সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

আর্যদের বসতি বিস্তার । Aryan Settlement

 

আর্যদের বসতি বিস্তার 

উপমহাদেশের ইতিহাসে আর্য সংস্কৃতি গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য বিষয়। আর্যরা মোটামুটি 1500 BC থেকে ভারতে বসতি গড়তে শুরু করে। ভাষাতাত্ত্বিক গবেষণায় এটা নিশ্চিত যে আর্যরা বহিরাগত। অধ্যাপক ব্রান্ডেস্টাইন দেখিয়েছেন যে আর্যদের আদি বাসস্থান কিরঘিজস্তান তৃণভূমি এলাকায়। সেখান থেকে একটি শাখা ইরানে এবং ইরান থেকে ভারতে চলে আসে। আর্যরা ভারতে এসেছিল মাইগ্রেসান এর মধ্য দিয়ে, কোনো সামরিক অভিযানের মাধ্যমে নয়। প্রাথমিক স্তরে আর্যরা পশুপালক জীবনে অভ্যস্ত ছিল। 
আর্যদের প্রথম 500 বছর সময়কাল ঋক বৈদিক যুগ নামে পরিচিত। ঐ সময় ঋকবেদ রচিত হয়েছিল। ঋকবেদ কেবল ভারতের নয়, সমগ্র ইন্দো ইউরোপীয় ভাষার প্রথম সাহিত্য। ঋকবেদ থেকে জানা যায় উপমহাদেশের উত্তর-পশ্চিম দিকে আর্যরা প্রথম বসতি স্থাপন করেছিল। ঋকবেদে বারবার সিন্ধুনদকে  'নদীশ্রেষ্ঠ' এবং ' মাতাশ্রেষ্ঠ' বলা হয়েছে।  বিস্ময়ের কথা গঙ্গা ও যমুনার নাম মাত্র একবার উল্লেখিত হয়েছে, তাও একেবারে শেষ্‌ দশম মন্ডলের নদীস্তুতিতে।  সিন্ধুর উপনদীগুলির বারবার উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু অক্ষু ও আমুদরিয়ার উল্লেখ নেই। সিন্ধুর পূর্ববর্তী উপনদীগুলির নাম বিতস্তা, আসিকনি,  রাভী ও শতদ্রু। পশ্চিম দিকের উপনদীগুলি হল সরস্বতী, সরযূ, রসা, কুভা, ক্রুমু, সুবাস্তু ও গোমতি।  এর মধ্যে বিতর্কিত নদীটি হল সরস্বতী, যার মাহাত্ম্যের কথা বলা হয়েছে  ঋকবেদে। অনেকে মনে করেন এই নদীটি জেন্দ -আবেস্তার হরখবৈতি। বর্তমানে আফগানিস্তানের  অরঘন্দ - হেলমন্দ। কিন্তু ঋকবেদে সরস্বতীকে সমুদ্রগামী নদী বলা হয়েছে। ইরফান হাবিব বলেছেন সরস্বতী ক্ষুদ্র ও গৌন একটি নদী। এর উৎস শিবালিক পর্বতে। পবিত্রতার জন্য নদীটি ঋকবেদে স্থান পেয়েছে।

 উপরোক্ত আলোচনা থেকে বলা যায় ঋকবেদের ভৌগোলিক পরিমণ্ডল ছিল আধুনিক আফগানিস্তান, পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের দুই পাঞ্জাব এবং নিম্ন সিন্ধু উপত্যকা। সম্ভবত সিন্ধু ও তার পূর্ব দিকের উপনদীগুলি দ্বারা বিধৌত অঞ্চল হল ঋকবেদে কথিত সপ্তসিন্ধু অঞ্চল।

Aryan Settlement in the Rigvedic Period

The history of the Aryan culture in the Indian subcontinent is a significant and debatable subject. The Aryans are believed to have started settling in India around 1500 BC. Linguistic research indicates that the Aryans originated externally. Professor Brandenstein suggests that the original homeland of the Aryans was the region of Kirghizstan in the grasslands. From there, one branch moved to Iran and then to India. The Aryans came to India through migration, not through any military campaign. In the initial stages, the Aryans were primarily engaged in pastoral life.

The first 500 years of Aryan history are known as the Rig Vedic period. During this time, the Rig Veda was composed, which is not only the first literature of India but the earliest literature of all Indo-European languages. According to the Rig Veda, the Aryans first established settlements in the northwest of the Indian subcontinent. The Rig Veda repeatedly mentions the Sindhu River as the "greatest river" and the "mother of rivers." The mention of the Ganga and Yamuna rivers occurs only once, in the hymns of the last Chapter. The eastern side tributary rivers of the Sindhu mentioned are Vitasta, Asikni, Rabhii, and Sutudri. The tributary rivers in the western part are Sarasvati, Sarayu, Rasa, Kubha, Krumu, Subastu, and Gomati. The controversial river is Sarasvati, praised in the Rig Veda as a mighty river but not mentioned in the Avesta. Some believe Sarasvati is the Helmand River in present-day Afghanistan. However, Irfan Habib suggests Sarasvati was a minor, seasonal river originating in the Shivalik Range.

Based on the above discussion, it can be inferred that the Rig Vedic geographical sphere was modern Afghanistan, the northwest frontier of Pakistan, and the two Punjabs. The Area riverined by the Indus and its eastern tributaries is probably referred to as the "Saptasindhu" region in the Rigveda.

Thanks for reading.

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আরবদের সিন্ধু অভিযান | কারণ ও তাৎপর্য

আরবদের সিন্ধু অভিযান | কারণ ও তাৎপর্য Please visit our Homepage and subscribe us. Suggested Topics || Ghajnavid Invasion || গজনী আক্রমণ || || মামুদের সোমনাথ মন্দির লুণ্ঠন || Somnath Temple Plunder || || তরাইনের যুদ্ধ ও তার গুরুত্ত্ব || মহম্মদ ঘুরির ভারত আক্রমন ও তার চরিত্র || সপ্তম শতকের প্রথমার্ধে আরবদেশে ইসলামের আবির্ভাব ঘটে। ইসলাম আরবদের নতুন করে জীবনীশক্তির সঞ্চার করে । ইসলাম ক্রমশ: একটি ধর্ম থেকে রাজনৈতিক শক্তি রূপে আত্মপ্রকাশ করে। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় তারা আরবীয় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। ভারতবর্ষের সঙ্গে আরবদের যোগাযোগ দীর্ঘদিনের। বাণিজ্যিক সূত্রে তারা নিয়মিত ভারতের উপকূল গুলিতে, বিশেষ করে মালাবার উপকূলে আসত। ভারতীয় ও চীনা পণ্য 'ধাও' নামক বিশেষ জাহাজে করে নিয়ে তারা ইউরোপের বাজারে বিক্রি করত। 712 খ্রিস্টাব্দে ইরাকের গভর্নর হাজ্জাজ বিন ইউসুফ এর সেনাপতি ও জামাতা মোহাম্মদ বিন কাসেম সিন্ধু দেশে একটি সফল অভিযান করেন এবং সিন্ধুদেশ আরবীয় মুসলমানদের অধীনে চলে যায়। অভিযানের(প্রত্যক্ষ) কারণ ভারতবর্ষের প্রতি আরবদের দীর্ঘদিনের নজর ছিল। এর আ

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ | Category of Archives

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ মহাফেজখানা বা লেখ্যাগারগুলি সাধারণ জনতার জন্য নয় মূলত গবেষক, ঐতিহাসিক, আইনবিদ, চিত্র পরিচালক প্রভৃতি পেশার লোকজন তাদের গবেষণার কাজে লেখ্যাগারে নথি পত্র দেখতে পারেন।  লেখ্যাগার পরিচালনা ও সংরক্ষিত নথির ভিত্তিতে লেখ্যাগগুলিকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়েছে।   1. সরকারি লেখ্যাগার:- কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার বা স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে যে লেখ্যাগারগুলি গড়ে ওঠে। সেগুলিকে সরকারি লেখ্যাগার বলা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এরকম সরকার পরিচালিত এক বা একাধিক লেখ্যাগার থাকে। যেমন, আমেরিকার Natonal Archive And records Administration (NARA)। ভারতবর্ষে র কেন্দ্রীয় লেখ্যাগার National Archive of India নামে পরিচিত। বিভিন্ন ঐতিহাসিক, প্রশাসনিক ও আইনগত নথি, মানচিত্র, নক্সা,  পাণ্ডুলিপি প্রভৃতি সংরক্ষিত থাকে। 2. বানিজ্যিক লেখ্যাগার:-  এটি একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানের লেখ্যাগার বিভিন্ন বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান   মূলত তাদের সংস্থার ঐতিহাসিক এবং বানিজ্যিক নথি সংরক্ষিত রাখে। যেমন, ভারতের প্রথম বানিজ্যিক লেখ্যাগার হলো পুনার Tata Centrel Archive। 3. অলাভজনক লেখ্যাগার:-   কোনো ব্যাক্তিগত বা অলাভজনক

ষোড়শ শতকীয় ইউরোপে মূল্যবিপ্লব | Price Revolution

 ষোড়শ শতকের ইউরোপে মূল্য বিপ্লব   16 শতাব্দীতে ইউরোপীয় অর্থনীতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো মূল্য বিপ্লব। নিত্যব্যবহার্য পণ্যের মূল্য প্রায় 150 বছর সুস্থির থাকার পর ঊর্ধ্বমুখী হতে আরম্ভ করে, এবং 16 শতাব্দীর শেষে খাদ্যপণ্যের মূল্যের প্রায় সাড়ে পাঁচ গুণ বেড়ে যায়। পশ্চিম ইউরোপের অর্থনীতিতে এমন অভাবনীয় এবং সুদুরপ্রসারী ফলাফলসম্পন্ন ঘটনা মূল্য বিপ্লব নামে পরিচিত। মূল্য বিপ্লবের কতগুলি সাধারণ বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। যথা--    (১) কৃষিজ পণ্যের তুলনায় শিল্পজাত পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি ছিল কম, এবং খাদ্যশস্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি। (২) ভূমি রাজস্ব সহ ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক, তোলা ইত্যাদির হার বৃদ্ধি এবং ফটকাবাজির আবির্ভাব। (৩) মূল্যবৃদ্ধির তুলনায় মজুরির হার খুবই কম ছিল বলে প্রকৃত আয় হ্রাস পেয়েছিল। (৪) ভূমি বিক্রয়যোগ্য পণ্যে পরিণত হওয়া। (৫) গ্রামীণ বুর্জোয়াজি শ্রেণীর আবির্ভাব। ষোড়শ শতকের আগেও প্রাকৃতিক কারণে মূল্যবৃদ্ধি হয়েছিল, তবে তা ছিল 2, 3 শতাংশের মতো, যা অস্বাভাবিক মনে হতো না। কিন্তু ষোল শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে যে নিরবিচ্ছিন্ন মূল্যবৃদ্ধি হয়েছিল তা জনজীবনে তীব্রভ