সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

হরপ্পার অর্থনীতি | Harapan Economy

হরপ্পার অর্থনীতি

যেকোনো নগর সভ্যতা গড়ে ওঠার প্রারম্ভিক শর্তই হলো কৃষির উদবৃত্ত এবং সেই উদবৃত্তকে কাজে লাগিয়ে কারিগরি উৎপাদন ও বাণিজ্যের বিকাশ। নগররাশ্রয়ী হরপ্পা সভ্যতার ক্ষেত্রেও সেটাই ঘটেছিল। হরপ্পা সভ্যতার উন্নত কৃষি ব্যবস্থার উপস্থিতি লক্ষ্য করার মতো। উৎখনন থেকে বিভিন্ন শস্যের দানার যেমন- গম, যব, মুগ, মসুর, সরষে প্রভৃতি রবি শস্য এবং জোয়ার, বাজরা, তুলো, তিল, ধান প্রভৃতি খারিফ শস্যের প্রমাণ পাওয়া গেছে। ধানের অবশেষ কেবল রংপুর ও লোথাল এ পাওয়া গেছে। চাষবাসে এরা যে লাঙ্গলের ব্যবহার করত তার প্রমাণ আমরা পাই কালিবঙ্গান এর কর্ষণ ক্ষেত্র থেকে। কৃষির সমৃদ্ধির শ্রেষ্ঠ প্রমাণ হরপ্পা ও মহেঞ্জোদারোর বিরাট শস্যাগার, যেখানে শস্য ঝাড়াই মাড়াই থেকে শুরু করে সংরক্ষণের ব্যবস্থাও ছিল। এ এল বাসাম একে রাষ্ট্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে তুলনা করেছেন।

কৃষির সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে যুক্ত ছিল পশু পালন উৎখননের ফলে বিভিন্ন প্রকার গবাদিপশুর অস্থির প্রমাণ পাওয়া গেছে। সিলমোহরে বৃষ ও মহিষের নিয়মিত উপস্থিতি লক্ষ্য করার মতো। ভেড়া ও ছাগল পালনের প্রমাণ রয়েছে। তবে তারা ঘোড়ার সঙ্গে পরিচিত ছিল না।

নগররাশ্রয়ী অর্থনীতির প্রধান লক্ষণ কারিগরি উৎপাদন এবং ব্যবসা বাণিজ্য। উৎখননের ফলে তামা, কাঁসা এবং পাথরের তৈরি বিভিন্ন আসবাবপত্র, অস্ত্রশস্ত্র এবং বিলাস সামগ্রীর প্রমাণ পাওয়া গেছে। সুক্কুরে  একটি কর্মশালার সন্ধান পাওয়া গেছে, যেখানে ফ্লিন্ট পাথরের ছুরি নির্মিত হত। কারিগরি উৎপাদনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো মৃতপাত্র নির্মাণ। আটপৌরে এবং সৌখিন দুই প্রকার মৃতপাত্র তৈরি হতো। মেহেরগড় এ কার্পাসের প্রাচীনতম নিদর্শন পাওয়া গেলেও মহেঞ্জোদারোতেই উপমহাদেশের প্রাচীনতম বস্ত্র নির্মাণ কেন্দ্র গড়ে ওঠে। ইট নির্মাণ ছিল অন্যতম প্রধান কারিগরি শিল্প। চুল্লিতে পোড়ানো ইটের মাপ ছিল 31 সেন্টিমিটার × 15 সেন্টিমিটার × 7 সেন্টিমিটার। অলংকার শিল্পের কথা না বললে কারিগরি উৎপাদনের আলোচনা সম্পূর্ণ হয় না। মাল্যদানা নির্মাণের জন্য সোনা এবং ল্যাপিস লাজুলি এর মত দুর্মূল্য উপকরণ ব্যবহার হতো। বানাওয়ালিতে একটি মাল্যদান তৈরীর কারখানাও পাওয়া গেছে।

হরপ্পার বাণিজ্য ছিল যথেষ্ট প্রসারিত। রাজস্থানের ক্ষেত্রী ও পশ্চিম এশিয়ার ওমান থেকে তামা আসতো। ল্যাপিস লাজুলি আসতো আফগানিস্তান থেকে। শঙ্খ আসতো বেলুচিস্তান ও কচ্ছের রণ এলাকা থেকে। সোনার সম্ভাব্য উৎস কর্নাটকের কোলার এলাকা। বহিঃবাণিজ্যের ক্ষেত্রে মেসোপটেমিয়া সাথে খুব ভালো সম্পর্ক ছিল। এমনকি বাণিজ্যের খাতিরে হরপ্পার বণিকরা মেসোপটেমিয়ায় গিয়ে দীর্ঘমেয়াদী বসতি গড়েছিল। মেসোপটেমিয়ার রাজদরবারে হরপ্পার লোকেদের সঙ্গে কথোপকথনের জন্য দোভাষী থাকতো। বাণিজ্য চলত মূলত সমুদ্রপথে এবং এক্ষেত্রে লোথাল ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ বন্দর। স্থলপথেও বহিঃবাণিজ্য চলত। ইরান, তুর্কমেনিস্তান এবং আফগানিস্তানের সাথে স্থলপথে বাণিজ্যিক যোগাযোগ ছিল। মাল ব‍ওয়ার জন্য প্রধানত দু চাকার চওড়া সকট ব্যবহৃত হতো।

Harappan Economy

The foundational condition for the emergence of any urban civilization is the development of agriculture and the utilization of that surplus in craft production and commercial development. This was also true in the case of the urban Harappan civilization. The presence of advanced agricultural practices is evident in the Harappan civilization, with evidence of various crops such as rice, wheat and barley, pulses like lentils and mung beans, oilseeds like mustard, etc. Evidence of summer crops like jowar, bajra, sesame, and millets, and evidence of winter crops like wheat and barley, has been found. Rice remains have only been found in Rangpur and Lothal. Evidence suggests using plows in farming, as seen in the discovery of a plow from the Kalibangan excavation.

Livestock farming was integrated with agriculture, leading to the discovery of skeletal remains of various animals, including the regular presence of cattle and buffalo in Mohenjo-daro. However, horses were not familiar to them.

The main indicators of urban economy were craft production and trade. As a result of excavation, various artifacts and tools made of copper, bronze, and stone, as well as evidence of weapons and luxury items, have been found. A workshop for the production of flint blades was discovered in Sukkur. Noteworthy in craft production was the manufacturing of pottery. Different types of clay pots were made, including rough-use pots and fancy pots. The oldest evidence of cotton was found in Mehrgarh, but the most ancient center for textile production in the subcontinent was established in Mohenjo-daro. Another significant industry was brick-making for construction purposes. The dimensions of the bricks were 31 centimeters by 15 centimeters by 7 centimeters. Without discussing the art of ornamentation, the discourse on craft production is incomplete. In the construction of granaries, precious materials like gold and lapis lazuli were used for the making of necklaces. A workshop for the production of jewelry has also been found in the city of Banawali.

Trade in the Harappan civilization was extensive. Copper was imported from Oman in Western Asia, while lapis lazuli came from Afghanistan. Conch shells were obtained from the Baluchistan and Kachchh regions. The possible source of gold was the Kolar region in Karnataka. In terms of external trade, there was a strong connection with Mesopotamia, and even in the business domain, Harappan merchants ventured into Mesopotamia for long-term settlements. Harappan traders had bilingual communication with the Mesopotamian royal court. Maritime trade was conducted mainly through the sea route, and Lothal was a crucial port. Overland trade routes connected Harappa with Iran, Turkmenistan, and Afghanistan. They use a vehicle like a cart with two wheels.

In conclusion, the economic prosperity of Harappa is best evidenced by its vast granaries, where not only were grains produced abundantly but also an efficient system of storage was in place. Harappa had a sophisticated economic system, and its trade networks extended to regions like Rajasthan, Oman, Afghanistan, Baluchistan, Kachchh, and Mesopotamia. The economic interaction with Mesopotamia was particularly strong, with Harappan merchants establishing long-term settlements in the region.


Thanks for reading.

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আরবদের সিন্ধু অভিযান | কারণ ও তাৎপর্য

আরবদের সিন্ধু অভিযান | কারণ ও তাৎপর্য Please visit our Homepage and subscribe us. Suggested Topics || Ghajnavid Invasion || গজনী আক্রমণ || || মামুদের সোমনাথ মন্দির লুণ্ঠন || Somnath Temple Plunder || || তরাইনের যুদ্ধ ও তার গুরুত্ত্ব || মহম্মদ ঘুরির ভারত আক্রমন ও তার চরিত্র || সপ্তম শতকের প্রথমার্ধে আরবদেশে ইসলামের আবির্ভাব ঘটে। ইসলাম আরবদের নতুন করে জীবনীশক্তির সঞ্চার করে । ইসলাম ক্রমশ: একটি ধর্ম থেকে রাজনৈতিক শক্তি রূপে আত্মপ্রকাশ করে। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় তারা আরবীয় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। ভারতবর্ষের সঙ্গে আরবদের যোগাযোগ দীর্ঘদিনের। বাণিজ্যিক সূত্রে তারা নিয়মিত ভারতের উপকূল গুলিতে, বিশেষ করে মালাবার উপকূলে আসত। ভারতীয় ও চীনা পণ্য 'ধাও' নামক বিশেষ জাহাজে করে নিয়ে তারা ইউরোপের বাজারে বিক্রি করত। 712 খ্রিস্টাব্দে ইরাকের গভর্নর হাজ্জাজ বিন ইউসুফ এর সেনাপতি ও জামাতা মোহাম্মদ বিন কাসেম সিন্ধু দেশে একটি সফল অভিযান করেন এবং সিন্ধুদেশ আরবীয় মুসলমানদের অধীনে চলে যায়। অভিযানের(প্রত্যক্ষ) কারণ ভারতবর্ষের প্রতি আরবদের দীর্ঘদিনের নজর ছিল। এর আ...

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ | Category of Archives

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ মহাফেজখানা বা লেখ্যাগারগুলি সাধারণ জনতার জন্য নয় মূলত গবেষক, ঐতিহাসিক, আইনবিদ, চিত্র পরিচালক প্রভৃতি পেশার লোকজন তাদের গবেষণার কাজে লেখ্যাগারে নথি পত্র দেখতে পারেন।  লেখ্যাগার পরিচালনা ও সংরক্ষিত নথির ভিত্তিতে লেখ্যাগগুলিকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়েছে।   1. সরকারি লেখ্যাগার:- কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার বা স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে যে লেখ্যাগারগুলি গড়ে ওঠে। সেগুলিকে সরকারি লেখ্যাগার বলা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এরকম সরকার পরিচালিত এক বা একাধিক লেখ্যাগার থাকে। যেমন, আমেরিকার Natonal Archive And records Administration (NARA)। ভারতবর্ষে র কেন্দ্রীয় লেখ্যাগার National Archive of India নামে পরিচিত। বিভিন্ন ঐতিহাসিক, প্রশাসনিক ও আইনগত নথি, মানচিত্র, নক্সা,  পাণ্ডুলিপি প্রভৃতি সংরক্ষিত থাকে। 2. বানিজ্যিক লেখ্যাগার:-  এটি একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানের লেখ্যাগার বিভিন্ন বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান   মূলত তাদের সংস্থার ঐতিহাসিক এবং বানিজ্যিক নথি সংরক্ষিত রাখে। যেমন, ভারতের প্রথম বানিজ্যিক লেখ্যাগার হলো পুনার Tata Centrel Archive। 3. অলাভজনক লেখ্যাগ...

ষোড়শ শতকীয় ইউরোপে মূল্যবিপ্লব | Price Revolution

 ষোড়শ শতকের ইউরোপে মূল্য বিপ্লব   16 শতাব্দীতে ইউরোপীয় অর্থনীতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো মূল্য বিপ্লব। নিত্যব্যবহার্য পণ্যের মূল্য প্রায় 150 বছর সুস্থির থাকার পর ঊর্ধ্বমুখী হতে আরম্ভ করে, এবং 16 শতাব্দীর শেষে খাদ্যপণ্যের মূল্যের প্রায় সাড়ে পাঁচ গুণ বেড়ে যায়। পশ্চিম ইউরোপের অর্থনীতিতে এমন অভাবনীয় এবং সুদুরপ্রসারী ফলাফলসম্পন্ন ঘটনা মূল্য বিপ্লব নামে পরিচিত। মূল্য বিপ্লবের কতগুলি সাধারণ বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। যথা--    (১) কৃষিজ পণ্যের তুলনায় শিল্পজাত পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি ছিল কম, এবং খাদ্যশস্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি। (২) ভূমি রাজস্ব সহ ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক, তোলা ইত্যাদির হার বৃদ্ধি এবং ফটকাবাজির আবির্ভাব। (৩) মূল্যবৃদ্ধির তুলনায় মজুরির হার খুবই কম ছিল বলে প্রকৃত আয় হ্রাস পেয়েছিল। (৪) ভূমি বিক্রয়যোগ্য পণ্যে পরিণত হওয়া। (৫) গ্রামীণ বুর্জোয়াজি শ্রেণীর আবির্ভাব। ষোড়শ শতকের আগেও প্রাকৃতিক কারণে মূল্যবৃদ্ধি হয়েছিল, তবে তা ছিল 2, 3 শতাংশের মতো, যা অস্বাভাবিক মনে হতো না। কিন্তু ষোল শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে যে নিরবিচ্ছিন্ন মূল্যবৃদ্ধি হ...