিগত সম্পত্তির অধিকারী না হওয়া। এই চারটি কর্তব্য চতুরযাম নামে পরিচিত। মহাবীর এই চারটি কর্তব্যের সঙ্গে আরও একটি কর্তব্য যুক্ত করেন। এটি হলো ব্রহ্মচর্য কর্তব্য। এর ফলে চতুরযাম পঞ্চমহাব্রত-এ পরিণত হয়।
জৈন ধর্মে আপেক্ষিকতার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তাদের মতে সত্য ও জ্ঞান আপেক্ষিক। কোন প্রতিজ্ঞাই ধ্রুব নয়। সমস্ত প্রতিজ্ঞাই সম্ভাব্য। তাই এই সম্ভাবনা ব্যক্ত করার জন্য জৈন চিন্তাবিদরা সম্ভাবনা সূচক পরিভাষা 'স্যাদ' নির্মাণ করেছিলেন। তাদের মতে সত্যের উপস্থাপনা হওয়া উচিত অনেকান্তের আশ্রয়ে; যেমন স্যাদ আস্তি (হতে পারে এটা সত্য), স্যাদ নাস্তি (হতে পারে এটা নয়) প্রভৃতি।
জৈন ধর্মে অহিংসা অবশ্য পালনীয় কর্তব্য। জৈন মতে সবকিছুর মধ্যেই প্রাণের অস্তিত্ব বিদ্যমান। তাই গৃহী জৈনরা প্রায়ই অহিংসা তত্ত্বের প্রভাবে কৃষির তুলনায় বাণিজ্যের উপর নির্ভর করতেন জীবনধারণের জন্য। এবং জৈন ধর্মের প্রতি আনুগত্য ও অনুরাগের একটি বড় অংশই এসেছিল ব্যবসায়ীদের তরফ থেকে।
জৈন ধর্মে নাস্তিকতার বিষয়টি প্রাধান্য পেয়েছে। জাগতিক সৃষ্টি ও ধ্বংসের মূলে কোন ঈশ্বর নেই বলে এই ধর্মের অনুরাগীরা বিশ্বাস করেন। তাদের মতে এক চিরন্তন ও শাশ্বত নিয়মানুসারে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সমস্ত ক্রিয়া-কলাপ সাধিত হয়। তাই বেদের পৌরুষেয়তায় এরা বিশ্বাসী নয়।
কর্মফল ও জন্মান্তর থেকে মুক্তি লাভের উপায় হিসাবে মহাবীর তিনটি পথ নির্দেশ করেছেনঃ ১. সৎ বিশ্বাস ২. সৎ আচরণ ও ৩. সৎ জ্ঞান। এই তিনটি নীতি সমষ্টিগত ভাবে ত্রিরত্ন নামে পরিচিত। এরা কঠোর কৃছসাধনায় মুক্তি লাভে বিশ্বাসী ছিলেন।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন