Abul Fazl | আবুল ফজল
মুঘল যুগের সর্বশ্রেষ্ঠ লেখক এবং ঐতিহাসিক হলেন আবুল ফজল ।আবুল ফজল বিখ্যাত পারসিক পন্ডিত শেখ মুবারকের পুত্র। সম্রাট আকবরের অন্তরঙ্গ বন্ধু এবং মুঘল প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মচারী। ব্যক্তিগত ও কর্মজীবনে তিনি ছিলেন উদার মানসিকতার অধিকারী এবং শান্তির নীতিতে বিশ্বাসী ।আকবরের নির্দেশেই তিনি ইতিহাস রচনার কাজ শুরু করেন। আবুল ফজলের রচিত দুটি বিখ্যাত গ্রন্থটি হল আকবরনামা ও আইন ই আকবরী।
আকবরনামা তিনটি খন্ডে রচিত। প্রথম খন্ডে বর্ণিত হয়েছে তৈমুরের সময়কাল থেকে হুমায়ুনের সময়কাল পর্যন্ত রাজপরিবারের সাধারণ ইতিহাস। দ্বিতীয় ও তৃতীয় খণ্ডে রচিত হয়েছে আকবরের রাজত্বকাল এর ঘটনাবলী।
আবুল ফজলের দ্বিতীয় গ্রন্থ আইন-ই-আকবরী ফার্সি ভাষায় লেখা। ব্ল্যাক ম্যান ও গারেট এটি কে ইংরেজি ভাষায় অনুবাদ করেন। গ্রন্থটি কার্যত একটি পরিসংখ্যানগত বিবরণ ।এখানে সাম্রাজ্যের আয়তন, জনসংখ্যা, শিল্প, কৃষি প্রভৃতি বিষয়ে বিশদভাবে বিবরণ লিপিবদ্ধ হয়েছে। সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ছবি এই গ্রন্থে স্থান পেয়েছে। তিনি ইতিহাস লিখবার ক্ষেত্রে তথ্য সম্পর্কে যথেষ্ট যত্নবান ছিলেন। সংগৃহীত তথ্যের যথার্থতা বিচারের ক্ষেত্রে প্রশ্ন-উত্তর পদ্ধতি অবলম্বন করেছেন।
আবুল ফজলের ইতিহাস চর্চায় যথেষ্ট সীমাবদ্ধতা ছিল ।তিনি কোন সূত্র থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছেন তিনি উল্লেখ করেন নি। আকবর এর কৃতিত্ব মূল্যায়ন করতে গিয়ে তিনি অনেক ক্ষেত্রে পক্ষপাতিত্ত্ব মূলক আচরণ করেছেন। অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে এড়িয়ে গেছেন। রাজস্ব সংস্কারের ক্ষেত্রে তিনি টোডরমলের নামও তিনি উল্লেখ করেনি। মহাজরনামা ঘোষণার মত গুরুত্ত্বপূর্ণ বিষয়ও তিনি এড়িয়ে গেছেন। ইউরোপীয় ঐতিহাসিকগণ অনেকেই তাই আবুল ফজলকে তার প্রভু তোষণের দায়ে অভিযুক্ত করেছেন। ভিন্সেন্ট স্মিথ তাকে An Unblushing Flatterer of Akbar বলে গালি দিয়েছেন।
দুর্বলতা সত্ত্বেও ইতিহাস চর্চায় আবুল ফজলের কৃতিত্বকে অস্বীকার করা যায় না। তার মত ধর্মনিরপেক্ষ, যুক্তিবাদী ইতিহাসকার মধ্যযুগে খুবই বিরল। তার কৃতিত্ব এখানেই যে তিনি প্রথম তথ্যনিষ্ঠ যুক্তিবাদী ধর্মনিরপেক্ষ ইতিহাস চর্চার ধারণা ভারতে প্রবর্তন করেন এবং সাধারন মানুষদের ইতিহাসে গন্ডির ভিতরে নিয়ে আসেন ।আকবরের সময়কালের ইতিহাস তার আইন-ই-আকবরী কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা বোঝাতে যদুনাথ সরকার মন্তব্য গুরুত্বপূর্ণ- It's unique compilation of the administrative system and most complete and authoritative history of Akbar reign,
শেখ মুবারকের দুই পুত্র ছিল। আবুউল ফজল আলিমি ও ফৈজি। দুজনেই মুঘল যুগের সাহিত্যিক। আবুল ফজল কেবল সাহিত্যিক ছিলেন না একাধারে ছিলেন ঐতিহাসিক এবং ইতিহাসে একমাত্র সাহিত্যিক ঐতিহাসিক ছিলেন যিনি একসময় সম্রাটের সেনাপতিত্ব করেছিলেন।আকবরের সভাকবি।
উত্তরমুছুন১৬০৩ খ্রিস্টাব্দে জাহাঙ্গীরের সঙ্গে মুঘল বাহিনীর সংঘর্ষে আকবরের হয়ে যুদ্ধে গিয়েছিলেন আবুল ফজল। ১৬০৩ খ্রিস্টাব্দে ৩রা আগস্ট আবুল ফজলের মৃত্যু হয়। ঘটনাটি আকবরের কাছে বেদনাদায়ক অবশ্যই ছিল কারণ যুদ্ধের একদিকে ছিল নিজ পুত্র সেলিম ( জাহাঙ্গীর )অন্যদিকে ছিল তাঁর প্রিয়পাত্র ও দীর্ঘ দিনের ছায়াসঙ্গী আবুল ফজল।ফলত যে কারো পরাজয় মেনে নেওয়া গেলেও মৃত্যু কিভাবে মেনে নেবেন আকবর? আবুল ফজলের মৃত্যুর পর সম্রাটের অবস্থা খুব খারাপ হয়ে যায় শারীরিক ও মানসিক দিক থেকে তিনি ভেঙে যান এবং ১৬০৫ খ্রিস্টাব্দে আকবরের মৃত্যু হয়।
উত্তরমুছুনThank you❤🙏 sir
উত্তরমুছুন