সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

মুঘল সাম্রাজ্যের পতনে কৃষক বিদ্রোহ গুলির ভূমিকা

মুঘল সাম্রাজ্যের পতনে কৃষক বিদ্রোহ গুলির ভূমিকা

সপ্তদশ শতকের শেষ ভাগ থেকে অষ্টাদশ শতকের গোড়ার দিকে ঘটে যাওয়া একাধিক কৃষক বিদ্রোহকে মুঘল সাম্রাজ্যের অবনতির বড় কারণ বলে মনে করা হয়। ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক চাপ সমকালীন গ্রামীণ সমাজ সহজভাবে মেনে নেয়নি। কাজেই মুঘল সাম্রাজ্যের ইতিহাসে কৃষক বিদ্রোহের ব্যাপারটি মাঝে মাঝেই দেখা দিত। কিন্তু শক্তিশালী শাসকদের সময় বিদ্রোহ সেইভাবে বৃহৎ আকার ধারণ করতে পারেনিন। কিন্তু সপ্তদশ শতকের শেষ ভাগে এবং অষ্টাদশ শতকের সূচনালগ্ন থেকেই মুঘল শক্তির দুর্বলতা প্রকট হয়ে উঠলে কৃষক বিদ্রোহ গুলি ব্যাপক আকার নিতে থাকে। আর এইসব ক্ষেত্রে সাধারণত স্থানীয় জমিদাররা নেতৃত্ব দিতে থাকে।


ঔরঙ্গজেবের সময় জাঠ বিদ্রোহ ছিল উল্লেখযোগ্য। এদের নেতা ছিলেন গোকুল জাঠ। সরকারি সেনাদের হাতে তার মৃত্যু হলেও জাঠ বিদ্রোহ থেমে যায়নি, বরং কৃষকেরা রাজস্ব দেয়া বন্ধ করে সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলে। 1681 খ্রিস্টাব্দে ফৌজদার মুলতফৎ খান এমনই একটি বিদ্রোহ দমন করতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছিলেন। জাঠদের মতই উত্তর ভারতে আরো একটি সম্প্রদায় কৃষক বিদ্রোহের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল, তারা হল সৎনামী। 1672 খ্রিস্টাব্দে এই বিদ্রোহের সূচনা হয়েছিল। এছাড়াও পাঞ্জাবের শতদ্রু ও বিপাশা নদীবেষ্টিত অঞ্চল থেকে শুরু করে গুজরাটের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে বারবার বিদ্রোহ দেখা দিতে থাকে। দিল্লির উপকণ্ঠে মেওয়াট অঞ্চলেও বিদ্রোহ দেখা দেয়। মুঘল বাহিনী বারবার অভিযান চালিয়ে বিদ্রোহ চিরতরে নির্মূল করতে পারিনি।

ওরঙ্গজেব এর মৃত্যুর পরবর্তী সময়ে কৃষক বিদ্রোহ গুলি ব্যাপক আকার নিতে থাকে। একাধিক জমিনদার কৃষকদের বিদ্রোহে নেতৃত্ব দিতে থাকে। 1715 খ্রিস্টাব্দে রাজপুত জমিনদাররা মুঘল প্রশাসনকে কার্যত পঙ্গু করে দিয়েছিল। প্রসঙ্গত বলা চলে শিবাজীও অত্যাচারিত কৃষকদের নিয়েই তার বাহিনী করে তুলেছিলেন। মুঘল শক্তির দুর্বলতার সুযোগে জমিনদাররা একাধিক স্থানে কেল্লা তৈরি করে ও সশস্ত্র সেনাদল সাজিয়ে প্রায় স্বাধীন হয়ে উঠেছিল। এইভাবে গ্রামীণ এলাকায় মুঘল কর্তৃত্ব দ্রুত কমে আসতে থাকে। আর গ্রামীণ এলাকাই ছিল মুঘল রাজস্বের প্রধান উৎস। তাই গ্রামীণ এলাকা হাতছাড়া হতে থাকলে মুঘল অর্থনীতি দুর্বল হয়ে পড়ে এবং সাম্রাজ্যের সংকট আরও ত্বরান্বিত হয়।
____________________
Thanks for reading.

Pravat Bhushan Bandyopadhyay
SACT, Sonarpur Mahavidyalaya.

মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আরবদের সিন্ধু অভিযান | কারণ ও তাৎপর্য

আরবদের সিন্ধু অভিযান | কারণ ও তাৎপর্য Please visit our Homepage and subscribe us. Suggested Topics || Ghajnavid Invasion || গজনী আক্রমণ || || মামুদের সোমনাথ মন্দির লুণ্ঠন || Somnath Temple Plunder || || তরাইনের যুদ্ধ ও তার গুরুত্ত্ব || মহম্মদ ঘুরির ভারত আক্রমন ও তার চরিত্র || সপ্তম শতকের প্রথমার্ধে আরবদেশে ইসলামের আবির্ভাব ঘটে। ইসলাম আরবদের নতুন করে জীবনীশক্তির সঞ্চার করে । ইসলাম ক্রমশ: একটি ধর্ম থেকে রাজনৈতিক শক্তি রূপে আত্মপ্রকাশ করে। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় তারা আরবীয় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। ভারতবর্ষের সঙ্গে আরবদের যোগাযোগ দীর্ঘদিনের। বাণিজ্যিক সূত্রে তারা নিয়মিত ভারতের উপকূল গুলিতে, বিশেষ করে মালাবার উপকূলে আসত। ভারতীয় ও চীনা পণ্য 'ধাও' নামক বিশেষ জাহাজে করে নিয়ে তারা ইউরোপের বাজারে বিক্রি করত। 712 খ্রিস্টাব্দে ইরাকের গভর্নর হাজ্জাজ বিন ইউসুফ এর সেনাপতি ও জামাতা মোহাম্মদ বিন কাসেম সিন্ধু দেশে একটি সফল অভিযান করেন এবং সিন্ধুদেশ আরবীয় মুসলমানদের অধীনে চলে যায়। অভিযানের(প্রত্যক্ষ) কারণ ভারতবর্ষের প্রতি আরবদের দীর্ঘদিনের নজর ছিল। এর আ...

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ | Category of Archives

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ মহাফেজখানা বা লেখ্যাগারগুলি সাধারণ জনতার জন্য নয় মূলত গবেষক, ঐতিহাসিক, আইনবিদ, চিত্র পরিচালক প্রভৃতি পেশার লোকজন তাদের গবেষণার কাজে লেখ্যাগারে নথি পত্র দেখতে পারেন।  লেখ্যাগার পরিচালনা ও সংরক্ষিত নথির ভিত্তিতে লেখ্যাগগুলিকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়েছে।   1. সরকারি লেখ্যাগার:- কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার বা স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে যে লেখ্যাগারগুলি গড়ে ওঠে। সেগুলিকে সরকারি লেখ্যাগার বলা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এরকম সরকার পরিচালিত এক বা একাধিক লেখ্যাগার থাকে। যেমন, আমেরিকার Natonal Archive And records Administration (NARA)। ভারতবর্ষে র কেন্দ্রীয় লেখ্যাগার National Archive of India নামে পরিচিত। বিভিন্ন ঐতিহাসিক, প্রশাসনিক ও আইনগত নথি, মানচিত্র, নক্সা,  পাণ্ডুলিপি প্রভৃতি সংরক্ষিত থাকে। 2. বানিজ্যিক লেখ্যাগার:-  এটি একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানের লেখ্যাগার বিভিন্ন বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান   মূলত তাদের সংস্থার ঐতিহাসিক এবং বানিজ্যিক নথি সংরক্ষিত রাখে। যেমন, ভারতের প্রথম বানিজ্যিক লেখ্যাগার হলো পুনার Tata Centrel Archive। 3. অলাভজনক লেখ্যাগ...

ষোড়শ শতকীয় ইউরোপে মূল্যবিপ্লব | Price Revolution

 ষোড়শ শতকের ইউরোপে মূল্য বিপ্লব   16 শতাব্দীতে ইউরোপীয় অর্থনীতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো মূল্য বিপ্লব। নিত্যব্যবহার্য পণ্যের মূল্য প্রায় 150 বছর সুস্থির থাকার পর ঊর্ধ্বমুখী হতে আরম্ভ করে, এবং 16 শতাব্দীর শেষে খাদ্যপণ্যের মূল্যের প্রায় সাড়ে পাঁচ গুণ বেড়ে যায়। পশ্চিম ইউরোপের অর্থনীতিতে এমন অভাবনীয় এবং সুদুরপ্রসারী ফলাফলসম্পন্ন ঘটনা মূল্য বিপ্লব নামে পরিচিত। মূল্য বিপ্লবের কতগুলি সাধারণ বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। যথা--    (১) কৃষিজ পণ্যের তুলনায় শিল্পজাত পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি ছিল কম, এবং খাদ্যশস্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি। (২) ভূমি রাজস্ব সহ ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক, তোলা ইত্যাদির হার বৃদ্ধি এবং ফটকাবাজির আবির্ভাব। (৩) মূল্যবৃদ্ধির তুলনায় মজুরির হার খুবই কম ছিল বলে প্রকৃত আয় হ্রাস পেয়েছিল। (৪) ভূমি বিক্রয়যোগ্য পণ্যে পরিণত হওয়া। (৫) গ্রামীণ বুর্জোয়াজি শ্রেণীর আবির্ভাব। ষোড়শ শতকের আগেও প্রাকৃতিক কারণে মূল্যবৃদ্ধি হয়েছিল, তবে তা ছিল 2, 3 শতাংশের মতো, যা অস্বাভাবিক মনে হতো না। কিন্তু ষোল শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে যে নিরবিচ্ছিন্ন মূল্যবৃদ্ধি হ...