সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

Second Opium War | দ্বিতীয় আফিম যুদ্ধ

Please visit our Homepage and Subscribe us.

Second Opium War | দ্বিতীয় আফিম যুদ্ধ

নানকিং ও তার পরবর্তী চুক্তিগুলি পশ্চিমী শক্তিগুলোর সাথে চীনের সম্পর্কে শান্তি আনতে পারেনি। বরং চীনের উপর বিদেশিদের দাবি উত্তরোত্তর বাড়তে থাকে, যা চীনের পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব হচ্ছিল না। বিশেষ করে ব্রিটিশদের মনে এই ধারণা জন্মায় যে, চীনের কাছ থেকে আরো কিছু সুযোগ সুবিধা আদায় করে নিতে না পারলে তার স্বার্থ পুরোপুরি সুরক্ষিত হবে না। অন্যদিকে চীনাদের পক্ষে পশ্চিমাদের সদর্প উপস্থিতি মেনে নেওয়া সম্ভব হচ্ছিল না। এই পরিস্থিতিতে আরো একটি যুদ্ধ সংঘটিত হয় (1856), যা দ্বিতীয় ইঙ্গ চীন যুদ্ধ বা দ্বিতীয় আফিম যুদ্ধ নামে পরিচিত।

যুদ্ধের কারন

নানকিং এর সন্ধির মাধ্যমে পাঁচটি বন্দর বিদেশীদের কাছে উন্মুক্ত হয়েছিল। সাংহাই ও নিংপোতে 1843 এবং আময় ও ফুচাওয়ে 1844 সালে বিদেশিদের বসবাসের সুযোগ করে দেওয়া গেছিল। কিন্তু ক্যান্টনে স্থানীয় অধিবাসীদের তরফ থেকে জোর প্রতিরোধ গড়ে উঠেছিল। তাদের দাবি ছিল বিদেশীরা ক্যান্টনের পুরনো শহরের ভিতরে প্রবেশ করতে পারবে না। কারণ চুক্তিতে এরকম কোন কথা নেই। তারা চাইলে যেখানে তাদের গুদাম গুলি গড়ে উঠেছিল সেখানে থাকতে পারে। ক্যান্টনের পথে ঘাটে তাই প্রায়ই স্থানীয় অধিবাসীদের সঙ্গে বিদেশিদের ছোটখাটো বিবাদ-বিরোধ লেগেই থাকত। 1847 সালে ব্রিটিশরা প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য ক্যান্টন একটি ক্ষুদ্র সশস্ত্র অভিযান চালায়। এই পরিস্থিতিতে চীনা কর্তৃপক্ষ ব্রিটিশদের কাছে দু'বছরের সময় চেয়ে নেয়। দুবছর পরও যখন ব্যাবস্থা করতে পারল না তখন তারা ক্যান্টনে শান্তি ভঙ্গ হতে পারে এই যুক্তিতে ব্রিটিশদের প্রবেশাধিকার দিতে রাজি হল না।

বিদেশীরা পাঁচটি বন্দরে বাণিজ্য করার অধিকার পেয়ে সন্তুষ্ট হয়নি। তারা চীনকে সম্পূর্ণভাবে উন্মুক্ত করতে চাইছিল এবং পিকিং এর দরবারে স্থায়ী কূটনৈতিক প্রতিনিধি রাখতে চাইছিল, যাতে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের দ্বারা বাণিজ্যে বাধা না আসে। এইসব কারণে আমেরিকা এবং ফ্রান্স চুক্তির সংশোধন চায় ছিল, যা তাদের পূর্ব চুক্তিতেই উল্লিখিত ছিল। বৃটেনের অবশ্য সংশোধন করার শর্ত ছিল না। তবুও সে ছিল সর্বাপেক্ষা অনুগৃহীত দেশ। তাই তার চুক্তি সংশোধনের দাবি এক্ষেত্রে অন্যায্য নয়। ফ্রান্স আমেরিকা ও ব্রিটেন একযোগে চুক্তি সংশোধনের দাবি করলে চিন অবশ্য তাতে রাজি ছিল না।

ইতিমধ্যে অ্যারো জাহাজের ঘটনা (1556, Oct) উত্তেজনা বৃদ্ধি করে। জাহাজটি চিনা মালিকানাধীন হলেও হংকংয়ের ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের কাছে এর রেজিস্ট্রশন ছিল। তাই ওই জাহাজে ব্রিটিশ পতাকা তোলা ছিল। চিনা অফিসার ও সৈন্যরা জলদস্যু পাকড়াও করতে গিয়ে ওই ব্রিটিশ পতাকার ক্ষতি করে ফেলে। এই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ ক্যান্টন কর্তৃপক্ষের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনার দাবি করে। যা ক্যান্টন কর্তৃপক্ষ অগ্রাহ্য করে। ব্রিটেন তখন জাতি অবমাননার অভিযোগে চীনকে শাস্তি দেওয়ার জন্য বিরাট ব্রিটিশ বাহিনী প্রেরণ করে। এদিকে  কোয়াংসি প্রদেশে এক ফরাসি ধর্মপ্রচারককে নামমাত্র বিচারে চীনা কর্তৃপক্ষ মৃত্যুদন্ড দেয়। যদিও সেখানে ফরাসিদের অনুপ্রবেশের কোনো অধিকার ছিল না। ফরাসিরা ব্রিটিশদের সাথে যুক্ত হয়। ফলে দ্বিতীয় আফিম যুদ্ধের সূচনা হয়। আমেরিকা ও রাশিয়া যুদ্ধে যোগদান না করলেও বৃটেনের পক্ষেই তাদের মত ছিল।

সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে যুদ্ধের জন্য ব্রিটিশ ও ফরাসিদের যে দুটি অভিযোগ তা কার্যত অজুহাত মাত্র। আসল কারণ ছিল ঔপনিবেশিক স্বার্থসিদ্ধি, যা প্রথম আফিমের যুদ্ধেও কার্যকর ছিল।

 Thanks for reading.

মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ | Category of Archives

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ মহাফেজখানা বা লেখ্যাগারগুলি সাধারণ জনতার জন্য নয় মূলত গবেষক, ঐতিহাসিক, আইনবিদ, চিত্র পরিচালক প্রভৃতি পেশার লোকজন তাদের গবেষণার কাজে লেখ্যাগারে নথি পত্র দেখতে পারেন।  লেখ্যাগার পরিচালনা ও সংরক্ষিত নথির ভিত্তিতে লেখ্যাগগুলিকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়েছে।   1. সরকারি লেখ্যাগার:- কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার বা স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে যে লেখ্যাগারগুলি গড়ে ওঠে। সেগুলিকে সরকারি লেখ্যাগার বলা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এরকম সরকার পরিচালিত এক বা একাধিক লেখ্যাগার থাকে। যেমন, আমেরিকার Natonal Archive And records Administration (NARA)। ভারতবর্ষে র কেন্দ্রীয় লেখ্যাগার National Archive of India নামে পরিচিত। বিভিন্ন ঐতিহাসিক, প্রশাসনিক ও আইনগত নথি, মানচিত্র, নক্সা,  পাণ্ডুলিপি প্রভৃতি সংরক্ষিত থাকে। 2. বানিজ্যিক লেখ্যাগার:-  এটি একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানের লেখ্যাগার বিভিন্ন বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান   মূলত তাদের সংস্থার ঐতিহাসিক এবং বানিজ্যিক নথি সংরক্ষিত রাখে। যেমন, ভারতের প্রথম বানিজ্যিক লেখ্যাগার হলো পুনার Tata Centrel Archive। 3. অলাভজনক লেখ্যাগ...

আরবদের সিন্ধু অভিযানঃ প্রত্যক্ষ কারণ ও তাৎপর্য | Arab Conquest of Sindh: Immediate Causes and Significance

আরবদের সিন্ধু অভিযানঃ প্রত্যক্ষ কারণ ও তাৎপর্য সপ্তম শতকের প্রথমার্ধে আরবদেশে ইসলামের আবির্ভাব ঘটে। ইসলাম আরবদের নতুন করে জীবনীশক্তির সঞ্চার করে । ইসলাম ক্রমশ: একটি ধর্ম থেকে রাজনৈতিক শক্তি রূপে আত্মপ্রকাশ করে। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় তারা আরবীয় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। ভারতবর্ষের সঙ্গে আরবদের যোগাযোগ দীর্ঘদিনের। বাণিজ্যিক সূত্রে তারা নিয়মিত ভারতের উপকূল গুলিতে, বিশেষ করে মালাবার উপকূলে আসত। ভারতীয় ও চীনা পণ্য 'ধাও' নামক বিশেষ জাহাজে করে নিয়ে তারা ইউরোপের বাজারে বিক্রি করত। 712 খ্রিস্টাব্দে ইরাকের গভর্নর হাজ্জাজ বিন ইউসুফ এর সেনাপতি ও জামাতা মোহাম্মদ বিন কাসেম সিন্ধু দেশে একটি সফল অভিযান করেন এবং সিন্ধুদেশ আরবীয় মুসলমানদের অধীনে চলে যায়। অভিযানের(প্রত্যক্ষ) কারণ ভারতবর্ষের প্রতি আরবদের দীর্ঘদিনের নজর ছিল। এর আগেও বহুবার ভারতের বিভিন্ন জায়গায় অভিযান পাঠানো হয়েছিল। তবে এই(712 খৃ:) অভিযানের একটি প্রত্যক্ষ কারণ ছিল। জানা যায় যে সিংহলের রাজা ইরাকের গভর্নর হাজ্জাজ বিন ইউসুফ কে কয়েকটি জাহাজে করে উপঢৌকন পাঠাচ্ছিলেন কিন্তু পথে সিন্ধু দেশের জলদস্যুরা দেবল বন্দরে এ...

ষোড়শ শতকীয় ইউরোপে মূল্যবিপ্লব | Price Revolution

 ষোড়শ শতকের ইউরোপে মূল্য বিপ্লব   16 শতাব্দীতে ইউরোপীয় অর্থনীতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো মূল্য বিপ্লব। নিত্যব্যবহার্য পণ্যের মূল্য প্রায় 150 বছর সুস্থির থাকার পর ঊর্ধ্বমুখী হতে আরম্ভ করে, এবং 16 শতাব্দীর শেষে খাদ্যপণ্যের মূল্যের প্রায় সাড়ে পাঁচ গুণ বেড়ে যায়। পশ্চিম ইউরোপের অর্থনীতিতে এমন অভাবনীয় এবং সুদুরপ্রসারী ফলাফলসম্পন্ন ঘটনা মূল্য বিপ্লব নামে পরিচিত। মূল্য বিপ্লবের কতগুলি সাধারণ বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। যথা--    (১) কৃষিজ পণ্যের তুলনায় শিল্পজাত পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি ছিল কম, এবং খাদ্যশস্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি। (২) ভূমি রাজস্ব সহ ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক, তোলা ইত্যাদির হার বৃদ্ধি এবং ফটকাবাজির আবির্ভাব। (৩) মূল্যবৃদ্ধির তুলনায় মজুরির হার খুবই কম ছিল বলে প্রকৃত আয় হ্রাস পেয়েছিল। (৪) ভূমি বিক্রয়যোগ্য পণ্যে পরিণত হওয়া। (৫) গ্রামীণ বুর্জোয়াজি শ্রেণীর আবির্ভাব। ষোড়শ শতকের আগেও প্রাকৃতিক কারণে মূল্যবৃদ্ধি হয়েছিল, তবে তা ছিল 2, 3 শতাংশের মতো, যা অস্বাভাবিক মনে হতো না। কিন্তু ষোল শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে যে নিরবিচ্ছিন্ন মূল্যবৃদ্ধি হ...