Please visit our Homepage and Subscribe us.
Third Urbanization in India | তৃতীয় নগরায়ন
ভারতীয় উপমহাদেশে প্রথম নগরায়ন হয়েছিল তাম্র ব্রোঞ্জ যুগে। ভারতের উত্তর-পশ্চিম দিকে গড়ে ওঠা হরপ্পা সভ্যতা ছিল নগরকেন্দ্রিক সভ্যতা। প্রত্নতাত্ত্বিকরা এখানে আজ পর্যন্ত 1400 টি নগর কেন্দ্রের অস্তিত্ব খুঁজে পেয়েছেন। হরপ্পা সভ্যতার পতনের পর আর্যরা যে জনবসতি গড়ে তুলেছে তা ছিল গ্রামীণ পশুচারণ নির্ভর সংস্কৃতি। পশুচারণ অর্থনীতি কৃষি অর্থনীতিতে রূপান্তরিত হলে এবং কৃষি উদ্বৃত্তকে সম্বল করে দ্বিতীয়বার নগরায়ন হতে প্রায় এক হাজার বছর সময় লেগে যায়। খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে ষোড়শ শতকে জনপদে দ্বিতীয় নগরায়ন হয়। আদি মধ্যযুগের যে নগরায়ন হয় তাকে তৃতীয় নগরায়ন বলা হয়।
অধ্যাপক রামশরণ শর্মা তার 'আরবান ডিকে' গ্রন্থে আদি মধ্যযুগে নগরের অবক্ষয় চিত্র তুলে ধরেছেন। তিনি দেখিয়েছেন গুপ্ত যুগের শেষ দিক থেকে অগ্রহার ব্যবস্থার প্রচলনের ফলে সামন্তব্যবস্থার বিকাশ ঘটে। কৃষির উপর অধিক গুরুত্ব দেওয়ায় শিল্প ও বানিজ্য অবহেলিত হয়, মুদ্রা অর্থনীতির অবক্ষয় ঘটে। এর ফলস্বরূপ পুরনো নগর গুলি ধ্বংসের মুখে পড়ে, গ্রামীণ আবদ্ধ অর্থনীতির পুনরুত্থান লক্ষ্য করা যায়।
অধ্যাপক ব্রজদুলাল চট্টোপাধ্যায় শর্মার বক্তব্যের সমালোচনা করেছেন। তিনি দেখিয়েছেন 600 থেকে 1000 খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সময়কালে নগরের অবক্ষয় সার্বিক ছিল না। কিছু নগরের অবক্ষয় হয়েছিল ঠিকই। কিছু নগর তার সজীব অস্তিত্ব বজায় রাখতে পেরেছিল। প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ দিয়ে চট্টোপাধ্যায় দেখিয়েছেন আদি ঐতিহাসিক পর্বে গড়ে ওঠা অন্যতম প্রধান নগর অহিছত্র (বেরিলি জেলা), দিল্লির পুরনো কেল্লা, উত্তরপ্রদেশের অত্রঞ্জিখেড়া, বারানসির কাছে রাজঘাট এবং বিহারের চিরন্দে নাগরিক ধারাবাহিকতা বজায় ছিল
গাঙ্গেয় উপত্যকায় অন্যতম নগর ছিল তত্ত্বানন্দাপুর যা বর্তমানে বুলন্দশহরে শহরের কাছে অবস্থিত। লেখমালায় এই নগরের ছোট বড় রাস্তা, বাজার ,বাজারে যাওয়ার পথ ,বাসগৃহ, দোকান তথা একটি পুরোদস্তুর নগর এর কথা বলা হয়েছে। প্রতিহার সাম্রাজ্যের অন্তর্গত সিয়াডোনিকে পত্তন বা শহর হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এখানে বিভিন্ন কারিগর ও ব্যবসায়ীরা বাস করত। নুনের ব্যবসায়ীদের বিশেষ উল্লেখ রয়েছে। এখানে হট্ট ও মন্ডাপিকার অস্তিত্ব ছিল। বাণিজ্যিক কেন্দ্র ছাড়া সিয়াডনি রাজনৈতিক প্রশাসনিক কেন্দ্র হিসাবে গুরুত্ব অর্জন করেছিল।
গুর্জর প্রতিহার ভূখণ্ডের ওপর একটি নগর গোপাদ্রী। এখানে হট্ট ছিল। নগরীর চারপাশে সম্ভবত পাঁচিল ঘেরা ছিল বলে নগরটিকে কেল্লা বলা হয় এবং এখানে একজন কোট্টপাল নিয়োগ করা হয়েছিল। সুতরাং গোপাদ্রী নগর এর সামরিক গুরুত্ব যথেষ্ট ছিল।
মধ্যপ্রদেশের জব্বলপুর খ্রিস্ট দশক শতকে লক্ষণ রাজের একটি লিপিতে পুরাপত্তন কথাটির উল্লেখ আছে। বিলহরি লেখতে পত্তন মন্ডপিকা উল্লেখ আছে। সুতরাং কলচুরি রাজ্যে নগরায়নের সূচনা হয়েছিল। চট্টোপাধ্যায় আরও বলেছেন, রাজস্থানে নাডোল ছিল 12 টি গ্রামের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত একটি নগর মন্ডপিকা। বাণিজ্যিক লেনদেন এর পাশাপাশি নাডোল চহমান রাজাদের শাসন কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায়।
দাক্ষিণাত্যের সমৃদ্ধ কৃষি ও বাণিজ্য নগরায়ন প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করেছিল। কর্নাটকের বেলগাঁও ছিল বণিকদের অন্যতম আকর্ষণ। চোল ভূখণ্ডে কুড়ামুক্কু-পলাইয়ারাই নামক একটি যুগ্ম শহরে এর অস্তিত্বের কথা চম্পকলক্ষ্মীর গবেষণায় জানা গেছে। দক্ষিণ ভারতে আরো কিছু নগরের অস্তিত্ব ছিল। চোলদের রাজধানী তাঞ্জোর, বন্দর নগর কাবেরিপত্তনাম বা পুহার, রাজরাজ চতুর্বেদীমন্ডলম, চেরাবনমহাদেবি প্রভৃতি নগরে সজীব অস্তিত্ব ছিল।
উপরোক্ত আলোচনা থেকে শর্মা নগরের অবক্ষয় সংক্রান্ত তত্ত্ব মেনে নেওয়া কঠিন। তবে তৃতীয় পর্বের নগরায়নের দ্বিতীয় দফার নগরায়ন থেকে অনেক পৃথক। তৃতীয় দফার নগরায়নের নির্দিষ্ট কোন কেন্দ্র নেই। এগুলি তাদের আঞ্চলিক পরিমণ্ডলে অনেক বেশি গ্রথিত ছিল। তৃতীয় দফার নগরগুলি বেশিরভাগই স্থানীয় বাণিজ্য কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠেছিল এবং স্থানীয় শক্তি ও গোষ্ঠীগুলি এইসব নগর গড়ে ওঠার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করেছিল।
Thanks for reading.
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন