সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

Kutubuddin Aibak | কুতুবুদ্দিন আইবক

কুতুবুদ্দিন আইবক- দিল্লি সুলতানির প্রতিষ্ঠাতা




মুহাম্মদ ঘুরীর ভারতে তুর্কি সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে যিনি বিশেষভাবে তাকে সাহায্য করেছিলেন তিনি হলেন তার অন্যতম দক্ষ সেনাপতি কুতুবউদ্দিন আইবক। মুহাম্মদ ঘুরীর মৃত্যুর পর কুতুবউদ্দিন দিল্লির অধিপতি হন। যদিও ভারতীয় সাম্রাজ্যঃ কুতুবউদ্দিন আইবক এর কাছে খুব একটা সুখকর হয়নি। ১২০৬ খ্রিস্টাব্দ থেকে স্বল্পকাল শাসনে তার শাসন প্রতিভার তেমন পরিচয় না পেলেও, বিভিন্ন কারনে মধ্যযুগের ভারতীয় ইতিহাসে তার স্থান অক্ষয় হয়ে থাকবে।

১২০৬ খ্রিস্টাব্দে কুতুবউদ্দিন আইবক এর দিল্লীর সিংহাসন আরোহন এর মাধ্যমে দিল্লি সুলতানি সাম্রাজ্যের সূচনা হয়েছিল। এই সময় তাজউদ্দীন গজনীর সিংহাসন আরোহন করে গজনী সাম্রাজ্যের সার্বভৌম অধিপতি হিসেবে ভারতবর্ষের উপর অধিকার দাবি করলে কুতুবউদ্দিন আইবক গজনীর সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করে নিজেকে ভারতের স্বাধীন সার্বভৌম নরপতি হিসেবে ঘোষণা করেন। এর ফলে একদিকে যেমন দিল্লিতে সুলতানি সাম্রাজ্যের স্বাধীনভাবে পথ চলা শুরু হয়, অন্যদিকে তেমনি দিল্লির সুলতানি সাম্রাজ্য বৈদেশিক হস্তক্ষেপ থেকেও রক্ষা পায়।

মাত্র চার বছরের শাসনকালে কুতুবুদ্দিনের একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল সাম্রাজ্যের দৃঢ়করণ। তিনি শাসন ক্ষেত্রে ব্যাপক সংস্কার ঘটাতে না পারলেও সাম্রাজ্যের শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার জন্য কিছু সংস্কার করেছিলেন। শাসন ব্যবস্থার দায়িত্ব ছিল সেনাদের হাতে। তবে কুতুবউদ্দিন কে সার্বভৌম শাসক বলা যায় কিনা তা নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতভেদ আছে। ইবন বতুতা তাকে দিল্লির প্রথম স্বাধীন ও সার্বভৌম নরপতি হিসেবে স্বীকার করেননি। তবে একথা বলা  অযৌক্তিক হবে না, যে গজনীর প্রভুত্ব থেকে ভারতকে মুক্ত করে ভারত বর্ষ থেকে বিদেশে অর্থ নির্গমনের পথকে রুদ্ধ করে, দিল্লির সুলতানি শাসন কে সার্বভৌম ক্ষমতা দান করে স্বাধীনভাবে পথ চলার সূচনা তিনি করেছিলেন। তাই সমস্ত দিক বিচার বিবেচনা করে ড.আর.পি.ত্রিপাঠী বলেছেন বাইরের হস্তক্ষেপ থেকে মুক্ত করে তিনি ভারতবর্ষে স্বাধীন সুলতানির এক নতুন পথ নির্মাণ করেছিলেন। এছাড়াও তৎকালীন লেখকগণ তার দানশীলতার ভূয়সী প্রশংসা করে তাকে লক্ষ্য দাতা বা lakh bakhs বলে অভিহিত করেছেন।

মন্তব্যসমূহ

  1. ১২১০ খ্রিস্টাব্দে ঘোড়া থেকে পড়ে( পোলো খেলা ) মৃত্যু হয় কুতুবউদ্দিন এর।

    উত্তরমুছুন
  2. কুতুবউদ্দিন আইবকের আধ্যাত্মিক গুরু ছিলেন সন্ত খাজা কুতুবউদ্দিন বক্তিয়ার কাকী। তাঁর নামানুসারে দিল্লিতে বিখ্যাত কুতুব মিনার তৈরি হয়েছিল। ( পরবর্তীতে ফিরোজশাহ তুঘলকের আমলে কুতুব মিনার প্রাকৃতিক আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় )

    উত্তরমুছুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আরবদের সিন্ধু অভিযান | কারণ ও তাৎপর্য

আরবদের সিন্ধু অভিযান | কারণ ও তাৎপর্য Please visit our Homepage and subscribe us. Suggested Topics || Ghajnavid Invasion || গজনী আক্রমণ || || মামুদের সোমনাথ মন্দির লুণ্ঠন || Somnath Temple Plunder || || তরাইনের যুদ্ধ ও তার গুরুত্ত্ব || মহম্মদ ঘুরির ভারত আক্রমন ও তার চরিত্র || সপ্তম শতকের প্রথমার্ধে আরবদেশে ইসলামের আবির্ভাব ঘটে। ইসলাম আরবদের নতুন করে জীবনীশক্তির সঞ্চার করে । ইসলাম ক্রমশ: একটি ধর্ম থেকে রাজনৈতিক শক্তি রূপে আত্মপ্রকাশ করে। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় তারা আরবীয় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। ভারতবর্ষের সঙ্গে আরবদের যোগাযোগ দীর্ঘদিনের। বাণিজ্যিক সূত্রে তারা নিয়মিত ভারতের উপকূল গুলিতে, বিশেষ করে মালাবার উপকূলে আসত। ভারতীয় ও চীনা পণ্য 'ধাও' নামক বিশেষ জাহাজে করে নিয়ে তারা ইউরোপের বাজারে বিক্রি করত। 712 খ্রিস্টাব্দে ইরাকের গভর্নর হাজ্জাজ বিন ইউসুফ এর সেনাপতি ও জামাতা মোহাম্মদ বিন কাসেম সিন্ধু দেশে একটি সফল অভিযান করেন এবং সিন্ধুদেশ আরবীয় মুসলমানদের অধীনে চলে যায়। অভিযানের(প্রত্যক্ষ) কারণ ভারতবর্ষের প্রতি আরবদের দীর্ঘদিনের নজর ছিল। এর আ

ষোড়শ শতকীয় ইউরোপে মূল্যবিপ্লব | Price Revolution

 ষোড়শ শতকের ইউরোপে মূল্য বিপ্লব   16 শতাব্দীতে ইউরোপীয় অর্থনীতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো মূল্য বিপ্লব। নিত্যব্যবহার্য পণ্যের মূল্য প্রায় 150 বছর সুস্থির থাকার পর ঊর্ধ্বমুখী হতে আরম্ভ করে, এবং 16 শতাব্দীর শেষে খাদ্যপণ্যের মূল্যের প্রায় সাড়ে পাঁচ গুণ বেড়ে যায়। পশ্চিম ইউরোপের অর্থনীতিতে এমন অভাবনীয় এবং সুদুরপ্রসারী ফলাফলসম্পন্ন ঘটনা মূল্য বিপ্লব নামে পরিচিত। মূল্য বিপ্লবের কতগুলি সাধারণ বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। যথা--    (১) কৃষিজ পণ্যের তুলনায় শিল্পজাত পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি ছিল কম, এবং খাদ্যশস্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি। (২) ভূমি রাজস্ব সহ ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক, তোলা ইত্যাদির হার বৃদ্ধি এবং ফটকাবাজির আবির্ভাব। (৩) মূল্যবৃদ্ধির তুলনায় মজুরির হার খুবই কম ছিল বলে প্রকৃত আয় হ্রাস পেয়েছিল। (৪) ভূমি বিক্রয়যোগ্য পণ্যে পরিণত হওয়া। (৫) গ্রামীণ বুর্জোয়াজি শ্রেণীর আবির্ভাব। ষোড়শ শতকের আগেও প্রাকৃতিক কারণে মূল্যবৃদ্ধি হয়েছিল, তবে তা ছিল 2, 3 শতাংশের মতো, যা অস্বাভাবিক মনে হতো না। কিন্তু ষোল শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে যে নিরবিচ্ছিন্ন মূল্যবৃদ্ধি হয়েছিল তা জনজীবনে তীব্রভ

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ | Category of Archives

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ মহাফেজখানা বা লেখ্যাগারগুলি সাধারণ জনতার জন্য নয় মূলত গবেষক, ঐতিহাসিক, আইনবিদ, চিত্র পরিচালক প্রভৃতি পেশার লোকজন তাদের গবেষণার কাজে লেখ্যাগারে নথি পত্র দেখতে পারেন।  লেখ্যাগার পরিচালনা ও সংরক্ষিত নথির ভিত্তিতে লেখ্যাগগুলিকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়েছে।   1. সরকারি লেখ্যাগার:- কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার বা স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে যে লেখ্যাগারগুলি গড়ে ওঠে। সেগুলিকে সরকারি লেখ্যাগার বলা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এরকম সরকার পরিচালিত এক বা একাধিক লেখ্যাগার থাকে। যেমন, আমেরিকার Natonal Archive And records Administration (NARA)। ভারতবর্ষে র কেন্দ্রীয় লেখ্যাগার National Archive of India নামে পরিচিত। বিভিন্ন ঐতিহাসিক, প্রশাসনিক ও আইনগত নথি, মানচিত্র, নক্সা,  পাণ্ডুলিপি প্রভৃতি সংরক্ষিত থাকে। 2. বানিজ্যিক লেখ্যাগার:-  এটি একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানের লেখ্যাগার বিভিন্ন বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান   মূলত তাদের সংস্থার ঐতিহাসিক এবং বানিজ্যিক নথি সংরক্ষিত রাখে। যেমন, ভারতের প্রথম বানিজ্যিক লেখ্যাগার হলো পুনার Tata Centrel Archive। 3. অলাভজনক লেখ্যাগার:-   কোনো ব্যাক্তিগত বা অলাভজনক