সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

মধ্যযুগীয় ইউরোপের নগরের বিকাশ

মধ্যযুগীয় ইউরোপের নগরের বিকাশ

মধ্যযুগের ইউরোপে শহর ও নগরের উদ্ভব ও বিকাশ সে যুগের সামগ্রিক অর্থনৈতিক বিকাশের কারণ ছিল, নাকি তার ফলশ্রুতি এই প্রশ্ন অর্থহীন। শহরের জন্ম হয়েছিল প্রাচীনতম এবং সবচেয়ে বৈপ্লবিক শ্রমবিভাজন এর মধ্য থেকে। যার একদিকে ছিল খেতের কাজ এবং অন্যদিকে ছিল শহুরে বলে বর্ণিত কাজকর্ম। ক্যারোলিঞ্জীয় শাসনকালে যে পর্বের সূচনা হয়েছিল তাতে সামাজিক অর্থনৈতিক অথবা আইনগত অর্থে শহরের কোন অস্তিত্ব ছিল না-- এ কথা বলেছেন হেনরি হেনরী পিরেন। তা সত্ত্বেও রোমান যুগ থেকে মধ্যযুগের শহর ও নগরের ইতিহাসে ধারাবাহিকতা আছে এমন কথাও তিনিই বলেছেন।

বর্বর জার্মানদের আক্রমণে রোমান সাম্রাজ্যের অবসান ঘটলেও শহর ও নগর গুলি রক্ষা পেয়ে গিয়েছিল। শহরগুলিতে চার্চের প্রভাব বৃদ্ধি পেয়েছিল। অনেক মঠ ও যাজকের কার্যালয়কে কেন্দ্র করে শহর গড়ে উঠেছিলশহর ও নগরের উদ্ভব এর ক্ষেত্রে সামন্ত অভিজাতবর্গের প্রাসাদ ও 'বুর্গ'গুলির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল। প্রসঙ্গত বলা চলে অভিজাতদের ঘাঁটিগুলি সেই সময় পরিচিত ছিল 'বুর্গ' শব্দের দ্বারা। আর সাধারনত সামন্ততান্ত্রিক সমাজের যে অঞ্চল গুলি সহজেই রক্ষা করা যেত অথবা যাদের অবস্থান ছিল গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য পথের পাশে, তেমন অঞ্চলই বুর্গে রুপান্তরিত হয়েছিল।

মধ্যযুগের শহর প্রবলভাবে আকৃষ্ট করত বাইরের জগতকে। মধ্যযুগের শহরগুলিতে অর্থনৈতিক স্বয়ংসম্পূর্ণতার ধারণাও প্রতিফলিত হয়েছিল। শহর গ্রামাঞ্চল থেকে যে শুধু মানুষই শুষে নিত তাই নয়, উৎপাদন ও টেনে নিত, যে কারণে গ্রামীণ সভ্যতার দ্রুত বৃদ্ধি ও বিস্তারের ফলে আবাদি জমি ও উৎপন্ন ফসলের পরিমাণ লক্ষ্যণীয়ভাবে বেড়েছিল। মধ্যযুগের শহর ও নগর শুধুমাত্র আকর্ষণের কেন্দ্র ছিল না, প্রসারণের কেন্দ্র ও ছিল। শহরের জোর এবং স্বাবলম্বীতার ইঙ্গিত শুধুমাত্র নগদ মুদ্রা মেলেনি, তার শিল্প উৎপাদনেও মিলেছিল।

এছাড়াও মধ্যযুগের শহর গুলি নানা সাংস্কৃতিক উৎপাদন ও বৌদ্ধিক চর্চার কেন্দ্রে পরিণত হয়েছিল। দ্বাদশ শতকে জ্ঞানচর্চার কর্মশালা ও কেন্দ্র মঠ থেকে সরে গিয়েছিল শহরে। শুরু হয়েছিল এক প্রাতিষ্ঠানিক বিকাশ যার ফলে উচ্চ শিক্ষার বহু কেন্দ্র গড়ে উঠেছিল। যা গোটা খ্রিস্টান জগতের উপর তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাব ফেলেছিল এবং শেষ পর্যন্ত জাতীয় রাষ্ট্র, ভাষা এবং জাতীয়তাবোধের বিকাশে শহর ও নগরের উল্লেখযোগ্য তাৎপর্য ছিল।

 Thanks for reading.

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আরবদের সিন্ধু অভিযান | কারণ ও তাৎপর্য

আরবদের সিন্ধু অভিযান | কারণ ও তাৎপর্য Please visit our Homepage and subscribe us. Suggested Topics || Ghajnavid Invasion || গজনী আক্রমণ || || মামুদের সোমনাথ মন্দির লুণ্ঠন || Somnath Temple Plunder || || তরাইনের যুদ্ধ ও তার গুরুত্ত্ব || মহম্মদ ঘুরির ভারত আক্রমন ও তার চরিত্র || সপ্তম শতকের প্রথমার্ধে আরবদেশে ইসলামের আবির্ভাব ঘটে। ইসলাম আরবদের নতুন করে জীবনীশক্তির সঞ্চার করে । ইসলাম ক্রমশ: একটি ধর্ম থেকে রাজনৈতিক শক্তি রূপে আত্মপ্রকাশ করে। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় তারা আরবীয় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। ভারতবর্ষের সঙ্গে আরবদের যোগাযোগ দীর্ঘদিনের। বাণিজ্যিক সূত্রে তারা নিয়মিত ভারতের উপকূল গুলিতে, বিশেষ করে মালাবার উপকূলে আসত। ভারতীয় ও চীনা পণ্য 'ধাও' নামক বিশেষ জাহাজে করে নিয়ে তারা ইউরোপের বাজারে বিক্রি করত। 712 খ্রিস্টাব্দে ইরাকের গভর্নর হাজ্জাজ বিন ইউসুফ এর সেনাপতি ও জামাতা মোহাম্মদ বিন কাসেম সিন্ধু দেশে একটি সফল অভিযান করেন এবং সিন্ধুদেশ আরবীয় মুসলমানদের অধীনে চলে যায়। অভিযানের(প্রত্যক্ষ) কারণ ভারতবর্ষের প্রতি আরবদের দীর্ঘদিনের নজর ছিল। এর আ...

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ | Category of Archives

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ মহাফেজখানা বা লেখ্যাগারগুলি সাধারণ জনতার জন্য নয় মূলত গবেষক, ঐতিহাসিক, আইনবিদ, চিত্র পরিচালক প্রভৃতি পেশার লোকজন তাদের গবেষণার কাজে লেখ্যাগারে নথি পত্র দেখতে পারেন।  লেখ্যাগার পরিচালনা ও সংরক্ষিত নথির ভিত্তিতে লেখ্যাগগুলিকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়েছে।   1. সরকারি লেখ্যাগার:- কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার বা স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে যে লেখ্যাগারগুলি গড়ে ওঠে। সেগুলিকে সরকারি লেখ্যাগার বলা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এরকম সরকার পরিচালিত এক বা একাধিক লেখ্যাগার থাকে। যেমন, আমেরিকার Natonal Archive And records Administration (NARA)। ভারতবর্ষে র কেন্দ্রীয় লেখ্যাগার National Archive of India নামে পরিচিত। বিভিন্ন ঐতিহাসিক, প্রশাসনিক ও আইনগত নথি, মানচিত্র, নক্সা,  পাণ্ডুলিপি প্রভৃতি সংরক্ষিত থাকে। 2. বানিজ্যিক লেখ্যাগার:-  এটি একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানের লেখ্যাগার বিভিন্ন বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান   মূলত তাদের সংস্থার ঐতিহাসিক এবং বানিজ্যিক নথি সংরক্ষিত রাখে। যেমন, ভারতের প্রথম বানিজ্যিক লেখ্যাগার হলো পুনার Tata Centrel Archive। 3. অলাভজনক লেখ্যাগ...

ষোড়শ শতকীয় ইউরোপে মূল্যবিপ্লব | Price Revolution

 ষোড়শ শতকের ইউরোপে মূল্য বিপ্লব   16 শতাব্দীতে ইউরোপীয় অর্থনীতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো মূল্য বিপ্লব। নিত্যব্যবহার্য পণ্যের মূল্য প্রায় 150 বছর সুস্থির থাকার পর ঊর্ধ্বমুখী হতে আরম্ভ করে, এবং 16 শতাব্দীর শেষে খাদ্যপণ্যের মূল্যের প্রায় সাড়ে পাঁচ গুণ বেড়ে যায়। পশ্চিম ইউরোপের অর্থনীতিতে এমন অভাবনীয় এবং সুদুরপ্রসারী ফলাফলসম্পন্ন ঘটনা মূল্য বিপ্লব নামে পরিচিত। মূল্য বিপ্লবের কতগুলি সাধারণ বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। যথা--    (১) কৃষিজ পণ্যের তুলনায় শিল্পজাত পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি ছিল কম, এবং খাদ্যশস্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি। (২) ভূমি রাজস্ব সহ ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক, তোলা ইত্যাদির হার বৃদ্ধি এবং ফটকাবাজির আবির্ভাব। (৩) মূল্যবৃদ্ধির তুলনায় মজুরির হার খুবই কম ছিল বলে প্রকৃত আয় হ্রাস পেয়েছিল। (৪) ভূমি বিক্রয়যোগ্য পণ্যে পরিণত হওয়া। (৫) গ্রামীণ বুর্জোয়াজি শ্রেণীর আবির্ভাব। ষোড়শ শতকের আগেও প্রাকৃতিক কারণে মূল্যবৃদ্ধি হয়েছিল, তবে তা ছিল 2, 3 শতাংশের মতো, যা অস্বাভাবিক মনে হতো না। কিন্তু ষোল শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে যে নিরবিচ্ছিন্ন মূল্যবৃদ্ধি হ...