Abd'al Qadir Badayuni | আব্দুল কাদের বদাউনি
আকবরের রাজত্বকালে একজন বিখ্যাত লেখক হলেন আব্দুর কাদের বদাউনী। ফৌজবাদের বদায়ুন শহর থেকে এসেছিলেন তিনি। তাঁর লেখা বিখ্যাত গ্রন্থটি হল মুন্তাখাব উৎ তাওয়ারিখ। এই গ্রন্থে তিনটি খন্ড আছে, প্রথম খন্ডে বাবর ও হুমায়নের এর বিবরণ। দ্বিতীয় খন্ডে আকবর এর শাসনকালে বিবরণ। এবং তৃতীয় খন্ডে ইসলামের শাসক ও পণ্ডিতদের বিবরণ দিয়েছেন। আকবরের রাজত্বকাল সম্পর্কে চর্চা করার জন্য আবুল ফজলের পাশাপাশি বদাউনের এই গ্রন্থটি বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য।
বদাউনি ছিলেন মুঘল যুগের একজন শ্রেষ্ঠ পন্ডিত ব্যক্তি। তিনি সন্ত বাচ্চু, কবি ফৈজি এবং শেখ মুবারক এর কাছে শিক্ষা গ্রহণ করেছিলেন। সঙ্গীত, ইতিহাস ও জ্যোতিষ শাস্ত্রে তার গভীর জ্ঞান ছিল তবে ইতিহাস ছিল তার পছন্দের বিষয়। বদায়ুনির পান্ডিত্যে মুগ্ধ হয়ে আকবর তাকে দরবারের ইমাম পদে নিযুক্ত করেন । আকবর এর পৃষ্ঠপোষকতায় বাদায়ুনি বহু আরবি ও সংস্কৃত গ্রন্থ ফার্সি ভাষায় অনুবাদ করেন, মহাভারতও তিনি পারসিক ভাষায় অনুবাদ করেন।
আকবরের রাজত্বকাল এর বিবরণ দিতে গিয়ে বদাউনি অনেক ক্ষেত্রেই গোঁড়া মানসিকতার পরিচয় দিয়েছেন । আকবরের মুক্তচিন্তাকে তিনি সমর্থন করেননি ।আকবরের বিরুদ্ধে আফগান ও হাকিমের বিদ্রোহকে তিনি বাদশার পাপের ফল বলে উল্লেখ করেছেন ।এক্ষেত্রে তিনি ইতিহাস চর্চার নিরপেক্ষতা থেকে পথভ্রষ্ট হয়েছেন ।এছাড়াও তার গ্রন্থে সন তারিখ সম্পূর্ণ ত্রুটিপূর্ণ। ঘটনার বিবরণও অসংবদ্ধ। বিবরণে ধর্মীয় বিতর্ক, ব্যক্তিগত আক্রমণ, কল্পকাহিনী ও পারিবারিক কাহিনী টেনে এনে ইতিহাসের সংহতি ও ধারাবাহিকতায় তিনি ব্যাঘাত সৃষ্টি করেছেন ।
নানান ত্রুটি থাকার সত্বেও বদায়ুনি রচনার কতগুলো সদর্থক দিক ছিল। বদাউনি কখনও কাউকে খুশি করার চেষ্টা করেননি। তাকে ধর্মগোঁড়াও বলা যায় না। কারণ তিনি অর্থলোভী সূফীদের সহ্য করতে পারতেন না। উলেমাদেরও তিনি সহ্য করতে পারতেন না, এবং আকবরকে সমালোচনা করার মতো সৎ সাহস তিনি দেখিয়ে ছিলেন। আবুল ফজলের বিবরণের বিপরীত অবস্থানে থেকে বাদায়ুনির ইতিহাস রচনা আধুনিক ঐতিহাসিকদের কাছে আকবরের রাজত্বকালের ইতিহাস চর্চাকে অনেক বেশি জীবন্ত করে তুলেছে।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন