সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

Sources of Ancient Indian History: Archaeological : Coin | প্রাচীন ভারতের ইতিহাস উদ্ঘাটনে মুদ্রা

প্রাচীন ভারতের ইতিহাস উদঘাটনে মুদ্রার ভূমিকা কি ছিল?

নির্দিষ্ট ওজন বিশিষ্ট, ধাতব বিশুদ্ধিযুক্ত ধাতুর খন্ড যদি বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হয় তাকে মুদ্রা বলা হয়। মোটামুটি খ্রিস্টপূর্ব ৫ম -৬ষ্ঠ শতকে ভারতে মুদ্রা চালু হয়। এগুলি বিভিন্ন আকৃতিযুক্ত এবং এর একপিঠ ছাপওয়ালা। এগুলিকে অঙ্কচিহ্নিত মুদ্রা বলে। কোন রাজার নাম নেই বলে কে বা কারা জারি করেছিল তা বলা যায় না। শাসকের নাম ও প্রতিকৃতি যুক্ত মুদ্রা চালু হয় খ্রিস্টপূর্ব ২য় শতকে ব্যাকট্রিয় গ্রিক রাজাদের দ্বারা। প্রথম দিকের মুদ্রাগুলি ছিল তামা ও রুপোর। কুষাণ রাজা কদফিসিসের আমলে সোনার মুদ্রার আবির্ভাব হয়।

প্রাচীন ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাস জানার ক্ষেত্রে মুদ্রা বিশেষ সহযোগী। যে রাজা মুদ্রা জারি করেন তিনি সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী। মৌর্যদের পরে উত্তর-পশ্চিম ভারতের যে গ্রিক রাজারা রাজত্ব করেছিলেন তাদের সম্পর্কে জানার একমাত্র উপাদান হল তাদের জারি করা মুদ্রা। ১ম - ২য় খ্রিষ্টাব্দে শক ও সাতবাহনদের মধ্যে দ্বন্দ্ব হয়েছিল এবং সাতবাহনরা শকদের পরাজিত করেছিল। লিপির পাশাপাশি জোগলথম্বী হোর্ড থেকে এর প্রমাণ পাওয়া যায়। কারণ এখানকার মুদ্রাগুলি শক রাজা নহপানের এবং পরে এগুলির ওপর গৌতমীপুত্রের মুদ্রার নকশার ছাপ মারা হয়। গুপ্ত সম্রাট দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের মুদ্রায় রাজার সিংহ শিকারি ছবি উৎকীর্ণ হয়েছে। সিংহ যেহেতু গুজরাটে পাওয়া যায় তাই অনুমান করা যায় যে তিনি গুজরাট জয় করেছেন। চন্দ্রগুপ্তের শক দমনের কথা জানা যায় তার শক রৌপ‍্য মুদ্রার আদলে নিজের রৌপ্যমুদ্রা তৈরি করার মধ্য দিয়ে।

অর্থনৈতিক ইতিহাস চর্চায় মুদ্রার গুরুত্ব অনস্বীকার্য। মুদ্রার অস্তিত্ব সেই সমাজে বাণিজ্যের অগ্রগতির পরিচয় দেয়। মুদ্রা ওজন এবং ধাতব বিশুদ্ধিতা রাজকোষের অবস্থার পরিচায়ক। স্কন্দগুপ্তের পরবর্তী গুপ্ত রাজাদের সময় মুদ্রায় খাদের পরিমাণ বেড়েছিল অর্থাৎ গুপ্তরা শেষদিকে অর্থনৈতিক সংকটে পড়ে ছিল। ভারতে প্রচুর রোমক মুদ্রা পাওয়া গেছে, যা রোম-ভারত বাণিজ্যের সংকেত দেয়। খ্রিস্টীয় সপ্তম শতক থেকে মুদ্রার পরিমাণ কমে যাচ্ছিল। এর থেকে রামশরণ শর্মা, ডি.ডি. কোসাম্বি প্রমুখ সিদ্ধান্তে এসেছেন যে ওই সময়ে বাণিজ্য কমে আসছিল।

রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ইতিহাস ছাড়াও ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক ইতিহাস চর্চায় মুদ্রা সহায়ক হয়। মুদ্রায় যে দেবদেবীর মূর্তি উৎকীর্ণ থাকে রাজা সেই দেবদেবীর উপাসক হতে পারেন বা সেইসময় ঐ দেবদেবীর উপাসনায প্রচলিত থাকতে পারে। মূর্তিতত্ত্বের গবেষণায় বা ভাস্কর্যশিল্পের ইতিহাস চর্চায় মুদ্রায় উৎকীর্ণ প্রতিকৃতি বিশেষভাবে ব্যবহৃত হয়।

What was the role of coins in unearthing the history of ancient India?

A coin or "Mudra" is a piece of metal with purity and made of a specific weight, which is used as a medium of exchange. Coins were first used in India around the 5th to 6th century BC. These coins came in various shapes and had inscriptions on one side. They are called "punch-marked coins." It is often difficult to determine who issued these coins or under whose authority these were issued because these did not bear the name of any ruler. Coins with the ruler's name and image started being issued in the 2nd century BC by the Indo-Greek rulers. The earliest coins were made of copper and silver. The use of gold coins began during the reign of the Kushan ruler Kanishka.

Coins played a significant role in understanding the political history of ancient India. Kings who issued coins held supreme authority. After the Mauryas, Greek rulers in North-Western India were known only through their issued coins. In the 1st to 2nd century AD, there was a conflict between the Shakas and Satavahanas, with the Satavahanas emerging victorious. Evidence for this is found in inscriptions as well as from the Joglathambi hoard. Because the coins here belong to Shaka ruler Nahapana and later Gautamiputra's coin designs were impressed on them.. Skandagupta, a Gupta emperor, is known for issuing coins with images of a lion hunt, suggesting his victory in Gujarat. Chandragupta's suppression of Shaka is known by minting his own silver coins modeled on Shaka's silver coins.

In the realm of economic history, coins are indispensable. The existence of currency indicates the progress of trade in that society. The weight standard and  metal purity of coins indicate the state of the treasury. The quantity of coins increased during the Gupta dynasty, signifying economic prosperity. India also received Roman coins, which served as symbols of Indo-Roman trade. However, the quantity of coins decreased from the 7th century AD onwards, indicating a decline in commerce, as suggested by scholars like Ram Sharan Sharma Sharma and D.D. Kosambi.

Besides political and economic history, coins also play a significant role in unearthing religious and cultural history. Coins with depictions of deities could indicate the spiritual practices of the time. Images on coins have been instrumental in the study of iconography and the history of sculpture.

Overall, coins offer valuable insights into various aspects of ancient Indian history, including politics, economics, religion, and culture.

Suggested for you

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আরবদের সিন্ধু অভিযান | কারণ ও তাৎপর্য

আরবদের সিন্ধু অভিযান | কারণ ও তাৎপর্য Please visit our Homepage and subscribe us. Suggested Topics || Ghajnavid Invasion || গজনী আক্রমণ || || মামুদের সোমনাথ মন্দির লুণ্ঠন || Somnath Temple Plunder || || তরাইনের যুদ্ধ ও তার গুরুত্ত্ব || মহম্মদ ঘুরির ভারত আক্রমন ও তার চরিত্র || সপ্তম শতকের প্রথমার্ধে আরবদেশে ইসলামের আবির্ভাব ঘটে। ইসলাম আরবদের নতুন করে জীবনীশক্তির সঞ্চার করে । ইসলাম ক্রমশ: একটি ধর্ম থেকে রাজনৈতিক শক্তি রূপে আত্মপ্রকাশ করে। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় তারা আরবীয় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। ভারতবর্ষের সঙ্গে আরবদের যোগাযোগ দীর্ঘদিনের। বাণিজ্যিক সূত্রে তারা নিয়মিত ভারতের উপকূল গুলিতে, বিশেষ করে মালাবার উপকূলে আসত। ভারতীয় ও চীনা পণ্য 'ধাও' নামক বিশেষ জাহাজে করে নিয়ে তারা ইউরোপের বাজারে বিক্রি করত। 712 খ্রিস্টাব্দে ইরাকের গভর্নর হাজ্জাজ বিন ইউসুফ এর সেনাপতি ও জামাতা মোহাম্মদ বিন কাসেম সিন্ধু দেশে একটি সফল অভিযান করেন এবং সিন্ধুদেশ আরবীয় মুসলমানদের অধীনে চলে যায়। অভিযানের(প্রত্যক্ষ) কারণ ভারতবর্ষের প্রতি আরবদের দীর্ঘদিনের নজর ছিল। এর আ

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ | Category of Archives

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ মহাফেজখানা বা লেখ্যাগারগুলি সাধারণ জনতার জন্য নয় মূলত গবেষক, ঐতিহাসিক, আইনবিদ, চিত্র পরিচালক প্রভৃতি পেশার লোকজন তাদের গবেষণার কাজে লেখ্যাগারে নথি পত্র দেখতে পারেন।  লেখ্যাগার পরিচালনা ও সংরক্ষিত নথির ভিত্তিতে লেখ্যাগগুলিকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়েছে।   1. সরকারি লেখ্যাগার:- কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার বা স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে যে লেখ্যাগারগুলি গড়ে ওঠে। সেগুলিকে সরকারি লেখ্যাগার বলা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এরকম সরকার পরিচালিত এক বা একাধিক লেখ্যাগার থাকে। যেমন, আমেরিকার Natonal Archive And records Administration (NARA)। ভারতবর্ষে র কেন্দ্রীয় লেখ্যাগার National Archive of India নামে পরিচিত। বিভিন্ন ঐতিহাসিক, প্রশাসনিক ও আইনগত নথি, মানচিত্র, নক্সা,  পাণ্ডুলিপি প্রভৃতি সংরক্ষিত থাকে। 2. বানিজ্যিক লেখ্যাগার:-  এটি একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানের লেখ্যাগার বিভিন্ন বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান   মূলত তাদের সংস্থার ঐতিহাসিক এবং বানিজ্যিক নথি সংরক্ষিত রাখে। যেমন, ভারতের প্রথম বানিজ্যিক লেখ্যাগার হলো পুনার Tata Centrel Archive। 3. অলাভজনক লেখ্যাগার:-   কোনো ব্যাক্তিগত বা অলাভজনক

ষোড়শ শতকীয় ইউরোপে মূল্যবিপ্লব | Price Revolution

 ষোড়শ শতকের ইউরোপে মূল্য বিপ্লব   16 শতাব্দীতে ইউরোপীয় অর্থনীতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো মূল্য বিপ্লব। নিত্যব্যবহার্য পণ্যের মূল্য প্রায় 150 বছর সুস্থির থাকার পর ঊর্ধ্বমুখী হতে আরম্ভ করে, এবং 16 শতাব্দীর শেষে খাদ্যপণ্যের মূল্যের প্রায় সাড়ে পাঁচ গুণ বেড়ে যায়। পশ্চিম ইউরোপের অর্থনীতিতে এমন অভাবনীয় এবং সুদুরপ্রসারী ফলাফলসম্পন্ন ঘটনা মূল্য বিপ্লব নামে পরিচিত। মূল্য বিপ্লবের কতগুলি সাধারণ বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। যথা--    (১) কৃষিজ পণ্যের তুলনায় শিল্পজাত পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি ছিল কম, এবং খাদ্যশস্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি। (২) ভূমি রাজস্ব সহ ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক, তোলা ইত্যাদির হার বৃদ্ধি এবং ফটকাবাজির আবির্ভাব। (৩) মূল্যবৃদ্ধির তুলনায় মজুরির হার খুবই কম ছিল বলে প্রকৃত আয় হ্রাস পেয়েছিল। (৪) ভূমি বিক্রয়যোগ্য পণ্যে পরিণত হওয়া। (৫) গ্রামীণ বুর্জোয়াজি শ্রেণীর আবির্ভাব। ষোড়শ শতকের আগেও প্রাকৃতিক কারণে মূল্যবৃদ্ধি হয়েছিল, তবে তা ছিল 2, 3 শতাংশের মতো, যা অস্বাভাবিক মনে হতো না। কিন্তু ষোল শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে যে নিরবিচ্ছিন্ন মূল্যবৃদ্ধি হয়েছিল তা জনজীবনে তীব্রভ