সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

বর্ণাশ্রম

Please visit our Homepage and Subscribe us.

বর্ণাশ্রম

প্রাচীন ভারতে বৈদিক সমাজ ব্যবস্থার অন্যতম অঙ্গ হল বর্ণাশ্রম ব্যবস্থা। তত্ত্বগতভাবে বৈদিক সমাজ কাঠামো বর্ণাশ্রম ব্যবস্থার উপর ভিত্তি করেই গড়ে ওঠে। বর্ণাশ্রম হল চতুর্বর্ণ ব্যবস্থা ও চতুরাশ্রম প্রথার সমন্বয়। বিভিন্ন বর্ণের জন্য তার পালনীয় আশ্রম নির্দিষ্ট। বর্ণাশ্রম ব্যবস্থার সঠিক অনুসরণ এর মাধ্যমে জীবনের চারটি প্রধান অভীষ্ট ধর্ম, কাম, অর্থ ও মোক্ষ লাভ সম্ভব।

আক্ষরিক অর্থে বর্ণ শব্দের অর্থ রঙ। ঋকবৈদিক যুগের প্রথম দিকে বর্ণ বলতে আর্য বর্ণ ও দস্যু বর্ণকে  বোঝাত, যা সম্ভবত গাত্রবর্ণের ভিত্তিতে নির্ধারিত হত। আর্যরা অনার্যদের দস্যু বা দাস বলত। ঋকবেদের দশম মন্ডলে প্রথমবার চতুর্বর্ণের উল্লেখ লক্ষ্য করা যায়। এখানে পেশার ভিত্তিতে সমগ্র বৈদিক সমাজকে চার ভাগে বিভক্ত করা হয়-- ব্রাহ্মন, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্র। ব্রাহ্মণের কাজ হল শাস্ত্রচর্চা করা, ক্ষত্রিয়ের কাজ শাসন করা, বৈশ্যের কাজ উৎপাদন করা এবং শূদ্রের কাজ উপরের তিন বর্ণের সেবামূলক কাজে শ্রমদানে লিপ্ত থাকা। প্রাথমিক ভাবে এই বিভাজন পেশাভিত্তিক হলেও পরবর্তীকালে তা জাতিভিত্তিক সামাজিক স্তরীকরনে পরিণতি লাভ করে, যেখানে সমাজে সবচেয়ে সুবিধাভোগী ও সম্মানীয় অংশ হিসাবে ব্রাহ্মণরা আত্মপ্রকাশ করে এবং উল্টোদিকে শূদ্ররা অধিকারহীন সর্বহারায় পরিণত হয়। 

বৈদিক ধর্মমতে চতুরাশ্রম হল একজন ব্যাক্তির সমগ্র জীবনকে বিভিন্ন পর্বে বিভাজন। একজন ব্যাক্তির জীবৎকালকে মোট চারটি পর্বে বা আশ্রমে ভাগ করা হয়। এগুলি হল-- ১) ব্রহ্মচর্য বা শিক্ষালাভের পর্ব, ২) গার্হস্থ্য বা সাংসারিক ও বিবাহিত জীবনের পর্ব, ৩) বানপ্রস্থ বা সাংসারিক জীবন ছিন্ন করার পর্ব এবং ৪) সন্ন্যাস বা পার্থিব মায়া ছিন্ন করে মোক্ষলাভের পর্ব। প্রথম পর্বে আর্য বালক 'ধর্মে'র নীতিগুলি অর্জন করবে। দ্বিতীয় পর্বে সে ধর্মপথে 'কাম' চরিতার্থ  ও 'অর্থ' উপার্জন করবে এবং তৃতীয় ও চতুর্থ পর্ব হল মোক্ষ লাভের পর্ব। অর্থাৎ এই চারটি পর্ব বা আশ্রমের সঠিক সমন্বয়ই হল পুরুষার্থ লাভের উপায়। 

ব্রাহ্মণের জন্য উপরোক্ত চারটি আশ্রমই আবশ্যিক। ক্ষত্রিয়কে প্রথম তিনটি আশ্রম পালন করতে হবে, অর্থাৎ ক্ষত্রিয়ের জন্য সন্ন্যাস নয়। বৈশ্যের জন্য প্রথম দুটি এবং শূদ্রের জন্য কেবল দ্বিতীয় আশ্রমটি নির্দিষ্ট। যদিও এগুলি ছিল নিয়মমাত্র। বাস্তবিক জীবনে এর ব্যাতিক্রম ঘটত।

Thanks for reading.

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আরবদের সিন্ধু অভিযান | কারণ ও তাৎপর্য

আরবদের সিন্ধু অভিযান | কারণ ও তাৎপর্য Please visit our Homepage and subscribe us. Suggested Topics || Ghajnavid Invasion || গজনী আক্রমণ || || মামুদের সোমনাথ মন্দির লুণ্ঠন || Somnath Temple Plunder || || তরাইনের যুদ্ধ ও তার গুরুত্ত্ব || মহম্মদ ঘুরির ভারত আক্রমন ও তার চরিত্র || সপ্তম শতকের প্রথমার্ধে আরবদেশে ইসলামের আবির্ভাব ঘটে। ইসলাম আরবদের নতুন করে জীবনীশক্তির সঞ্চার করে । ইসলাম ক্রমশ: একটি ধর্ম থেকে রাজনৈতিক শক্তি রূপে আত্মপ্রকাশ করে। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় তারা আরবীয় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। ভারতবর্ষের সঙ্গে আরবদের যোগাযোগ দীর্ঘদিনের। বাণিজ্যিক সূত্রে তারা নিয়মিত ভারতের উপকূল গুলিতে, বিশেষ করে মালাবার উপকূলে আসত। ভারতীয় ও চীনা পণ্য 'ধাও' নামক বিশেষ জাহাজে করে নিয়ে তারা ইউরোপের বাজারে বিক্রি করত। 712 খ্রিস্টাব্দে ইরাকের গভর্নর হাজ্জাজ বিন ইউসুফ এর সেনাপতি ও জামাতা মোহাম্মদ বিন কাসেম সিন্ধু দেশে একটি সফল অভিযান করেন এবং সিন্ধুদেশ আরবীয় মুসলমানদের অধীনে চলে যায়। অভিযানের(প্রত্যক্ষ) কারণ ভারতবর্ষের প্রতি আরবদের দীর্ঘদিনের নজর ছিল। এর আ...

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ | Category of Archives

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ মহাফেজখানা বা লেখ্যাগারগুলি সাধারণ জনতার জন্য নয় মূলত গবেষক, ঐতিহাসিক, আইনবিদ, চিত্র পরিচালক প্রভৃতি পেশার লোকজন তাদের গবেষণার কাজে লেখ্যাগারে নথি পত্র দেখতে পারেন।  লেখ্যাগার পরিচালনা ও সংরক্ষিত নথির ভিত্তিতে লেখ্যাগগুলিকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়েছে।   1. সরকারি লেখ্যাগার:- কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার বা স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে যে লেখ্যাগারগুলি গড়ে ওঠে। সেগুলিকে সরকারি লেখ্যাগার বলা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এরকম সরকার পরিচালিত এক বা একাধিক লেখ্যাগার থাকে। যেমন, আমেরিকার Natonal Archive And records Administration (NARA)। ভারতবর্ষে র কেন্দ্রীয় লেখ্যাগার National Archive of India নামে পরিচিত। বিভিন্ন ঐতিহাসিক, প্রশাসনিক ও আইনগত নথি, মানচিত্র, নক্সা,  পাণ্ডুলিপি প্রভৃতি সংরক্ষিত থাকে। 2. বানিজ্যিক লেখ্যাগার:-  এটি একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানের লেখ্যাগার বিভিন্ন বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান   মূলত তাদের সংস্থার ঐতিহাসিক এবং বানিজ্যিক নথি সংরক্ষিত রাখে। যেমন, ভারতের প্রথম বানিজ্যিক লেখ্যাগার হলো পুনার Tata Centrel Archive। 3. অলাভজনক লেখ্যাগ...

ষোড়শ শতকীয় ইউরোপে মূল্যবিপ্লব | Price Revolution

 ষোড়শ শতকের ইউরোপে মূল্য বিপ্লব   16 শতাব্দীতে ইউরোপীয় অর্থনীতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো মূল্য বিপ্লব। নিত্যব্যবহার্য পণ্যের মূল্য প্রায় 150 বছর সুস্থির থাকার পর ঊর্ধ্বমুখী হতে আরম্ভ করে, এবং 16 শতাব্দীর শেষে খাদ্যপণ্যের মূল্যের প্রায় সাড়ে পাঁচ গুণ বেড়ে যায়। পশ্চিম ইউরোপের অর্থনীতিতে এমন অভাবনীয় এবং সুদুরপ্রসারী ফলাফলসম্পন্ন ঘটনা মূল্য বিপ্লব নামে পরিচিত। মূল্য বিপ্লবের কতগুলি সাধারণ বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। যথা--    (১) কৃষিজ পণ্যের তুলনায় শিল্পজাত পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি ছিল কম, এবং খাদ্যশস্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি। (২) ভূমি রাজস্ব সহ ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক, তোলা ইত্যাদির হার বৃদ্ধি এবং ফটকাবাজির আবির্ভাব। (৩) মূল্যবৃদ্ধির তুলনায় মজুরির হার খুবই কম ছিল বলে প্রকৃত আয় হ্রাস পেয়েছিল। (৪) ভূমি বিক্রয়যোগ্য পণ্যে পরিণত হওয়া। (৫) গ্রামীণ বুর্জোয়াজি শ্রেণীর আবির্ভাব। ষোড়শ শতকের আগেও প্রাকৃতিক কারণে মূল্যবৃদ্ধি হয়েছিল, তবে তা ছিল 2, 3 শতাংশের মতো, যা অস্বাভাবিক মনে হতো না। কিন্তু ষোল শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে যে নিরবিচ্ছিন্ন মূল্যবৃদ্ধি হ...