আর্য সমস্যা | আর্যদের আদি বাসস্থান
আর্য বলতে কোনো জাতিকে বোঝায়না। আর্য একটি ভাষা গোষ্ঠীর নাম। সংস্কৃত, গ্রিক, ল্যাটিন, গথিক, কেলটিক, জার্মান প্রভৃতি ভাষাগুলি কোনো একটি ভাষা থেকে উদ্ভূত হয়েছে। ভাষাতাত্ত্বিকরা এদের জননী ভাষাকে ইন্দো ইউরোপীয় ভাষা বলে অভিহিত করেছেন এবং তার রূপ ও কাঠামো পুনর্গঠন করার চেষ্টা করেছেন। ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত যে কোনো মানুষই আর্য নামে পরিচিত।
উনিশ শতকে বিশ্বব্যাপী সাম্রাজ্যবাদের যুগে প্রতিটি সাম্রাজ্যবাদী শক্তি নিজেকে শ্রেষ্ঠ এবং অপরকে নিকৃষ্ট জাতি বলে প্রচার করতে থাকে। সভ্য জাতি অসভ্য জাতির উপর প্রভুত্ব করবে এটাই ছিল উপনিবেশ স্থাপনের পেছনে যুক্তি। যেহেতু আর্যরা সভ্যতার স্রষ্টা বলে মনে করা হত তাই বিভিন্ন সাম্রাজ্যবাদী শক্তি নিজের দেশকে আর্যদের আদি বাসস্থান বলে দাবি করতে থাকে। সভ্যতার স্রষ্টার দাবি নিয়ে এই কড়াকড়ি আর্য সমস্যা নামে পরিচিত।
অধ্যাপক জাইলস ইন্দো-ইউরোপীয়দের আদিভূমির সন্ধানে তুলনামূলক ভাষাতত্ত্বের সন্ধানে বার্চ গাছ ও তার সমতুল্য শব্দের আলোচনা করেছেন। তিনি ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষার উৎস হিসেবে অনুমান করেছেন এমন একটি জায়গা যেখানে নিয়মিত বার্চ গাছ দেখা যায় এবং তার সিদ্ধান্তে সেই জায়গাটি হল বর্তমান হাঙ্গেরি এলাকা। অধ্যাপক ব্র্যান্ডেনস্টাইন জাইলসের মতবাদকে খারিজ করে দিয়েছেন। কারণ শব্দ একই থাকলেও তার অর্থ পাল্টে পাল্টে যায়। তাই বার্চ শব্দটি দ্বারা সবকালেই যে বার্চ গাছকেই বোঝাবে তা সঠিকভাবে বলা যায়না।
কয়েকজন ভারতীয় পন্ডিত গঙ্গানাথ ঝা, বি বি লাল প্রমুখ উপমহাদেশের উত্তর-পশ্চিম অংশকে ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠীর আদি বাসভূমি বলে দাবি করেছেন। তাদের মতে ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষার প্রাচীনতম সাহিত্য ঋগ্বেদ এবং এটি উপমহাদেশে রচিত। উপমহাদেশ আর্যদের আদি বাসস্থান এই মত গ্রহণ করা যায় না। কারণ ঋকবেদে অন্তত ৩০০ টি দ্রাবিড় ও মুন্ডারী শব্দ আছে। এই দুই প্রকার শব্দ ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষার অন্তর্ভুক্ত নয় বরং তার থেকেও প্রাচীন। ইন্দো- ইউরোপীয় ভাষা যদি উপমহাদেশ থেকে এশিয়ার বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়তো তবে মূর্ধন্য ধ্বনি ব্যবহার সঙ্গে নিয়ে যেত কিন্তু সংস্কৃত ব্যতীত অন্য কোন ইউরোপীয় ভাষায় মূর্ধন্য ধ্বনির ব্যবহার নেই।
ঋকবেদ ও আবেস্তার মধ্যে আশ্চর্যরকম ভাষাতাত্ত্বিক ও সাংস্কৃতিক মিল পাওয়া গেছে। কিন্তু আরাধ্য দেবতার মধ্যে বৈপরিত্য আছে। ঋকবেদে যে দেবতা পূজনীয় আবেস্তায় সেই দেবতা নিন্দনীয়। বেদে অসুর নিন্দনীয় কিন্তু আবেস্তায় অহুর / অসুর হলেন মুখ্য দেবতা। এর থেকে অনুমান করা হয় খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় সহস্রাব্দের মধ্যভাগ নাগাদ ইন্দো-আর্য ও ইন্দো ইরানীয় সংস্কৃতি একটিই সংস্কৃতি ছিল। তারপর কোন একটি কারণে বিবাদ হয় এবং একটি গোষ্ঠী ইরান থেকে ভারতে চলে আসে।
অবিভক্ত ইন্দো- ইরানীয় ভাষা ব্যবহারকারী কোথা থেকে এসেছিলেন তা নিয়েও বিতর্ক আছে। এডওয়ার্ড মায়ার পামির এলাকাকে চিহ্নিত করেছেন। হের্জফেল্ড চিহ্নিত করেছেন আমুদরিয়া ও শিরদরিয়া বিধৌত সমভূমি এলাকাকে। তবে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য মতামত এসেছে অধ্যাপক ব্যান্ডেনস্টাইন -এর লেখা থেকে। তিনি দেখিয়েছেন ইন্দো-ইউরোপীয় শব্দভাণ্ডারের পশুচারণকারী, অশ্ব পালক, রথ জাতীয় দ্রুত ধাবমান শকট ব্যবহারকারী যে সমাজের পরিচয় পাওয়া যায় তারা অন্তত কৃষিজীবী ছিলেন না। তারা প্রধানত তৃণভূমি সঙ্গে অধিকতর পরিচিত ছিলেন। তাই ব্র্যান্ডেনস্টাইন অনুমান করেছেন, প্রাক্তন সোভিয়েত ইউনিয়নের উরাল পর্বতের দক্ষিণাস্ত শুষ্ক তৃণাচ্ছাদিত সমভূমি বা স্তেপ এলাকা ছিল ইন্দো ইউরোপীয় ভাষা ব্যবহারকারীদের প্রাথমিক এলাকা।
অর্থাৎ মধ্য এশিয়ার তৃণাঞ্চল থেকে অভিবাসনের একটি ধারা পশ্চিম এশিয়ায় যায় অপরটি যায় ইউরোপের অভিমুখে। খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০ অব্দের কিছু আগে ইন্দো-ইরানীয় ভাষা ব্যবহারকারীর মধ্যে আরেকটি বিভাজন ঘটে। একটি শাখা ইরানীয় শাখা হিসেবে পশ্চিম এশিয়ায় রয়ে গেল আরেকটি শাখা ইন্দো-আর্য হিসেবে উপমহাদেশে প্রবেশ করল।
Aryan Problem | Homeland of Aryan's People
"Arya" doesn't specifically refer to any particular ethnicity. Arya is the name of a linguistic group. Sanskrit, Greek, Latin, Gothic, Celtic, Germanic, and other languages are believed to have originated from a common source, Arya. Linguists have termed their parent language the Indo-European language and attempted to reconstruct its form and structure. Anyone belonging to the Indo-European linguistic group is known as Arya.
In the 19th century, during the era of global imperialism, each imperial power propagated the idea of being superior and considered other nations as inferior. The notion that civilized nations would dominate uncivilized ones became the justification for colonization. Since the Aryans were considered the founders of civilization, various imperial powers claimed their own country as the original homeland of the Aryans. This claim led to what is known as the Aryan problem.
Professor Xyles, in comparative linguistics research to find the homeland of the Indo-Europeans, discussed the birch tree and its equivalent word in various languages. He speculated a place where the birch tree is regularly found, pointing to present-day Hungary. However, Professor Brandenstein rejected this idea because, even though the word for birch is the same, its meaning can change. Therefore, using the word "birch" may not accurately indicate the birch tree then.
Some Indian scholars, like Ganganath Jha and B.B. Lal, claim that the northwest region of the Indian subcontinent is the original homeland of the Indo-European linguistic group. According to them, the most ancient literature of the Indo-European languages, the Rigveda, was composed in this region. However, this theory is contested, as the Rigveda contains at least 300 Dravidian and Mundari words, which are not part of the Indo-European languages. If the Indo-European languages spread from the subcontinent to various regions in Asia, then with the use of retroflex sounds, they went eastward. However, except for Sanskrit, no other European language uses retroflex sounds.
The Rigveda and Avesta present astonishing linguistic and cultural similarities. Still, there are differences, especially in the worshipped deities. In the Rigveda, the deities praised are censured in the Avesta. In the Vedas, the Asuras are criticized, but in the Avesta, Ah(s)ura/Ah(s)uramazda is the chief deity. From this, it is inferred that around the middle of the second millennium BCE, the Indo-Aryans and the Indo-Iranians were one culture. After some dispute, a group went from Iran to India.
The exact origin of Indo-Iranian language users is also debated. Edward Meyer identified the Pamir region, while Hersfeld pinpointed the Amu Darya and Syr Darya river valleys. The most widely accepted viewpoint is from Brandenstein, who derives his theory from linguistic evidence. He has observed that those identified in the Indo-European lexicon as cattle-rearers, horse-keepers, and users of fast chariots belonged to societies that were not primarily agrarian. They were more familiar with tracts of land dominated by grass rather than cultivated soil. Therefore, Brandenstein speculates that the dry steppe region south of the Ural Mountains, located in the southern part of the former Soviet Union, was the primary homeland of the Indo-European language users. This area is characterized by dry grasslands or steppes. According to him, this region served as the ancestral homeland for Indo-European language users before they migrated, with some groups moving westward to Europe and others eastward to India.
So a stream of migration from the Central Asian steppe region moves westward to Europe, while another goes eastward facing towards India from the Central Asian region. Some divisions among Indo-Iranian language users occurred around 1500 BCE. One branch headed westward, becoming an Iranian branch in Western Asia, and the other, identified as Indo-Aryans, migrated into the Indian subcontinent.
Thanks for reading.
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন