সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

Social Stratification | French Revolution | প্রাক বিপ্লব ফ্রান্সের সামাজিক স্তর বিভাজন


Social Stratification | French Revolution | প্রাক বিপ্লব ফ্রান্সের সামাজিক স্তর বিভাজন 


social-stratification-french-revolution

অষ্টাদশ শতকে ফ্রান্স ছিল একটি বিশাল ঘন জনবসতিপূর্ণ, সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী দেশ। এই সময় ফ্রান্সের সমাজ মূলত তিন ভাগে বিভক্ত ছিল  যাজক, অভিজাত ও সাধারণ মানুষ। এদের যথাক্রমে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় এস্টেট বলা হত। সম্ভবত খ্রিস্টান ধর্ম তত্ত্বের ধারণার উপরে নির্ভর করেই সমাজে বিভাজন ঘটেছিল। ভলতেয়ার লিখেছেন যে, একটি জাতির অভ্যন্তরে তিনটি জাতির অস্তিত্ব ছিল। 


এই তিনটি শ্রেণীর প্রথমটি হলো যাজক। এরা ছিল ফ্রান্সের জনসংখ্যার মাত্র ১%। যাজকরা স্বতন্ত্র সামাজিক গোষ্ঠী, শাসন, বিচার ও রাজস্ব সংক্রান্ত এদের নিজস্ব ব্যবস্থা ছিল। দেশের ২০% চাষ যোগ্য জমির মালিক ছিল এরা। এছাড়াও এরা দেশের অন্য সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষের কাছ থেকে ধর্মীয় কর বা টাইথ আদায় করত। চার্চের সমাজের নানা গুরুত্বপূর্ণ সমাজকল্যাণমূলক কাজের সাথে যুক্ত থাকার প্রথা থাকলেও, অষ্টাদশ শতকে যাজকদের নৈতিক অবক্ষয় ঘটে। উচ্চ শ্রেণীর যাজকেরা বিলাস-ব্যসনে দিন কাটাতে থাকে আর নিম্ন শ্রেণীর যাজকেরা ছিল নিরক্ষর ও দরিদ্র। নিম্ন যাজকদের শিক্ষাদানেরও ভালো ব্যবস্থা ছিলনা। এই সমস্ত নানা কারণে অষ্টাদশ শতকের মানুষ চার্চ যাজকের সম্পর্কে শ্রদ্ধার মনোভাব হারিয়ে ফেলেছিল।


ফ্রান্সে অপর সুবিধাভোগী শ্রেণী ছিল অভিজাতরা। আবে সিয়েসের হিসাব অনুযায়ী এরা জনসংখ্যার মাত্র ২% হয়েও সমাজে ছিল এরাই সবচেয়ে প্রভাবশালী গোষ্ঠী। ফ্রান্সের চাষযোগ্য জমির ৭% ভোগ করতো এরাই। এদের মধ্যে দুটি ভাগ ছিল নীল রক্তের অভিজাত ও পোশাকি অভিজাত। রাজা কোন সম্পদশালী বুর্জোয়া কে অভিজাতর সম্মান দিলে সে হত পোশাকি অভিজাত। ১৭৫০ খ্রিস্টাব্দের পর এই সামাজিক গতিশীলতার পথ বন্ধ হয়ে গেলে বুর্জোয়াদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছিলো।
অভিজাত রা শাসন সৈন্যবাহিনী ও চার্চের উচ্চ পদগুলো দখল করেছিল। এছাড়াও পার্লেমো বা বিচার বিভাগের পদগুলির পদগুলি এরা বংশানুক্রমিক ভাবে ভোগ করতো। এছাড়া অভিজাতরা সাধারণ মানুষের কাছ থেকে ভূমিকর,মদকর প্রভৃতি আদায় করত। এরা কৃষক শোষণ করে জীবিকা নির্বাহের চেষ্টা করত। ফলে বিপ্লবের প্রাক্কালে এদের বিরুদ্ধে কৃষকদের প্রবল আক্রোশ গড়ে উঠেছিল। আবার সভাসদ অভিজাত ও গ্রামীণ অভিজাতদের মধ্যেও বিরোধ ছিল।

প্রাক বিপ্লব ফ্রান্সে আড়াই কোটি মানুষের মধ্যে দু কোটি ৪০ লক্ষ লোক ছিল তৃতীয় এস্টেট এর অন্তর্গত। আবে সিয়েস তার what is the third estate গ্রন্থে বলেছেন তৃতীয় এস্টেট হল ফরাসি জাতি। গ্রাম ও শহরের সমস্ত সাধারণ মানুষ ছিল তৃতীয় এস্টেট। বিত্ত, শিক্ষাদিক্ষা, সংস্কৃতি ও জীবনযাত্রা সমস্ত দিক থেকে বুর্জোয়ারা ছিল অগ্রগণ্য। এদের মধ্যে ছিল বণিক, শিল্পপতি, ব্যাংকার, শিক্ষক, চিকিৎসক, আইনজীবী প্রভৃতি। এদের মধ্যেও ভাগ ছিল, যেমন উচ্চ বুর্জোয়া, মধ্য বুর্জোয়া ও নিম্ন বুর্জোয়া। কিন্তু বংশমর্যাদা না থাকায় তাদের সমাজে গুরুত্ব ছিল না। এছাড়াও সমস্ত ধরনের কর তাদের দিতে হতো। বুর্জোয়া ছাড়াও ফ্রান্সের সমাজে ছিল কৃষক, শ্রমিক ও সাঁকুলেৎ সম্প্রদায়। সাঁকুলেৎ বলতে শহরের দরিদ্র চালচুলোহীন মানুষদের বোঝাত। এরা বাস্তিলের পতনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। বিপ্লবের প্রাকমুহুর্তে এই তৃতীয় শ্রেণীর মানুষদের অবস্থা এতটাই খারাপ হয়েছিল যে এরা বিদ্রোহ করতে বাধ্য হয়েছিল।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আরবদের সিন্ধু অভিযান | কারণ ও তাৎপর্য

আরবদের সিন্ধু অভিযান | কারণ ও তাৎপর্য Please visit our Homepage and subscribe us. Suggested Topics || Ghajnavid Invasion || গজনী আক্রমণ || || মামুদের সোমনাথ মন্দির লুণ্ঠন || Somnath Temple Plunder || || তরাইনের যুদ্ধ ও তার গুরুত্ত্ব || মহম্মদ ঘুরির ভারত আক্রমন ও তার চরিত্র || সপ্তম শতকের প্রথমার্ধে আরবদেশে ইসলামের আবির্ভাব ঘটে। ইসলাম আরবদের নতুন করে জীবনীশক্তির সঞ্চার করে । ইসলাম ক্রমশ: একটি ধর্ম থেকে রাজনৈতিক শক্তি রূপে আত্মপ্রকাশ করে। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় তারা আরবীয় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। ভারতবর্ষের সঙ্গে আরবদের যোগাযোগ দীর্ঘদিনের। বাণিজ্যিক সূত্রে তারা নিয়মিত ভারতের উপকূল গুলিতে, বিশেষ করে মালাবার উপকূলে আসত। ভারতীয় ও চীনা পণ্য 'ধাও' নামক বিশেষ জাহাজে করে নিয়ে তারা ইউরোপের বাজারে বিক্রি করত। 712 খ্রিস্টাব্দে ইরাকের গভর্নর হাজ্জাজ বিন ইউসুফ এর সেনাপতি ও জামাতা মোহাম্মদ বিন কাসেম সিন্ধু দেশে একটি সফল অভিযান করেন এবং সিন্ধুদেশ আরবীয় মুসলমানদের অধীনে চলে যায়। অভিযানের(প্রত্যক্ষ) কারণ ভারতবর্ষের প্রতি আরবদের দীর্ঘদিনের নজর ছিল। এর আ

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ | Category of Archives

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ মহাফেজখানা বা লেখ্যাগারগুলি সাধারণ জনতার জন্য নয় মূলত গবেষক, ঐতিহাসিক, আইনবিদ, চিত্র পরিচালক প্রভৃতি পেশার লোকজন তাদের গবেষণার কাজে লেখ্যাগারে নথি পত্র দেখতে পারেন।  লেখ্যাগার পরিচালনা ও সংরক্ষিত নথির ভিত্তিতে লেখ্যাগগুলিকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়েছে।   1. সরকারি লেখ্যাগার:- কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার বা স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে যে লেখ্যাগারগুলি গড়ে ওঠে। সেগুলিকে সরকারি লেখ্যাগার বলা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এরকম সরকার পরিচালিত এক বা একাধিক লেখ্যাগার থাকে। যেমন, আমেরিকার Natonal Archive And records Administration (NARA)। ভারতবর্ষে র কেন্দ্রীয় লেখ্যাগার National Archive of India নামে পরিচিত। বিভিন্ন ঐতিহাসিক, প্রশাসনিক ও আইনগত নথি, মানচিত্র, নক্সা,  পাণ্ডুলিপি প্রভৃতি সংরক্ষিত থাকে। 2. বানিজ্যিক লেখ্যাগার:-  এটি একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানের লেখ্যাগার বিভিন্ন বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান   মূলত তাদের সংস্থার ঐতিহাসিক এবং বানিজ্যিক নথি সংরক্ষিত রাখে। যেমন, ভারতের প্রথম বানিজ্যিক লেখ্যাগার হলো পুনার Tata Centrel Archive। 3. অলাভজনক লেখ্যাগার:-   কোনো ব্যাক্তিগত বা অলাভজনক

ষোড়শ শতকীয় ইউরোপে মূল্যবিপ্লব | Price Revolution

 ষোড়শ শতকের ইউরোপে মূল্য বিপ্লব   16 শতাব্দীতে ইউরোপীয় অর্থনীতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো মূল্য বিপ্লব। নিত্যব্যবহার্য পণ্যের মূল্য প্রায় 150 বছর সুস্থির থাকার পর ঊর্ধ্বমুখী হতে আরম্ভ করে, এবং 16 শতাব্দীর শেষে খাদ্যপণ্যের মূল্যের প্রায় সাড়ে পাঁচ গুণ বেড়ে যায়। পশ্চিম ইউরোপের অর্থনীতিতে এমন অভাবনীয় এবং সুদুরপ্রসারী ফলাফলসম্পন্ন ঘটনা মূল্য বিপ্লব নামে পরিচিত। মূল্য বিপ্লবের কতগুলি সাধারণ বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। যথা--    (১) কৃষিজ পণ্যের তুলনায় শিল্পজাত পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি ছিল কম, এবং খাদ্যশস্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি। (২) ভূমি রাজস্ব সহ ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক, তোলা ইত্যাদির হার বৃদ্ধি এবং ফটকাবাজির আবির্ভাব। (৩) মূল্যবৃদ্ধির তুলনায় মজুরির হার খুবই কম ছিল বলে প্রকৃত আয় হ্রাস পেয়েছিল। (৪) ভূমি বিক্রয়যোগ্য পণ্যে পরিণত হওয়া। (৫) গ্রামীণ বুর্জোয়াজি শ্রেণীর আবির্ভাব। ষোড়শ শতকের আগেও প্রাকৃতিক কারণে মূল্যবৃদ্ধি হয়েছিল, তবে তা ছিল 2, 3 শতাংশের মতো, যা অস্বাভাবিক মনে হতো না। কিন্তু ষোল শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে যে নিরবিচ্ছিন্ন মূল্যবৃদ্ধি হয়েছিল তা জনজীবনে তীব্রভ