সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

হরপ্পার পতনের ঐতিহাসিক ব্যাখ্যা | Decline of Harappan Civilization

হরপ্পার পতনের ঐতিহাসিক ব্যাখ্যা

আনুমানিক 1750 খ্রিস্টপূর্বাব্দের পরে বিশাল আয়তন হরপ্পা সভ্যতার আর অস্তিত্ব ছিল না। দীর্ঘ সময় ধরে বিরাজমান হরপ্পা সভ্যতার পতনের পিছনে কি কারণ ছিল তা নিয়ে ঐতিহাসিক এর মধ্যে বিতর্কের শেষ নেই।

ঐতিহাসিক ডেলস এবং রাইক মনে করেন, সিন্ধু নদের বাৎসরিক বন্যায় হরপ্পা সভ্যতা ব্যাপক ভাবে বিপর্যস্ত হত। মহেঞ্জোদারোর নগর প্রাকার বেশ কয়েকবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল এবং তার মেরামতও করা হয়েছিল-- এমন প্রমান পাওয়া গেছে। পাঁচিলের ভগ্নস্তূপে কাদার সন্ধান পাওয়া গেছে। তবে মহেঞ্জোদারো ছাড়া অন্য কোন নগরে এরকম বন্যার প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তাছাড়া এত উন্নত একটি সভ্যতা বন্যাজনিত ক্ষয়ক্ষতি রুখে দেওয়ার ব্যবস্থা করেনি; তাই সভ্যতা ধ্বংস হয়ে গেল-- এই যুক্তি অতি সরল যুক্তি।

গুরুদীপ সিং দেখিয়েছেন একসময় সিন্ধু নদের উপত্যকার জলবায়ু ছিল আর্দ্র এবং কৃষির জন্য উপযোগী। কিন্তু 2200 খ্রিস্টপূর্ব নাগাদ নিকট প্রাচ্য, মধ্য প্রাচ্য এবং দক্ষিণ এশিয়ার বিস্তৃত অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ হ্রাস পায়। জলবায়ু শুষ্ক হয়ে ওঠে। ফলে কৃষি ব্যবস্থা সংকটের মধ্যে পড়ে।

জলবায়ুর পরিবর্তনের জন্য মানুষ সৃষ্ট কারণ দায়ী থাকলেও থাকতে পারে। নগরাশ্রয়ী সভ্যতার বাড়ি ঘর বানানোর ইট তৈরি করতে প্রচুর গাছ কাটা হত। অরণ্য সম্পদ হ্রাস পাওয়া জলবায়ুর আদ্রতা কমার অন্যতম কারণ।

পুরাতাত্ত্বিক গবেষণায় দেখা গেছে খ্রিস্টপূর্ব 1900 পরিবর্তি সময় মেসোপটেমিয়ার সঙ্গে হরপ্পার বাণিজ্য ভাঁটা দেখা যায়। এর ফলেই সম্ভবত কারিগরি উৎপাদন হ্রাস পায়। নগর গুলির উপযোগিতা নির্ভর করত কারিগরি উৎপাদন ও বিনিময়ের কেন্দ্র হিসাবে, যার ফলে নগরগুলি অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যায়।

বহু গবেষক দেখিয়েছেন পতনের বেশকিছু পূর্বে নগর গুলিতে অবক্ষয়ের চিহ্ন স্পষ্ট। মার্টিমার হুইলার মহেঞ্জোদারোর অন্তিম পর্বে বিপর্যস্ত অবস্থার ছবি তুলে ধরেছেন, দেখা যায় যে পূর্বেকার সুবিন্যাস্ত নগর পরিকল্পনা এবং পৌর পরিবেশের সজীব চরিত্রগুলি শেষ পর্বে ম্লান হয়ে গেছিল।

মার্টিমার হুইলার হরপ্পা সভ্যতার পতনের পেছনে বহিরাক্রমণ তত্ত্ব তুলে ধরেছেন। তিনি দেখিয়েছেন মহেঞ্জোদারো নগরটি পরিত্যক্ত হওয়ার ঠিক আগে এখানে ওখানে বিক্ষিপ্ত অবস্থায় পড়ে থাকা নরকঙ্কাল পাওয়া গেছে। এইগুলির দেহে আঘাতের চিহ্ন এবং এগুলির সৎকার হয়নি। তিনি মনে করেন কোনও এক হিংসাত্মক ঘটনার মধ্যে দিয়ে এই সভ্যতার যবনিকাপাত হয়েছিল। তিনি আরো মনে করেন দেবরাজ ইন্দ্রের আক্রমণের ফলে এই ঘটনা ঘটেছিল। তবে হুইলারের আর্য আক্রমণ তত্ত্ব মেনে নেওয়া কঠিন, কারণ ভারতবর্ষে আর্যদের আগমন ঘটেছিল মাইগ্রেশন এর মধ্য দিয়ে, অভিযানের মধ্য দিয়ে নয়।

পরিশেষে হরপ্পা সভ্যতার পতনের জন্য কোনও একটি বিশেষ কারণকে এককভাবে দায়ী করা যায় না। সম্ভবত একাধিক কারণের সমন্বয়ে এই বিরাট সভ্যতার পতন ঘটেছিল বলে মনে হয়।

Decline of the Harappan Civilization

Approximately after 1750 BCE, the vast expanse of the Harappan civilization ceased to exist. The reasons behind the decline of the long-standing Harappan civilization remain a subject of historical debate.

Historians like Dayaram Sahni and Sir Mortimer Wheeler believe that the frequent floods of the Indus River played a significant role in the extensive deterioration of the Harappan civilization. The city layout of Mohenjodaro had suffered several damages, and evidence suggests that repairs were undertaken. Excavations have revealed sedimentation of mud in the Great Bath of Mohenjodaro. However, there is no evidence of similar flooding in other cities apart from Mohenjodaro. Moreover, such an advanced civilization did not have a system to protect itself from natural disasters, leading to its destruction – this argument is overly simplistic.

Gurdeep Singh has suggested that, at one time, the climate around the Indus River was humid and suitable for agriculture. However, around 2200 BCE, there was a reduction in rainfall in the eastern, central, and southern regions of Asia. The climate became arid, resulting in agricultural difficulties. Humans may have contributed to the climate change. The cutting down of numerous trees to make bricks for constructing urban homes in the Harappan civilization could have contributed to deforestation. The reduced availability of forest resources causes a lack of humidity.

Archaeological research indicates that around 1900 BCE, trade relations between the Harappan civilization and Mesopotamia saw a decline. As a result, it is possible that craft production faced a decline. The cities, dependent on the centers of industrial production and exchange, became irrelevant, leading to their abandonment.

Several researchers have observed signs of abandonment and decay in many cities before their decline. Mortimer Wheeler has presented clear evidence of disturbed conditions in the final phase of Mohenjodaro, indicating that the planned layout and vibrant characteristics of the urban environment had deteriorated.

Mortimer Wheeler has put forth the theory of external invasion as a cause for the decline of the Harappan civilization. He found that many human skeletons were scattered here and there in the remains of Mahenjodaro. In the bodies found in these conditions, there are signs of violence, and they have not died naturally. He believes that the collapse of this civilization occurred through some violent event. He also thinks that it might have happened as a result of an invasion by Devraj Indra. Wheeler's Aryan invasion theory is contentious because the arrival of the Aryans in the Indian subcontinent likely happened through migration rather than invasion.

In conclusion, there is no single specific cause attributed to the decline of the Harappan civilization. The collapse of this vast civilization likely occurred due to a combination of various factors.


Thanks for reading.

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আরবদের সিন্ধু অভিযান | কারণ ও তাৎপর্য

আরবদের সিন্ধু অভিযান | কারণ ও তাৎপর্য Please visit our Homepage and subscribe us. Suggested Topics || Ghajnavid Invasion || গজনী আক্রমণ || || মামুদের সোমনাথ মন্দির লুণ্ঠন || Somnath Temple Plunder || || তরাইনের যুদ্ধ ও তার গুরুত্ত্ব || মহম্মদ ঘুরির ভারত আক্রমন ও তার চরিত্র || সপ্তম শতকের প্রথমার্ধে আরবদেশে ইসলামের আবির্ভাব ঘটে। ইসলাম আরবদের নতুন করে জীবনীশক্তির সঞ্চার করে । ইসলাম ক্রমশ: একটি ধর্ম থেকে রাজনৈতিক শক্তি রূপে আত্মপ্রকাশ করে। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় তারা আরবীয় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। ভারতবর্ষের সঙ্গে আরবদের যোগাযোগ দীর্ঘদিনের। বাণিজ্যিক সূত্রে তারা নিয়মিত ভারতের উপকূল গুলিতে, বিশেষ করে মালাবার উপকূলে আসত। ভারতীয় ও চীনা পণ্য 'ধাও' নামক বিশেষ জাহাজে করে নিয়ে তারা ইউরোপের বাজারে বিক্রি করত। 712 খ্রিস্টাব্দে ইরাকের গভর্নর হাজ্জাজ বিন ইউসুফ এর সেনাপতি ও জামাতা মোহাম্মদ বিন কাসেম সিন্ধু দেশে একটি সফল অভিযান করেন এবং সিন্ধুদেশ আরবীয় মুসলমানদের অধীনে চলে যায়। অভিযানের(প্রত্যক্ষ) কারণ ভারতবর্ষের প্রতি আরবদের দীর্ঘদিনের নজর ছিল। এর আ

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ | Category of Archives

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ মহাফেজখানা বা লেখ্যাগারগুলি সাধারণ জনতার জন্য নয় মূলত গবেষক, ঐতিহাসিক, আইনবিদ, চিত্র পরিচালক প্রভৃতি পেশার লোকজন তাদের গবেষণার কাজে লেখ্যাগারে নথি পত্র দেখতে পারেন।  লেখ্যাগার পরিচালনা ও সংরক্ষিত নথির ভিত্তিতে লেখ্যাগগুলিকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়েছে।   1. সরকারি লেখ্যাগার:- কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার বা স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে যে লেখ্যাগারগুলি গড়ে ওঠে। সেগুলিকে সরকারি লেখ্যাগার বলা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এরকম সরকার পরিচালিত এক বা একাধিক লেখ্যাগার থাকে। যেমন, আমেরিকার Natonal Archive And records Administration (NARA)। ভারতবর্ষে র কেন্দ্রীয় লেখ্যাগার National Archive of India নামে পরিচিত। বিভিন্ন ঐতিহাসিক, প্রশাসনিক ও আইনগত নথি, মানচিত্র, নক্সা,  পাণ্ডুলিপি প্রভৃতি সংরক্ষিত থাকে। 2. বানিজ্যিক লেখ্যাগার:-  এটি একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানের লেখ্যাগার বিভিন্ন বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান   মূলত তাদের সংস্থার ঐতিহাসিক এবং বানিজ্যিক নথি সংরক্ষিত রাখে। যেমন, ভারতের প্রথম বানিজ্যিক লেখ্যাগার হলো পুনার Tata Centrel Archive। 3. অলাভজনক লেখ্যাগার:-   কোনো ব্যাক্তিগত বা অলাভজনক

ষোড়শ শতকীয় ইউরোপে মূল্যবিপ্লব | Price Revolution

 ষোড়শ শতকের ইউরোপে মূল্য বিপ্লব   16 শতাব্দীতে ইউরোপীয় অর্থনীতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো মূল্য বিপ্লব। নিত্যব্যবহার্য পণ্যের মূল্য প্রায় 150 বছর সুস্থির থাকার পর ঊর্ধ্বমুখী হতে আরম্ভ করে, এবং 16 শতাব্দীর শেষে খাদ্যপণ্যের মূল্যের প্রায় সাড়ে পাঁচ গুণ বেড়ে যায়। পশ্চিম ইউরোপের অর্থনীতিতে এমন অভাবনীয় এবং সুদুরপ্রসারী ফলাফলসম্পন্ন ঘটনা মূল্য বিপ্লব নামে পরিচিত। মূল্য বিপ্লবের কতগুলি সাধারণ বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। যথা--    (১) কৃষিজ পণ্যের তুলনায় শিল্পজাত পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি ছিল কম, এবং খাদ্যশস্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি। (২) ভূমি রাজস্ব সহ ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক, তোলা ইত্যাদির হার বৃদ্ধি এবং ফটকাবাজির আবির্ভাব। (৩) মূল্যবৃদ্ধির তুলনায় মজুরির হার খুবই কম ছিল বলে প্রকৃত আয় হ্রাস পেয়েছিল। (৪) ভূমি বিক্রয়যোগ্য পণ্যে পরিণত হওয়া। (৫) গ্রামীণ বুর্জোয়াজি শ্রেণীর আবির্ভাব। ষোড়শ শতকের আগেও প্রাকৃতিক কারণে মূল্যবৃদ্ধি হয়েছিল, তবে তা ছিল 2, 3 শতাংশের মতো, যা অস্বাভাবিক মনে হতো না। কিন্তু ষোল শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে যে নিরবিচ্ছিন্ন মূল্যবৃদ্ধি হয়েছিল তা জনজীবনে তীব্রভ