সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

প্রতিবাদী ধর্ম হিসাবে বৌদ্ধ ধর্ম | Buddhism as Protestant Religion

প্রতিবাদী ধর্ম হিসাবে বৌদ্ধ ধর্ম

খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকের প্রতিবাদী ধর্মান্দোলনের সময় সবচেয়ে প্রভাব বিস্তারকারী প্রতিবাদী ধর্ম হিসাবে বৌদ্ধ ধর্মের আবির্ভাব ঘটেছিল। বৌদ্ধ ধর্মের প্রবর্তক ছিলেন গৌতম বুদ্ধ। তবে তিনি দাবি করেছিলেন যে তার আগেও অনেক বুদ্ধ এসেছিলেন এবং তার পরেও অনেক বুদ্ধ আসবেন। হীনযান মতে মোট 24 জন বুদ্ধ জগতে আবির্ভূত হয়েছেন এবং মহাযান মতে এই সংখ্যা 32।

বৌদ্ধ ধর্ম দর্শনের কেন্দ্রে রয়েছে দুঃখবাদ। বুদ্ধের মতে জগতে সবকিছুই অনিত্য, অলীক ও অশাশ্বত ।অথচ মানুষের তৃষ্ণা অসীম এবং অশেষ। মানুষের কামনা বাসনা চরিতার্থ হয় না বলেই জন্ম-মৃত্যু-পুনর্জন্ম-- এই চক্র অবিরাম চলতে থাকে এবং এর ফলে দুঃখ কেবল বেড়েই যায়। বুদ্ধের এই তত্ত্বের উপর প্রতিষ্ঠিত হয় চতুরার্য সত্য। এই চারটি সত্য হল- ১. জগত দুঃখময়, ২. দুঃখের কারণ আছে, ৩. দুঃখের কারণ নির্ধারণ করা গেলে দুঃখ নিবারণ সম্ভব এবং ৪. দুঃখ নিবারণের উপযুক্ত পন্থা আছে।

বৌদ্ধ ধর্ম চিন্তার অপর স্তম্ভ হল প্রতীত্যসমুৎপাদবাদ। কার্যকারণ সম্পর্কে উপর আশ্রয় করেই প্রতীত্যসমুৎপাদবাদ তত্ত্ব গড়ে উঠেছে। দুঃখবাদ ও প্রতীত্যসমুৎপাদবাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ক্ষণিকত্ববাদ। ক্ষনিকত্ববাদ অনুশারে পৃথিবীর যাবতীয় বস্তু ও প্রাণী সতত পরিবর্তনশীল, কোন কিছুই শ্বাশত নয়।

বৌদ্ধ ধর্মের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হল দুঃখ নিরোধগামীমার্গ। বুদ্ধের মতে 'নির্বাণ' হলো এমনই এক অবস্থা যেখানে ব্যক্তি সমস্ত জাগতিক কামনা বাসনার উপরে এমনই এক অবস্থা যেখানে পৌঁছালে আর পুনর্জন্ম হবেনা। নির্বাণ লাভের সাধনায় বুদ্ধ চারটি পর্বের কথা বলেছেনঃ ১.স্রোতাপন্ন ২. সকৃদাগামী ৩. অনাগামী ও ৪. অরহৎ। দুঃখ চূড়ান্তভাবে নিবারণের জন্য চরম ভোগবিলাস বা চরম আত্মনিগ্রহ দুটি পথই গ্রহণযোগ্য নয়, মাঝামাঝি পথ তথা মঝঝিম পন্থায় জীবনযাপন করলে দুঃখ নিবৃত্তি সম্ভব।

বৌদ্ধ দর্শনের মঝঝিম পন্থার পরিপূরক হলো অষ্টমার্গ। এই আটটি মার্গ হল-১. সৎ বাক্য ২. সৎকর্ম ৩. সৎ জীবীকা ৪. সৎ চেষ্টা ৫. সৎ চিন্তা ৬. সৎ চেতনা ৭. সৎ সংকল্প ও ৮. সৎ দৃষ্টি। এর মধ্যে প্রথম তিনটি দৈহিক সংযম, পরের তিনটি মানসিক সংযম এবং শেষ দুটি বুদ্ধির বিকাশ ঘটায়।

জৈন ধর্মের মতো বৌদ্ধধর্মেও অহিংসার ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। তবে এই অহিংসাবাদ জৈন ধর্মের মত অতটা কঠোর নয়। গৌতম বুদ্ধ প্রাণী হত্যা বন্ধ করার কথা বলেছিলেন। কিন্তু ততটা কঠোরতা দেখাননি। তাঁর অনেক শিশ্য মাংস খেতেন।

Thanks for reading.

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আরবদের সিন্ধু অভিযান | কারণ ও তাৎপর্য

আরবদের সিন্ধু অভিযান | কারণ ও তাৎপর্য Please visit our Homepage and subscribe us. Suggested Topics || Ghajnavid Invasion || গজনী আক্রমণ || || মামুদের সোমনাথ মন্দির লুণ্ঠন || Somnath Temple Plunder || || তরাইনের যুদ্ধ ও তার গুরুত্ত্ব || মহম্মদ ঘুরির ভারত আক্রমন ও তার চরিত্র || সপ্তম শতকের প্রথমার্ধে আরবদেশে ইসলামের আবির্ভাব ঘটে। ইসলাম আরবদের নতুন করে জীবনীশক্তির সঞ্চার করে । ইসলাম ক্রমশ: একটি ধর্ম থেকে রাজনৈতিক শক্তি রূপে আত্মপ্রকাশ করে। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় তারা আরবীয় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। ভারতবর্ষের সঙ্গে আরবদের যোগাযোগ দীর্ঘদিনের। বাণিজ্যিক সূত্রে তারা নিয়মিত ভারতের উপকূল গুলিতে, বিশেষ করে মালাবার উপকূলে আসত। ভারতীয় ও চীনা পণ্য 'ধাও' নামক বিশেষ জাহাজে করে নিয়ে তারা ইউরোপের বাজারে বিক্রি করত। 712 খ্রিস্টাব্দে ইরাকের গভর্নর হাজ্জাজ বিন ইউসুফ এর সেনাপতি ও জামাতা মোহাম্মদ বিন কাসেম সিন্ধু দেশে একটি সফল অভিযান করেন এবং সিন্ধুদেশ আরবীয় মুসলমানদের অধীনে চলে যায়। অভিযানের(প্রত্যক্ষ) কারণ ভারতবর্ষের প্রতি আরবদের দীর্ঘদিনের নজর ছিল। এর আ...

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ | Category of Archives

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ মহাফেজখানা বা লেখ্যাগারগুলি সাধারণ জনতার জন্য নয় মূলত গবেষক, ঐতিহাসিক, আইনবিদ, চিত্র পরিচালক প্রভৃতি পেশার লোকজন তাদের গবেষণার কাজে লেখ্যাগারে নথি পত্র দেখতে পারেন।  লেখ্যাগার পরিচালনা ও সংরক্ষিত নথির ভিত্তিতে লেখ্যাগগুলিকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়েছে।   1. সরকারি লেখ্যাগার:- কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার বা স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে যে লেখ্যাগারগুলি গড়ে ওঠে। সেগুলিকে সরকারি লেখ্যাগার বলা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এরকম সরকার পরিচালিত এক বা একাধিক লেখ্যাগার থাকে। যেমন, আমেরিকার Natonal Archive And records Administration (NARA)। ভারতবর্ষে র কেন্দ্রীয় লেখ্যাগার National Archive of India নামে পরিচিত। বিভিন্ন ঐতিহাসিক, প্রশাসনিক ও আইনগত নথি, মানচিত্র, নক্সা,  পাণ্ডুলিপি প্রভৃতি সংরক্ষিত থাকে। 2. বানিজ্যিক লেখ্যাগার:-  এটি একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানের লেখ্যাগার বিভিন্ন বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান   মূলত তাদের সংস্থার ঐতিহাসিক এবং বানিজ্যিক নথি সংরক্ষিত রাখে। যেমন, ভারতের প্রথম বানিজ্যিক লেখ্যাগার হলো পুনার Tata Centrel Archive। 3. অলাভজনক লেখ্যাগ...

ষোড়শ শতকীয় ইউরোপে মূল্যবিপ্লব | Price Revolution

 ষোড়শ শতকের ইউরোপে মূল্য বিপ্লব   16 শতাব্দীতে ইউরোপীয় অর্থনীতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো মূল্য বিপ্লব। নিত্যব্যবহার্য পণ্যের মূল্য প্রায় 150 বছর সুস্থির থাকার পর ঊর্ধ্বমুখী হতে আরম্ভ করে, এবং 16 শতাব্দীর শেষে খাদ্যপণ্যের মূল্যের প্রায় সাড়ে পাঁচ গুণ বেড়ে যায়। পশ্চিম ইউরোপের অর্থনীতিতে এমন অভাবনীয় এবং সুদুরপ্রসারী ফলাফলসম্পন্ন ঘটনা মূল্য বিপ্লব নামে পরিচিত। মূল্য বিপ্লবের কতগুলি সাধারণ বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। যথা--    (১) কৃষিজ পণ্যের তুলনায় শিল্পজাত পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি ছিল কম, এবং খাদ্যশস্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি। (২) ভূমি রাজস্ব সহ ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক, তোলা ইত্যাদির হার বৃদ্ধি এবং ফটকাবাজির আবির্ভাব। (৩) মূল্যবৃদ্ধির তুলনায় মজুরির হার খুবই কম ছিল বলে প্রকৃত আয় হ্রাস পেয়েছিল। (৪) ভূমি বিক্রয়যোগ্য পণ্যে পরিণত হওয়া। (৫) গ্রামীণ বুর্জোয়াজি শ্রেণীর আবির্ভাব। ষোড়শ শতকের আগেও প্রাকৃতিক কারণে মূল্যবৃদ্ধি হয়েছিল, তবে তা ছিল 2, 3 শতাংশের মতো, যা অস্বাভাবিক মনে হতো না। কিন্তু ষোল শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে যে নিরবিচ্ছিন্ন মূল্যবৃদ্ধি হ...