সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

Khalji Revolution | খলজি বিপ্লব

খলজি বিপ্লব

জালাল উদ্দিন খলজি নেতৃত্বে খলজীগন ইলবারি তুর্কিদের বিরুদ্ধে জয় লাভ করলে ইলবারি তুর্কিদের হাত থেকে দিল্লির ক্ষমতা খলজি বংশের হাতে হস্তান্তরিত হয় ( ১২৯০ খৃঃ )। বলবনের পুত্র কায়কোবাদকে পরাস্ত করে খলজীরা ক্ষমতা দখল করেছিল। দিল্লিতে খলজীদের এই ক্ষমতা দখলকে আর. পি. ত্রিপাঠী ও এস কে লাল প্রমূখ ঐতিহাসিক 'খলজি বিপ্লব' নামে অভিহিত করেছেন।

খলজি গণ তুর্কি বংশোদ্ভূত ছিল কিনা তা নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে বিতর্ক আছে। জিয়াউদ্দিন বারানী খলজি গনকে তুর্কি জাতি থেকে সম্পূর্ণ পৃথক ও স্বতন্ত্র বলে উল্লেখ করেছেন।ঐতিহাসিক নিজামুদ্দিন মনে করেন খলজীরা চেঙ্গিস খানের জামাতা কুলিজ খানের বংশধর। তবে অধিকাংশ ঐতিহাসিক মনে করেন খলজীরা তুর্কিদের একটি শাখা। আফগানিস্তানের হেলমন্দ নদীর উভয় তীর খলজ নামে পরিচিত ছিল। এখানে যেসব খলজীরা বসবাস করত তারা খলজী নামে পরিচিত হয়। দীর্ঘদিন আফগানিস্তানে থাকার ফলে এদের ভিতর আফগানি বৈশিষ্ট লক্ষ্য করা গেছিল।   

তাবকত-ই-নাসিরি থেকে জানা যায়, খলজীগন সুলতান মাহমুদ ও মোহাম্মদ ঘরির সময় থেকেই ভারতে এসেছিলেন। তারা ধীরে ধীরে তুর্কি সুলতানদের অধীনে চাকরি গ্রহণ করেন, জালাল উদ্দিন খলজি সার-ই-জান্দার এর মত গুরুত্বপূর্ণ পদে নিযুক্ত হয়েছিলেন। পরে তিনি সামানা প্রদেশের শাসক পদে নিযুক্ত হয়েছিলেন। তিনি মঙ্গল আক্রমণের বিরুদ্ধে বিশেষ কৃতিত্ব দেখালে, শায়েস্তা খান উপাধিতে ভূষিত হন। কায়কোবাদের সময় জালাল উদ্দিন সেনা বিভাগের মন্ত্রী নিযুক্ত হয়েছিলেন এবং এই সময় তিনি ছিলেন ভারতবর্ষের সমস্ত খলজি দের নেতা। তবে তার এই পদ লাভ তুর্কি আমীরগণ ভালো চোখে দেখেননি। এই পরিস্থিতিতে কায়কোবাদের অসুস্থতাকে কেন্দ্র করে খলজী ও তুর্কিদের মধ্যে চরম স্বার্থ সংঘাত দেখা দেয়। শেষ পর্যন্ত  জালাল উদ্দিন তুর্কিদের দুই নেতা কাচন ও সুরখা কে নিহত করে সমস্ত ক্ষমতা নিজে কুক্ষিগত করেছিলেন। এরপর তিনি কায়কোবাদ ও কায়ুমার্সকে হত্যা করে ১২৯০ খ্রিস্টাব্দে কিলোঘিরি প্রাসাদে সিংহাসনে বসেন।

এইভাবে ইলবারি তুর্কি শাসনের অবসান ঘটিয়ে জালালউদ্দিন ফিরোজ দিল্লিতে খলজি বংশের শাসনকাল এর সূচনা। খলজি গন কোন রাজ্ রক্তের অধিকারী ছিল না, তারা ছিল একেবারেই সাধারণ শ্রেণীভুক্ত। তাই তুর্কিদের সঙ্গে খলজীদের এই লড়াইয়ে অনেক ঐতিহাসিক শ্রেণিসংগ্রাম লক্ষ্য করেছেন। এছাড়া খলজীদের জয়লাভ এর সাথে সাথে ভারতীয় বংশোদ্ভূত মুসলমানদের রাজত্ব শুরু হয়। ডক্টর কে এস লাল বলেছেন "the revolution resulted in the supercession of commoner's government over that of the Blue blood". 

The Khalji Revolution

In 1290 CE, under the leadership of Jalal-ud-din Khalji, the Khaljis defeated the Ilbari Turks and seized power in Delhi, transferring authority from the Ilbari dynasty to the Khalji dynasty. They defeated Kayqubad, son of Balban, and established their dominance. Historians such as R. P. Tripathi and S. K. Lal have referred to this seizure of power by the Khaljis in Delhi as the "Khalji Revolution."

There is scholarly debate regarding the ethnic origins of the Khaljis—whether they were of Turkish descent. Ziauddin Barani stated that the Khaljis were completely distinct from the Turks. Historian Nizamuddin believed that the Khaljis were descendants of Kulij Khan, a son-in-law of Genghis Khan. However, most historians consider the Khaljis to be a branch of the Turks. The banks of the Helmand River in Afghanistan were known as Khalj, and the people who lived there were called Khaljis. Due to their long stay in Afghanistan, they had acquired several Afghan characteristics.

According to the Tabaqat-i-Nasiri, the Khaljis had been in India since the time of Sultan Mahmud of Ghazni and Muhammad Ghori. Gradually, they entered into service under the Turkish sultans. Jalal-ud-din Khalji had held high-ranking posts such as Sar-i-Jandar (Chief of the Royal Bodyguards), and later became the governor of the province of Samana. For his valor in defending against Mongol invasions, he was honored with the title Shayista Khan. During the reign of Kayqubad, Jalal-ud-din served as the minister of the army and was regarded as the leader of all Khaljis in India. However, his rise to such a powerful position was resented by the Turkish nobles.

At this point, a sharp conflict of interest arose between the Turks and the Khaljis, centered around the illness of Kayqubad. Eventually, Jalal-ud-din eliminated two key Turkish leaders, Kachhan and Surkha, and consolidated all power in his own hands. He subsequently ordered the killing of Kayqubad and his infant son Kayumars, and ascended the throne at the Kilokhari Palace in 1290 CE.

Thus, with the fall of Ilbari Turk rule, Jalal-ud-din Firuz laid the foundation of the Khalji dynasty in Delhi. The Khaljis did not possess royal lineage or "blue blood"; they emerged from humble and common backgrounds. Consequently, many historians have interpreted this conflict between the Turks and the Khaljis as a class struggle. Furthermore, the rise of the Khaljis marked the beginning of rule by Indian-born Muslims in the subcontinent. As Dr. K. S. Lal observed, “The revolution resulted in the supercession of commoners' government over that of the Blue blood.”

মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ | Category of Archives

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ মহাফেজখানা বা লেখ্যাগারগুলি সাধারণ জনতার জন্য নয় মূলত গবেষক, ঐতিহাসিক, আইনবিদ, চিত্র পরিচালক প্রভৃতি পেশার লোকজন তাদের গবেষণার কাজে লেখ্যাগারে নথি পত্র দেখতে পারেন।  লেখ্যাগার পরিচালনা ও সংরক্ষিত নথির ভিত্তিতে লেখ্যাগগুলিকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়েছে।   1. সরকারি লেখ্যাগার:- কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার বা স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে যে লেখ্যাগারগুলি গড়ে ওঠে। সেগুলিকে সরকারি লেখ্যাগার বলা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এরকম সরকার পরিচালিত এক বা একাধিক লেখ্যাগার থাকে। যেমন, আমেরিকার Natonal Archive And records Administration (NARA)। ভারতবর্ষে র কেন্দ্রীয় লেখ্যাগার National Archive of India নামে পরিচিত। বিভিন্ন ঐতিহাসিক, প্রশাসনিক ও আইনগত নথি, মানচিত্র, নক্সা,  পাণ্ডুলিপি প্রভৃতি সংরক্ষিত থাকে। 2. বানিজ্যিক লেখ্যাগার:-  এটি একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানের লেখ্যাগার বিভিন্ন বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান   মূলত তাদের সংস্থার ঐতিহাসিক এবং বানিজ্যিক নথি সংরক্ষিত রাখে। যেমন, ভারতের প্রথম বানিজ্যিক লেখ্যাগার হলো পুনার Tata Centrel Archive। 3. অলাভজনক লেখ্যাগ...

আরবদের সিন্ধু অভিযানঃ প্রত্যক্ষ কারণ ও তাৎপর্য | Arab Conquest of Sindh: Immediate Causes and Significance

আরবদের সিন্ধু অভিযানঃ প্রত্যক্ষ কারণ ও তাৎপর্য সপ্তম শতকের প্রথমার্ধে আরবদেশে ইসলামের আবির্ভাব ঘটে। ইসলাম আরবদের নতুন করে জীবনীশক্তির সঞ্চার করে । ইসলাম ক্রমশ: একটি ধর্ম থেকে রাজনৈতিক শক্তি রূপে আত্মপ্রকাশ করে। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় তারা আরবীয় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। ভারতবর্ষের সঙ্গে আরবদের যোগাযোগ দীর্ঘদিনের। বাণিজ্যিক সূত্রে তারা নিয়মিত ভারতের উপকূল গুলিতে, বিশেষ করে মালাবার উপকূলে আসত। ভারতীয় ও চীনা পণ্য 'ধাও' নামক বিশেষ জাহাজে করে নিয়ে তারা ইউরোপের বাজারে বিক্রি করত। 712 খ্রিস্টাব্দে ইরাকের গভর্নর হাজ্জাজ বিন ইউসুফ এর সেনাপতি ও জামাতা মোহাম্মদ বিন কাসেম সিন্ধু দেশে একটি সফল অভিযান করেন এবং সিন্ধুদেশ আরবীয় মুসলমানদের অধীনে চলে যায়। অভিযানের(প্রত্যক্ষ) কারণ ভারতবর্ষের প্রতি আরবদের দীর্ঘদিনের নজর ছিল। এর আগেও বহুবার ভারতের বিভিন্ন জায়গায় অভিযান পাঠানো হয়েছিল। তবে এই(712 খৃ:) অভিযানের একটি প্রত্যক্ষ কারণ ছিল। জানা যায় যে সিংহলের রাজা ইরাকের গভর্নর হাজ্জাজ বিন ইউসুফ কে কয়েকটি জাহাজে করে উপঢৌকন পাঠাচ্ছিলেন কিন্তু পথে সিন্ধু দেশের জলদস্যুরা দেবল বন্দরে এ...

ষোড়শ শতকীয় ইউরোপে মূল্যবিপ্লব | Price Revolution

 ষোড়শ শতকের ইউরোপে মূল্য বিপ্লব   16 শতাব্দীতে ইউরোপীয় অর্থনীতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো মূল্য বিপ্লব। নিত্যব্যবহার্য পণ্যের মূল্য প্রায় 150 বছর সুস্থির থাকার পর ঊর্ধ্বমুখী হতে আরম্ভ করে, এবং 16 শতাব্দীর শেষে খাদ্যপণ্যের মূল্যের প্রায় সাড়ে পাঁচ গুণ বেড়ে যায়। পশ্চিম ইউরোপের অর্থনীতিতে এমন অভাবনীয় এবং সুদুরপ্রসারী ফলাফলসম্পন্ন ঘটনা মূল্য বিপ্লব নামে পরিচিত। মূল্য বিপ্লবের কতগুলি সাধারণ বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। যথা--    (১) কৃষিজ পণ্যের তুলনায় শিল্পজাত পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি ছিল কম, এবং খাদ্যশস্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি। (২) ভূমি রাজস্ব সহ ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক, তোলা ইত্যাদির হার বৃদ্ধি এবং ফটকাবাজির আবির্ভাব। (৩) মূল্যবৃদ্ধির তুলনায় মজুরির হার খুবই কম ছিল বলে প্রকৃত আয় হ্রাস পেয়েছিল। (৪) ভূমি বিক্রয়যোগ্য পণ্যে পরিণত হওয়া। (৫) গ্রামীণ বুর্জোয়াজি শ্রেণীর আবির্ভাব। ষোড়শ শতকের আগেও প্রাকৃতিক কারণে মূল্যবৃদ্ধি হয়েছিল, তবে তা ছিল 2, 3 শতাংশের মতো, যা অস্বাভাবিক মনে হতো না। কিন্তু ষোল শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে যে নিরবিচ্ছিন্ন মূল্যবৃদ্ধি হ...