সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

Champaran Satyagraha | চম্পারন সত্যাগ্রহ

Susmita Mondal,
PG Student, JU

Champaran  Satyagraha | চম্পারন সত্যাগ্রহ


জাতীয় রাজনীতিতে গান্ধীর উত্থান বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। 1915 খ্রীস্টাব্দে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন গান্ধীজী দঃ আফ্রিকা থেকে ভারতে ফিরে আসেন এবং সর্বভারতীয় রাজনীতিতে অংশগ্রহণের পূর্বে তিনি (1917-1918) আঞ্চলিক স্তরে তিনটি পৃথক এলাকায় তাঁর রাজনৈতিক অস্ত্র 'সত্যাগ্রহ' নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা শুরু করেন। সত্যাগ্রহ হল আক্ষরিক অর্থে সত্যের প্রতি আগ্রহ। কিন্তু ভারতীয় রাজনীতির আঙিনায় গান্ধী প্রবর্তিত সত্যাগ্রহ ছিল সত্য ও অহিংসার উপর প্রতিষ্ঠিত এবং অন্যায়ের বিরূদ্ধে পরিচালিত সংগ্রাম।তাঁর আদর্শের উপর গীতার ইংরাজী ভাষ্য ('the song celestial'), টলস্টয় ('light of Asia within you'), রাসকিন প্রমুখ পশ্চিমী লেখক এবং বৈষ্ণব ও জৈন ধর্মতত্ত্বের প্রভাব ছিল। তাঁর মতে,মানুষের সত্যের শক্তিকে ব্যবহার করে অশুভ শক্তির অন্তরের শুভবুদ্ধির জাগরণ ঘটানোই হল সত্যাগ্রহের উদ্দেশ্য।

গান্ধির প্রথম সত্যাগ্রহ ছিল চম্পারন সত্যাগ্রহ। নীলকর সাহেবদের অমানবিক অত্যাচারে বিহারের চম্পারণ জেলার নীলচাষীদের অবস্থা চরমে উঠেছিল। নীলকররা তিনকাঠিয়া ব্যবস্থার মাধ্যমে স্থানীয় চাষীদের মোট জমির 3/20 অংশে যেমন বলপূর্বক নীলচাষে বাধ্য করতেন, তেমনি লভ্যাংশের অধিকাংশই দাদন প্রথার মাধ্যমে সাহেবদেরকে খাজনা হিসাবে দিয়ে দিতে হত। এমতাবস্থায় 1916 খ্রীঃ রাজকুমার শুক্লা নামক এক কৃষক নেতা নীলচাষীদের উপর সংঘটিত অত্যাচারের কথা জানালে গান্ধী 1917 খ্রীঃচম্পারণে আন্দোলনের সূচনা করেন এবং একাধিক কৃষক এই আন্দোলনে যোগ দেন। সংগঠিত আন্দোলন গড়ে তোলার কৃতিত্ব নিঃসন্দেহে গান্ধীর; কিন্তু কৃষকদের কুঠিয়ালবিরোধী ক্ষোভ দীর্ঘদিনের। পুলিশ গান্ধীজীকে চম্পারণ ছেড়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ দিলেও তিনি তা অমান্য করেন এবং ফলস্বরূপ তিনি গ্রেপ্তার হন। যদিও পরে তাঁকে বিনা শর্তে মুক্তি দেওয়া হয় । গান্ধীর অসাধারণ দৃঢ়তার ফলে 1918 খ্রীঃ 'চম্পারণ কৃষি আইন' পাশ হয় এবং নীলচাষীদের উপর সর্বপ্রকার জুলুম বন্ধ করে একটি অনুসন্ধান কমিটি গড়ে তোলা হয়। এমনকী তিন কাঠিয়া ব্যবস্থার উচ্ছেদ ঘটিয়ে বর্ধিত খাজনার 20%-25% হ্রাস করা হয়। যদিও নীলকরদের অত্যাচার পুরোপুরি বন্ধ হয়নি, তারা তাদের নিয়ন্ত্রিত জমিতে মাত্রাতিরিক্ত অনুদান আদায় করত। ফলে ছোট চাষীরা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল।

সর্বভারতীয় রাজনৈতিক নেতা হিসাবে গান্ধীজীর উত্থানের প্রথম পদক্ষেপ ছিল চম্পারণ সত্যাগ্রহ। এই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে গান্ধী একদিকে যেমন ভারতের নিরক্ষর কৃষক শ্রেণির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলেন, তেমনি গ্রামাঞ্চলে তার রাজনৈতিক চিন্তাধারার বাস্তব প্রয়োগ ঘটে। এপ্রসঙ্গে ডঃ জুডিথ ব্রাউন বলেছেন,চম্পারণ সত্যাগ্রহের মাধ্যমে ভারতীয় কৃষক সমাজের সঙ্গে গান্ধীর প্রথম যোগাযোগ গড়ে ওঠে এবং তিনি তাদের দুঃখ-দারিদ্র সম্পর্কে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা লাভ করেন।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আরবদের সিন্ধু অভিযান | কারণ ও তাৎপর্য

আরবদের সিন্ধু অভিযান | কারণ ও তাৎপর্য Please visit our Homepage and subscribe us. Suggested Topics || Ghajnavid Invasion || গজনী আক্রমণ || || মামুদের সোমনাথ মন্দির লুণ্ঠন || Somnath Temple Plunder || || তরাইনের যুদ্ধ ও তার গুরুত্ত্ব || মহম্মদ ঘুরির ভারত আক্রমন ও তার চরিত্র || সপ্তম শতকের প্রথমার্ধে আরবদেশে ইসলামের আবির্ভাব ঘটে। ইসলাম আরবদের নতুন করে জীবনীশক্তির সঞ্চার করে । ইসলাম ক্রমশ: একটি ধর্ম থেকে রাজনৈতিক শক্তি রূপে আত্মপ্রকাশ করে। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় তারা আরবীয় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। ভারতবর্ষের সঙ্গে আরবদের যোগাযোগ দীর্ঘদিনের। বাণিজ্যিক সূত্রে তারা নিয়মিত ভারতের উপকূল গুলিতে, বিশেষ করে মালাবার উপকূলে আসত। ভারতীয় ও চীনা পণ্য 'ধাও' নামক বিশেষ জাহাজে করে নিয়ে তারা ইউরোপের বাজারে বিক্রি করত। 712 খ্রিস্টাব্দে ইরাকের গভর্নর হাজ্জাজ বিন ইউসুফ এর সেনাপতি ও জামাতা মোহাম্মদ বিন কাসেম সিন্ধু দেশে একটি সফল অভিযান করেন এবং সিন্ধুদেশ আরবীয় মুসলমানদের অধীনে চলে যায়। অভিযানের(প্রত্যক্ষ) কারণ ভারতবর্ষের প্রতি আরবদের দীর্ঘদিনের নজর ছিল। এর আ...

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ | Category of Archives

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ মহাফেজখানা বা লেখ্যাগারগুলি সাধারণ জনতার জন্য নয় মূলত গবেষক, ঐতিহাসিক, আইনবিদ, চিত্র পরিচালক প্রভৃতি পেশার লোকজন তাদের গবেষণার কাজে লেখ্যাগারে নথি পত্র দেখতে পারেন।  লেখ্যাগার পরিচালনা ও সংরক্ষিত নথির ভিত্তিতে লেখ্যাগগুলিকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়েছে।   1. সরকারি লেখ্যাগার:- কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার বা স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে যে লেখ্যাগারগুলি গড়ে ওঠে। সেগুলিকে সরকারি লেখ্যাগার বলা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এরকম সরকার পরিচালিত এক বা একাধিক লেখ্যাগার থাকে। যেমন, আমেরিকার Natonal Archive And records Administration (NARA)। ভারতবর্ষে র কেন্দ্রীয় লেখ্যাগার National Archive of India নামে পরিচিত। বিভিন্ন ঐতিহাসিক, প্রশাসনিক ও আইনগত নথি, মানচিত্র, নক্সা,  পাণ্ডুলিপি প্রভৃতি সংরক্ষিত থাকে। 2. বানিজ্যিক লেখ্যাগার:-  এটি একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানের লেখ্যাগার বিভিন্ন বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান   মূলত তাদের সংস্থার ঐতিহাসিক এবং বানিজ্যিক নথি সংরক্ষিত রাখে। যেমন, ভারতের প্রথম বানিজ্যিক লেখ্যাগার হলো পুনার Tata Centrel Archive। 3. অলাভজনক লেখ্যাগ...

ষোড়শ শতকীয় ইউরোপে মূল্যবিপ্লব | Price Revolution

 ষোড়শ শতকের ইউরোপে মূল্য বিপ্লব   16 শতাব্দীতে ইউরোপীয় অর্থনীতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো মূল্য বিপ্লব। নিত্যব্যবহার্য পণ্যের মূল্য প্রায় 150 বছর সুস্থির থাকার পর ঊর্ধ্বমুখী হতে আরম্ভ করে, এবং 16 শতাব্দীর শেষে খাদ্যপণ্যের মূল্যের প্রায় সাড়ে পাঁচ গুণ বেড়ে যায়। পশ্চিম ইউরোপের অর্থনীতিতে এমন অভাবনীয় এবং সুদুরপ্রসারী ফলাফলসম্পন্ন ঘটনা মূল্য বিপ্লব নামে পরিচিত। মূল্য বিপ্লবের কতগুলি সাধারণ বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। যথা--    (১) কৃষিজ পণ্যের তুলনায় শিল্পজাত পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি ছিল কম, এবং খাদ্যশস্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি। (২) ভূমি রাজস্ব সহ ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক, তোলা ইত্যাদির হার বৃদ্ধি এবং ফটকাবাজির আবির্ভাব। (৩) মূল্যবৃদ্ধির তুলনায় মজুরির হার খুবই কম ছিল বলে প্রকৃত আয় হ্রাস পেয়েছিল। (৪) ভূমি বিক্রয়যোগ্য পণ্যে পরিণত হওয়া। (৫) গ্রামীণ বুর্জোয়াজি শ্রেণীর আবির্ভাব। ষোড়শ শতকের আগেও প্রাকৃতিক কারণে মূল্যবৃদ্ধি হয়েছিল, তবে তা ছিল 2, 3 শতাংশের মতো, যা অস্বাভাবিক মনে হতো না। কিন্তু ষোল শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে যে নিরবিচ্ছিন্ন মূল্যবৃদ্ধি হ...