তাইপিং বিদ্রোহের ব্যর্থতা
তাইপিং বিদ্রোহের প্রথম পর্যায়ে যে ধরনের সাফল্য লাভ করেছিল তা যদি দীর্ঘস্থায়ী হতো তাহলে মাঞ্চু বংশের পতন রোধ করা অসম্ভব হত। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মাঞ্চু বংশ টিকে যায় এবং তাইপিংরা ব্যর্থ হয়।তাইপিং বিদ্রোহের ব্যর্থতার পশ্চাতে কী কারণ ছিল তা আলোচনা করা দরকার।
ব্যর্থতার অন্যতম কারণ ছিল তাদের ভ্রান্ত রণনীতি। তারা বিদ্যুৎগতিতে বিভিন্ন স্থানে আক্রমণ করে কাগজপত্র ও কোষাগার লুণ্ঠন করে এগিয়ে যাওয়ার নীতি গ্রহণ করে। এর ফলে যুদ্ধে জয়ী হয়েও সুষ্ঠু ও অসামরিক শাসন বা সামরিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা হয়নি এবং সেই সব অঞ্চলে মাঞ্চু বাহিনী দখল করে নেয়।
বিদ্রোহীদের মতাদর্শের কতগুলি বৈশিষ্ট্য অনেকেই ভালোভাবে নেয়নি। বিদ্রোহীরা খ্রিস্ট ধর্মের প্রভাবে প্রভাবিত হয়েছিল। নেতা হাং-শিউ-চুয়ান নিজেকে যিশুখ্রিস্টের ভাই বলে দাবি করেছিল। বিদ্রোহীদের খ্রিস্ট ধর্মের প্রতি এতটা টান জনগণের একটা অংশকে তাদের থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছিল। তাছাড়া বিদ্রোহীদের মন্দির ধ্বংস করা এবং প্রাচীন রীতি নীতি গুলিকে আক্রমণ করা অনেকের কাছে অপ্রিয় ছিল। বিদ্রোহীদের নিজস্ব মতবাদের গোঁড়ামি ছিল বলে মাঞ্চু বিরোধী গুপ্ত সমিতিগুলির সহযোগিতা থেকে বঞ্চিত হয়
1856 সালের মধ্যেই বিদ্রোহীদের প্রথম সারির অধিকাংশ নেতা যুদ্ধে নয়তো অন্তর্বিরোধে মারা যায় । হুং বেঁচে থাকলেও সক্রিয় নেতৃত্ব থেকে দূরে সরতে থাকেন। ফলে উপযুক্ত নেতৃত্বে অভাবে বিদ্রোহীরা দুর্বল হয়ে পড়ে।
বিদ্রোহীদের মধ্যে নানা ধরনের ত্রুটি ও নৈতিক অধঃপতন দেখা যায়। এটি বোধ হয় তাদের পতন এর সবচেয়ে বড় কারণ ছিল। অনেক নেতাই প্রভূত সম্পদের অধিকারী হয়ে গেছিল। অনেকই বহু স্ত্রী ও উপপত্নী রাখতে শুরু করে। এগুলি তাইপিং আদর্শের বিরোধী ছিল। তাইপিংদের শাসন ব্যবস্থায় বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। শিল্প বাণিজ্যের অবনতি ঘটে। সাধারণ মানুষের উপর করের বোঝা অনেক বেড়ে যায়। ফলে তাইপিংরা জনপ্রিয়তা হারায়।
বিদ্রোহীদের প্রতি পশ্চিমী শক্তিগুলির প্রতিক্রিয়া প্রথমদিকে অনুকূল ছিল; কারণ তখন মাঞ্চু সরকারের সাথে বিদেশিদের সম্পর্ক তিক্ত ছিল। কিন্তু বিদ্রোহীরা যখন পশ্চিমাদের স্বার্থবিরোধী কতগুলি পদক্ষেপ নিতে শুরু করে তখনই তারা অবস্থান বদল করে। যেমন তাইপিংরা তাদের দখলকৃত এলাকায় আফিম ব্যবসা বন্ধ করে দিলে পশ্চিমীদের স্বার্থে ঘা পড়ে। ফলে পশ্চিমারা মাঞ্চু সরকারের পক্ষে যোগদান করে
পরিশেষে বেশকিছু রাজপুরুষ তাইপিং বিদ্রোহ দমনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন জেন -গুয়ো-ফান। তিনি একটি রক্ষী বাহিনী গড়ে তোলেন, যা তার ব্যক্তিগত বাহিনীতে পরিণত হয়। এই বাহিনী হুনান সেনাবাহিনী নামেও পরিচিত ছিল। এই বাহিনী বিদ্রোহ দমনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন