সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

Rise and Fall of Razia Sultan

Rise and Fall of Razia Sultan | রাজিয়ার উত্থান ও ব্যর্থতা



ইলতুৎমিস তার পুত্রদের রাজ্য শাসনের ক্ষেত্রে অযোগ্যতার দরুন, তার কন্যা রাজিয়া কে সিংহাসনের উত্তরাধিকারী মনোনীত করে যান। যদিও ইলতুৎমিস এর মৃত্যুর পর অভিজাতগন রাজিয়ার পরিবর্তে ইলতুৎমিশের জ্যেষ্ঠ পুত্র রুকনুদ্দিন ফিরোজ কে সিংহাসনে বসান। তবে রাজ্যশাসনের ব্যাপারে রুকনুদ্দিন সম্পূর্ণ অযোগ্য হওয়ার কারণে অভিজাত গন শেষ পর্যন্ত রাজিয়া কে সিংহাসনে বসান, যদিও রাজিয়ার সিংহাসন আরোহন সুখকর হয়নি।

রাজিয়ার সিংহাসন আরোহন মধ্যযুগের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। তার সিংহাসন আরোহন ইসলামের মূল দর্শন বিরোধী ছিল  না। তবে তাঁর সময় থেকেই রাজতন্ত্র ও তুর্কি অভিজাতদের মধ্যে ক্ষমতার লড়াই এর সূচনা হয়েছিল। রাজ্যের উজির মহম্মদ জুনায়েদ ও প্রাদেশিক শাসকগণ রাজিয়ার শাসন মেনে নিতে চাননি। তাঁরা রাজিয়ার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত রাজিয়া বিদ্রোহ দমনে সফল হয়েছিলেন।

রাজিয়া সরকারের সব দপ্তরের পদ গুলি নতুন করে বন্টন করেছিলেন, নারী হলেও রাজিয়ার শাসকোচিত গুণাবলীর অভাব ছিল না। সিংহাসনে বসার অল্পদিনের মধ্যেই তিনি শাসনকার্য ও সামরিক ক্ষেত্রে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছিলেন। তবে শাসনব্যবস্থার সমস্ত ক্ষেত্রে তার প্রভুত্ব স্থাপনের ফলে তুর্কিদের মধ্যে গোপনে অসন্তোষ দানা বেঁধেছিল। এছাড়াও রাজিয়া পর্দা প্রথা কে না মানা ও জামাল উদ্দিন ইয়াকুত নামের অশ্বপালের প্রতি অতিরিক্ত অনুগ্রহ প্রদর্শন তুর্কি আমীরগণ ভালো চোখে দেখেনি।

রাজিয়ার বিরুদ্ধে প্রথম বিদ্রোহ ঘোষণা করেন লাহোরের শাসনকর্তা কবীর খান। এরপর সিরহিন্দের শাসনকর্তা প্রকাশ্যে তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। রাজিয়া এই বিদ্রোহ দমনে অগ্রসর হন ও পরাজিত হয়ে বন্দী হন। শেষ পর্যন্ত বিদ্রোহীদের নেতা আলতুনিয়াকে বিবাহ করে নিজের শক্তি বৃদ্ধির চেষ্টা করেন। কিন্তু দুজনেই বিদ্রোহীদের হাতে পরাজিত ও নিহত হন। এইভাবে দিল্লীর সিংহাসন এর প্রথম ও শেষ শাসিকার জীবনের অবসান ঘটে।

রাজিয়ার শাসক সুলভ সমস্ত গুণ থাকা সত্ত্বেও তিনি ব্যর্থ হয়েছিলেন। তার ব্যর্থতার জন্য  ঐতিহাসিকরা একাধিক কারণকে দায়ী করেছেন। কোন কোন ঐতিহাসিকের মতে জামাল উদ্দিন এর প্রতি তার পক্ষপাতিত্ব তার পতনকে ডেকে এনেছিল। ইসামী বলেছেন রাজিয়ার সঙ্গে জামাল উদ্দিনের প্রণয় ছিল। ইবন বতুতা একই কথা বলেছেন। তবে সমকালীন ঐতিহাসিক মিনহাজ এরকম অভিযোগ করেননি । সমস্ত দিক বিচার করে উলসি হেগ বলেছেন রাজিয়ার ব্যর্থতার জন্য দায়ী ছিল নারীর প্রতি মধ্যযুগীয় দৃষ্টিভঙ্গি। পরিশেষে বলা চলে সমসাময়িক তুর্কি আমীরগণ একজন নারীর প্রভুত্ব স্বীকার করতে প্রস্তুত ছিল না বলেই রাজিয়ার জীবনের এই পরিণতি ঘটে।


Thanks for reading.

মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আরবদের সিন্ধু অভিযান | কারণ ও তাৎপর্য

আরবদের সিন্ধু অভিযান | কারণ ও তাৎপর্য Please visit our Homepage and subscribe us. Suggested Topics || Ghajnavid Invasion || গজনী আক্রমণ || || মামুদের সোমনাথ মন্দির লুণ্ঠন || Somnath Temple Plunder || || তরাইনের যুদ্ধ ও তার গুরুত্ত্ব || মহম্মদ ঘুরির ভারত আক্রমন ও তার চরিত্র || সপ্তম শতকের প্রথমার্ধে আরবদেশে ইসলামের আবির্ভাব ঘটে। ইসলাম আরবদের নতুন করে জীবনীশক্তির সঞ্চার করে । ইসলাম ক্রমশ: একটি ধর্ম থেকে রাজনৈতিক শক্তি রূপে আত্মপ্রকাশ করে। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় তারা আরবীয় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। ভারতবর্ষের সঙ্গে আরবদের যোগাযোগ দীর্ঘদিনের। বাণিজ্যিক সূত্রে তারা নিয়মিত ভারতের উপকূল গুলিতে, বিশেষ করে মালাবার উপকূলে আসত। ভারতীয় ও চীনা পণ্য 'ধাও' নামক বিশেষ জাহাজে করে নিয়ে তারা ইউরোপের বাজারে বিক্রি করত। 712 খ্রিস্টাব্দে ইরাকের গভর্নর হাজ্জাজ বিন ইউসুফ এর সেনাপতি ও জামাতা মোহাম্মদ বিন কাসেম সিন্ধু দেশে একটি সফল অভিযান করেন এবং সিন্ধুদেশ আরবীয় মুসলমানদের অধীনে চলে যায়। অভিযানের(প্রত্যক্ষ) কারণ ভারতবর্ষের প্রতি আরবদের দীর্ঘদিনের নজর ছিল। এর আ

ষোড়শ শতকীয় ইউরোপে মূল্যবিপ্লব | Price Revolution

 ষোড়শ শতকের ইউরোপে মূল্য বিপ্লব   16 শতাব্দীতে ইউরোপীয় অর্থনীতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো মূল্য বিপ্লব। নিত্যব্যবহার্য পণ্যের মূল্য প্রায় 150 বছর সুস্থির থাকার পর ঊর্ধ্বমুখী হতে আরম্ভ করে, এবং 16 শতাব্দীর শেষে খাদ্যপণ্যের মূল্যের প্রায় সাড়ে পাঁচ গুণ বেড়ে যায়। পশ্চিম ইউরোপের অর্থনীতিতে এমন অভাবনীয় এবং সুদুরপ্রসারী ফলাফলসম্পন্ন ঘটনা মূল্য বিপ্লব নামে পরিচিত। মূল্য বিপ্লবের কতগুলি সাধারণ বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। যথা--    (১) কৃষিজ পণ্যের তুলনায় শিল্পজাত পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি ছিল কম, এবং খাদ্যশস্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি। (২) ভূমি রাজস্ব সহ ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক, তোলা ইত্যাদির হার বৃদ্ধি এবং ফটকাবাজির আবির্ভাব। (৩) মূল্যবৃদ্ধির তুলনায় মজুরির হার খুবই কম ছিল বলে প্রকৃত আয় হ্রাস পেয়েছিল। (৪) ভূমি বিক্রয়যোগ্য পণ্যে পরিণত হওয়া। (৫) গ্রামীণ বুর্জোয়াজি শ্রেণীর আবির্ভাব। ষোড়শ শতকের আগেও প্রাকৃতিক কারণে মূল্যবৃদ্ধি হয়েছিল, তবে তা ছিল 2, 3 শতাংশের মতো, যা অস্বাভাবিক মনে হতো না। কিন্তু ষোল শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে যে নিরবিচ্ছিন্ন মূল্যবৃদ্ধি হয়েছিল তা জনজীবনে তীব্রভ

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ | Category of Archives

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ মহাফেজখানা বা লেখ্যাগারগুলি সাধারণ জনতার জন্য নয় মূলত গবেষক, ঐতিহাসিক, আইনবিদ, চিত্র পরিচালক প্রভৃতি পেশার লোকজন তাদের গবেষণার কাজে লেখ্যাগারে নথি পত্র দেখতে পারেন।  লেখ্যাগার পরিচালনা ও সংরক্ষিত নথির ভিত্তিতে লেখ্যাগগুলিকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়েছে।   1. সরকারি লেখ্যাগার:- কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার বা স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে যে লেখ্যাগারগুলি গড়ে ওঠে। সেগুলিকে সরকারি লেখ্যাগার বলা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এরকম সরকার পরিচালিত এক বা একাধিক লেখ্যাগার থাকে। যেমন, আমেরিকার Natonal Archive And records Administration (NARA)। ভারতবর্ষে র কেন্দ্রীয় লেখ্যাগার National Archive of India নামে পরিচিত। বিভিন্ন ঐতিহাসিক, প্রশাসনিক ও আইনগত নথি, মানচিত্র, নক্সা,  পাণ্ডুলিপি প্রভৃতি সংরক্ষিত থাকে। 2. বানিজ্যিক লেখ্যাগার:-  এটি একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানের লেখ্যাগার বিভিন্ন বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান   মূলত তাদের সংস্থার ঐতিহাসিক এবং বানিজ্যিক নথি সংরক্ষিত রাখে। যেমন, ভারতের প্রথম বানিজ্যিক লেখ্যাগার হলো পুনার Tata Centrel Archive। 3. অলাভজনক লেখ্যাগার:-   কোনো ব্যাক্তিগত বা অলাভজনক