সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

প্রাচীন ভারতে মুদ্রাঃ 300 BC-300 CE

Please visit our Homepage and Subscribe us.

প্রাচীন ভারতে মুদ্রাঃ 300 BC-300 CE

বাণিজ্যিক ক্রিয়া-কলাপের অন্যতম শর্ত হল মুদ্রা অর্থনীতি। প্রাচীন ভারতে মুদ্রার প্রথম ব্যবহার লক্ষ্য করা যায় খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে নাগাদ। এই মুদ্রা গুলিতে কোন রাজার নাম থাকত না। একদিক ছাপ দেওয়া এই তাম্রমুদ্রাগুলি 'অঙ্ক চিহ্নিত মুদ্রা' নামে পরিচিত ছিল।
বাণিজ্যের অগ্রগতির সাথে সাথে মুদ্রার ব্যবহার ক্রমশ বাড়তে থাকে। মৌর্য আমলে অঙ্ক চিহ্নিত মুদ্রা ব্যবহারের পাশাপাশি ছাঁচে ঢালা (কাস্ট) মুদ্রার ব্যবহার শুরু হয়। 'তোরণের উপর বসা ময়ূর'-এর নকশা কাটা মুদ্রাকে সাধারনত মৌর্য মুদ্রা বলা হয়। মৌর্য মুদ্রায়ও শাসকের নাম বা পরিচয় অনুপস্থিত। কিন্তু অর্থশাস্ত্রে মুদ্রা প্রস্তুতির উপর রাষ্ট্রীয় অধিকার বলবৎ করার কথা বলা হয়েছে। যে রাজকর্মচারী মুদ্রা তৈরির তদারকি করতেন তাকে রূপদর্শক বলা হত।

মৌর্য পরবর্তী ভারতে ব্যবসা-বাণিজ্যের অভূতপূর্ব বিস্তার ঘটে। ফলে মুদ্রার ব্যবহার ব্যাপক বৃদ্ধি পায়। ইন্দোগ্রীকরা সোনা ও রুপার মুদ্রা নিয়মিত ভাবে চালু করেছিলেন। উত্তর ভারতে কুষাণ মুদ্রার গুরুত্ব
গোতমীপুত্র সাতকর্নির মুদ্রা
ছিল বেশি। তারা স্বর্ণ, রৌপ্য ও তাম্র তিন ধাতুর মুদ্রা প্রস্তুত করেন। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের প্রয়োজনে বাণিজ্যের কথা মাথায় রেখেই বিম কদফিসেস রোমক স্বর্ণমুদ্রার আদলে স্বর্ণমুদ্রা চালু করেন। ব্রতীন্দ্রনাথ মুখার্জির গবেষণা থেকে জানা যায়, রৌপ্যমুদ্রা নির্মাণে কুষান শাসকেরা সাধারনত বেসরকারি উদ্যোগকে মেনে নিতেন। কিন্তু রোম ভারত বাণিজ্যে গুরুত্বপূর্ণ এলাকা নিম্ন সিন্ধু উপত্যকায় মুদ্রায় অতিরিক্ত খাদের সমস্যা লক্ষ্য করে এই এলাকার রৌপ্য মুদ্রা তৈরির দায়িত্ব রাজকীয় টাঁকশাল এর উপর অর্পণ করেন। কুষাণদের তাম্রমুদ্রা গুলির তিন প্রকার ওজন ছিল: 17 গ্রাম 8-8.5 গ্রাম ও 4-5 গ্রাম।

দাক্ষিণাত্যের সাতবাহন রাজারা ও নিয়মিত মুদ্রা প্রচলন করতেন। সাতবাহনরা রুপো ও তামার মুদ্রা প্রচলন করেছিলেন। সীসা ও পোতিন মুদ্রা চালু করেছিলেন। এছাড়া মধ্যভারতের নাগবংশীয় এবং কৌশাম্বী, মথুরা, অবন্তী এবং অহিছত্রের মিত্রবংশীয় রাজারা তাম্রমুদ্রা প্রস্তুত করেছিলেন। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, মধ্যভারতের অনেকগুলো অরাজতান্ত্রিক কৌম সংগঠনও তাম্র মুদ্রা প্রচলন করেছিল। প্রকৃতপক্ষে আলোচ্য পর্ব বাণিজ্যিক দিক থেকে এতটাই গুরুত্বপূর্ণ ছিল যে মুদ্রার প্রচলন সর্বত্র অপরিহার্য হয়ে পড়েছিল।

Thanks for reading.


মন্তব্যসমূহ

  1. শক ক্ষত্রপ নহপান এর মুদ্রা ভান্ডার ছিল যুগল থুম্বিতে গৌতমীপুত্র এটি দখল করে নিজস্ব ছাপমারা মুদ্রার প্রবর্তন করেন|

    উত্তরমুছুন
  2. ব্রতীন্দ্রনাথ মুখার্জির লেখা বই টাকাকড়ি আবির্ভাবের যুগ এই বিষয়ে তথ্য দিতে পারবে

    উত্তরমুছুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আরবদের সিন্ধু অভিযান | কারণ ও তাৎপর্য

আরবদের সিন্ধু অভিযান | কারণ ও তাৎপর্য Please visit our Homepage and subscribe us. Suggested Topics || Ghajnavid Invasion || গজনী আক্রমণ || || মামুদের সোমনাথ মন্দির লুণ্ঠন || Somnath Temple Plunder || || তরাইনের যুদ্ধ ও তার গুরুত্ত্ব || মহম্মদ ঘুরির ভারত আক্রমন ও তার চরিত্র || সপ্তম শতকের প্রথমার্ধে আরবদেশে ইসলামের আবির্ভাব ঘটে। ইসলাম আরবদের নতুন করে জীবনীশক্তির সঞ্চার করে । ইসলাম ক্রমশ: একটি ধর্ম থেকে রাজনৈতিক শক্তি রূপে আত্মপ্রকাশ করে। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় তারা আরবীয় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। ভারতবর্ষের সঙ্গে আরবদের যোগাযোগ দীর্ঘদিনের। বাণিজ্যিক সূত্রে তারা নিয়মিত ভারতের উপকূল গুলিতে, বিশেষ করে মালাবার উপকূলে আসত। ভারতীয় ও চীনা পণ্য 'ধাও' নামক বিশেষ জাহাজে করে নিয়ে তারা ইউরোপের বাজারে বিক্রি করত। 712 খ্রিস্টাব্দে ইরাকের গভর্নর হাজ্জাজ বিন ইউসুফ এর সেনাপতি ও জামাতা মোহাম্মদ বিন কাসেম সিন্ধু দেশে একটি সফল অভিযান করেন এবং সিন্ধুদেশ আরবীয় মুসলমানদের অধীনে চলে যায়। অভিযানের(প্রত্যক্ষ) কারণ ভারতবর্ষের প্রতি আরবদের দীর্ঘদিনের নজর ছিল। এর আ...

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ | Category of Archives

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ মহাফেজখানা বা লেখ্যাগারগুলি সাধারণ জনতার জন্য নয় মূলত গবেষক, ঐতিহাসিক, আইনবিদ, চিত্র পরিচালক প্রভৃতি পেশার লোকজন তাদের গবেষণার কাজে লেখ্যাগারে নথি পত্র দেখতে পারেন।  লেখ্যাগার পরিচালনা ও সংরক্ষিত নথির ভিত্তিতে লেখ্যাগগুলিকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়েছে।   1. সরকারি লেখ্যাগার:- কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার বা স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে যে লেখ্যাগারগুলি গড়ে ওঠে। সেগুলিকে সরকারি লেখ্যাগার বলা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এরকম সরকার পরিচালিত এক বা একাধিক লেখ্যাগার থাকে। যেমন, আমেরিকার Natonal Archive And records Administration (NARA)। ভারতবর্ষে র কেন্দ্রীয় লেখ্যাগার National Archive of India নামে পরিচিত। বিভিন্ন ঐতিহাসিক, প্রশাসনিক ও আইনগত নথি, মানচিত্র, নক্সা,  পাণ্ডুলিপি প্রভৃতি সংরক্ষিত থাকে। 2. বানিজ্যিক লেখ্যাগার:-  এটি একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানের লেখ্যাগার বিভিন্ন বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান   মূলত তাদের সংস্থার ঐতিহাসিক এবং বানিজ্যিক নথি সংরক্ষিত রাখে। যেমন, ভারতের প্রথম বানিজ্যিক লেখ্যাগার হলো পুনার Tata Centrel Archive। 3. অলাভজনক লেখ্যাগ...

ষোড়শ শতকীয় ইউরোপে মূল্যবিপ্লব | Price Revolution

 ষোড়শ শতকের ইউরোপে মূল্য বিপ্লব   16 শতাব্দীতে ইউরোপীয় অর্থনীতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো মূল্য বিপ্লব। নিত্যব্যবহার্য পণ্যের মূল্য প্রায় 150 বছর সুস্থির থাকার পর ঊর্ধ্বমুখী হতে আরম্ভ করে, এবং 16 শতাব্দীর শেষে খাদ্যপণ্যের মূল্যের প্রায় সাড়ে পাঁচ গুণ বেড়ে যায়। পশ্চিম ইউরোপের অর্থনীতিতে এমন অভাবনীয় এবং সুদুরপ্রসারী ফলাফলসম্পন্ন ঘটনা মূল্য বিপ্লব নামে পরিচিত। মূল্য বিপ্লবের কতগুলি সাধারণ বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। যথা--    (১) কৃষিজ পণ্যের তুলনায় শিল্পজাত পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি ছিল কম, এবং খাদ্যশস্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি। (২) ভূমি রাজস্ব সহ ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক, তোলা ইত্যাদির হার বৃদ্ধি এবং ফটকাবাজির আবির্ভাব। (৩) মূল্যবৃদ্ধির তুলনায় মজুরির হার খুবই কম ছিল বলে প্রকৃত আয় হ্রাস পেয়েছিল। (৪) ভূমি বিক্রয়যোগ্য পণ্যে পরিণত হওয়া। (৫) গ্রামীণ বুর্জোয়াজি শ্রেণীর আবির্ভাব। ষোড়শ শতকের আগেও প্রাকৃতিক কারণে মূল্যবৃদ্ধি হয়েছিল, তবে তা ছিল 2, 3 শতাংশের মতো, যা অস্বাভাবিক মনে হতো না। কিন্তু ষোল শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে যে নিরবিচ্ছিন্ন মূল্যবৃদ্ধি হ...