Babur's Success | বাবরের সাফল্যের কারন
ভারতের মুঘল সম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন জহিরউদ্দিন মোহাম্মদ বাবর। বাবর মধ্য এশিয়ায় সম্রাজ্য প্রতিষ্ঠাতায় ব্যার্থ হয়েছিলেন। পিতৃ রাজ্য ফারঘানা থেকে বিতাড়িত হয়ে পূর্ব দিকে ভাগ্যণ্বেষনের সন্ধানে রত ছিলেন। মধ্য এশিয়ায় সাম্রাজ্য বিস্তারের ধারাবাহিক ব্যর্থতা সত্ত্বেও তিনি, ভারতবর্ষে এক বিশাল অঞ্চল অধিকার করে মোগল সাম্রাজ্যের ভিত্তি স্থাপন করেন। ভারতবর্ষে তার সাফল্যের পশ্চাতে নানা কারণ ছিল-
1) সুলতানি রাষ্ট্রের শেষের দিকে রাজনৈতিক সংহতি একেবারেই ভেঙে পড়েছিল। বহুলুল লোদীর প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছিল। ইব্রাহিম লোদীর শাসনকালে এই অনৈক্য চরম পর্যায়ে পৌঁছে ছিল। ইব্রাহিম লোদীর আচার-আচরণ আফগান সর্দারদের একেবারেই পছন্দের ছিল না। তাই তারা লোদীর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করেছিল।
2) ভারতের সামরিক ব্যবস্থা বা শক্তি সেইসময় বিশ্বের নিরিখে ছিল একেবারেই পিছিয়ে। তীর-ধনুক, হস্তী বাহিনী, পদাতিক বাহিনী সম্বলিত আফগান ও রাজপুতরা বাবরের তুলনায় ছিল দুর্বল। তাছাড়া বিভিন্ন জাতিকে নিয়ে গড়ে তোলা সেনাবাহিনীতে কোন জাতীয় ঐক্য ছিল না। অন্যদিকে বাবরের হাতে ছিল কামান, বন্দুক। মুস্তাফা ও ওস্তাদ আলীর নেতৃত্বে গড়ে তোলা গোলন্দাজ বাহিনী বাবরের সাফল্যের পথ কে অবশ্যম্ভাবী করেছিল। ছোট অথচ সুশৃঙ্খল বাহিনীর ভিতরে বিজ্ঞানভিত্তিক সমন্বয় সাধন করে বাবর যুদ্ধ জিতে নিয়েছিল। তাছাড়া বাবর এর কাছে ছিল মধ্য এশিয়ার আরব ও ইরানের তীব্র গতি সম্পন্ন ভাল জাতের ঘোড়া। গোলন্দাজ ও অশ্বারোহী বাহিনী এই যৌথ আক্রমণ তুলঘুমা রণকৌশল নামে পরিচিত। সুতরাং যুদ্ধকৌশলের নিরিখে রাজপুত ও আফগানরা ছিল ভ্রান্ত। বাবর তার আত্মজীবনীতে লিখেছেন- ভারতীয়রা কিভাবে মরতে হয় জানে, কিন্তু কিভাবে যুদ্ধ করতে হয় জানে না।
3) বাবর এর মতো সেনানায়ক সে যুগে ভারতবর্ষে কেউ ছিলনা। ইব্রাহিম লোদী ছিলেন ক্ষণক্রোধী, ধৈর্য হারা, অন্যদিকে বাবরের দীর্ঘসময়ের যাযাবর জীবনে দুঃখ দারিদ্রের অভিজ্ঞতা তাকে অনেক বেশি শক্তিশালী করে তুলেছিল। বাবর মোঘল বাহিনীকে নতুন ভূখণ্ড দখল করা এবং তাল তাল সোনা লাভ করার লোভ দেখিয়ে এবং জেহাদী আদর্শের মোড়কে মুঘল বাহিনীকে জীবন-মরণ সংগ্রামে উদ্ভুদ্ধ করেছিল।
4) ডক্টর যদুনাথ সরকার বলেছেন যে - "যখন কোন দেশ সামাজিক ও রাজনৈতিক দিক থেকে দুর্বল হয়ে পড়বে এবং অর্থনৈতিক ও সামরিক দিক দিয়ে পিছিয়ে পড়বে তখনই তার তুলনায় অপেক্ষাকৃত গতিশীল যে কোন জাতি তার ওপর প্রভুত্ব করবে"। তৈমুরের আক্রমণের পর ভারতবর্ষের সার্বিক মেরুদন্ড যেভাবে ভেঙে যায় তা আর জোড়া লাগে নি, এই প্রেক্ষাপটই বাবর এর কাজকে আরও সহজ করে দেয়।
পরিশেষে বলা যায় যে, রাজপুতদের ওপর যেটুকু ভরসা ছিলো সেটাও সংগ্রাম সিংহের জন্য বিফলে যায় ।সংগ্রাম সিংহ এবং দৌলত খাঁ লোদী বাবরকে ভারত আক্রমণের আহ্বান জানিয়ে চরম ভুল করেছিলেন ।যদিও তারা শেষ পর্যন্ত বাবরকে রুখে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু তারা ব্যর্থ হয়েছিল।
Thanks for reading.
Thank you sir
উত্তরমুছুন